১. সুস্থ সম্পর্ক :-
সুখী হবার পেছনে আসল কারণ কি সেই উত্তর খুঁজতে ১৯৩৮ সালে ২৬৮ জন হার্ভাড
শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয় একটি গবেষণা। ৭৫ বছর ধরে গবেষণা করেছে
হার্বার্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এই গবেষণার মাধ্যমে কিছু বিষয় উঠে এসেছে গবেষকের
কাছে। তাদের দাবি ,মূলত ভালো সম্পর্কই মানুষকে ভালো ও সুস্থ রাখে,জীবনে
সাফল্য এনে দেয়।
একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে অনেক কাঠখড় পড়াতে হয় অথচ সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে
তা ভেঙে খানখান হয়ে যায়। যার ফলে মানুষের জীবনে চরম অশান্তির পরিবেশ
সৃষ্টি হয়। তাই যেকোনো সম্পর্ককে সুন্দর রাখতে প্রয়োজন যত্ন। পরিচর্চায়
সম্পর্ক শুধু সুন্দরই থাকে না ,তৈরী হয় আস্থা , ভরসা ও বিশ্বাস। ভালো
সম্পর্ক হলো সম্মান ,সততা ও স্নেহের মিশেল। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও
প্রিয়জনের প্রতি যত্নবান হওয়াটাই সুস্থ ও সুন্দর সম্পর্কের গৃহ নির্মাণ
করে।
২. পরিবার :-
সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল পরিবার। পারিবারিক একাত্মতা জীবনকে
সুন্দর ও অর্থবহ করে তোলে। ব্যক্তির বিকাশ ,মানসিকতা , ভালোবাসা , রাগ
ইত্যাদি অনেক কিছুতেই পরিবার প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি এক
গবেষণায় দেখা যায় , পরিবারের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক থাকলে তা ব্যক্তির
স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। তেমনি অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য –
গবেষকদের মতে পারিবারিক ও সামাজিক একাত্মতা একজন মানুষকে সুস্থ সুখী ও সফল
জীবনের পথে চালিত করে। যে সব পরিবারে বাবা মা ও সন্তানদের মাঝে উষ্ণ সম্পর্ক সেখানে যেকোনো বিপদের মোকাবেলা করা অতি সহজ। পরিবারের সকলে মিলে একসঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটানো , একে অপররে প্রতি অভিযোগ না করে প্রেরণা জোগানো , মনোযোগী হওয়া , যেকোনো বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করা ইত্যাদি অভ্যাসগুলো পারিবারিক বন্ধনকে মজবুত করে। বিজ্ঞানীদের মতে পারিবারিক সম্প্রীতির সঙ্গে মানুষের দীর্ঘায়ু অর্জনের সম্পর্কটা একাধিক গবেষনায় প্রমাণিত।
৩. বন্ধু :-
অনেক সময় একজন ভালো বন্ধূ পরিবার কিংবা কাছের কোনো আত্মীয় থেকে অনেক
বেশি দায়িত্ব পালন করে। বিষন্নতা , একাকিত্ব , ক্লান্তি দূর করে নিরানন্দ
জীবনে আনন্দের জোয়ার যোগ করতে বন্ধুর জুড়ি নেই। বন্ধু র বন্ধন একই মুদ্রার
এপিট -ওপিট। যে কথাগুলো পৃথিবীর অন্য কারো কাছে বলা যায় না সেই কথাগুলো
অবলীলায় বলে ফেলা যায় বন্ধুকে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিশ্বাস আর নির্ভরতার
সম্পর্ক। তবে বন্ধু নির্বাচনে একটু সচেতন থাকা জরুরি। ” হাত বাড়ালেই বন্ধু পাওয়া যায় না , বাড়ালেই হাত বন্ধু সবাই হয় না। ”
তবে ভুল মানুষকে না বুঝে বন্ধুত্ব বানিয়ে ফেলা ঠিক নয়। বন্ধুত্বের জন্য প্রয়োজন বিশ্বাস ,সততা ও মানসিকতার মিল। যদি তোমার জীবনে এরকম বন্ধু পেয়ে থাকো যার কোনো স্বার্থ নেই , যার জন্য তুমিও সব কিছু করতে পারো তবে তাকে কখনো ছেড়ো না কাছে রেখো।
৪. স্বাস্থ্য :-
