মানুষ হাঁটার কষ্ট সহ্য করতে রাজী নয়।
মানুষ হাঁটার কষ্ট সহ্য করতে রাজী নয়। তাই সে আবিষ্কার করল বায়ু দূষণকারী যানবাহন এবং জল দূষণকারী কলকারখানা। যান দুর্ঘটনা একদিকে যেমন অপমৃত্যু বেড়ে গেল, অন্যদিকে দূষণের ফলে না পাচ্ছে বিশুদ্ধ পানীয় জল, না পাচ্ছে শ্বাস নেয়ার জন্য বিশুদ্ধ বায়ু। একটি গর্দভও বুঝতে পারে যে, যানবাহন থেকেও জীবনে বিশুদ্ধ বায়ু এবং বিশুদ্ধ জল অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। ডাক্তাররা আজ মেদ কমাবার জন্য মোটা টাকা নিয়ে রোগীকে ব্যায়াম, প্রাতঃভ্রমণ ইত্যাদি শ্রমসাধ্য কাজে নিযুক্ত করেন। অথচ প্রাচীনকালে মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করত, ঢেঁকিতে চাল ভাঙ্গত, শিলনোড়ায় মশলা বাটত, কুয়ো থেকে টেনে জল তুলত, তখন তাদের হাত পা সবকিছুই সক্রিয় থাকত। মেদ কমাবার জন্য ডাক্তারকে মোটা টাকা দেয়ার দরকার হত না। গল্পে আছে, এক দেশে খরগোশ অনেক ফসল নষ্ট করতো। খরগোশ মারার জন্য পণ্ডিতেরা অন্য দেশ থেকে জাহাজ ভর্তি শেয়াল নিয়ে এলো। শেয়ালেরা দু’দিনের মধ্যে সব খরগোশ খেয়ে নিল। আর খাবার না পেয়ে শেয়ালেরা মানুষকে আক্রমণ করতে শুরু করল। আধুনিক বৈজ্ঞানিকেরা এভাবে খরগোশ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে শেয়াল সমস্যা সৃষ্টি করল এবং সমস্যা সৃষ্টি করতে গিয়ে বাঘ সমস্যা সৃষ্টি করেন। শেষে তারা এমন অবস্থা সৃষ্টি করলেন যে, নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের জন্য বিশুদ্ধ বায়ু নেই, পান করার জন্য বিশুদ্ধ জল নেই, কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে মানুষ আজ বিশুদ্ধ জৈব(organic) খাবার পাচ্ছে না। গোবর সার পরিত্যাগ করে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে হাজার হাজার একর জমিকে বন্ধ্যা করে দিচ্ছে।পৃথিবীর নিরাপদ বেষ্টনী ওজন স্তরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং গ্লোবাল ওয়ামিংসৃষ্টি করে পৃথিবীকে দ্রুত ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। যন্ত্র সভ্যতারই ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বেকার সমস্যা। একটি যন্ত্র হাজার হাজার মানুষের কর্ম হরণ করছে এবং এইভাবে অলস মস্তিষ্ক রূপ শয়তানের কারখানা সৃষ্টি করছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ছোট্ট একটি উপদেশ “তিতিক্ষস্ব ভারত” ( হে ভরতবংশীয় অর্জুন সহ্য কর) আসলে কিন্তু ছোট্ট নয়। সাত ঘাটের জল খাওয়ার পর মানুষ একদিন বুঝতে পারবে, খিদের সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে মাছ যেমন বড়শি গিলে ফেলছে, মানুষ ও তেমনি কলখারখানামুখী কাগুজে টাকা ভিত্তিক শ্রমবিমুখ এক কৃত্রিম সভ্যতার সৃষ্টি করে এক সুবিশাল অদৃশ্য বড়শীকে গিলতে শুরু করেছে যার ভয়াবহ প্রভাব ইতিমধ্যে সুস্পষ্ট।
0 Comments