মঙ্গলময় ভীষ্ম পঞ্চক

 মঙ্গলময় ভীষ্ম পঞ্চক!














জয়পতাকা স্বামীর পক্ষ থেকে,


যারা ভীষ্ম পঞ্চক পালন করতে চান, তাদের ব্রতটি পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত ব্রত পালন করা উচিত। এই বছর মায়াপুরে এই ব্রতটি ২৬শে নভেম্বর থেকে ৩০শে নভেম্বর পালিত হচ্ছে। সাধারণত এই ব্রতটি পাঁচদিনের। আপনাদের রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ অথবা অন্য যেকোন বিগ্রহকে ঘৃত প্রদীপ এবং ফুল নিবেদন করা উচিত। প্রথম দিন ভগবানের শ্রীচরণপদ্মে পদ্মফুল নিবেদন করা হয়। দ্বিতীয় দিন উরুতে বেলপাতা নিবেদন করা হয়। তৃতীয়দিন ভগবানের নাভিদেশে গন্ধদ্রব্য নিবেদন করা হয়। চতুর্থদিন ভগবানের স্কন্ধে জবাফুল নিবেদন করা হয়। আর পঞ্চমদিনে ভগবানের মস্তকে মালতীফুল নিবেদন করা হয়। যদি আপনি গঙ্গায় স্নান করতে এবং তর্পণ করতে যেতে না পারেন, তাহলে আপনি তিনবার "গঙ্গা" উচ্চারণ করতে পারেন এবং ভীষ্মদেবের উদ্দেশ্যে তর্পণ, অর্ঘ্য এবং প্রণাম নিবেদন করার সময় নিম্নোক্ত তিনটি মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারেন।


তর্পণ

ওঁ বৈয়াগ্রপদ্য গোত্রায়

সংস্কৃতি প্রবরায় চ।

অপুত্রায় দদাম্যেতৎ

সলিলং ভীষ্মবর্মণে।।

অর্ঘ্য

বসুনামাবতারায়

শান্তনোরাত্মজায় চ।

অর্ঘ্যং দদামি ভীষ্মায়

আজন্ম ব্রহ্মচারিণে।।

প্রণাম

ওঁ ভীষ্ম শান্তনবো বীরঃ

সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ।

অভিরদ্ভিরবাপ্নোতু

পুত্রপৌত্রচিতাং ক্রিয়াম্।।


আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী সর্বদা,

জয়পতাকা স্বামী


আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য,

ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত

================


ব্রতটি ২৬শে নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) একাদশীর দিন থেকে শুরু হয় এবং ৩০শে নভেম্বর রাসপূর্ণিমার দিন পর্যন্ত চলবে (চাতুর্মাস্যের শেষ দিন, কার্তিক মাসের শেষ দিন)। এই ব্রত রাসপূর্ণিমার দিন সূর্যাস্ত (অথবা চন্দ্রোদয়) পর্যন্ত সম্পন্ন হয়। সাধারণত একাদশীতে সম্পূর্ণ উপবাস এবং তারপর পরবর্তী চারদিন ফলমূল গ্রহণ করতে বলা হয়। অথবা কেউ পাঁচদিনই ফলমূল গ্রহণ করতে পারে।


ব্রতের ৩টি স্তর:

---------------------


ভক্তরা তাদের সুবিধামতো নিম্নোক্ত স্তরগুলোর যেকোনটি অনুসরণ করতে পারেন। এটি যেন তাদের সাধারণ ভক্তিমূলক সেবা ও দৈনন্দিন সাধনায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করে।


১ম স্তর:


পঞ্চগব্যের একেকটি একেক দিনে গ্রহণ করা যেতে পারে।


১ম দিন: গোময়

২য় দিন: গোমূত্র

৩য় দিন: দুধ (ক্ষীর)

৪র্থ দিন: দধি

৫ম দিন: গোময়, গোমূত্র, দুগ্ধ, দধি ও ঘিয়ের মিশ্রণে তৈরি পঞ্চগব্য।


২য় স্তর:


যদি কেউ ১ম স্তর অনুসরণ করতে না পারেন তবে ফলমূল গ্রহণ করা যেতে পারে। যেসব ফলে প্রচুর বীজ রয়েছে যেমন - পেয়ারা, ডালিম, পেঁপে, শসা প্রভৃতি বর্জন করা উচিত। আলু, কাঁচাকলা বা মিষ্টিআলু সেদ্ধ করে গ্রহণ করা যেতে পারে। স্বাদের জন্য সৈন্ধব লবণ ব্যবহার অনুমোদিত। কাজুবাদাম, কিসমিস ও খেজুর গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে দুধ বা দুগ্ধজাত কোন দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না। নারকেল ও নারকেলের জল গ্রহণ করা যাবে।


৩য় স্তর:


যদি কেউ ২য় স্তর পালনে অসমর্থ হন তবে "হবিষ্যান্ন" গ্রহণ করতে পারেন।


উৎস: পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড- ২৩ অধ্যায়; স্কন্দ পুরাণ, বিষ্ণুখণ্ড- কার্তিক মাহাত্ম্য- ৩২ অধ্যায়; গরুড় পুরাণ, পূর্বখণ্ড- ১২৩ অধ্যায়।


