আদর্শ পিতা মাতা হওয়ার প্রারম্ভিক সোপানই হলো, শাস্ত্রের নিয়মকে অনুসরণ করে সন্তান ধারণে প্রবৃত্ত হওয়া!
বিবাহিত জীবনে একজন নারী এবং পুরুষের পূর্ণতা পিতৃত্বে এবং মাতৃত্বে। আর পিতৃত্ব এবং মাতৃত্বের পূর্ণতা একজন সুস্থ-সবল, গুণবান, যশস্বী, সুশীল, এবং কৃষ্ণ ভক্ত সন্তান লাভ করার মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের সনাতন ধর্মের এক তৃতীয়াংশ লোকেরাই জানিনা কেমন করে গর্ভধারণ করতে হয়? কোন প্রকারে সহবাস করলে একজন সুসন্তান লাভ করা সম্ভব? অনেকেই আক্ষেপ করে বলি এমন পিতা মাতার এমন কুসন্তান কোথা থেকে আসলো? আদৌ আমরা তার অন্তর্নিহিত কারন অনুসন্ধান করার চেষ্টা করিনা।
এবার চলুন সনাতন শাস্ত্রের আঙ্গিকে যৎকিঞ্চিত আলোচনায় অগ্রসর হই-
সন্তান লাভের মনোরথে স্বামী স্ত্রীর মিলনের জন্য তিথি-নক্ষত্র, দিন-ক্ষণ, শুভ-অশুভ বিচার বিশ্লেষণ আবশ্যক। উপরিউক্ত বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে স্বামী স্ত্রীর সঙ্গম করা অপরিহার্য।
স্মৃতি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে----
নিষেকাদ্ বৈজিকং চৈনো গার্ভিকং চাপমৃজ্যতে।
ক্ষেত্রসংস্কার সিদ্ধিশ্চ গর্ভাধানফলং স্মৃতম্ ।।
ক্ষেত্রসংস্কার সিদ্ধিশ্চ গর্ভাধানফলং স্মৃতম্ ।।
অর্থাৎ- বিধি বিধান মতো এবং সংস্কার মতো গর্ভাধান থেকে শুভগুণ সম্পন্ন সুযোগ্য সন্তান সৃষ্ট হয়। আর এই সংস্কার থেকেই বীর্য ও গর্ভ সংক্রান্ত পাপের নাশ হয়, দোষ নষ্ট হয়, ক্ষেত্র সংস্কার হয়। এগুলিই হল গর্ভাধান সংস্কারের ফল বা পরিণতি ।
নানা সমীক্ষা ও গবেষণার দ্বারা এটা প্রত্যক্ষ প্রমাণিত হয়েছে যে, গর্ভাধান কালে স্ত্রী-পুরুষ যেমন ভাবনায় ভাবিত থাকেন, বা তাদের মানসিক অবস্থা যেমন থাকে তা তাদের রজঃ বীর্যে প্রতিফলিত হয়। সেই থেকে সৃষ্ট সন্তানের উপরে সেই ভাবনা পড়ে। পিতা মাতা যে মানসিকতা নিয়ে সন্তান ধারণে প্রবৃত্ত হন সেই মানসিকতা নিয়ে সন্তানের জন্ম হয়। অনেকে কষ্ট পেয়ে বলেন-
*সন্তানটাকে মানুষ করতে পারলাম না*
শাস্ত্র বলছেন- মানুষ যা করার গর্ভকালীন সময়েই হয়ে যায়, পরবর্তীতে শত চেষ্টা করলেও তা পূর্ণতার স্তরে আসীন হয়না।
সুশ্রত সংহিতায় উল্লেখ আছে –
আহারাচার চেষ্টা ভিয়াদৃশোভি সমন্বিতৌ।
স্ত্রীপুংসৌ সমুপেয়াতাং তয়োঃ পুত্রোত্তপি তাদৃশঃ।।
( সুশ্রত সংহিতা / শরীর ২/৪৩/৫০ )
স্ত্রীপুংসৌ সমুপেয়াতাং তয়োঃ পুত্রোত্তপি তাদৃশঃ।।
( সুশ্রত সংহিতা / শরীর ২/৪৩/৫০ )
অর্থাৎ- নর নারী যেমন আহার করবেন, যে ব্যবহার বা প্রচেষ্টায় মিলিত হয়ে পরস্পর সহবাস করবেন, তাদের পুত্র সন্তানও তেমনি স্বভাব প্রাপ্ত হবে।
তাই স্বামী-স্ত্রী কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সন্তান ধারণে প্রবৃত্ত হওয়া প্রয়োজন। সন্তান ধারণকালীন সময় এবং গর্ভে অবস্থানকালীন সময়, স্বামী স্ত্রীর সাধনার সময়। যার সাধনা যত পরিচ্ছন্ন তার সাধনার ফল তত পরিপক্ব।
