আগামী ১৭-০৬-২০২০ ইং রোজ বুধবার
যোগিনী একাদশী ব্রত
*যোগিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য*
❖❖❒❖❖❒❖❖❒❖❖❒❖❖❒
🔰🔰ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে বর্ণিত আছে।
*💢🌸💢যুধিষ্ঠির বললেন-*
_"হে বাসুদেব! আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য কৃপাপূর্বক আমার কাছে বর্ণনা করুন।"_
*⚜️🌸⚜️শ্রীকৃষ্ণ বললেন--*
_"হে মহারাজ! সকল পাপবিনাশিনী ও মুক্তিপ্রদ এই উত্তম ব্রতের কথা বলছি, আপনি শ্রবণ করুন। আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী 'যোগিনী' নামে পরিচিত।"_
⚜️🌸⚜️ _"মহাপাপ বিনাশকারী এই তিথি ভবসাগরে পতিত মানুষের উদ্ধারলাভের একমাত্র নৌকাস্বরূপ। ব্রত পালনকারীদের পক্ষে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রত বলে প্রসিদ্ধ। এই প্রসঙ্গে আপনাকে একটি পবিত্র পৌরাণিক কাহিনী বলছি।"_
⚜️🌸⚜️ _"অলকা নগরে শিবভক্ত পরায়ণ কুবের নামে এক রাজা ছিল। তিনি প্রত্যহ শিবপূজা করতেন। তার হেমমালী নামে একজন মালী ছিল। প্রতিদিন শিব পূজার জন্য মানস সরোবর থেকে সে ফুল তুলে যক্ষরাজ কুবেরকে দিত।"_
⚜️🌸⚜️ _"বিশালাক্ষী নামে হেমমালীর এক পরমা রূপবতী পত্নী ছিল। সে তার সুন্দরী পত্নীর প্রতি অত্যন্ত আসক্ত ছিল। একদিন সে তার স্ত্রীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়ল। রাজভবনে যাওয়ার কথাও ভুলে গেল। বেলা দুই প্রহর অতীত হল। অর্চনের সময় চলে যাচ্ছে দেখে রাজা ক্রুদ্ধ হলেন। মালীর বিলম্বের কারণ অনুসন্ধানে এক দূত প্রেরণ করলেন।"_
*⚜️🌸⚜️দূত এসে রাজাকে বলল--* _''সে গৃহে স্ত্রীর সাথে আনন্দে মত্ত।''_
⚜️🌸⚜️ _"দূতের কথা শুনে কুবের রেগে তখনই মালীকে তার সামনে হাজির করতে আদেশ দিল। এদিকে মালী পূজার সময় অতিবাহিত হয়েছে বুঝতে পেরে অত্যন্ত ভয় পেল। তাই স্নান না করেই সে রাজার কাছে উপস্থিত হল।"_
⚜️🌸⚜️ *তাকে দেখামাত্র রাজা ক্রোধবশে চোখ রাঙিয়ে বললেন-* _"-রে পাপিষ্ঠ, দুরাচার! তুই দেবপূজার পুষ্প আনতে অবজ্ঞা করেছিস তাই আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি তুই শ্বেতকুষ্ঠগ্রস্ত হয়ে যা এবং তোর প্রিয়তমা ভার্যার সাথে তোর চিরবিয়োগ সংগঠিত হোক। রে নীচ, তুই এখনি এই স্থান থেকে ভ্রষ্ট হয়ে অধোগতি লাভ কর।"_
⚜️🌸⚜️ _"কুবেরের এই অভিশাপে হেমমালী তার পত্নীর সাথে স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে দীর্ঘকাল যাবৎ কুষ্ঠরোগ ভোগ করতে লাগল। রোগের যন্ত্রণায় দিন অথবা রাত্রে কখনই সে সুখ পেত না। এভাবে শীত গ্রীষ্মে প্রচন্ড বেদনায় বহু কষ্টে সে জীবন যাপন করতে লাগল। কিন্তু দীর্ঘদিন মহাদেবের অর্চনের ফুল সংগ্রহের সুকৃতির ফলে সে শাপগ্রস্ত হয়েও বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ শিবের বিস্মরণ কখনও হয়নি।"_
⚜️🌸⚜️ _"একদিন হেমমালী ভ্রমণ করতে করতে হিমালয়ে শ্রী মার্কণ্ডেয় ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হল।
*⚜️🌸⚜️কুষ্ঠরোগে পীড়িত সপত্নী হেমমালীকে দর্শন করে শ্রী মার্কণ্ডেয় তাকে জিজ্ঞাসা করলেন--*
_"'তুমি কার অভিশাপে এই রকম নিন্দনীয় কুষ্ঠরোগগ্রস্ত হয়েছ?''_
*🍃🌸🍃সে উত্তর দিল--* _''হে মুনিবর! রাজা ধনকুবেরের আমি ভৃত্য ছিলাম। আমার নাম হেমমালী। আমি প্রত্যহ মানস সরোবর থেকে ফুল তুলে শিব পূজার জন্য রাজাকে দিতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একদিন স্ত্রীর মনোরঞ্জন হেতু কামাসক্ত হওয়ায় সেই ফুল দিতে বিলম্ব হয়। রাজার অভিশাপে এই রকম দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছি। পরোপকারই সাধুগণের স্বাভাবিক কর্ম। হে ঋষিশ্রেষ্ঠ! আমি অত্যন্ত অপরাধী। কৃপা করে আমার প্রতি প্রসন্ন হন।"_
*☘️🍁তখন দয়ার্দ্র চিত্ত মার্কণ্ডেয় মুনি বললেন--*
_''হে মালী! তোমার মঙ্গলের জন্য শুভফল প্রদানকারী এক ব্রতের উপদেশ করছি। তুমি আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের 'যোগিনী' নামক একাদশী পালন কর। এই ব্রতের পুণ্য প্রভাবে তুমি অবশ্যই কুষ্ঠব্যাধি থেকে মুক্ত হবে।''_
*⚜️🌸⚜️শ্রীকৃষ্ণ বললেন--* _"ঋষির উপদেশ শ্রবণ করে হেমমালী তাকে প্রণাম জানাল। পরে অত্যন্ত আনন্দে ঋষির আদেশ মতো নিষ্ঠার সঙ্গে যোগিনী একাদশী ব্রত পালন করল। এই ভাবে হেমমালী সমস্ত রোগ থেকে মুক্ত হল ও পত্নীসহ সুখে জীবন যাপন করতে লাগল।"_
⚜️🌸⚜️ _"হে মহারাজ যুধিষ্ঠির! আমি আপনার কাছে এই ব্রত উপবাসের মহিমা কীর্তন করলাম। এই ব্রত পালনে অষ্টাশি হাজার ব্রাহ্মণকে ভোজন করানোর ফল লাভ হয়। যে ব্যক্তি এই মহাপাপ বিনাশকারী ও পুণ্য ফল প্রদায়ী যোগিনী একাদশীর কথা পাঠ ও শ্রবণ করে সে অচিরেই সর্বপাপ থেকে মুক্ত হবে।'
0 Comments