একবার মালয়েশিয়াতে মন্দির উদ্বোধন করার সময় সেখানে অনেক মহারাজ উপস্থিত ছিলেন। প্রভাবিষ্ণু মহারাজ, জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ, ব্রজেন্দ্রনন্দন স্বামী মহারাজ, আরো অনেক মহারাজ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মন্দির উদ্বোধন হয়ে গেছে, সুদর্শন চক্র উদ্বোধন করা হয়ে গেছে। সেদিন রাতের বেলা প্রভাবিষ্ণু স্বামী মহারাজ অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন। গুরুমহারাজের পাশের রুমেই ছিলেন প্রভাবিষ্ণু স্বামী মহারাজ। ভোরবেলা গুরুমহারাজ ঘুম থেকে উঠেছেন স্নান করতে যাবেন। সে সময় প্রভাবিষ্ণু স্বামী মহারাজের একজন সেবক এসে গুরুমহারাজকে বললেন, " প্রভাবিষ্ণু স্বামী মহারাজের অনেক জ্বর, তিনি অনেক অসুস্থ। " গুরুমহারাজের সব সময় একটা লাগেজ থাকতো ঔষধের। সে সময় গুরুমহারাজ বলছেন সেবককে, " এই লাগেজটা খুলে মেডিসিনটা নিয়ে মহারাজকে খাইয়ে দাও, আমি স্নান করে আসছি মহারাজের কাছে। " গুরুমহারাজ স্নান করতে ঢুকেছেন, কোনো রকম কাপড়টা পরেছেন, কারন ওনার মনটা রয়েছে প্রভাবিষ্ণু মহারাজের কাছে। স্নান সেরে তিলক হাতে নিয়ে, প্রভাবিষ্ণু মহারাজের রুমে চলে গেছেন। গিয়ে দেখছেন, মহাবরাহ প্রভু, মহারাজকে মেডিসিন দিচ্ছেন, তারপর জল দিচ্ছেন, মহারাজকে মেডিসিন খাওয়ানোর পর যখন গ্লাসটা রাখতে যাবে তখন, গুরুমহারাজ মহাবরাহ প্রভুকে বললেন, " বিদেশে নিয়ম আছে কোনো রোগীকে যখন কিছু ব্যাবহার করতে দেওয়া হয়, সে জিনিসটা যেনো অন্য কাউকে ব্যাবহার করতে দেওয়া হয় না । টেবিলে তো অনেক গ্লাস রয়েছে তাই এই এই গ্লাসটি আলাদা করে রাখবে। " মহাবরাহ প্রভু এতটা গুরুত্ব না দিয়ে অন্য গ্লাস গুলোর সাথে গ্লাসটা রাখতে যাচ্ছিলো। তখন গুরুমহারাজ আবার বলছেন, তাও শুনছে না, তিনি সবগুলো গ্লাসের সাথে রেখে দিলেন। গুরুমহারাজ মহাবরাহ প্রভুকে আর কিছু বলেননি। পরবর্তীতে গুরুমহারাজ যখন মেডিসিন খাবেন, তখন তিনি মহাবরাহ প্রভুকে বলছেন, " তুমি আমাকে জল দাও, আমি মেডিসিন খাবো।" মহাবরাহ প্রভু যখন জল দেওয়ার জন্য গ্লাস নিতে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বুঝতে পারছেন না কোন গ্লাসটা দিয়ে প্রভাবিষ্ণু মহারাজকে জল খাইয়েছিলেন আর এখন কোন গ্লাসটা গুরুমহারাজকে জল খেতে দেবেন। গুরুমহারাজ বুঝতে পারছেন যে, মহাবরাহ প্রভু বিহ্বল হয়ে পড়েছে। তখন গুরুমহারাজ মহাবরাহ প্রভুকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটা চড় মেরেছেন। তারপর গুরুমহারাজ মহাবরাহ প্রভুকে বলছেন, " আমি তোমার গুরু, তুমি গুরুকে অবজ্ঞা করেছো। তোমাকে বলেছি গ্লাসটা আলাদা করে রাখতে, তুমি তা রাখোনি। আমাকে এই গ্লাসে করে জল দাও। " মহাবরাহ প্রভু বলছেন গুরুমহারাজ যখন আমাকে চড় মেরেছেন তখন আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমি গুরুমহারাজকে জল দিয়ে নিচে অন্য রুমে এসে কান্না করেছি। কিছুক্ষন পরে আমি চিন্তা করছি আসলে আমারই দোষ ছিল। গুরুমহারাজ আমাকে কত বার করে বলেছেন কিন্তু আমি শুনিনি। গুরুমহারাজ হচ্ছেন আমার গুরু, আর আমি হচ্ছি তার শিষ্য, গুরু হিসাবে ওনার অধিকার রয়েছে আমাকে শাসন করার। ৫ মিনিটের মধ্যে আমি পুনরায় নিজেকে গুঁছিয়ে নিয়েছি। পরে আবার গুরুমহারাজের সেবাতে গিয়েছি। বিকাল বেলা আমাদের অন্য মন্দিরে যাওয়ার কথা, তাই আমি গুরুমহারাজের সকল লাগেজ গুলো গুছিয়ে রেখেছি। বিকাল বেলা যখন গুরুমহারাজ অন্য মন্দিরে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলেন, সেখানে প্রায় শত শত ভক্ত গুরুমহারাজের দর্শনের জন্য দাড়িয়ে আছে। সেবকরা সবাইকে বলছে, গুরুমহারাজের সময় হয়ে গেছে, এখন যেতে দিন। তখন গুরুমহারাজ ভক্তদের বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। আমি যখন গাড়িতে উঠবো সে সময় গুরুমহারাজ আবার গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন। সমস্ত ভক্তরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের সকলের সামনে গুরুমহারাজ আমার কাছে এসে হাত জোড় করে আমাকে বলছেন, " তুমি আমাকে ক্ষমা করো। অধিকার আছে বলে আমি তোমাকে শাসন করেছি। সেটা করা আমার উচিৎ ছিল না। " একথা বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। মহাবরাহ প্রভু বলছে," গুরুমহারাজ আমাকে একটা চড় মেরেছেন, আমার দোষের জন্য। সেটা আমি কিছুক্ষনের মধ্যে ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি যখন চিন্তা করি সারা পৃথিবীর লোক যে ব্যাক্তিকে ভগবানের মতো পূজা করে, সম্মানীয় ব্যাক্তি, প্রভুপাদের একজন আদর্শ শিষ্য, সে ব্যক্তি আমার মতো তুচ্ছ শিষ্য, যার কোনো গুনই নেই, তার কাছে ক্ষমা চাইছেন। " তিনি তো সেটা ঘরের মধ্যে করতে পারতেন কিন্তু কেন তিনি সকলের সামনে শত শত ভক্তের মাঝে ক্ষমা চাইছেন। আমার জীবনে আমি কখনো ভুলতে পারবো না, আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। সে সময় থেকে এখনো পর্যন্ত আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কেন গুরুমহারাজ এটা করলেন। আমকে যখন চড় মেরেছিলেন তখন আমি পাঁচ মিনিট ধরে কেঁদেছিলাম কিন্তু এটার পর আমি কয়েকদিন চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। এর থেকে আমরা শিক্ষা পাই, একজন উচু স্তরের গুরু/শিক্ষক তার আচরনের মাধ্যমে তার শিষ্য/ছাত্রদের শিক্ষা প্রদান করেন।
~শ্রীপাদ ভবামৃত কৃষ্ণ দাস
Jayapataka swami Charitamrita Facebook page
0 Comments