প্রভুপাদ শ্রীল বিপিন বিহারী গোস্বামী


প্রভুপাদ শ্রীল বিপিন বিহারী গোস্বামী

শ্রীপাট বাঘনাপাড়া।  বর্ধমান

           বংশ  পরিচয়

বংশবদনানন্দ বংশীর অবতার। মহাপ্রভুর আজ্ঞায় পুনরায় পৌত্র রামচন্দ্র রূপে জন্ম গ্রহণ করেন।

          একদিন অম্বিকা হইতে মা জাহ্নবা মাতা  বাঘ্ণাপাড়া ছকড়ি চট্টের বাড়িতে আসিলেন। ছকড়ি চট্টের পুত্র বংশী বদনানন্দ, তাঁর পুত্র চৈতন্য দাস ও তাঁর ভার্যা জাহ্নবা মাতাকে ভক্তিভরে প্রণাম করলেন।

               জাঁহাবা মাতা আশীর্বাদ করিলেন।

              জাহ্নবা কহেন মাগো !শুনহ বচন।।

              তোর দুই পুত্র হবে ভুবন পাবন।

              জৈষ্ঠ পুত্র মোরে দিবে করিব পালন।।

             আমারে বঞ্চনা নাহি কর কদাচন।।

              মুই জম্মবন্ধ্যা মোর পুত্র কন্যা নাই।

              সেই লাগি তোর জৈষ্ঠ পুত্র ভিক্ষা চাই।.

              ঠাকুরানী কহে মাগো !কৃপা কর মোরে।

              দুই পুত্র হলে জৈষ্ঠ পুত্র দিব তোরে।।

               বংশীবদন নাম আদ্য নাম হয়।

               সেই বংশী রামচন্দ্র নাহিক সংশয়।।

              চৌদ্দ শত পঞ্চান্নে ফাল্গুনিক মাসে।

                রাম চন্দ্র জন্মিলেন শুভ ক্ষণে।।

এর পর জাহ্নবা মাতা রামচন্দ্রকে নিজ গৃহে নিয়ে গেলেন। দীক্ষা, শিক্ষা, দিয়ে পুত্র শ্নেহে লালন পালন করতে লাগলেন।

এই বংশে প্রভুপাদ বিপিন বিহারী গোস্বামী  জাহ্নবা মাতার ধারা সিদ্ধ গুরু পরম্পরা ধরে রাখলেন। যদি এই গোস্বামীগন সিদ্ধ গুরু পরম্পরা

ধরে না রাখতেন, তাহলে আজ গৌড়ীয় সিদ্ধ গুরু পরম্পরা বিলুপ্ত হইয়া যাইত।

শ্রীল বিপিন বিহারী গোস্বামীপাদ ছিলেন সত্যিকারের  কৃষ্ণ তত্ত্বজ্ঞ শুদ্ধ বৈষ্ণব. যাহার ভিতর ছিল না বার্নাভিমান, ছিল না কোনো দাম্ভিকতা, ছিল না কোনো  মাসর্যতা  না ছিল কোনো পন্ডিতভিমান,তিনি সর্র্ব গুনে গুণী হইয়া ও নিজেকে শূদ্রাধম, গুনহীন বলছেন।

এটা আমার কথা নয় , উনি যখন দশমূল রস বৈষ্ণব জীবনং লিখছেন, সেখানে তিনি তাঁর প্রভুপাদ, গোস্বামী উপাধি তিরস্কার করছেন  দৈন্য বসত।

            গোস্বাম্যাদুপাধি মম গ্রন্থাদি মাখার।

              পরিচয় লাগি মাত্র স্বীকার প্রচার।।

               নিচ শূদ্রাধম আমি গুনলেস হীন

              ভক্ত বেশে অপকর্মে রত রাত্রি দিন।।

               অতএব গোস্বাম্যাদু পাধি মম সেই।

              পরিহাস রূপমাত্র কহিলাম এই।।

               নিচ অজ্ঞ কাছে প্রায় প্রভুপাধি মোর

প্রভুপাদ বিপিন বিহারী গোস্বামী, তিনি ব্রাহ্মণ কুলোদ্ভব তাঁর বর্ণাভিমান স্বাভাবিক। তথাপি এই অভিমানের জন্য খেদ করছেন। আর আমরা ব্রাহ্মণ সেজে গলায় উপাধি ঘন্টা বেঁধে লোক সমাজে প্রতারণা করছি।

