স্ত্রীসঙ্গ করার সময় কেমন মনোভাব হওয়া উচিত? 


দশবিধ সংস্কার এর ১ম সংস্কার - 

ক) গর্ভাধান (১ম সংস্কার)


আদর্শ পিতা মাতা হওয়ার প্রারম্ভিক সোপানই হলো, শাস্ত্রের নিয়মকে অনুসরণ করে সু -সন্তান ধারণে প্রবৃত্ত হওয়া!


বিবাহিত জীবনে একজন মাতাজীর এবং প্রভুর  পূর্ণতা পিতৃত্বে এবং মাতৃত্বে। আর পিতৃত্ব এবং মাতৃত্বের পূর্ণতা একজন সুস্থ-সবল, গুণবান, যশস্বী, সুশীল, এবং কৃষ্ণ ভক্ত সন্তান লাভ করার মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের সনাতন ধর্মের এক তৃতীয়াংশ লোকেরাই জানিনা কেমন করে গর্ভধারণ করতে হয়? কোন প্রকারে সহবাস করলে একজন সুসন্তান লাভ করা সম্ভব? অনেকেই আক্ষেপ করে বলি এমন পিতা মাতার এমন কুসন্তান কোথা থেকে আসলো? আদৌ আমরা তার অন্তর্নিহিত কারন অনুসন্ধান করার চেষ্টা করিনা।


এবার চলুন সনাতন শাস্ত্রের আঙ্গিকে যৎকিঞ্চিত  আলোচনায় অগ্রসর হই-


 সন্তান লাভের মনোরথে স্বামী স্ত্রীর মিলনের জন্য তিথি-নক্ষত্র, দিন-ক্ষণ, শুভ-অশুভ বিচার বিশ্লেষণ আবশ্যক। উপরিউক্ত বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে স্বামী স্ত্রীর সঙ্গম করা অপরিহার্য।


স্মৃতি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে----


নিষেকাদ্ বৈজিকং চৈনো গার্ভিকং চাপমৃজ্যতে।

ক্ষেত্রসংস্কার সিদ্ধিশ্চ গর্ভাধানফলং স্মৃতম্ ।।


অর্থাৎ- বিধি বিধান মতো এবং সংস্কার মতো গর্ভাধান থেকে শুভগুণ সম্পন্ন সুযোগ্য সন্তান সৃষ্ট হয়। আর এই সংস্কার থেকেই বীর্য ও গর্ভ সংক্রান্ত পাপের নাশ হয়, দোষ নষ্ট হয়, ক্ষেত্র সংস্কার হয়। এগুলিই হল গর্ভাধান সংস্কারের ফল বা পরিণতি ।


নানা সমীক্ষা ও গবেষণার দ্বারা এটা প্রত্যক্ষ প্রমাণিত হয়েছে যে, গর্ভাধান কালে স্ত্রী-পুরুষ যেমন ভাবনায় ভাবিত থাকেন, বা তাদের মানসিক অবস্থা যেমন থাকে তা তাদের রজঃ বীর্যে প্রতিফলিত হয়। সেই থেকে সৃষ্ট সন্তানের উপরে সেই ভাবনা পড়ে। পিতা মাতা যে মানসিকতা নিয়ে সন্তান ধারণে প্রবৃত্ত হন সেই মানসিকতা নিয়ে সন্তানের জন্ম হয়। অনেকে কষ্ট পেয়ে বলেন-


 *সন্তানটাকে মানুষ করতে পারলাম না*


শাস্ত্র বলছেন- মানুষ যা করার গর্ভকালীন সময়েই হয়ে যায়, পরবর্তীতে শত চেষ্টা করলেও তা পূর্ণতার স্তরে আসীন হয়না।


সুশ্রত সংহিতায় উল্লেখ আছে –


আহারাচার চেষ্টা ভিয়াদৃশোভি সমন্বিতৌ।

স্ত্রীপুংসৌ সমুপেয়াতাং তয়োঃ পুত্রোত্তপি তাদৃশঃ।।

        ( সুশ্রত সংহিতা / শরীর ২/৪৩/৫০ )


অর্থাৎ- নর নারী যেমন আহার করবেন, যে ব্যবহার বা প্রচেষ্টায় মিলিত হয়ে পরস্পর  সহবাস করবেন, তাদের পুত্র সন্তানও তেমনি স্বভাব প্রাপ্ত হবে।


তাই স্বামী-স্ত্রী কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সন্তান ধারণে প্রবৃত্ত হওয়া প্রয়োজন। সন্তান ধারণকালীন সময় এবং গর্ভে অবস্থানকালীন সময়, স্বামী স্ত্রীর সাধনার সময়। যার সাধনা যত পরিচ্ছন্ন তার সাধনার ফল তত পরিপক্ব। 


ঋতুকালের চতুর্থ দিনে স্নান করে পবিত্র হয়ে শ্রদ্ধা ভরে সাত্ত্বিক ভাবে ভগবানকে প্রণাম করে তারপর স্বামীর সঙ্গে সহবাস করলে সুশীল, ধার্মিক, উত্তম সন্তান লাভ হয়। রাত ১২ টা থেকে  রাত ৩ টা পর্যন্ত আসুরিক সময়। আসুরিক সময়কালে সন্তান ধারণ করলে সন্তানের মধ্যে আসুরিক গুণ পরিলক্ষিত হবে। 


