☀ পাপ - পুন্য কি ❓ || পাপ খন্ডনের উপায় কি❓☀

☀  পাপ - পুন্য কি ❓ ||  পাপ খন্ডনের উপায় কি❓☀



   

🌿 পাপ - পুণ্য কি বস্তু তা আমরা দেখতেও পাই না , শুনতেও পাই না আবার দেখেও মানি না ।
যেমন , একজন চোর — চুরি করার অপরাধে তার হাত - পায়ের আঙ্গুলগুলি কেটে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু অন্য পাকা চোর সেই সব দেখে ও পরিণামে তারও হাত - পা কেটে যেতে পারে — সে অনুরূপ ঘটনা দেখেও মনের দিক থেকে তা মানতে চায় না । সে ভাবতে পারে , ‘ আমি এমন পাকা , কেউই টের পাবে না ।

আবার শুনেও মানুষ শেখে না । যেমন , ধূমপান করার ব্যাসের দরুণ টি.বি রােগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ডাক্তার ধূমপান করতে নিষেধ করেন । কিন্তু রােগী কিছুদিন পরে পুনরায় ধূমপান করতে শুরু করেছে । যদিও ডাক্তারের কথা সে শুনেছিল , তবুও সে আর সেই নির্দেশ মানছে না ।

ঠিক তেমনিই , পাপের ফলে যখন নরকভােগ হয় কিংবা পুণ্যের ফলে যখন স্বর্গভােগ হয় , তখন সেই ব্যক্তি নরক বা স্বর্গ থেকে বলে না যে , “ দেখ , আমি কেমন নরক ভােগ করছি ’ কিংবা ‘ স্বর্গ ভােগ করছি ।
আমরা দেখি , জগতে একই পরিবেশে বিভিন্ন জনের মধ্যে বিপরীত অবস্থা দেখা যায় । কেউ দুঃখী , কেউ সুখী , কেউ সুস্থ , কেউ রােগী , কেউ খোঁড়া , কানা বা বােবা । আবার কেউ দেখতে সুন্দর , কেউ বিকৃতমস্তিষ্ক , কেউ সুস্থির মস্তিষ্ক । এই রূপ বৈচিত্র্যের কারণ ব্যাখ্যা কেউ করতে পারে না ।
কিন্তু শাস্ত্রে নির্দেশ আছে — আমরা আমাদের পূর্ব জীবনের কর্মফল অনুসারে এই জীবন লাভ করেছি ।

🌿আরও দেখা যায় , পাপপরায়ণ কিংবা পুণ্যবান ব্যক্তির দেহত্যাগের সময় কতকগুলি বিপরীত লক্ষণ প্রকাশিত হয় । যেমন , পাপী ব্যক্তি দেহত্যাগের সময় বিকট চিৎকার করে , বিছানায় মলমূত্র ত্যাগ করে , যেন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছে — যমদূতের ভয় । পুণ্যবান ব্যক্তি শান্তভাবেই দেহত্যাগ করে । ভক্তরা সাধারণত দেখা যায় হরিনাম উচ্চারণ করতে তে , কৃষ্ণচিন্তা করতে করতে গভীর প্রশান্তিতে দেহ ত্যাগ করেন ।
তাই পাপ - পুণ্য মানা হােক আর নাই হােক , আমরা কি বস্তু পাবো, আমাদের কি গতি হবে, তা নির্ভর করছে, “এই জনমে আমরা কি করছি তার উপর, তাহাই পাপ পুণ্য বিচার”।

মানুষ তার জীবনে যদি পুণ্যকর্ম করে চলে , তবে সে পুণ্যফলে স্বর্গ ও সুখ লাভ করবে । পাপকর্ম করলে পাপের ফলে সে নরক ও দুঃখযন্ত্রণা পাবে ।