আমরা বৈষ্ণব হয়ে অহংকার করি যে আমরাই প্ৰকৃত বৈষ্ণব। কিন্তু দাস বলতে সংকোচ করি।

মহাপ্রভুর শিক্ষা... তৃণাদপি সুনীচেনভাবের জায়গায়,... তৃণাদপি সুউঁচেন,,  ভাব প্রবল।

অমানিনা মানদেন,,  নিজে অমানি হয়ে অপরকে মান দিবে। তাঁর জায়গায় আমি ছাড়া জগতে আর কেহ মানি নাই.। গোস্বামী, বাবাজী বৈষ্ণবের নিন্দা করছি।

শ্রীপাদ বিপিন বিহারী গোস্বামী প্রভুকে দেখেন তিনি

ব্রাহ্মণ হয়েও  কত দৈন্য ভরে অভিমান শূন্য হয়ে বৈষ্ণব বন্দনা করছেন।

তাঁর লেখা.. (দশমূল রস বৈষ্ণব জীবনং )

              ঠাকুর বৈষ্ণবগন করি নমস্কার

              যাঁদের আশ্রয়ে ভক্তি হয়ত সবার।।

             নিসকিঞ্চন বৈষ্ণবের চরনোদক

              পানান্তে শোধন করি আপন মস্তক।.

             বৈষ্ণবের পদ রেনু অঙ্গের ভূষণ.

              বৈষ্ণবের নাম সদা করি কীর্তন।।

             বৈষ্ণব যথায় তথায় করিব বসতি।

            বৈষ্ণব সকল মোর সৰ্ব্ব কাল গতি।।

            ঐছে বৈষ্ণবের জাতি বুদ্ধি না করিবে।

            জাতি বুদ্ধি কর যদি নরক দেখিবে।।

ইহা হইতে বোঝা যায় গোস্বামীপাদের কোনো অহংকার অথবা মাসর্যাদি কিছুই ছিল না।

শ্রীল ভক্তি বিনোদ ঠাকুরই ইনাকে চিনিয়াছেন. ঠাকুর গোস্বামীপাদের সঙ্গ দীর্ঘ্য তিন বসর করেছেন। তাঁহার স্বভাব, চরিত্র, পান্ডিত্য, বৈষ্ণবতাদির সহিত ভাল ভাবেই পরিচিত। ভক্তিবিনোদ ঠাকুর অনেক চিন্তা ভাবনা করে  উপযূক্ত স গুরুর নিকট শুভ দিনে শুভ ক্ষণে দীক্ষা গ্রহণ করলেন।

ভক্তি বিনোদ ঠাকুর জানেন যে,....

         সম্প্রদায়  বিহিনো  যে  মন্ত্রস্তে  নিস্ফলা মতা :

           কলৌ খলু ভবিষ্যন্তি চট্টার সম্প্রদায়।।

সম্প্রদায় বিহীন মন্ত্র গ্রহণ করিলে কোনো ফল হয় না।  সম্প্রদায় বলতে সিদ্ধ গুরু পরম্পরা। যেমন শ্রীকৃষ্ণ হইতে ব্রহ্মা, ব্রহ্মা হইতে নারদ, নারদ হইতে ব্যাসদেব এই রূপ ভাবে মাধবেন্দ্র পুরী, ঈস্বরপুরী, হইতে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু,

শ্রীমন্মহাপ্রভুর পর হইতে শ্রীনিত্যআনন্দ, শ্রীঅদ্বিত, শ্রীগদাধর, শ্রীবাসাদি, যত পার্ষদগন আছেন      তাঁরাই সিদ্ধ গুরু পরম্পরা ধরে রেখেছেন। ইহাই মঞ্জুরী উপাসনার পরম্পরা।

প্রভুপাদ শ্রীবিপিন বিহারী গোস্বামী শ্রী জাহ্নবা মাতার গুরু পরম্পরা ধারা.। শ্রীল ভক্তি বিনোদ ঠাকুর এই সিদ্ধ গুরু ধসরায় দীক্ষা গ্রহণ করেন।

প্রভুপাদ তাঁর (দশমুল রস বৈষ্ণব জীবনং ) গ্রন্থে

ভক্তি বিনোদ ঠাকুরকে শিষ্য করে তাঁর গুনের কথা

বলছেন। গুরু মিলে লাখে লাখ। শিষ্য মিলে এক।

প্রভুপাদ শিষ্যের ভূয়সী প্রসংশা করছেন।

             মোর প্ৰিয়  সিধ্যেতম শ্রীভক্তিবিনোদ.।

             শ্রীকেদারনাথ দত্ত সৰ্ব্ব চিত্তমোদ।।    

             দত্ত বংশ বিভূষণ সূর ভক্তিমান।

             রাজ ভক্ত দ্বারে যার বিপুল সন্মান।.

