-------------------------গুরু গুণমহিমা-----------------------
-গুরুদেবই পারেন, সমস্ত দুঃখ কষ্ট থেকে রক্ষা করতে-
একবার আমরা গুরুমহারাজ সহ সুনামগঞ্জে ঢাকা থেকে পণতীর্থে গিয়েছিলাম, অদ্বৈত প্রভুর আবির্ভাব স্থানে, বিগ্রহ প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও মন্দির উদ্বোধনে। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে গুরুমহারাজ গেলেন, তাঁর সঙ্গে আমি ছিলাম, মারেচি প্রভু ছিলেন আর পাইলট ছিলেন। চার সিটের হেলিকপ্টার মানে ছোট একটা পাখির মতো। তো এখন ওইখান থেকে আমরা অনুষ্ঠান করে ফিরলাম, ওইখান থেকে যাবো আমরা কুমিল্লাতে সাফারি প্রোগ্রামে ২০০৮ সালে প্রায় ৫০টা দেশের ভক্তবৃন্দ এসেছিলো। ওইখান থেকে যখন আমরা হেলিকপ্টারে করে কুমিল্লায় যাবো, যখনই আমরা দাউদকান্দির উপরে আসলাম। হেলিকপ্টারে বসে শোনা যায়, কোথা দিয়ে যাচ্ছি, কোন প্লেইন যাচ্ছে, সব রিলে করে কান পেতে শোনা যায়, পাইলট সব বলে। হেলিকপ্টার চলে কানে শোনে যে এক টাওয়ার থেকে আরেক টাওয়ারে যোগাযোগের মাধ্যমে হেলিকপ্টার দেখে চলে না, বাস তো রাস্তা দেখে চলে, কিন্তু হেলিকপ্টার টাওয়ারের সংযোগের মাধ্যমে চলে।
তো হঠাৎ করে পাইলট বলছেন, যে স্যার কুমিল্লায় যাওয়া যাবে না, কুমিল্লায় কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে। যে এতো ঝড় ওইখানে আমাদের হেলিকপ্টার নামতে পারবে না, খুব বাতাস, হেলিকপ্টার খুব বাতাসে চলতে পারে না। তখন আমরা বললাম কি হবে, বললো ঢাকায় ফিরে যেতে হবে, গুরুমহারাজ বললেন চলুন ঢাকায়। তারপরে ঢাকায় কিছু এগিয়ে আসছি, আমরা তখন প্রায় শ্রীপুরের কাছে চলে আসছি। তখন পাইলট বলছেন, যে স্যার এখন কালবৈশাখী নাই ইচ্ছা করলে আমরা যেতে পারি, গুরুমহারাজ বললেন ঠিক আছে চলো। পরে আবার রওনা হলাম যখন আমরা দাউদকান্দি পার হয়ে কিছুদূর গিয়েছি, হঠাৎ করে পাইলট বললেন আমাদের মহাবিপদ, একটা দমকা হাওয়া আসছে, ওর গতি ৫০০ নটিক্যাল মাইল, আর আমাদের গতি হচ্ছে ৩০০ নটিক্যাল মাইল। আমাদের পালাতে হবে এখান থেকে, এটার কবলে যদি আমরা পড়ি তাহলে নিশ্চিত মৃত্যুবরণ করবো।
আপনারা সবাই আল্লাকে ডাকুন, তখন বলতে বলতে এমন একটা দমকা হাওয়া আসলো, মনে হচ্ছিল যে হেলিকপ্টার দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছি। আমি তো মা-বাবা বলে চিৎকার করছি, আর মারেচি প্রভু যে কি বলছিলো আমাকে জড়িয়ে ধরে, আর সামনে গুরুমহারাজ। গুরুমহারাজ বলছেন জয় নৃসিংহদেব, শ্রীল প্রভুপাদ রক্ষা করো, প্রভুপাদ রক্ষা করো, গুরুদেব রক্ষা করো, প্রভুপাদ রক্ষা করো, গুরুদেব রক্ষা করো, জয় নৃসিংহদেব জয় নৃসিংহদেব, প্রভুপাদ রক্ষা করো, গুরুদেব রক্ষা করো, এরকম গুরুমহারাজ যে কতক্ষন ধরে বলছিলেন মনে হয় ১মিনিট ধরে বলছিলেন, যেন দম আর পড়ছিলো না। কিছুক্ষন পরে, পাইলট বললেন আমরা এখন নিরাপদ। পাইলট বললেন এরকম বিপদের আমাদের বাঁচার কোনো সম্ভবনা ছিল না। হেলিকপ্টারে আগুন ধরে যাওয়া কথা, কারণ এতো জুড়ে হাওয়াটা আসছিলো।
