শ্রাদ্ধ_কত_প্রকার_ও_কি_কি??

শ্রাদ্ধ_কত_প্রকার__কি_কি??




#কোন প্রকার শ্রাদ্ধ আমাদের করা উচিত আর কোন প্রকার শ্রাদ্ধ আমাদের করা উচিত নয়?
((((
পর্ব 1))))

#শ্রাদ্ধের_সংজ্ঞা

শ্রাদ্ধ সম্বন্ধে বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে-

"শ্ৰৎ সত্যং দধাতি যয়া সা শ্রদ্ধা।
শ্ৰদ্ধয়া ক্রিয়তে যৎ তৎ শ্রাদ্ধ ॥"
এর অর্থ হচ্ছে শ্রৎ' শব্দ সত্য তথা নিত্য বস্তুকেই নির্দেশ করে। তাই বলা হচ্ছে-*যে কর্মানুষ্ঠান দ্বারা নিত্যবস্তু লাভ হয় তাকে শ্রদ্ধা বলা হয়।* অর্থাৎ শ্রদ্ধাপূর্বক পারলৌকিক কৃতকর্ম সম্পাদনই শ্রাদ্ধ। মহান ঋষি পুলস্ত সে কথাই ঘােষণা করেছেন।এভাবে -

"সংস্কৃত ব্যঞ্জনাঢ্যঞ্চ পয়ােদধি ঘৃতাম্বিত।
শ্ৰদ্ধয়া দীয়তে যস্মাৎ শ্রাদ্ধং তেন নিগদ্যতে ॥"
অর্থাৎ সংস্কৃত ব্যঞ্জনাদি তথা ভগবৎ নিবেদিত দধি-দুগ্ধ-ঘৃতাদি সমন্বিত অন্ন শ্রদ্ধাসহকারে পিতৃ মাতৃগণের উদ্দেশ্যে প্রদানকেই শ্রাদ্ধ বলে।
শ্রুতি শাস্ত্র আশ্বলায়ন গৃহ সূত্রও একই কথা বলেছেন-

"যৎ পিতৃভভ্যা দদাতি স পিতৃযজ্ঞঃ....
নেতা যজ্ঞান অহরহঃ কুর্বীত।।"৩/১/৩-৪

মনুস্মৃতিও শ্রুতিশাস্ত্রের প্রতিধ্বনি করেছেন-
"
কুর্যাদহরহঃ শ্রাদ্ধমন্নাদ্যেনােদকেন বা।
পয়েমূল ফলৈাপি পিতৃভ্যঃ প্রীতিবহন॥" মনু, ৩/৮২

********"""*****""""******"""""*********


১)নিত্য ২)নৈমিত্তিক ৩)কাম্য, ৪)বৃদ্ধি, ৫)সপিণ্ডীকরণ, ৬)পার্বন, ৭)গােষ্ঠী, ৮)শুদ্ধার্থ, ৯)কর্মাঙ্গ,১০)দৈবিক, ১১)তীর্থ এবং ১২)পুষ্টি- এই দ্বাদশ প্রকার শ্রাদ্ধ।
শাস্ত্রে এই দ্বাদশ প্রকার শ্রাদ্ধের বর্ণনা থাকলেও এখানে কেবল সপিণ্ডীকরণ শ্রাদ্ধ প্রসঙ্গে আলােচনা করা হবে। কারণ আমরা সাধারণত এই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করে থাকি। "সপিণ্ড অর্থাৎ পিতৃপুরুষকে দেওয়া অন্নকে পিণ্ড বলে, তাই পিতৃপুরুষের সাথে পিণ্ড গ্রহণকারী অন্যান্য মৃতব্যক্তির উদ্দেশ্যে দেয় পিণ্ড প্রদানকারী অনুষ্ঠানকে সপিণ্ডীকরণ বলে।"

#ভগবদ্ভক্তদের দেহান্তে প্রেতের সম্ভাবনা না থাকায় প্রেতপক্ষের সপিণ্ডীকরণ ভক্তদের প্রয়ােজন হয় না।