শ্রী শ্রী হরিভক্তিবিলাসের ১৩ অধ্যায়ের ১০-১৩ নং শ্লোকে হবিষ্যান্নের উপাদান উল্লেখ করা হয়েছে:

---------------------


নিম্নোক্ত উপাদানগুলো হবিষ্যান্ন তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে। সাধারণত হবিষ্য চাল এবং মুগ ডাল দিয়ে তৈরি করা হয়। যারা একাদশী থেকে একাদশী পর্যন্ত চাতুর্মাস্য পালন করছেন, নিয়মানুযায়ী তাদের কার্তিক মাস একাদশী পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে, তাই তারা তাদের হবিষ্যে মুগ ডাল গ্রহণ করতে পারেন। যাইহোক, অধিকাংশ ভক্তগণ পূর্ণিমা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত একাদশী ব্রত পালন করেন, তাই ভীষ্ম পঞ্চকের হবিষ্যে মুগ ডাল অনুমোদিত হবে না। সকল প্রকার তেল পরিত্যাজ্য।


* আতপ চাল

* ঘি

* সৈন্ধব লবণ

* পাকা কলা

* কাল শাক

* গম

* বার্লি


এই উপাদানগুলোও গ্রহণ করা যেতে পারে:


* ফল (স্কন্দপুরাণের নাগরখণ্ডে অবশ্যই একটি ছোট বীজের অথবা কম বীজপূর্ণ ফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে)

* আম

* কাঁঠাল

* লাবালী ফল

* কেয়া ব্যতীত সকল মূল

* পিপলী

* হরিতকি

* আমলকি

* নারঙ্গ

* ইক্ষুদ্রব্য (গুড় ব্যতীত)

* ননীপূর্ণ গোদুগ্ধ


নিম্নবর্ণিত দ্রব্যগুলো হবিষ্যান্নের অন্তর্ভুক্ত হলেও তা কার্তিক মাসে বর্জন করতে বলা হয়েছে:


* মুগ ডাল

* তিল তেল

* বেতো শাক

* সাত্ত্বিক শাক

* মূলা

* জিরা

* তেঁতুল


একজন ব্যক্তির প্রতিদিন গঙ্গার মত পবিত্র নদীতে স্নান করা উচিত। নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে তিনবার ভীষ্মদেবের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা উচিত:


তর্পণ মন্ত্র 

(তর্পণ দেয়ার সময় উপবীতকে পেছনদিকে নিয়ে (যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এবং উভয় হাতে জল নেয়া হয়। মন্ত্র উচ্চারণ করা হয় এবং দুই হাত ডানদিকে এবং নিচে কাত করে নিবেদন করা হয় যাতে জল ডান বৃদ্ধাঙ্গুলির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য নিবেদনের একটি উপায়। আপনারা ভীষ্ম পঞ্চকে এটি ভীষ্মদেবের উদ্দেশ্যে করেন।)


ওঁ বৈয়াগ্রপদ্য গোত্রায়

সংস্কৃতি প্রবরায় চ।

অপুত্রায় দদাম্যেতৎ

সলিলং ভীষ্মবর্মণে।।


অর্ঘ্য


বসুনামাবতারায়

শান্তনোরাত্মজায় চ।

অর্ঘ্যং দদামি ভীষ্মায়

আজন্ম ব্রহ্মচারিণে।।


প্রণাম


ওঁ ভীষ্ম শান্তনবো বীরঃ

সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ।

অভিরদ্ভিরবাপ্নোতু

পুত্রপৌত্রচিতাং ক্রিয়াম্।।


 যদি আপনার কাছাকাছি কোন পবিত্র নদী না থাকে:

যারা "গঙ্গা, গঙ্গা, গঙ্গা" উচ্চারণ করেন, তারা এই পবিত্র নদীতে স্নান করার সুফল লাভ করেন, যা যেকোন স্থানেই করা সম্ভব। ভক্তেরা নদী, হ্রদ অথবা সমুদ্রে স্নান করতে পারেন।


ভগবানের নিকট নিবেদন:

-------------------------


ভক্তরা নিম্নের ফুলগুলো বিগ্রহকে নিবেদন করতে পারেন:


১ম দিন- শ্রীবিগ্রহের শ্রীচরণে অবশ্যই পদ্মফুল,

২য় দিন- শ্রীবিগ্রহের উরুতে বিল্বপত্র,

৩য় দিন- শ্রীবিগ্রহের নাভিদেশে গন্ধদ্রব্য

৪র্থ দিন- শ্রীবিগ্রহের স্কন্ধদেশে জবাফুল ও বিল্বপত্র এবং

৫ম দিন- শ্রীবিগ্রহের মস্তকে মালতী ফুল নিবেদন করা উচিত।


যদি কখনো দু'টি তিথি একত্রে পড়ে তবে ঐদিন দুইদিনের উদ্দিষ্ট ফুলগুলো একই দিনে নিবেদন করতে পারেন।


 যদি আপনার নিকট ফুলগুলো না থাকে, তবে ভগবানের নির্ধারিত স্থানে নির্ধারিত ফুলগুলো আপনি মানসিকভাবে নিবেদন করতে পারেন।


উৎস: গরুড় পুরাণ

Post a Comment

0 Comments