             ভার্যার সহিত তিহ মম সন্নিধানে

             শুভ দিনে দীক্ষা লন নড়াল মোকানে।।

             নড়ালের ম্যাজিস্ট্রেট তিহো সে সময়.।।

সব সময় শিষ্য তাঁর গুরুর মহিমা কীর্তন করে।

এখানে প্রভুপাদ বিপিন বিহারী গোস্বামী প্রভু অকপটে শিষ্যের গুরু ভক্তি গুনের কথা বলছেন।

          মন্ত্রলাভাবধি  তিহো রাশিতে রাশিতে।

          আমার সংসার বায় লাগিলা বহিতে।।

           সংসার নির্ব্বাহ ভয় সেই দিন হইতে। --

           দূরীভূত হইল মোর শিষ্যের ভক্তিতে।।।

          সতী ভগবতী যথা তথা ভগবতী

         পতি গুরু সেবা রতা শুদ্ধা ভক্তিমতী।।

          যৈছ ভক্তিমান হয় সূর শ্রীকেদার।

          তৈছে ভক্তিমতি ভগবতী পত্নী তাঁর।।

           কেদারের ভক্তি জ্ঞান করিয়া দর্শন

          শ্রীপাটের প্রভুগণ হইয়া আনন্দ মন।।

          আশীর্বাদ সহ ভক্তিবিনোদাখ্যা তারে।।

            সমর্পন করিলেন পত্রিকার দ্বারে।।

           সংবাদ পাত্রেতে সেই পত্র সর্ব্বজনে।

          বিদিত আছেন এই নশ্বর ভুবনে।।

           তথাপি সচিত্ত তুষ্টি করন কারন।

           সেই পত্র লিখি এথা করুন দর্শন।।

শ্রীপাট বাঘনাপাড়ার গোস্বামী প্রভুগণ কেদারনাথের

অগাধ ভক্তি জ্ঞান দর্শন করিয়া কেদারনাথকে আশীর্বাদ সহ ভক্তিবিনোদ আখ্যা প্রদান করেন।                          

    শ্রী পট্ট বাঘ্ন্যাপাড়া নিবাসিভিগোস্বামীভি :                                                   

  কেদারনাথ দত্তায় ভক্তায় কৃপয়া ভক্তিবিনদো  পাধি প্রদত্ত :।

এই ভাবে ভক্তি বিনোদ ঠাকুর অকপটে গুরু সেবা করিতে লাগিলেন। শুধু তাই নয় এক বসর শ্রীগুরুদেবকে বাড়িতে রাখিয়া গুরু সেবা করেছেন।

এই কথা গুলো ভক্তি বিনোদ ঠাকুর কোথাও লিখেন

নাই।। লিখেন নাই এই জন্য গুরু দেবায় অহংকারাদি আসতে পারে।

শ্রী ল বিপিন বিহারী গোস্বামীপাদ মায়াপুরকেই

শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জন্ম স্থান বলিয়া শিকার করিয়াছেন।

               ভক্তি শাস্ত্রে কেদারের যত অধিকার।

               কৃত গ্রন্থাদি আছে প্রমান তাঁহার।।

              নবদ্বীপ, মায়াপুর গৌর জন্ম স্থান। --

             প্রকাশ করিলা  তিহ করিয়া সন্ধান।।

              সবৈষ্ণব গন নিত্য তাঁর গুণ গায়।

              কপট মর্কটে নিন্দা করিয়া বেড়ায়।।

             মোর শিষ্য বলি বেশি না করি বর্ণন।

              স্বরূপ কহিনু, ---সৰ্ব্ব বিদিত কারন।।

               পুত্র, পৌত্রাদির সহ দীর্ঘায়ু হইয়া

                কৃষ্ণ প্রিতে গৃহ যাত্রা নির্বাহ করিয়া।।

                সপত্নী প্রভৃতি সহ শ্রীকৃষ্ণ চরণ। ---

                 শ্রীকেদারনাথ সদা করুক সেবন।।

                 গুরু - কৃষ্ণ পাদপদ্মে অনন্যতা যার।

               হ্লাদিনী স্বরূপা ভক্তি লাভ হয় তাঁর।.

                              (  দশমুল রস বৈষ্ণব জীবনং )

           বিপিন বিহারী প্রভুপাদের মহিমা অপার।

        কপট -মর্কটে নিন্দার স্বভাব, নিন্দা করে তাঁর।।

                              (   জয় শ্রী রাধে কৃষ্ণ )

 


Post a Comment

0 Comments