আদ্য শ্রাদ্ধের পদ্ধতি অনুসারে কেবল দৈব বিধানে পিতৃদেবার্চনা কর্তব্য।কেহ ইচ্ছা করলে পার্বন বিধানে দেবপক্ষ ও পিতৃপক্ষে বিহিত অর্চনাও করতে পারেন।যেহেতু-

ধন্যাস্তে মানবা লােকে কলিকালে বিশেষতঃ।
যে কুন্তি হয়ের্নিত্যং পিৰ্থং পূজনং মুনে ॥
কি দত্তৈবহুভিঃ পিণ্ডৈগয়াশ্রাদ্ধং দিভিমুনে।
যৈরচিঁতাে হরিভক্ত্যা পিত্রার্থঞ্চ দিনে দিনে।যমুদ্দিস্য হরেপূজাং ক্রিয়তে মুনিপুজব।
উদ্ধৃত্য নরকাবাসাৎ নরেৎ পরমং পদম্ ॥
((((?
হভ.বি.স্কন্ধ বচন, ৯/৯৩ ॥))))

অর্থাৎ বিশেষতঃ কলিকালে সংসারী জীবগণের মধ্যে তারাই ধন্য, যারা পিতৃগণের উদ্দেশ্যে শ্রীহরির পূজা করেন। হে মুনিবর! যে সকল ব্যক্তি প্রত্যেক নির্যান তিথিতে পিতৃগণের উদ্দেশ্যে ভক্তি সহকারে শ্রীহরির অর্চনা করেন তাঁদের বহু পিণ্ডদান বা গয়া শ্রাদ্ধাদিতেই বা প্রয়ােজন কি ?
হে মুনিশ্রেষ্ঠ! যাকে উদ্দেশ্য করে শ্রীহরির পূজা করা যায় তাকে নরক বাস থেকে উদ্ধার করে পরমপদে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। অতএব সর্বাগ্রে বিবিধ উপাচারে শ্রীভগবানের অর্চনা করে পরে সেই প্রসাদান্ন নিবেদন করে পিতৃদেবার্চনা করা কর্তব্য।

********""""*****""""""******"""""********


স্মার্ত মতে মৃত ব্যক্তির আত্মা প্রেত বা পিশাচত্ব প্রাপ্ত হয়। শ্রাদ্ধ ক্রিয়া এবং সপিণ্ডীকরণ দ্বারা মৃত ব্যক্তির সেই প্রেতত্ব মােচন হলে তবেই সেই মৃত ব্যক্তির আত্মা স্বর্গে যেতে পারে- এই জন্যেই এই শ্রাদ্ধের নাম প্রেত শ্রাদ্ধ, পৈশাচ বা রাক্ষস শ্রাদ্ধ
বলা হয়।

"সপিণ্ডীকরনং যাবৎ প্রেত শ্রাদ্ধাদি ঘােড়শ।
পান্নেনৈব কার্যানি সামিষেণ দ্বিজাতিভিঃ ॥ (((((লঘুহারীত))))

আবার -
''
যশ্যৈতানি ন কুৰ্বতি একোদ্দিষ্টানি যােড়শ।
পিশাচত্বং স্থিরংতস্য দত্তৈঃ শ্রাদ্ধ শতৈপি।।"

আবার স্মার্ট জড় কর্ম কাণ্ডীয় যে শ্রাদ্ধ বিষ্ণু বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অথবা ভগবদ্ভক্তের প্রাধান্য দেওয়া হয় না সে শ্রাদ্ধও রাক্ষস' শ্রাদ্ধ বলে অভিহিত। এছাড়াও

স্কন্ধপুরাণে বলা হয়েছে -
"
যস্য বিদ্যা বিনির্মুক্ত মূখং মত্বা তু বৈষ্ণব।
বেদবিদ্রোহদদাদিপ্রঃ শ্রাদ্ধং দ্রাক্ষসং ভবেৎ ॥"
অর্থাৎ ভগবদ্ভক্ত বা বৈষ্ণবদের বিদ্যাহীন মূখ ভেবে বেদবিদ বিপ্রকে শ্রাদ্ধ প্রদান করলে বিপ্রকৃত সেই শ্রাদ্ধও রাক্ষস' শ্রাদ্ধ বলে গণ্য। বর্তমান কালে এই রাক্ষস শ্রাদ্ধই বহুল প্রচলিত।

