🔰ভগবান কি সত্যিই তাঁর ভক্তের সমস্ত অভাব দূর করেন ?

👉পুরীতে অর্জুন মিশ্র নামে এক পাণ্ডা ছিলেন। তিনি  প্রতিদিন সম্পূর্ণ গীতা পাঠ করতেন। তাই লোকে তাঁকে গীতা পাণ্ডা বলেও ডাকতেন। ভিক্ষাবৃত্তিই তাঁর একমাত্র জীবিকা। একবার পুরীতে টানা সাতদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়। ফলে গীতাপাণ্ডা সেই কয়দিন ভিক্ষার জন্য বাইরে বেরুতে পারলেন না। কিন্তু তিনি মনে মনে খুব খুশি হলেন এই ভেবে যে, "এই কয়দিন সারাক্ষণ গীতা পাঠ করতে পারবেন।" এদিকে তাঁর গৃহের খাবার সব শেষ হয়ে গিয়েছে। তখন তাঁর স্ত্রী এসে বললেন, "তুমি যদি সারাক্ষণ গীতাপাঠ করো আর বাইরে গিয়ে ভিক্ষা না করো,তাহলে আমাদের সংসার চলবে কি করে, সে খেয়াল কি আছে তোমার? আমাদের তিনটি সন্তান সবাই অভুক্ত।" তখন গীতাপাণ্ডা তাঁর স্ত্রীকে বললেন,

"ভগবান শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন, তিনি নিজেই ভক্তের সমস্ত ভার বহণ করেন।"

আমরা যদি সম্পূর্ণরূপে পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণের  উপর নির্ভর করি, তাহলে তিনি অবশ্যই দেখবেন। গীতাপাণ্ডা তাঁর স্ত্রীকে গীতার ৯ম অধ্যায়ের ২২ নম্বর শ্লোকটি দেখালেন।তাঁর স্ত্রী আরো ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁর হাত থেকে গীতাটা নিয়ে ঐ শ্লোকের তিনটি লাইন কেটে দিলেন, আর বললেন, "আমরা যদি কর্ম না করি তাহলে কি ভগবান খাবার ঘরে এনে দিয়ে যাবে?"

তারপর ক্ষুধায় কাতর হয়ে গীতা পাণ্ডার সন্তানরা ও তাঁর স্ত্রী নিদ্রা গেলেন। কিছুক্ষণ পর গীতা পাণ্ডাও ঘুমিয়ে পড়লেন।

গভীর রাতে গীতা পাণ্ডার স্ত্রী ঘরের দরজায় শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি দরজা খুলে দেখেন দুটি ছেলে, একটি কালো বর্ণের আরেকটি দুগ্ধ ধবল। ছেলে দুটি বলল, "গীতা পাণ্ডার এক মিত্র এই খাবার সামগ্রী পাঠিয়েছেন, কৃপা করে আপনি তা গ্রহন করুন।" খাবার সামগ্রীতে ঘর ভরে গেল। ছেলে দুটির প্রতি গীতা পাণ্ডার স্ত্রীর খুব মায়া হলো। তিনি তাদেরকে বললেন, "তোমরা আমাদের সাথে প্রসাদ খেয়ে যেয়ো।" তখন কালো বর্ণের ছেলেটি বলল, "হ্যাঁ, আমাদেরও খুব ইচ্ছা ছিল আপনাদের সাথে প্রসাদ খাবার, কিন্তু আমার জিহ্বা কেটে দেওয়া হয়েছে। আমি খেতে পারবোনা।"

এই কথা বলেই ছেলে দুটো চলে গেলো। এরপর গীতা পাণ্ডার স্ত্রী তাঁর স্বামীকে ঘুম থেকে উঠিয়ে সব বললেন। গীতা পাণ্ডা বুঝতে পারলেন, ঐ কালো বর্ণের ছেলেটি আর কেউ নন, স্বয়ং জগন্নাথ দেবই ছিলেন, যিনি অভিন্ন কৃষ্ণ। আর সাদা বর্ণের ছেলেটি বলদেব।

গীতা যেহেতু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণী। তাই গীতার ঐ শ্লোক কেটে দেওয়ায় সেই দাগ ভগবান শ্রী-কৃষ্ণের জিহ্বাতে পরেছে। তারপর গীতাপাণ্ডা ও তাঁর স্ত্রী ভগবানের কাছে ক্ষমা চাইলেন।  তাঁরা তৎক্ষানাৎ জগন্নাথ দেবের মন্দিরে গিয়ে দেখেন জগন্নাথ দেবের অধরে ও তিনটি দাগ পরে আছে।

📣শিক্ষনীয় বিষয় হলোঃ "যে ব্যক্তি ভগবানের উপর নির্ভরশীল এবং ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত, তাঁর দায়িত্ব তখন স্বয়ং ভগবানই নেন।"

Post a Comment

0 Comments