শুভ ভাতৃদ্বিতীয়া


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ  ধনত্রয়োদশীর পরের দিন নরকাসুরকে বধ করেন। তার পর প্রাগজ্যোতিষপুর থেকে দ্বারকায় ফিরে এলেন দ্বিতীয়া তিথিতে। কৃষ্ণকে দেখে সুভদ্রার উচ্ছ্বাস বাধা মানল না। তিনি বরাবরই কৃষ্ণের আদরের বোন। এই কয়েকদিন তিনি দাদাকে দেখতে পাননি। অতএব, দ্বারকা পৌঁছতেই কৃষ্ণকে তিনি বসালেন আসনে। তাঁর কপালে পরিয়ে দিলেন বিজয়তিলক। এবং, মুখমিষ্টি করালেন। সেই প্রথাই স্বীকৃত হল ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা নামে।

🔹আর একটা ঘটনা হলো-- সূর্যেদেব ও সংজ্ঞার  পুত্র ও কন্যা ছিলেন যম আর যমুনা। 

একদিন যমুনা তার বিমাতা কর্তৃক স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়। যমুনার বিবাহ হয় এক পরিবারে। দীর্ঘকাল পর দিদিকে দেখার জন্য কালী পুজোর দুদিন পরে যম যমুনার বাড়িতে আসেন। 

যমুনা যমের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে, প্রদীপ, শস্য ,দুর্বা দিয়ে ভাই এর মঙ্গল কামনা করে।

যমুনা সেদিন বলেছিল “ভ্রাতৃদ্বিতীয়া দিন প্রত্যেক ভাই যেন তার বোনের কথা স্মরন করে আর প্রত্যেক বোন যেন তার ভাইয়ের মঙ্গলময় দীর্ঘ জীবন কামনা করে।”

 যমুনা তাঁর ভাই যমের মঙ্গল কামনার আরাধনার পুণ্য প্রভাবে যম অমরত্ব লাভ করে।

তাই আজকের দিনে হিন্দুধর্মের প্রত্যেক বোন তার ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে মঙ্গল কামনা করে থাকেন।---- 


🔹 বাঁ হাতের কড়ে আঙুলেই দেওয়া হয় ভাইভোঁটা। সনাতন ধর্মের এই রীতির পিছনে মনে করা হয় কড়ে আঙুল মহাশূন্যের প্রতীক। আর সেই আঙুলেই প্রকৃতিস্বরূপা নারী ফোঁটা দেন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায়।

শাস্ত্রের ব্যাখ্যা বলছে— মানুষের হাতের পাঁচটি আঙুল পঞ্চভূতের প্রতীক। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোমের মধ্যে শেষের ব্যোমই হচ্ছে কড়ে আঙুল। উদার ভালবাসার প্রতীক হিসেবে তাই কড়ে আঙ্গুলকেই পবিত্র মনে করা হয় ভাইফোঁটা উৎসবের ক্ষেত্রে। এই ব্যাপারে শাস্ত্র বলছে— ভাই ও বোনের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা যেন মহাশূন্যের মতো অসীম হয়।ভাইফোঁটার অঙ্গ শুধু ফোঁটাই নয়। সেই সঙ্গে ভুরিভোজ আর উপহার দেওয়া নেওয়া তো রয়েছেই। বড় ভাইয়ের থেকে উপহার পাওয়ার কিংবা দিদির থেকে উপহার নেওয়ারও তিথি ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। 

সাধারণত তিথি মেনে দ্বিতীয়া তিথিতে উপবাস করে ফোঁটা দেন বোনেরা। আর সেই সাথে বলে----

“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।

যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥

যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।

আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর।"


🔹--এই ভাইফোঁটা স্থান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। পশ্চিম ভারতে বলা হয় ভাইদুজ।মহারাষ্ট্র,গোয়া, কর্ণাটকে বলা হয় ভাইবিজ।নেপালে বলা হয় ভাইটিকা।এই উৎসবের আর এক নাম যমদ্বিতীয়া।



Post a Comment

0 Comments