🙏🌹 *ভক্তি করতে গেলে বেশিরভাগ ভক্তের অধঃপতন ঘটে কেন? গৃহস্থ জীবন ও আধ্যাত্মিক জীবন কিভাবে ব্যালেন্স করব? কিভাবে আমাদের জীবনযাত্রা হওয়া উচিত? সে বিষয়ে কি বললেন প্রভু?* 


A) *ভক্তি করতে গেলে বেশিরভাগ ভক্তের অধঃপতন ঘটে কেন?* 


Ans . শুরুতে ভক্তি জীবনে প্রবেশ করে ভক্তরা অনেক উৎসাহের সাথে ভক্তি জীবন পালন করে। তখন তারা কোন সেবাই ছাড়ে না কীর্তনে যাওয়া গ্রন্থ প্রচারে যাওয়া ভগবানের ভোগ রান্নার  সেবা, পরিক্রমায় যাওয়া প্রভৃতি যেকোন সেবায় তারা অত্যন্ত উৎসাহের সাথে খুবই তৎপর থাকে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর তাদের  ভক্তি জীবনে বাধা আসে। চারপাশের জড়জাগতিক বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন দ্বারা ও নিজের মনের মধ্যে অবস্থিত মায়া দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে সে অনেকটাই দ্বিধা গ্রস্থ হয়ে পড়ে।  তার মনে তখন দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলতে থাকে সে কিভাবে  সংসারের জন্য টাকা পয়সা ইনকাম করবে , কিভাবে ব্যাংক ব্যালেন্স করবে, কিভাবে সে সংসার পালন করবে, কিভাবেই বা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করবে। সে বেশি প্র্যাকটিকাল চিন্তাভাবনা করতে থাকে , কারণ সে এতটাই তখন মায়া দ্বারা আচ্ছন্ন হয়েছে, তার জীবনের প্রকৃত কর্তব্য বা উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সে তখন ভুলে যায় ।আসলেই যে সবটা সেই ভক্তের অজ্ঞানতার ফল। কারণ প্রকৃত গুরু বা সৎ ভক্তের সঙ্গ না করার দরুন তার জীবনের কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল সে নির্ণয় করতে পারে না। আর যখন সে ভগবানকে ভুলে নিজের কর্তব্যকে ভুলে জড়জাগতিক কর্মে বেশি মনোনিবেশ করে তখন মায়া তাকে আরও বেশি মোহমায়ার জালে আবদ্ধ করে। ভক্ত তখন পারমার্থিক ক্রিয়াকর্ম থেকে নিজেকে জড়জাগতিক কর্মে মনোনিবেশ করার ফলে আস্তে আস্তে ভক্ত টি পারমার্থিক ক্রিয়া গুলি থেকে তার রুচি ও ভালোবাসা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলে এবং একটি সময় সে কৃষ্ণের প্রতি অনেকটাই উদাসীন হয়, ফলে কৃষ্ণ ভক্তি করা সে  অনেকটাই কম করে,  তখন  বলা যেতে পারে  ভক্তটি কৃষ্ণকে ভুলে যায়।  ভক্তটি ঠিকমত নিয়মকানুন মানে না, এমনও দেখা যায় সে কৃষ্ণ ভক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। 


B) *একজন ভক্তের কৃষ্ণভাবনামৃতে থাকার বিষয়ে কি বললেন শ্রীল প্রভুপাদ?* 


Ans.  শ্রীল প্রভুপাদ বলেন কতজন ভক্ত কৃষ্ণ ভাবনামৃতে যুক্ত হচ্ছেন সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা সেটাই কতজন ভক্ত কৃষ্ণভাবনামৃতে টিকে থাকছেন। 



C) *ভক্তি জীবনে মায়া কতটা প্রভাবশালী?* 


Ans. মায়ার প্রভাব এতটাই প্রবল যে বাইরে থেকে , আপনার ফ্যামিলি থেকে , আপনার মনের ভেতরের মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে প্রেসার আসবে, বিভিন্নভাবে আপনাকে হয়রানি করবে আর তখন যদি ভগবানের প্রতি আপনি শরণাগত না থাকেন তাহলে সবটাই আপনার গড়বড় হয়ে যাবে।


D) *আমাদের রেস্পন্সিবিলিটিস বা কর্তব্যকর্ম নিয়ে  রাধানাথ মহারাজ কি বললেন?* 


Ans. রাধানাথ মহারাজ খুব সুন্দর ভাবে বলেছেন  আমরা যারা কৃষ্ণভাবনামৃতে আছি আমাদের সকলের জীবনের কিছু রেস্পন্সিবিলিটিস বা কিছু কর্তব্যকর্ম থাকে। সেগুলি থেকে আমরা পালিয়ে যেতে পারবো না ,আমাদেরকে আমাদের কর্তব্যকর্মগুলো করে যেতেই হবে। 


E) *গৃহস্থদের জীবনে কত প্রকার রেসপন্সিবিলিটিস বা কর্তব্যকর্ম থাকে?* 


Ans. প্রত্যেক গৃহস্থদের জীবনে দুই প্রকার রেসপন্সিবিলিটিস থাকে

১) প্রাইমারি রেস্পন্সিবিলিটিস 

২) সেকেন্ডারি রেস্পন্সিবিলিটিস


১) *প্রাইমারি রেস্পন্সিবিলিটিস* - ভালো-মন্দ আমাদের জীবনে যাই হতে থাক, তিনটে জিনিস আমাদের কখনোই ছাড়া উচিত নয়।

