সাবিত্রী সত্যবান

সাবিত্রী সত্যবান

শাল্বদেশের রাজা দ্যুমৎসেনের ঔরসে ও তাঁর স্ত্রী শৈব্যার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।  ঘটনাক্রমে দ্যুমৎসেন অন্ধ হয়ে গেলে তাঁর শত্রুরা তাঁকে রাজ্যচ্যুত করেন। ফলে ইনি সপরিবারে বনবাসী হন। এই সময় সত্যবান সস্ত্রীক তপস্যা করতে থাকেন। সত্যবানও মাতাপিতার সেবা করে তাপসের জীবনযাপন করতেন। বাল্যকালে সত্যবান ঘোড়া ভালোবাসতেন  এবং মাটি দিয়ে অশ্বমূর্তি নির্মাণ করতেন। সে জন্য তার নাম হয় চিত্রাশ্ব।



সাবিত্রী ছিলেন অশ্বপতি নামক রাজার একমাত্র কন্যা। মায়ের নাম ছিল মালবী। অশ্বপতি সাবিত্রীদেবীকে নিষ্ঠার সাথে পূজা করে এই কন্যা লাভ করেছিলেন। তাই এই কন্যার নামও সাবিত্রী রাখা হয়েছিল। সাবিত্রী যৌবনে উপনীত হওয়ার পর, তাঁর অসাধারণ সৌন্দর্যের কারণে, কোন সাধারণ যুবক তাঁকে বিবাহ করতে সাহসী হলেন না। পরে অশ্বপতি তাঁকে নিজের পছন্দমতো স্বামী খুঁজে নেবার অনুমতি দেন। এরপর সাবিত্রী  সদলবলে স্বামীর অনুসন্ধানে বের হন। অনুসন্ধান শেষে সাবিত্রী রাজবাড়িতে ফিরে এসে দেখেন অশ্বপতি নারদের সাথে কথোপকথন করছেন। নারদ অশ্বপতিকে সাবিত্রী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, অশ্বপতি সাবিত্রীর বিবাহের অসুবিধার কথা বলেন। এরপর নারদের সামনেই অশ্বপতি সাবিত্রীকে অনুসন্ধানের ফলাফল বর্ণনা করতে বলেন। উত্তরে ইনি সত্যবানকে পছন্দের পাত্র হিসাবে উল্লেখ করেন। অশ্বপতি নারদকে সত্যবানের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, নারদ সত্যবানের সবিশেষ প্রশংসা করেন এবং একই সাথে জানান যে– সত্যবান স্বল্পায়ু। এরপর অশ্বপতি সাবিত্রীকে অন্য স্বামী খুঁজে নেবার কথা বললে, সাবিত্রী সত্যবানকেই স্বামী হিসাবে গ্রহণ করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। সব শুনে নারদ সত্যবানের সাথেই সাবিত্রীর বিবাহ  দেওয়ার কথা বলেন। পরে অশ্বপতি সাবিত্রীকে সাথে নিয়ে দ্যুমৎসেনের আশ্রমে আসেন এবং সেখানেই সত্যবানের সাথে সাবিত্রীর বিবাহ হয়।
বিবাহের এক বৎসর পরই সত্যবানের মৃত্যুর দিন উপস্থিত হয়। এই দিন সত্যবান বনে ফল ও কাঠ আনার জন্য উদ্যোগ নিলে, সাবিত্রী শ্বশুরের অনুমতি নিয়ে সত্যবানের সাথে বনে যান। ফল ও কাঠ সংগ্রহ করতে করতে সত্যবান হঠাৎ শিরঃপীড়া অনুভব করে অবসন্ন হয়ে পড়ে যান। পরে সাবিত্রী সত্যবানের মাথা কোলে তুলে নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর সাবিত্রী রক্তবস্ত্র পরিহিত বিরাটকায় এক ভয়ঙ্কর পুরুষকে সত্যবানের পাশে দেখতে পেলেন। সাবিত্রী জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে–  তিনিই যম। সত্যবান পুণ্যবান এবং সাবিত্রী পতিব্রতা বলে, যমদূতের পরিবর্তে তিনি নিজেই এসেছেন। এরপর সত্যবানকে পাশবদ্ধ করে যমকে  দক্ষিণ দিকে যেতে দেখে, সাবিত্রী যমের অনুসরণ করে অগ্রসর হলেন এবং এই অনুসরণের মধ্য দিয়েই সাবিত্রী যমের কাছ থেকে পাঁচটি বর পান।
প্রথম বর : যম সত্যবানকে নিয়ে যাবার সময় সাবিত্রী তাঁকে অনুসরণ করলে, যম সাবিত্রীকে থামতে বলেন। কিন্তু সাবিত্রী স্তব দ্বারা যমকে সন্তুষ্ট করলে, যম তাঁকে স্বামীর জীবন ছাড়া অন্য যে কোন বর প্রার্থনা করতে বলেন। তাতে তিনি শ্বশুরের অন্ধত্ব দূর হওয়ার বর প্রার্থনা করেন। তথাস্তু বলে যম সাবিত্রীকে ফিরে যেতে বলেন।
দ্বিতীয় বর : প্রথম বর পাবার পর, যম সত্যবানকে নিয়ে অগ্রসর হলে, সাবিত্রী আগের মতোই যমকে অনুসরণ করতে থাকেন। যম সাবিত্রীকে ফিরে যেতে বলেন। এরপর নানা অনুনয়-বিনয় করে তিনি যমকে মুগ্ধ করেন। এরপর সাবিত্রীকে স্বামীর জীবন ছাড়া দ্বিতীয় বর প্রার্থনা করতে বলেন। সাবিত্রী পুনরায় শ্বশুরের রাজ্যলাভ প্রার্থনা করেন।
তৃতীয় ও চতুর্থ বর : একইভাবে সাবিত্রী যমকে অনুসরণ করে, বাক্যের দ্বারা আরও দুটি বর লাভ করেন। এই বরগুলো হলো-
সাবিত্রীর পিতার শতপুত্র লাভ প্রার্থনা
সত্যবানের ঔরসে সাবিত্রীর শতপুত্র প্রার্থনা।
পঞ্চম বর : উপরের দুটি বরের কারণে, সাবিত্রী সত্যবানের ঔরসে পুত্রলাভের সৌভাগ্য লাভ করেন। কিন্তু এই সত্য রক্ষা করতে গিয়ে যম সাবিত্রীকে পঞ্চম বর দিতে বাধ্য হন। এই পঞ্চম বরটি ছিল- সত্যবান জীবিত হউন।
এরপর যম সত্যবানকে মুক্ত করে দেন এবং সাবিত্রীকে আশীর্বাদ করে বিদায় নেন। এরপর সাবিত্রী সত্যবানের অচেতন শরীরের কাছে এসে, তাঁর মাথা কোলে তুলে নিয়ে বসেন। পরে সত্যবানের সংজ্ঞা ফিরে এলে, উভয়েই আশ্রমে ফিরে যান। যমের আশীর্বাদে দ্যুমৎসেনের চক্ষু ও রাজ্যলাভ এবং অশ্বপতির শতপুত্র লাভ হয়।

Post a Comment

0 Comments