***********----****"**"""*********"""***


পদ্ম পুরাণের উত্তর খণ্ডের অষ্টাদশ অধ্যায়ে কোন্ কোন্ মানুষ মৃত্যুর পর ভূত-প্রেত হয় সে প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
#যারা 
শ্রীগােবিন্দের অর্চনা করে না,
#আত্মজ্ঞান 
লাভে অনিচ্ছুক,
#সুতীর্থ 
গমনে অনীহা,
#নাস্তিক,
#প্রতারক,
#চোর#বক 
ধার্মিক,
#বালক 
বৃদ্ধ আতুরের প্রতি নিষ্ঠুর,
#মিথ্যাবাদী,
#ব্যাধের 
ন্যায় আচরণকারী,
#জীব 
হত্যাকারী,
#বর্ণাশ্রম 
ধর্ম বর্জিত,
#স্বধর্ম 
ত্যাগী,
#বিষ্ণু 
বা শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা না করে যারা দেব-দেবীর আরাধনায় রত,
#বিষ্ণু 
ব্যতীত অন্যান্য দেবতার নির্মাল্য গ্রহণকারী,
#মাদকদ্রব্য 
সেবনকারী,
#নেশাগ্রস্থ,
#ভগবদ্বিদ্বেষী,
#অসত্যৰ্ম 
রত,
#পাতকী,
#পাষণ্ডীমতের 
অনুসারী অর্থাৎ ভগবদ্ভক্তি ছাড়া অন্য পথের পথিক,
#যে 
সকল ব্রাহ্মণ পৌরহিত্য উপজীবি,তীর্থস্থানে কেবল প্রতিশ্রহেই রত,
#পরের 
অনিষ্টকারী,
#
প্রাণী হিংসুক এবং
#
নিন্দুক- এই সকল ব্যক্তি পুনঃ পুনঃ প্রেত, রাক্ষস, পিচাশ এবং তির্যক যােনি প্রাপ্ত হয়। এরা ইহকাল পরকাল কোন কালেই সুখের লেশ মাত্র পায় না।

""সর্বে সম্ভবন্তি পুনঃ পুনঃ ॥
প্রেত রাক্ষস পৈশাচ তির্যক বক্ষ
কুযযানি।
ন তেষাং সুখলেশােহন্তি ইহলােকে
পত্র চ ॥""
অগ্নি পুরাণেও প্রেতত্ব লাভের কতকগুলি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে - #যে দ্বিজ শূদ্ৰান্ন ভােজন করে, #যারা বৈষ্ণব-ব্রাহ্মণের মর্যাদা লংঘন করে, #দেবতা-দ্বিজের মূর্তি বিনাশ করে, #যারা মাতা-পিতা, বৃদ্ধ,জ্ঞাতী, সাধুজনকে লােভবশত পরিত্যাগ করে,#যে ব্রাহ্মণ অযাজ্য যাজক,#শূদ্রের অনুগ্রহ কর্তা, #যে বৃথা রেতা,"বৃথাবাদী, #মাংসভােজী,#নিন্দুক, #যারা স্ত্রীলােকের #সন্তোষ বিধানার্থ সর্বদা গীতবাদ্য করে, #যারা মদ্যপায়ী,#ন্যূতক্রীড়াসক্ত, #গাে-হত্যাকারী, #চোর,#ভূমি দখলকারী, #কন্যা অপহরণকারী এবং #প্রেতত্ব
বিমুক্তির জন্য যে মাসিক একোদিষ্ট ও আদ্য শ্রাদ্ধ করা হয় সেই শ্রাদ্ধে ভােজনকারী ব্যক্তিসহ উপরি উক্ত সকলেরই প্রেতত্ব লাভ হয়।
"
মাসিকেহপি নবশ্রাদ্ধে ভুঞ্জম প্রেতান্নমুচ্যতে।""
প্রেত পদলেহনকারী স্মার্ত ভট্টাচার্যের অনুসারীরা জড় কর্ম কাণ্ডীয় ব্যক্তিরা এভাবেই উক্ত কুকর্ম অবলম্বন করে প্রেতত্ত্ব প্রাপ্ত হয়ে থাকে।