 ক) প্রথম প্রায়োরিটি জপ- যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা বেশি করে হরিনাম  জপ করব। অথবা যে কোন পরিস্থিতিতে সকালের  সাধনা , জপ  প্রথমেই করতে হবে।

খ) ভালো মন্দ যে কোন পরিস্থিতিতে ভক্তসঙ্গ কখনো ছাড়া উচিত নয়।

গ) কোন অবস্থাতেই আমাদের সময় নষ্ট করে প্রজল্প করা উচিত নয়। প্রজল্প করে বাইরের ময়লাকে অন্তরে স্থান দেওয়া উচিত নয়। কৃষ্ণকথা শ্রবণ বা ভগবত কথা বলা বা বিভিন্নভাবে প্রচারের মাধ্যমে নিজেকে সর্বক্ষণ ডুবিয়ে রাখা।

আর তা যদি না করা হয় তাহলে প্রজল্পে বেশি সময় দেব, ফলে এমনিতেই আমাদের মাথায় অনেক নোংরা আবর্জনা ভরা হয়ে থাকে,  সেগুলি সুযোগ পেলে তখন বার্স্ট করবে।

২) *সেকেন্ডারি রেস্পন্সিবিলিটিস*-

যেহেতু আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি সংসারে আমাদের স্ত্রী বা স্বামী, সন্তান -সন্ততি আছে। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দরুন তাদের প্রতি কিছু কর্তব্য আমাদের থেকেই যায়। সেইসব কর্তব্য থেকে আমাদের সরে গেলে চলবে না। তাদের ভালো-মন্দ দেখাশোনা করার জন্য আর্থিক আয় উপায়ের কথা ভাবতে হবে। কিন্তু কোনভাবে প্রাইমারি রেসপন্সিবিলিটিস গুলোকে অবহেলা করা যাবে না । সেকেন্ডারি কর্তব্যকর্মগুলো করতে হবে ঠিকই, তবে প্রাইমারি কর্তব্যকর্মগুলো এড়িয়ে গেলে চলবে না, সেগুলো সকলের প্রথমে প্রাধান্য দিতে হবে ।


F) *গৃহস্থ ভক্তদের জীবন কেমন ভাবে গড়ে তোলা উচিত?* 


 Ans .ভক্তদের যেটা দেখা যায় দিন দিন বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেভাবে ভক্তি বাড়ার কথা সেই হারে ভক্তি না বেড়ে ভক্তদের মাঝে কোথাও যেন ভক্তির জন্য সেই উদ্দীপনা বা  উৎসাহ হারিয়ে যায় ‌। ফলে ভক্তরা তাদের লক্ষ্যবস্তু কি  তা হারিয়ে ফেলে। ভক্তিও তখন তাদের অনেকাংশেই হ্রাস পায়।

 

এ বিষয়ে তিনটি মুখ্য কর্তব্য হলো:-

 *১) সিম্পল লিভিং হাই থিংকিং* - ভক্তদের জীবনে অনেক সহজ সরল ভাবে এবং অনেক সাধারন ভাবে তাদের বাঁচা উচিৎ। লোক দেখানো কোন কিছু করার উচিত নয়।

 *২) নো লোনস* - লোক দেখানো জীবনধারা উন্নত করার জন্য অযথা টাকা-পয়সা লোন নেওয়া উচিত নয়, এতে জীবন জটিল হয়ে পড়ে। একটা সময় সেসব পরিশোধ করতে জীবন অনেকটাই দুর্বিষহ হয়ে যায়।

৩) *সবকিছু প্ল্যান করে রাখা উচিত* -আমাদের কখন রিটায়ারমেন্ট আসবে,  রিটায়ারমেন্টের পর আমরা কি করব, তখন আমরা কিভাবে জীবন ধারণ করব, আমাদের লাইফ স্টাইল তখন কেমন হবে, এর সব কিছুই প্ল্যান করে রাখা উচিত। একটা কথা সকলের মনে রাখা উচিত- গৃহস্থ জীবনের  খরচ চাল, ডাল, রুটি, বাড়ি  এসব মেন্টেন করতে গেলে বেশি পয়সা লাগে না। বেশি পয়সা লাগে অতিরিক্ত বাজে খরচা, যেমন- বেড়াতে গিয়ে খরচ, কোনো হোটেলে গিয়ে অতিরিক্ত লাক্সারি চালে খাওয়া দাওয়া, গাড়ি চড়া, ঘরে এসি লাগানো এসবের বেশি খরচা হয়। আমাদের জীবন এমন হওয়া উচিত, সিম্পল খাওয়া দাওয়া বা বাড়িতে  খুব সাধারন ভাবে খাওয়া দাওয়া করা তাতে খরচ কম হবে। রুটি কাপড়ের এত বেশি খরচা হয় না, এবং এতে আমাদের জীবনে বেশি প্রবলেম আসবে না। আপনাদের ভাবা উচিত কেন এত প্রবলেম আমাদের জীবনে? আপনারা এত বেশি জড়জাগতিক জীবনে প্রবেশ করেন যে আধ্যাত্মিক জীবন আপনাদের কাছে অনেকটাই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তখন। কারণ  ভক্তি জীবন আপনাদের অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে।


হরিবল 🌹🙏

Post a Comment

0 Comments