শ্রী পদ্মিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য:

শ্রী পদ্মিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য:


এবছর আশ্বিন মাস পুরুষোত্তম মাস। স্মার্তগণ পুরষোত্তম মাস বা অধিমাসকে ‘মলমাস’ বলে এই মাসে সমস্ত শুভকার্য পরিত্যাগ করে থাকেন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই মাসকে পারমার্থিক মঙ্গলের জন্য অন্য সকল মাস থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে নির্ণয় করেছেন। তিনি নিজের নামানুসারে এই মাসের নাম ‘পুরুষোত্তম’ মাস রেখেছেন।
"যুধিষ্ঠির"বললেন- হে জনার্দন ! আমি বহু ধর্ম ও ব্রতের কথা শুনেছি। এখন পুরুষোত্তম মাসের সর্বপাপবিনাশিনী ও পুন্যদায়িনী শুক্লপক্ষীয় ‘পদ্মিনী’ একাদশীর কথা আমার কাছে বর্ণনা করুন। যা শ্রবণ করলে পরমপদ প্রাপ্ত হওয়া যায়।
"ভগবান শ্রীকৃষ্ণ" বললেন- দশমীর দিন থেকেই ব্রতের শুরু হয়। কাঁসার পাত্রে ভোজন, মসুর, ছোলা, শাক এবং অপরের অন্ন ও আমিষ দশমীর দিন বর্জন করতে হয়। পরের দিন প্রাতঃকৃত্যের পর সুগন্ধী ধূপ, দীপ, চন্দনাদি দিয়ে ভগবানের পূজা করতে হয়। রাত্রিতে জাগ্রত থেকে ভগবানের নাম ও গুণ কীর্ত্তন করতে হয়। এখন এই ব্রতের একটি ইতিহাস আপনার মনোরঞ্জনের জন্য বলছি।
পূর্বে পুলস্ত মুনি দেবর্ষি নারদকে এই ইতিহাস বর্ণনা করেছিলেন। একসময় রাজা কার্তবীর্য লঙ্কাপতি রাবণকে পরাজিত করে তাঁর কারাগারে বন্দী করে রাখে। পুলস্ত মুনি রাজার কাছে রাবণের মুক্তি প্রার্থনা করেন। মুনির আজ্ঞায় রাজা রাবণকে মুক্ত করে দেন। এই আশ্চর্যজনক কথা শুনে নারদ পুলস্ত মুনিকে জিজ্ঞাসা করেন- হে মুনিবর!
ইন্দ্রসহ সকল দেবতা যেখানে রাবণের কাছে পাজিত হয়েছিল সেখানে কিভাবে কার্তবীর্য রাবণকে পরাজিত করল? কৃপা করে তা বলুন।
পুলস্ত মুনি তখন নারদের কাছে কার্তবীর্যের জন্ম রহস্য বর্ণনা করেন।
ত্রেতাযুগে হৈহয় বংশে কৃতবীর্য নামে এক রাজা ছিলেন। মহিস্মতীপুরে তার রাজধানী ছিল। রাজার এক হাজার পত্মী ছিল। কিন্তু রাজ্যভার গ্রহণের মতো কোন পুত্র লাভ রাজার ভাগ্যে হয়নি। দেবতাদের আরাধনাতেও সুফল মেলেনি তার।
অবশেষে সাধুদের আজ্ঞানুসারে বিভিন্ন ব্রত পালন করলেন। তথাপি রাজা ছিলেন অপুত্রক। মন্ত্রীর উপর রাজ্যভার অর্পণ করে তপস্যায় যাবেন বলে স্থির করলেন রাজা কৃতবীর্য। রানী মহারাজ হরিশচন্দ্রের কন্যা পদ্মিনী ছিলেন অত্যন্ত পতিব্রতা। স্বামীর সঙ্গে তিনিও তপস্যার জন্য মন্দার পর্বতে গমন করলেন। সেখানে তারা দশ হাজার বৎসর কঠোর তপস্যা করলেন। কিন্তু তবুও কৃতবীর্য পুত্রসুখে বঞ্চিতই রইলেন। রাণী পদ্মিনী মহাসাধ্বী অনুসূয়াকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে সাধ্বী! পুত্র লাভের জন্য আমার স্বামী দশ হাজার বছর তপস্যা করেও বিফল হয়েছে। এখন যে ব্রত পালনে ভগবান প্রসন্ন হন অতিশ্রেষ্ঠ পুত্র লাভ হয়, এমন কোন উপায় বিধান করুন।
পদ্মিনীর প্রার্থনায় অনুসূয়া প্রসন্ন হয়ে বললেন- বত্রিশ মাস অন্তরে এক অধিমাস বা পুরুষোত্তম মাস আসে। এই মাসে পদ্মিনী ও পরমা দুই একাদশী। এই ব্রত পালন করলে পুত্র দাতা ভগবান শীঘ্রই প্রসন্ন হবেন। অনুসূয়ার নির্দেশে পদ্মিনী পরম শ্রদ্ধায় এই একাদশী ব্রত পালন করলেন। সেই ব্রতে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং ভগবান গরুড় বাহনে আরোহন করে পদ্মিনীর সম্মুখে উপস্থিত হলেন।
ভগবান বললেন- হে ভদ্রে! আমি প্রসন্ন হয়েছি।পুরুষোত্তম মাসের সমান কোন মাস আমার প্রিয় নয়। এই মাসের একাদশী আমার পরম প্রিয়। তুমি সেই ব্রত যথাযথ পালন করেছ। তাই আমি তোমার ইচ্ছানুরূপ বর প্রদান করব।
ভগবানের স্তব করে রাণী বললেন- হে ভগবান! আমার স্বামীকে আপনি বরদান করুন। ভগবান তখন রাজার কাছে এসে বললেন- হে রাজেন্দ্র! আপনার অভিলষিত বর প্রার্থনা করুন। মহানন্দে রাজা বললেন- হে জগৎপতি, মধুসূধন! দেবতা, মানুষ, নাগ, দৈত্য, রাক্ষস আদি কেউ তাকে পরাজিত করতে পারবে না, এমন পুত্র আমি প্রার্থনা করি। রাজার প্রার্থনা অনুসারে বরদান করে ভগবান অন্তর্হিত হলেন। রাজা পত্নীসহ নগরে ফিরে এলেন। যথা সময়ে রাণী পদ্মিনীর গর্ভে মহাবলশালী এক পুত্রের জন্ম হয়। মহারাজ কৃতবীর্য পুত্রের নাম রাখে কার্তবীর্য। ত্রিলোক তার সমান কোন বীর ছিলনা।তাই দশানন রাবণও তার কাছে পরাজিত হন।
শ্রী কৃষ্ণ বললেন------হে মহারাজ! এই ব্রত যিনি পালন করবেন, তিনি ভগবান শ্রী হরির শ্রীপাদপদ্মে অহৈতুকী ভক্তি লাভ করবেন।
শ্রী কৃষ্ণের উপদেশে ধর্মরাজ সপরিবারে এই একাদশী ব্রত পালন করেন। যিনি এই ব্রত মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণ করেন তিনি বহু পুণ্য লাভ করেন।।

Post a Comment

0 Comments