বিশুদ্ধ সাত্ত্বত শ্রাদ্ধ ও স্মার্ত শ্রাদ্ধের তারতম্য বিচারকালে শ্রীল ভক্তিবেদান্ত শান্ত মহারাজ উল্লেখ করেছেন- প্রেতপদাবলেহি স্মার্তবিধান কর্ম জড়বাদী রঘুনন্দন ভট্টাচার্য মহাশয় একটু ফাঁক রাখিতে গিয়া তাঁর তিথিতত্ত্বেউদ্ধৃত করিয়া দেখাইয়াছেন-
""
নারিকেলৈস্টি পিটকৈঃ পিতৃন্ -দেবান সময়েৎ।
বন্ধুংশ্চ প্রীণয়ােত্তন স্বয়ং তাদৃশং
ভবেৎ ॥""

অর্থাৎ নারিকেল ও চিড়ার দ্বারা পিতৃগণ ও দেবতাগণের অর্চনা করিবেন এবং বন্ধুগণেরও তৃপ্তিসাধন করিবেন। ইহা দ্বারাই বেশ বুঝা যায়- বিশুদ্ধ স্মার্ট মতালম্বিগণের মাতৃ-পিতৃ ভক্তি উদ্বেলিত হইয়া ডগমগ খাইতেছে। নিজেদের জন্য চৰ্য্য চুষ্য লেহ্য পেয়াদি আহার্যের ব্যবস্থা, আর পিতৃ-দেবতাগণের জন্য শুষ্ক চিড়া ও
নারিকেল ; তবে আপকালে অগ্নির অভাব হইলে, তীর্থক্ষেত্রে চন্দ্র সূর্যগ্রহণ সময়ে
দ্বিজাতিগণ আমান্ন দ্বারা শ্রাদ্ধ করিবেন। শূদ্রগণ সর্বসময়েই আমান্ন দ্বারা শ্রাদ্ধ করিবেন।

"অপদ্যগ্নৌ তীর্থে চ চন্দ্র সূর্যগ্রহ তথা।
আমশ্রাদ্ধং দ্বিজেঃ কার্যঃ শূদ্রেণ তু সদৈব হি ॥"" ((((লঘু হারীতা))))

বেশ ভাল কথা, তবে শূদ্র কে ? শাস্ত্রোক্ত প্রমাণে শূদ্রের লক্ষণ রূপ মাপকাঠি দিয়া মাপিলে এই জগতে পনেরাে আনা নয় পাই লােক শূদ্র পর্যায় ভুক্ত -ইহাতে সন্দেহ নাই। "যুগে জঘনাে দ্বেজাতি ব্রাহ্মণ শূদ্র এব চ" - এই অনুশাসন বাক্য যদি ব্রাহ্মণের সকল জাতিকে শূদ্র বলিয়া মানিয়া লওয়া যায়, তাহা হইলে শূদ্রেজী ব্রাহ্মণদেরই বা গৌরব অক্ষুন্ন থাকিল কোথায় ? শাস্ত্রের বচনে দেখা যায় "শূদ্রযাজী ব্রাহ্মণ অস্পৃশ্য অপাঙক্তেয়।" শূদ্ৰান্ন ভােজী ব্রাহ্মণকে জঘন্যাত্মা প্রেত যােনিতে জন্ম গ্রহণ করিতে হয়।

ভুঞ্জতে যে তু শুদ্ৰান্নাং মাসমেকং নিরন্তর।
ইহজন্মনি শূদ্রত্বং জায়ন্তে তে মৃতাশুনি ।
শূদ্রান তু ভুক্তেন মৈথুনং যােহধি গচ্ছতি।
যস্যান্নং তস্য তে পুত্রা অন্নাচ্ছদ্রেস্য সম্ভবঃ (((((আপস্তম্বসংহিতা ॥))))))

