꧁ঝুলনযাত্রা মহোৎসব ২০২১꧂
বিশেষত বর্ষাকালে ঝুলনযাত্রা উৎসব উৎযাপন করা হয়। কারণ বর্ষাকালে প্রকৃতিতে আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে। তখন আমরা মৃদুমন্দ বাতাস খুব পছন্দ করি। সেজন্য ধারণা করা হয় রাধাকৃষ্ণ ঝুলন বেদীতে উপবিষ্ট হলে মৃদুমন্দ বাতাস তাঁদের তৃপ্তি বিধান করে।
পবিত্রারোপণী একাদশী হতে পূর্ণিমা পর্যন্ত এই উৎসব পালন করা হয়। সাধারণত ৫ দিন যাবৎ এই উৎসব চলমান থাকে। ঝুলনযাত্রার পঞ্চম বা শেষদিনে শ্রীকৃষ্ণের প্রথম প্রকাশ শ্রীবলরামের আর্বিভাব তিথি। (তবে বৃন্দাবনের বিভিন্ন স্থানে কেউ ১৩ দিন, কেউ ৪ দিন এই উৎসব উৎযাপন করেন)
ঝুলনযাত্রার ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। কিভাবে এই উৎসবের আগমন ঘটে সেই লীলাই আজ আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।
ঝুলনযাত্রার ইতিহাসঃ
রাধারাণী বর্ষাণায় তাঁর পিতামাতার সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর পিতা বর্ষণার রাজা আর মা বর্ষণার রাণী। তাঁর পিতার নাম ছিল বৃষভানু আর মাতার নাম কীর্তিদা। তাঁর ভাই শ্রীদাম। ঝুলনযাত্রার এই সময় তিনি পিতামাতার সাথে বর্ষণায় সাক্ষাৎ করতে যান।
রাধারাণী পরকীয়া লীলা সম্পাদন করেছিলেন, সেজন্য বাহ্যিকভাবে তাঁর শাশুড়ি ও ননদ ছিল। জটিলা ছিলেন তাঁর শাশুড়ি।
জটিলা বলছিলেন, "না, না, তোমার যাওয়া হবে না।" তখন রাধারাণী কাঁদতে লাগলেন -
"আমি আমার পিতামাতাকে দেখতে চাই।" তখন বৃষভানু মহারাজ রাধারাণীর জন্য কিছু উপহার পাঠিয়েছিলেন। রাধারাণী সেই উপহারগুলো জটিলাকে দিলেন। জটিলা সেই উপহার পেয়ে অত্যন্ত খুশি হলেন। তারপর তিনি বললেন,
"ঠিক আছে, তুমি অল্প সময়ের জন্য যেতে পারো।" তবে নন্দগাঁও এর ওই কৃষ্ণ নামের কালো ছেলেটার দিকে লক্ষ্য রেখো। ও সবসময় কোনো না কোনো সমস্যা তৈরি করে। তার দিকে খেয়াল রেখো।
কিন্তু অনেকদিন অতিবাহিত হবার পরও কেউ আর বর্ষণা থেকে রাধারাণীকে নিয়ে যেতে আসছেন না। আর রাধারাণীও একা যেতে পারছেন না। তিনি মনে মনে ভাবছেন,
"তারা সবাই আমাকে ভুলে গেছে। কেউ আমার কথা মনে করে না।" এই খবর বৃষভানু মহারাজ ও কীর্তদার কাছে পৌঁছাল। তখন তাঁরা শ্রীদামকে পাঠালেন। "যাও তোমার ভগিনীকে গিয়ে নিয়ে এসো।"
বর্ষণায় ফিরে রাধারাণী তার পিতা-মাতাকে দর্শন করে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। তারাও প্রীতিপূর্বক তাঁকে আলিঙ্গন করলেন।
তারপর, একদিন কৃষ্ণ ছদ্মবেশ ধারণ করে রাধারাণীকে নিয়ে গেলেন। কৃষ্ণ রাধারাণীকে নিয়ে গিয়ে ঝুলন বেদীতে উপবেশন করালেন। রাধারাণী ঝুলন বেদীতে একা একা বসে আছেন আর কৃষ্ণ তাঁকে পেছন থেকে দোল দিচ্ছেন। তিনি ক্রমশ জোরে রাধারাণীকে দোল দিতে লাগলেন।
রাধারাণী সর্বদাই বিপদে কৃষ্ণের শরণ গ্রহণ করেন। তাই ঝুলন বেদী যখন সজোরে দুলছিল তখন রাধারাণী চিৎকার করতে লাগলেন, "কৃষ্ণ! কৃষ্ণ! আমাকে রক্ষা কর।"
রাধারাণীর চিৎকার শুনে কৃষ্ণ তাঁর পাশে এসে বসলেন। রাধারাণী কৃষ্ণকে আলিঙ্গন করলেন। কৃষ্ণ এই উৎসবটি খুব পছন্দ করেন। কারণ এতে রাধারাণী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কৃষ্ণকে আলিঙ্গন করেন। কিন্তু অন্য সময় কৃষ্ণকে রাধারাণীর আলিঙ্গন পেতে বিভিন্ন রকম ছলচাতুরী বা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু এই উৎসবে তিনি স্বাভাবিকভাবেই এটি করেন। এই হলো ঝুলন উৎসব।
🙏হরেকৃষ্ণ । সবাইকে পবিত্রারোপণ একাদশী ও ঝুলনযাত্রা মহোৎসবের কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন 🙏🙏
0 Comments