” He , who has health , has hope ; and he who has hope , has everything “- Thomas Carlyle. “মানুষ সুখ -শান্তি ও আনন্দের প্রত্যাশা করে। বলা হয়ে থাকে স্বাস্থ্য মানুষের পরম সম্পদ। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিনটি অবস্থার সুষম অবস্থাকে বোঝায়। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মানুষের চিন্তাশক্তি ও স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। ভগ্ন বা রুগ্ন শরীর যার ,তার পক্ষে সুখ ও সন্তোষ লাভ করা অসম্ভব। একজন ব্যক্তি যতই সম্পদশালী ,প্রভাবশালী হোক না কেন সে যদি স্বাস্থ্যবান না হন ,তাহলে সে জীবনের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে না। আর্থিক সম্পদের পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা শরীর নামক সম্পদটির যত্ন নিতে ভুলে যাই। তাই শরীরের যত্ন নেওয়া আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া জরুরি। কারণ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী একজন ব্যক্তি পরিবারের আনন্দের উৎস এবং সমাজ ও দেশের সম্পদ।
৫. প্যাশন :-
” There is no passion to be found playing small – in settling for a life that is less than the one you are capable of living .” – Nelson Mandela ” প্যাশন হচ্ছে একধরণের শক্তি। সেই ক্ষমতাকে অনুভব করার চেষ্টা করুন , যা আপনাকে উদ্দীপ্ত করে থাকে। “- অপরাহ উইনফ্রে
জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে নিজের প্যাশন খুঁজে বের করা জরুরি। যে কাজটি তোমার কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করে , জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়, যে কাজটির জন্য সব কিছু ত্যাগ করার মানসিকতা থাকে ,যা কখনোই বিরক্তিকর লাগে না তাই সেটিই হল প্যাশন। প্যাশন প্রত্যেকের কাছে ভিন্ন হতে পারে। তোমার প্যাশন খুঁজে পেতে তুমি হয়তো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারো। কিন্তু হাল ছেড়ে না। নিজের ছোট ছোট ভালোলাগার বিষয় গুলোকে গুরুত্ব দাও।পছন্দের বিষয় গুলির তালিকা বানাও। দরকার হলে অনুকরণীয় ব্যক্তির পরামর্শ নাও। হতাশ না হয়ে প্রতিটি মিনিট প্রতিটি দিন প্যাশন নিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাও। প্যাশনই তোমার আত্মাকে শ্রেষ্ট কিছুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৬. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি :-
যে কোনো জিনিসের ভালো খারাপ নির্ভর দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। বলা হয় –
দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটালে সব বদলে যায়। মানুষ মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে তার
জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে একটি দর্শন যা
প্রতিটি অবস্থা ,পরিস্থিতি বা ঘটনা থেকে আশাবাদী দিক চিন্তা করতে পরামর্শ
দেয় এবং এই দিক নিয়ে সাফল্য অর্জনের পথে পরিচালিত হতে তারা দেয়। আমাদের
জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিয়মিত
ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করো , ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তির সাথে বেশি সময়
কাটাও ,পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্টর ওপর লেখা বই গুলো ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে
ভীষণ কার্যকরী।
৭. সম্পদ : –
বেঁচে থাকার মৌলিক তিনটি উপাদান হল – অন্ন-বস্ত্র- বাসস্থান । আর এই
তিনটি উপাদান জোগার করতেই প্রয়োজন টাকা পয়সা বা ধন সম্পদের । গভীরভাবে
বিচার করলে দেখা যাবে সম্পদ দুই প্রকার । যথা – আর্থিক সম্পদ ও পরমার্থিক
সম্পদ । টাকা পয়সা ইত্যাদি আর্থিক সম্পদ । অর্থাৎ যেগুলো হারালে আবার জোগাড়
করা যায় । আর পরমার্থিক সম্পদ হল – প্রেম, ভালোবাসা , মায়া মমতা,
ব্যক্তিত্ব , পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক , পরিবারের মানুষগুলি । তাই আর্থিক
সম্পদ সৃষ্টির উদ্যেশ্যে হওয়া উচিত পরমার্থিক সম্পদকে রক্ষা করা । আর্থিক
সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সময়কে কাজে লাগাতে হবে । মনে রেখো সময় আর সুযোগের সঠিক
ব্যবহারই তোমার আর্থিক সম্পদ তৈরি করতে সাহায্য করবে ।
0 Comments