🌿কেউ যদি পাপের ফলে এই জীবনে শাস্তি ভােগ করে থাকে , তা হলে শাস্তিটাই প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ , তাই সেই পাপ খণ্ডিত হল ।
আবার যদি কেউ পাপকর্ম না করার সংকল্প করে এবং পুণ্যকর্ম করেই চলে , তবে সেও শুদ্ধতা লাভ করছে । “অন্তগতং পাপং জনানাং পুণ্য কমান্ ( গীতা ৭/২৮ ) “
প্রায়শ্চিত্ত কথাটির তাৎপর্য হল পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা । কেউ প্রায়শ্চিত্তের পরেও যদি পাপ করতে থাকে তবে সেই রকম প্রায়শ্চিত্তের কোনও মূল্য নেই । “প্রায়শ্চিত্তমথেইপার্থং মন্যে কুঞ্জরশৌচবৎ” । চোর চুরি করল ,ধরা পড়ল, শাস্তি পেল, আবার চুরি করল । আবার ধরা পড়বে । আবার শাস্তি পাবে । আবার .... এইভাবে পাপপ্রবণ মানসিকতার ফলে মানুষ কোন দিনও শুদ্ধ হতে পারবে । চির যাতনা ভােগই তার ভাগ্যে ঘটে ।
আবার কেউ বেদবিহিত পুণ্যকর্ম করার ফলে স্বর্গসুখ ভােগ করল । স্বর্গের সুখ ভােগের ফলে তার সঞ্চিত পুণ্য শেষ হয়ে যায় । তখন আবার তাকে দুঃখময় সংসারে জন্ম নিতে হয় । “”ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্য লােকং বিশান্তি” ।
তখন হয়তাে আবার পাপকর্মে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতেই পারে । কভু স্বর্গে কভু বা নরকে । তবে পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার সবচেয়ে চূড়ান্ত পন্থা হচ্ছে , পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে শরণাগত হওয়া ।

🌿#গীতায় ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
“সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মােক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ” ॥ গীতা:১৮/৬৬ ॥
অনুবাদ : সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও । আমি তােমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব । তুমি শােক করাে না ।

🌿আমরা যদি এই দুঃখযন্ত্রণাময় জড় জগৎ থেকে উত্তীর্ণ হতে চাই , আর এই জগতে জন্ম - মৃত্যু আদির যন্ত্রণা ভােগ করতে না চাই , তবে আমাদের অবশ্যই শ্রীকৃষ্ণচরণে শরণাগত হতে হবে অথবা তার শুদ্বভক্তের অর্থাৎ ভগবভক্তের সেবা করতে হবে । “মহৎ সেবাং দ্বারমাহুর্বিমুক্তে” ।

অন্যথায় জগতে দুরাচারী বিষয়ী কৃষ্ণভক্তিবিমুখ ব্যক্তির সঙ্গক্রমে আমাদের পাপময় যন্ত্রণাময় জীবনে আবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে । “তমােঘারং যােষিতাং সঙ্গিসঙ্গম্” ।

🌿গীতা অনুসারে পাপ ও পুন্য দুটোই বন্ধনের কারন তাই ভগবদ্ভক্তিতে আমাদের যুক্ত হতে হবে । অবশ্য ভক্তিযােগে থাকলে পাপ ও পুণ্য দুইই নষ্ট হয় এবং জীব দুঃখময় সংসার উত্তীর্ণ হয়ে ভগবদ্ধামে গতিলাভ করে , যা দুর্লভ মনুষ্য - জন্মের লক্ষ্য বস্তু ।

তবে এই জগতে থাকাকালীন ভক্তেরও অনেক সময় দুঃখকষ্ট ভােগ হতে দেখা যায় । যেমন , চলন্ত বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ করলেও হালকাভাবে কিছুক্ষণ ঘুরতেই থাকে , সেইভাবে ভক্তিযােগে পাপ নষ্ট হলেও কিছু দিন লঘুভাবে কষ্ট লাভ হতেই পারে । কিন্তু পাখার ঘূর্ণায়মান অবস্থাটি কালে নিশ্চিত রূপে বন্ধ হয়ে যায় , তেমনি ভক্তেরও ভবসংসার চক্র থেকে নিশ্চিতভাবে উত্তরণ ঘটে ।

🌿 পরিশেষে: বর্তমান জীবনে আমরা যেসব সুখ দুঃখ ভােগ করছি — সেই সবই আমাদের পুণ্য বা পাপকর্মের ফলস্বরূপ । কিন্তু যখন কেউ কৃষ্ণের আনন্দবিধানের জন্য ভক্তিযুক্ত কর্ম করে তখন সেই কর্ম এই জড় জাগতিক সুখ - দুঃখ ভােগের কারণ হয় না , কৃষ্ণভক্তিসেবা করার ফলে বদ্ধ জীব পাপ পুণ্য —সুখ দুঃখের ঊর্ধ্বে পরম ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের নিত্য অপ্রাকৃত ধামে আনন্দ লাভ ও বাস করবার সুযােগ পায়॥

Post a Comment

0 Comments