সনাতনী রীতিতে জন্মদিন উদ্যাপন



সনাতনী রীতিতে জন্মদিন উদ্যাপন

জন্মদিন বুঝাতে আমরা সাধারণতঃ সেই দিনকে বুঝায় যেদিন আমরা মাতৃগর্ভ হতে পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ হই। মাতৃগর্ভের নানা কষ্ট সহ্য করার পর পৃথিবীর মুক্ত আলো বাতাস গ্রহণ করতে শুরু করি। প্রকৃতপক্ষে জন্ম হয়ে আমরা পৃথিবীর নতুন মায়ায় জড়ানোর জন্য তৈরী হই। মানুষ প্রতি জন্মে একবারই জন্মে থাকে, তাই জন্মদিন একবারই হয়। তবুও আমরা সেই জন্মদিনকে স্মরণ করে মহাসমারোহে মেতে উঠি। আমরা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণে মোমবাতি নিভিয়ে কেক কাটি, বিভিন্ন পার্টিতে মেতে উঠি। এখন আমি আপনাদের পালিত সেই রীতি নীতির উপর সামান্য কুঠারাঘাত করে সনাতনী রীতিতে জন্মদিন পালনের জন্য অনুরোধ করব। 


♦মোমবাতি নিভিয়ে জন্মদিন পালন!!: 

আমরা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুসরণে জন্মদিন পালন করতে গিয়ে প্রথমেই ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দিই।কিন্তু আদৌ কি তা যুক্তিসম্মত! 

যেমন ধরুন, আমরা মন্দিরে গেলে দীপ জ্বালাই, নতুন গৃহপ্রবেশের সময় প্রদীপ জ্বালাদীপাবলি উৎসবে সারাদিক্ দীপালোকে আলোকিত করি। দীপাবলি উৎসব ভগবান্ শ্রীরাম চন্দ্রের অযোধ্যা আগমন উপলক্ষে পালিত হয়। নতুন বছরে দীপ জ্বালাই।  নতুন কারো আগমনে আমরা তাকে প্রদীপ দ্বারা স্বাগত জানাই। তেমনি কারো জন্ম হলে তাও আনন্দের দিন। তাহলে আনন্দ পালন করতে গিয়ে কেন আমরা প্রদীপ নিভিয়ে জন্মদিন পালন করব? প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে আমরা কি তার জীবনকে আলোকিত করার বদলে অন্ধকারাচ্ছন্ন হবার জন্য আশীর্বাদ করছি ?

শাস্ত্রে পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে বলা হয়েছে-" অসতো মা সৎগময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যুর্মা অমৃতং গময়।"(বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ ১/৩/২৮)

অর্থাৎ হে প্রভু, আমাকে অসৎপথ হতে সৎপথে নিয়ে যাও, অন্ধকার হতে আলোতে নিয়ে যাও, মৃত্যু হতে অমৃতে নিয়ে যাও।


যেখানে শাস্ত্রে প্রার্থনা করা হচ্ছে অন্ধকার হতে আলোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য, আর সেখানে আমরা জন্মদিনের মত আনন্দের উৎসবকে মোমবাতি নিভিয়ে অন্ধকার বানিয়ে পালন করছি। এটা কি হাস্যকর নয়!

তাই আসুন, আমরা বিদেশী সংস্কৃতির অনুকরণে মোমবাতি নিভিয়ে জন্মদিন পালনের পরিবর্তে প্রদীপ জ্বালিয়ে জন্মদিন পালন করি যাতে জীবন অন্ধকার নয়, বরং আলোকিত হয়ে উঠতে পারে।

প্রদীপ জ্বালানোর সময় নিম্নোক্ত শ্লোকটি পাঠ করুন:

শুভং করোতি কল্যাণং আরোগ্যং ধনসম্পদা। শত্রুবুদ্ধি বিনাশায় দীপ জ্যোতির্নমো'স্তুতে।।

