🌺🌿 গল্পটি মধ্যযুগে অর্থাৎ দু-তিনশত বছর আগেকার একটি ঘটনা অবলম্বনে বর্ণিত। বৃন্দাবনে এক ব্যবসায়ী থাকতেন যাঁর ছিল একটি মিষ্টির দোকান। তাঁর সেই দোকানটি ছিল বৃন্দাবনের সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দির বাঙ্কেবিহারীর ঠিক সামনে। দোকানদার ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি প্রতিদিন খুব রাত করে দোকান বন্ধ করতেন কারণ তাঁর  মনের মধ্যে সুপ্ত একটি বাসনা কাজ করত যে কোন না কোন দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে ভ্রমণ করার সময় তাঁর  দোকানে আসবেন এবং তাঁকে অবশ্যই   দর্শন দেবেন।এইভাবে বহু বছর পার হয়ে গেল এবং  সময়ের সাথে সাথে দোকানদারও বৃদ্ধ হয়ে গেলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কৃষ্ণ দর্শনের আকাঙ্ক্ষা তাঁর মন থেকে গেল না।  তিনি তখনো খুব রাত করে দোকান বন্ধ করতেন এই আশায় কখন যে শ্রীকৃষ্ণ আসেন ও তাঁকে দেখা দেন তার ঠিক নেই। একদিন প্রতিদিনকার মত দোকানদার বহু রাতপর্যন্ত দোকানে বসে আছেন।


তিনি দেখেন যে  হঠাৎ একটি ছোট্ট ছেলে তাঁর দোকানের দিকে এগিয়ে আসছে।  ধূতি পড়া, হাতে বালা, চুল কোঁকড়ানো, দেখতে সুন্দর  বছর সাত আটেকের সেই বালকটিকে দেখে দোকানদার ভাবলেন বুঝি কোনো ধনী ব্যক্তির পুত্রসন্তান।দোকানদার একটু বিস্মিত হলেন এই ভেবে যে এত রাতে কার ছেলে ঘরের বাইরে রাস্তায় হাটছে।ছোট ছেলেটি হাঁটতে হাঁটতে তাঁর  দোকানেই আসে এবং দোকানদারের কাছ থেকে মতিচূরের লাড্ডু চায়। কিন্তু  ততক্ষণে মতিচুরের লাড্ডু শেষ হয়ে গেছে।তাই সে বালকটি কে বলল রাত হয়ে যাওয়ায় তারকাছে আর লাড্ডু নেই তবে ছানার মিষ্টি কয়েকটি আছে  তা সে নেবে কি না।বালকটি রাজি হল ছানার মিষ্টি নিতে।দোকানদারও মিষ্টি  দিয়ে বালকটি কে জিজ্ঞেস করল যে তার কাছে কী টাকা আছে? বালকটি জানালো যে তার কাছে কোনো টাকাপয়সা নেই।  দোকানদার ভাবল  ওইটুকু ছোট বালকের  থেকে আর টাকা নিয়ে কী করবেন; কতটুকু আর মিষ্টি!তাই দোকানী আর কোনো অর্থ চাইল না বালকটির কাছ থেকে।  কিন্তু বালক এর মূল্য দিতে চাইল নিজের হাতের স্বর্ণের বালা দিয়ে।


কিন্তু দোকানদার রাজি হলনা এবং বললেন যে তাঁর কোনো মূল্য চাই না। তখন বালকটি ছুঁড়ে   মারল তার হাতের সোনার বালাটি দোকানেরভেতরে।ঠিক তখনই দোকানদার সেই বালাটি ওঠাতে নিঁচু হলেন আর উঠে দেখেন যে বালকটি উধাও!!!!দূর দূর পর্যন্ত বালকটির আর দেখা নেই।কোথায় গেল সেই বালক এই প্রশ্ন দোকানদারের মনে বারে বারে আসতে লাগল  এবং তার বালাটি নিয়ে সেই রাতে আর ঘুমোতে পারল না বৃদ্ধ দোকানদার। পরদিন সকালে গোটা বৃন্দাবনে কলরব ছেয়ে গেল যে বাঙ্কেবিহারী মন্দিরের  বিগ্রহের হাতের সোনার বালা চুরি গেছে।বিগ্রহের হাতের বালা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না  ।এই বার্তা দোকানদারের কানে এসে পৌছালে দোকানদার সেই মুহূর্তেই  সেই বালাটি সাথে নিয়েবাঙ্কেবিহারী মন্দিরের পুরোহিতের কাছে যান, পুরোহিত কে বালাটি দেখান এবং সব কথা খুলে বলেন। পুরোহিত বালাটি দেখে বললেন যে  সেটিই


বাঙ্কেবিহারীর হাতের বালা! এরপর দোকানদার


বুঝতে পারলেন যে আগের দিন রাতে যেই ছেলেটি এসেছিল সে  আর কেউ নয় স্বয়ং অনাদির আদি সর্বেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। দোকানদার আনন্দে বিহ্বল হয়ে  কেঁদে ওঠে বাঙ্কেবিহারীর চরণে গিয়ে পরলেন এবং আফসোস করলেন যে ভগবান স্বয়ং তাঁর  দুয়ারে আসল কিন্তু তিনি চিনতে পারলেন না।

               🙏🙏🙏 জয় শ্রী কৃষ্ণ🙏🙏🙏

Post a Comment

0 Comments