***ঋতুর চতুর্থ, ষষ্ঠ, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ, পঞ্চম, সপ্তম, নবম, একাদশ রাত্রে সহবাস অতি উত্তম***


 ***একাদশী, দ্বাদশী বা কোন ব্রতের পূর্বে বা ব্রতের দিন বা ব্রতের পরের দিন সহবাস করলে সন্তান অসুর হয়ে জন্মায়***


অমাবস্যা, পূর্ণিমা, চতুর্দশী, রবিবার, সংক্রান্তি, অষ্টমী, গ্রহণ, বারবেলা, কালবেলা, আসুরিকবেলা, শনিবার, মঙ্গলবার, পূজা পর্বের দিন সহবাসে উৎপন্ন সন্তান অাসুরিক কিংবা রাক্ষস মনোভাব নিয়ে জন্ম নেয়। সেই সন্তান দ্বারা সমাজ, সংসার, রাষ্ট্র, পিতা- মাতা, আত্মীয় স্বজন সর্বদা উদ্বেগ প্রাপ্ত হবেন।


" সুযোগ্য সন্তানের সাধনা "


কোনো এক সময় কশ্যপ মুনি ভজনে লিপ্ত ছিলেন। সেই সময় দৈত্যমাতা দিতি কামাচ্ছন্ন হয়ে,উনার কাছে সহবাসের জন্য কাতর আবেদন করেন। কশ্যপ মুনি উনাকে বোঝান- দেবী ইহা সন্ধ্যাকাল,ইহা আসুরিক কাল,ইহা সহবাসের উপযুক্ত সময় নয়।


          কিন্তু মাতা দিতি জোরপূর্বক সহবাসে লিপ্ত হন। কাম-আগুন শান্ত হলে মাতা নিজের ভুল বুঝতে পেরে,লজ্জিত নয়নে,অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।


মুনি বলেন-


দেবী,এই ঔরস তো বিফলে যাওয়ার নয়। এর দ্বারা ভয়ংকর দুই দৈত্য জন্ম নেবে,যারা পৃথিবী তোলপাড় করে দেবে,ভগবানকেও আসতে বাধ্য করবে।


এই দুই দৈত্য জন্ম হয়েছিল-হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু দুই ভাই রূপে।


তেমনভাবেই বিশ্রবা মুনি ও কেকসী- এর সন্ধ্যাকালের মিলনে "রাবনের" জন্ম হয়েছিল।


    সহবাসের উপযুক্ত সময় জানার আগে,প্রতিকূল দিন-ক্ষণ-তিথি জেনে নেওয়া খুব প্রয়োজন।


আসুরিক গুণের সন্তান জন্ম হয়,যে সমস্ত দিন সহবাসে- 


একাদশী,দ্বাদশী,ব্রতের আগের দিন-পরের দিন-অথবা ব্রতের দিন,পিতা-মাতার শ্রাদ্ধের দিন।


রাক্ষস ও দুঃখী সন্তানের জন্ম হয়-


অমাবস্যা,পূর্ণিমা,অষ্টমী,চতুর্দশী,মঙ্গল-শনি-রবিবার,গ্রহণ,বারবেলা,পূজা-পর্বের দিনে।


এছাড়াও আগত সন্তানের গূণ-প্রকৃতি বিশেষভাবে নির্ভর করে,নারীদের ঋতুচক্রের সঠিক দিনের সহবাসে-


ঋতুচক্র


দিন....সন্তানের প্রকৃতি


প্রথম....অসুখ-বিসুখ


দ্বিতীয়....মৃত সন্তান


তৃতীয়....মৃত


চতুর্থ....গরীব


পঞ্চম....অতি ভাগ্যবতী কণ্যা


ষষ্ঠ.... ভাগ্যবান পুত্র


সপ্তম....ধর্মপরায়ণা কণ্যা


অষ্টম....পরম ধার্মিক পুত্র


নবম....কুলশ্রী বর্ধিনী কণ্যা


দশম....মহাসুখী পুত্র


**একাদশ....পরপুরুষ গামিনী কণ্যা


দ্বাদশ....বিখ্যাত যশস্বী পুত্র


**ত্রয়োদশ....স্ব-কুল নাশিনী কণ্যা


চতুর্দশ....ভক্তিমান পুত্র


পঞ্চদশ....সতী-সাধ্বী কণ্যা


ষষ্ঠদশ....সত্যবাদী,বিদ্বাণ ও বিষ্ণুভক্ত পুত্র।


ঋতুচক্রের ১৭--২৮ তম দিন পর্যন্ত সন্তানের কোনো সম্ভাবনা নেই। এগুলি সঠিকভাবে না জানার জন্যই,কত কত মৃত সন্তান,অথবা সন্তান উৎপন্নই হচ্ছে না। 


সহবাসের দোষেই আগত সন্তানের নানাবিধ বিপদও সংঘটিত হয়। তাই সাবধানতা অবলম্বন অবশ্যই প্রয়োজন।


সহবাস অতি পবিত্র একটি বিষয়। তাই সু-সন্তান লাভে আগ্রহী হলে,স্নান করে,পবিত্র হয়ে,ঈশ্বর ও গুরু প্রণাম করে,সহবাস প্রয়োজন। সাথে আগের সমস্ত সংস্কার পালন করুন।


ভোর ৩টা--৪টা  অতি পবিত্র সময়। সূর্যোদয়ের দেড় ঘন্টা আগে পর্যন্ত সময় ব্রাহ্মমুহুর্ত,,অতি পবিত্র

Post a Comment

0 Comments