"অর্থাৎ যে দ্বিজ এক মাস কাল শূদ্ৰান্ন ভােজন করে এই জন্মেই সে ব্যক্তি শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়। এবং মৃত্যুর পর কুকুর যােনিতে জন্ম গ্রহণ করে। শূদ্ৰান্ন ভােজন করিয়া পুত্রোৎপাদন করিলে সেই পুত্র অন্নদাতা শূদ্রের হয়, যেহেতু-

অন্নদাতা ভরােত্রাতা ঃ যস্য কন্যা বিবাহিতাঃ।
জনয়িতা চ উপনেতা পঞ্চপিত ভবেৎ মৃতা ॥
শূদ্রাণাং সুপকারী চ শূদ্রযাজী চ যযা দ্বিজঃ।
অসি জীৰ্কিৰ্মসীজীবি বিষহীনাে যথােরগঃ ((((॥ ব্রহ্মবৈবর্ত ॥))))

শূদ্রের পাচক, শূদ্রের যাজক, যুদ্ধজীবি এবং মসীজীবি (কেরাণী) ব্রাহ্মণ বিষহীন সর্পের তুল্য। বিশেষত ঃ- অশুদ্ধাঃ শুদ্রাকপ্প হি ব্রাহ্মণাঃ কলিসম্ভবাঃ ।
(((
বিষ্ণুযামল ।)))

কলি কালের ব্রাহ্মণগণ একেইতাে শূদ্রের ন্যায় অপবিত্র, তাহাতে ব্রাহ্মণেতর সকল জাতিকে শূদ্র ভাবাপন্ন করিয়া শূদ্ৰাচারে তাহাদের ক্রিয়ানুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করিলে পুরােহিতগণকেই ক্রমশঃ অব্রাহ্মণতা প্রাপ্ত হইতে হয় না কি? হয়ত ইহারই নামান্তর -নিজের নাক কাটিয়া পরের যাত্রা ভঙ্গ।যে সকল ব্যক্তি অব্রাহ্মণ হইয়াও নিজদিগকে ব্রাহ্মণ দাবী করিয়া থাকে এবং শূদ্রযাজী হইয়া শুদ্ৰান্ন ভােজন করিয়া প্রেতযযানি প্রাপ্ত হইয়া থাকে, তাহাদের মতই নিজেদের দলপুষ্টি কামনায় সকল ব্যক্তিকেই মৃত্যুর পর জঘন্য প্রেতাত্মা বলিয়া গণ্য করিয়া থাকে। এবং প্রেত শ্রাদ্ধ দিয়ে থাকে।

এমনকি যাঁহারা আজন্ম নিরামিষাসী বা বিধবা মাতৃদেবী ও ভগ্নিগণকেও মৃত্যুর পর প্রেত পিশাচী কল্পনা করিয়া তাহাদিগকে আমিষাদি ভােজন করাইয়া থাকে।মৎস্যের পরিবর্তে অন্ততঃপক্ষে দগ্ধ চাউল বা কদলী পােড়া খাওয়াইয়া আমিষ ভক্ষণের নিয়ম রক্ষা করিতে দেখা যায়। "দগ্ধং আমিষ সূচ্যতে।অতএব, মনুষ্য মাত্রেরই স্কুলদেহ অবসানের পর তিনি ব্রাহ্মণ হউন কিংবা ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রই হউন, জন্মদাতা পিতা বা গর্ভধারিণী জননীই হউন না কেন ;ত্রিসন্ধা গায়ত্রী জপ পরায়ণ স্বধর্মনিষ্ঠ সাধুই হউন না কেন, চির হবিষ্যাশী হইয়া যতই সাধন ভজন করুন না কেন তথাপি কর্মকাণ্ডীয় স্মৃতিশাস্ত্র মতে মৃত্যুর পর তাহাকে পূর্ণ
এক বৎসর কাল প্রেত সাজিয়া অমেধ্য ভােজন করিতেই হইবে। তিনি নিত্যধাম বৈকুণ্ঠে গমন করিলও তাহাকে বল পূর্বক নরকে টেনে এনে প্রেত পিশাচী সাজাইয়া অভােজ্য অমেধ্যাদি ভােজন করাইতেই হইবে। তথাপি সাত্ত্বত পদ্ধতি বিধান অনুসারে শ্রীভগবানের নিবেদিত মহাপ্রসাদান প্রদান করিবে না। স্বধর্মনিষ্ঠ মাতা পিতাকে প্রেত কল্পনা করিয়া নরকের ক্রিমিকীট করিয়া রাখিব সেও ভাল, তথাপি সাত্ত্বত শাস্ত্রের মতানুবর্তী হইব না। এ যেন নরকে যাওয়ার প্রতিযােগিতা।