ঋতুকালের চতুর্থ দিনে স্নান করে পবিত্র হয়ে শ্রদ্ধা ভরে সাত্ত্বিক ভাবে ভগবানকে প্রণাম করে তারপর স্বামীর সঙ্গে সহবাস করলে সুশীল, ধার্মিক, উত্তম সন্তান লাভ হয়। রাত ১২ টা থেকে রাত ৩ টা পর্যন্ত আসুরিক সময়। আসুরিক সময়কালে সন্তান ধারণ করলে সন্তানের মধ্যে আসুরিক গুণ পরিলক্ষিত হবে।
***ঋতুর চতুর্থ, ষষ্ঠ, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ, পঞ্চম, সপ্তম, নবম, একাদশ রাত্রে সহবাস অতি উত্তম***
***একাদশী, দ্বাদশী বা কোন ব্রতের পূর্বে বা ব্রতের দিন বা ব্রতের পরের দিন সহবাস করলে সন্তান অসুর হয়ে জন্মায়***
অমাবস্যা, পূর্ণিমা, চতুর্দশী, রবিবার, সংক্রান্তি, অষ্টমী, গ্রহণ, বারবেলা, কালবেলা, আসুরিকবেলা, শনিবার, মঙ্গলবার, পূজা পর্বের দিন সহবাসে উৎপন্ন সন্তান অাসুরিক কিংবা রাক্ষস মনোভাব নিয়ে জন্ম নেয়। সেই সন্তান দ্বারা সমাজ, সংসার, রাষ্ট্র, পিতা- মাতা, আত্মীয় স্বজন সর্বদা উদ্বেগ প্রাপ্ত হবেন।
***ভোরবেলা, গোধূলি লগ্নে এবং দুপুরে
সহবাস নিষিদ্ধ***
সহবাস নিষিদ্ধ***
দৈত্যমাতা দিতি জোর পূর্বক কশ্যপ মুনিকে প্রাতঃকালে সহবাসে বাধ্য করলে তাহাদিগের হিরণ্যক্ষ এবং হিরণ্যকশিপু নামক দুই অসুর পুত্র ও হোলিকা নামক এক আসুরী কন্যা জন্ম নিয়েছিল।
কেকসী সন্ধ্যাকালে বিশ্রবা মুনিকে সহবাসে বাধ্য করলে তাদের সহবাস দ্বারা যে সন্তান জন্ম নেয় তা রাক্ষস মনোভাব সম্পন্ন। নাম তার রাবণ। আর রাক্ষস রাবনের আসুরিক মনোভাব আমরা সবাই অবগত। সুতরাং ঐ সময়ে সহবাস নিষিদ্ধ।
গর্ভাধান একটি পবিত্র কর্ম, একটি সাধনা।
শুদ্ধ বস্ত্রে, শুদ্ধ শয্যায়, শুদ্ধ চিত্তে সহবাসে লিপ্ত হতে হয় তবেই সুশীল, ধার্মিক, সুকুমার সুকুমারী পুত্র বা কন্যা সন্তান লাভ হয় । ক্লান্ত, চিন্তিত, ভয়ার্ত, বাহ্যক্রিয়া কিংবা প্রস্রাবের বেগ , ক্ষুধা, পিপাসা, মানসিক প্রতিকূলতার সময় সহবাস নিষিদ্ধ।
শুদ্ধ বস্ত্রে, শুদ্ধ শয্যায়, শুদ্ধ চিত্তে সহবাসে লিপ্ত হতে হয় তবেই সুশীল, ধার্মিক, সুকুমার সুকুমারী পুত্র বা কন্যা সন্তান লাভ হয় । ক্লান্ত, চিন্তিত, ভয়ার্ত, বাহ্যক্রিয়া কিংবা প্রস্রাবের বেগ , ক্ষুধা, পিপাসা, মানসিক প্রতিকূলতার সময় সহবাস নিষিদ্ধ।
গর্ভধারণের সময় ধর্ম চিন্তা করলে সন্তান ধার্মিক হবে তা শতসিদ্ধ নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন শাস্ত্র।
গর্ভাধানের আগে যে মন্ত্রটি পড়া আবশ্যক-
গর্ভং ধেহি সেনাবালি গর্ভং ধেহি প্রথুষ টুকে ।
গর্ভং তে অশ্বিনী দেবাবাধাতাং পুষ্কর স্রজৌ ।।
গর্ভং তে অশ্বিনী দেবাবাধাতাং পুষ্কর স্রজৌ ।।
অর্থাৎ- সেনাবালি দেবি! এবং হে বিস্তৃত প্রথুষটুকা দেবী, তুমি এই স্ত্রীকে গর্ভধারণের সামর্থ দাও এবং তাকে পুষ্ট করো। কমল মালায় অশ্বিনীকুমার ভাতৃদ্বয় তার গর্ভকে পুষ্ট করুন।
তাই আমরা যদি সুসন্তান লাভ করতে চাই তাহলে অবশ্যই স্বামী স্ত্রীকে গর্ভধারণের সময়টাকে সাধনার সময়রুপে গ্রহণ করতে হবে।
মনে রাখা আবশ্যক,
আদর্শ পিতা মাতা হওয়ার প্রারম্ভিক সোপানই হলো, শাস্ত্রের নিয়মকে অনুসরণ করে সন্তান ধারণে প্রবৃত্ত হওয়া।
আদর্শ পিতা মাতা হওয়ার প্রারম্ভিক সোপানই হলো, শাস্ত্রের নিয়মকে অনুসরণ করে সন্তান ধারণে প্রবৃত্ত হওয়া।
0 Comments