অনুবাদঃ আমি দীপজ্যোতিঃকে প্রণাম জানাই, যা প্রসন্নতা, সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য, ধনসম্পদের প্রাচুর্য্য আনে এবং শত্রুবুদ্ধিকে বিনাশ করে।


♦ধান-দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ প্রদান: সনাতন ধর্মে ধান-দুর্বা অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ধান ঐশ্বর্য্যের প্রতীক, দুর্বা দীর্ঘায়ুর প্রতীক। ধান দিয়ে আশীর্বাদ করার মাধ্যমে জন্মদিনপালনকারীকে ঐশ্বর্য্য-ধনসম্পদের অধিকারী হওয়ার জন্য প্রার্থনা করা হয়, এবং দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করার অর্থ তাকে দীর্ঘায়ুঃ হওয়ার জন্য আশীর্বাদ করা হয়। তাই যার জন্মদিন, তাকে ধান-দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করুন এবং ধান-দুর্বা দেয়ার সময় উচ্চারণ করুন-" ওঁ আয়ুষ্মান্ ঐশ্বর্য্যবান্ ভব"(ছেলের ক্ষেত্রে) আর "ওঁ আয়ুষ্মতী ঐশ্বর্য্যবতী ভব"(মেয়ের ক্ষেত্রে)।


♦Happy Birthday to you:  Happy Birthday to you  গানটা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণ। আমরা সনাতনী হিসাবে সংস্কৃত সঙ্গীত করা উচিত। সেজন্য জন্মদিনের জন্য শ্রীমৎ স্বামী তেজোময়ানন্দ মহারাজ রচিত সংস্কৃত গানটি করতে পারেন। 

জন্মদিনমিদং অয়ি প্রিয় সখে

শন্তনোতু তে সর্বদা মুদম্।

প্রার্থয়ামহে ভব শতায়ুষী

ঈশ্বরঃ সদা ত্বাং চ রক্ষতু।।

পুণ্য কর্মণা কীর্তিমর্জয়

জীবনং তব ভবতু সার্থকম্।।(ঐ)


অনুবাদ: ওহে বন্ধু, তোমার জন্মদিন সদা প্রসন্নতা ও সুখ বয়ে আনুক। আমরা প্রার্থনা করি, তুমি শতবর্ষ আয়ুঃপ্রাপ্ত হও, ঈশ্বর সদা তোমাকে রক্ষা করুক। তুমি পুণ্যকর্ম দ্বারা সুকীর্তি অর্জন কর এবং তোমার জীবন সার্থক হোক। 


তারপর জন্মদিনে আশীর্বাদ করুন নিম্নের বেদমন্ত্রে :

ওঁ শতং জীব শরদো বর্দ্ধমানঃ শতং হেমন্তাঞ্ছতমু বসন্তান্।

শতমিন্দ্রাগ্নী সবিতা বৃহস্পতিঃ শতায়ুষা হবিষেমং পুনর্দুঃ।।(ঋগ্বেদ ১০/১৬১/৪)


অনুবাদঃ হে মানুষ, শতবর্ষ জীবিত থাক, সুখে স্বচ্ছন্দে একশত শরৎ, একশত হেমন্ত, একশত বসন্ত জীবিত থাক। ইন্দ্র, সূর্য, অগ্নি, বৃহস্পতি হব্যদ্বারা তৃপ্ত হয়ে একশত বছর আয়ুঃ প্রদান করুন।


তাই আসুন আমরা বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন হতে মুক্ত হয়ে সনাতন সংস্কৃতির দ্বারা নিজের ও অন্যের জন্মদিন পালন করে তার জীবনকে সুন্দর ও দীর্ঘায়ুঃ হওয়ার আশীর্বাদ পালন করি।


#লেখাটি ভালো লাগলে প্রচার করে মানুষকে সনাতনী রীতির প্রতি আকৃষ্ট করে তুলুন।


লেখকঃ শ্রী নিলয় ঘোষ।

জয় শ্রীরাম। জয় শ্রীকৃষ্ণ।

https://youtu.be/1xpob1RSLho

Post a Comment

0 Comments