*****"""******"""""******""""""******""***

#প্রেতের_আহার

প্রেতত্ব বিমুক্তির জন্য যারা প্রেত শ্রাদ্ধের আয়ােজন করেন মূলতঃ তাদের প্রেতত্ব বিমুক্তির পরিবর্তে প্রেতত্বই লাভ হয়। এই সকল দুর্ভাগা স্মার্ত পন্থী প্রেত শ্রাদ্ধকারীদের বােধােদয়ের জন্য জানা দরকার প্রেতের আহার্য বস্তু কি?
অগ্নি পুরাণে প্রেতগণ তাদের আহার সম্বন্ধে স্বীয় মুখেই বলেছেন-আমাদের সমস্ত আহার সত্ত্ববিগর্হিত অর্থাৎ সবকিছুই অসাত্ত্বিক শ্লেষ্ম, মূত্র, পূরীষ ও স্ত্রীলােকদের আর্তর দ্বারা যে স্থান অপবিত্র সেই স্থানেই প্রেত সকল ভােজন করে। স্ত্রীলােকগণ কর্তৃক ভূক্ত জীর্ণ ও সংকীর্ণ অপহত দ্রব্যসকল এবং মলের দ্বারা অতিশয় নিন্দিত দ্রব্য সকল প্রেতগণের আহার্য। যে স্থান বহুল পরিমিত উচ্ছিষ্ট, স্তুপস্থিত প্রেত সকল সেখানেই আহার করে।কেশমিশ্রিত, মক্ষিকার দ্বারা উচ্ছিষ্ট, পচা, পর্যুষিত, ক্রোধ ও শশাকের সাথে ভােজন এ সমস্ত প্রেতেরই ভােজন। সূতিকা ও মৃতাশৌচ দূষিত, ধূলি দ্বারা কলুষিকৃত, বিনা দীপে ভােজন, কৃমিবৎ যাহা অগ্রে ভুক্ত সে সমস্তই প্রেতের আহার।
এবার বিচার করুন কোন
যােগ্য পুত্র-কন্যাদিগণ তাদের মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজনদের প্রেত সাজায়ে মল-
মূত্রাদি ভােজন করাতে পারেন ?