ওনি বলছিলেন আল্লা আমাদেরকে বাঁচিয়েছে, আমি বললাম ওনাকে, আল্লা বাঁচিয়েছে ঠিক কথা। কিন্তু আমার মনে হয়, এই হেলিকপ্টারে আমাদের গুরুদেব শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ যদি না থাকতেন, তাহলে আমরা বাঁচতাম না। তখন ওনি বললেন ঠিকই বলেছেন, আসলে ওনি মনে হয় মহাত্মা। আমরা যখন বিপদে পড়েছিলাম, ওনি এমন ভাবে গুরুদেব ডাকছিলেন, আর আপনাদের দেবতাদের ডাকছিলেন, ওনি অন্য চিন্তা করেননি। কারণ শুদ্ধ ভক্তরা কখনো অন্য চিন্তা করেন না, বিপদে পড়লেও, সুখে বা দুঃখে সবসময় গুরুদেবকে স্মরণ করেন। গুরুদেবই পারেন আমাদেরকে রক্ষা করতে, তাঁর জলন্ত প্রমাণ গুরুমহারাজ। আমি তখন গুরুমহারাজ বললাম, গুরুমহারাজ আপনি কৃষ্ণকে ডাকলেন না, অন্য কাউকে ডাকলেন না, আর আমরা তো কৃষ্ণের কথা ভুলে গেছি, আমরা তো আপনার কথাও ভুলে গেছি। আমরা তো বাবা-মা কে চিৎকার করছিরাম। তো আমাকে গুরুমহারাজ বলেছিলেন, তুমি সুখে থাকলেও গুরুদেবকে স্মরণ করবে, দুঃখ থাকলেও, শত দুঃখ আসুক গুরুদেবকে স্মরণ করো। গুরুদেবই পারেন একমাত্র রক্ষা করতে আর কেউ রক্ষা করতে পারেন না। সদগুরু ইচ্ছা করেন, ওনি তাদের শিষ্যদের রক্ষা করতে পারেন, অন্য কাউের ক্ষমতা নেই রক্ষা করার।
সেদিন গুরুমহারাজ হাতে কলমে আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। তো ওইদিন দেখেছিল গুরুমহারাজ কিভাবে গুরুদেবকে ডাকছিলেন, শ্রীল প্রভুপাদ রক্ষা করো, গুরুদেব রক্ষা করো, নৃসিংহদেব রক্ষা করো। আমাকে গুরুমহারাজ বলেছিলেন, কৃষ্ণকে ডাকলে কৃষ্ণ নাও আসতে পারেন, কিন্তু গুরুদেবকে ডাকলে গুরুদেব আমাদেরকে কৃষ্ণের কাছে নিয়ে যাবেন। এইজন্য গুরুদেবের শক্তিতে আমরা শক্তিশালী।
গুরুদেবের কথা মানবো না, গুরুদেবের কথা শুনবো না, গুরুদেব যে উপদেশগুলো দিয়েছেন এগুলো মানবো না, তাহলে ভক্তিজীবনে আমরা উন্নতি করতে পারবো না।
গুরু-মুখপদ্ম-বাক্য, চিওেতে করিয়া ঐক্য, আর না করিহ মনে আশা।
এটা তো আপনারা প্রত্যেকদিনই গান, কিন্তু গান গাই ঠিকই, কিন্তু এটার রিয়েলাইজ করতে পারি না। কিন্তু এটার রিয়েলাইজ করতে হবে। গুরুদেব যদি আমাদেরকে কৃপা না করেন তাহলে হবে না।
~শ্রীপাদ চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী প্রভু
পতিতপাবন শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ কি...জয়🙏🙏
0 Comments