*****"""""******"""""**"**"""******"""****

#প্রেত_শ্রাদ্ধ_নিষিদ্ধ।

স্মার্ত মতে মৃত্যুর পর মনুষ্য মাত্রেরই প্রেতত্ব প্রাপ্তি হয়। তাই তারা প্রেতশ্ৰাদ্ধ করে থাকেন। এবং আমিষানেই শ্রাদ্ধ করেন। দগ্ধ মাছ এবং দগ্ধ কলা মৃতব্যক্তি এবং ব্রাহ্মণকে অর্পণ করেন। তারা একাদশীতেও শ্রাদ্ধ করে থাকেন।স্মার্তগণের মৃত্যুর পর যেহেতু আত্মার প্রেতত্ব প্রাপ্তি ঘটে তাই তারা অপবিত্র জ্ঞানে শ্রাদ্ধ করেন। এবং তপ্ত সলিলা বৈতরণী পারের জন্য তারা গরুর লেজ ধরেন।
১০দিনে ১০ টি পুরক পিণ্ড প্রদানের মাধ্যমে প্রেতের আতিবাহিক ভােগদেহ গঠিত হলে সপিণ্ড করনের পর প্রেতত্ব খণ্ডন হয়। এ সবই স্মার্তের কাণ্ড।শুদ্ধিতত্ত্বেস্মার্ত রঘুনন্দন উল্লেখ করেছেন- প্রেত পিণ্ডদানের পর ক্রমশঃ যে দেহ গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় ভােগদেহ।
যাদের প্রেতপিণ্ড না দেওয়া হয় তাদের
প্রেতত্বের মােচন হয় না। সেই প্রেত শীতবাত আতপস্যুত ঘাের যাতনা ভােগ করে থাকে। প্রেত পিণ্ড দান করলে প্রেকল্পে বা দেবকল্পে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করলে আর ঘাের যাতনা ভােগ করতে হয় না। পরে আত্মীয়গণ সপিণ্ডকরণ করলে যে দেহ প্রাপ্তি হয় সেই দেহেই স্বীয় কর্মানুযায়ী স্বর্গে বা নরকে গমন করে।প্রেতপিণ্ড বা প্রেতশ্রাদ্ধ বিষয়ে ঐ সকল প্রমাণ নিতান্তই হেয়কর। এবং স্মার্ট ভট্টাচার্য প্রণীত স্মৃতিশাস্ত্রে যে সকল প্রমাণ তিনি উল্লেখ করেছেন তা অসার এবং সাধারণ বাক্য মাত্র। না বুঝিয়া শাস্ত্রের অভিপ্রায়।
প্রেত শ্রাদ্ধে মাথা মুড়াইয়া নরকে যায় ৷ রঘুনন্দনের উল্লিখিত প্রমাণ শাস্ত্রের ভূরি ভূরি সিদ্ধান্ত দ্বারা খণ্ডিত হয়ে থাকে।মৃত্যুর পর মনুষ্যমাত্রেরই প্রেত পিণ্ডদ্বারা ভােগ দেহ গঠনের আবশ্যক আছে এবং সকলের উদ্দেশ্যে প্রেশ্রাদ্ধ করতে হবে এমন বিধান শ্ৰাস্ত্রবিগহিত। আমরা পূর্বে
প্রেতত্বের কারণ, প্রেতের আহার্য বিষয়ে জেনেছি। প্রেতের মুক্তির উপায়ও জানব যথাসময়ে।
অতিরিক্ত পাপের ফলে যদি কারও পিতা-মাতা অবধারিতভাবে প্রেত বা পিচাশ হয়েও থাকে তবু প্রেশ্রাদ্ধ করা যাবে না। তবে কর্মজড় স্মার্ত ভট্টাচার্যের অনুসারীরা যদি তাদের পিতা-মাতা এবং পূর্ব পুরুষদের অখাদ্য ভােজনকারী নরকের ক্রিমিকীট করে রাখতে ইচ্ছা করেন তাহলে প্রেত শ্রাদ্ধে আপত্তি নাই। প্রেতশ্রাদ্ধ অকৃতজ্ঞ মানবের কাজ।

প্রভুপাদ ॥
আর যদি, সত্যিই পাপাচারগ্রস্থ ব্যক্তির প্রেতত্ব বিমােচন করতে চান তাহলে মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধকার্যে শ্রীহরির মহাপ্রসাদ নিবেদন করুন।
"
হরের্ভুক্তং পিতৃণাং শ্রদ্ধকর্মাণি। প.পু ॥

কেননা শ্রাদ্ধকালে তুলসী পত্র মিশ্রিত কৃষ্ণপ্রসাদ দ্বারা পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড অর্পণ করলে কেবল প্রেতত্বই বিনাশ হয় না পিতৃপুরুষেরা কোটি কল্পকাল পরিতৃপ্তি লাভ করেন।
"
যঃ শ্রাদ্ধকালে হরির্ভূক্ত শেষং তুলসী বিমিশ্রণা কল্প কোটিং পিতর সুতৃপ্তাঃ ॥ ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ বাক্যম্ ॥"
মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আমিষান্ন অর্পণ গর্হিত পাপকর্ম। আত্মা কোন জড় বস্তু ভােগ করেন না। একথা বেদে বলা হয়েছে।


Post a Comment

0 Comments