অম্বুবাচী ও বিভ্রান্তি

--------------------------------


সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকজুড়ে 'অম্বুবাচী' নিয়ে প্রচার-অপপ্রচার ব্যাপকরূপ ধারণ করেছে। অথচ, অম্বুবাচী জিনিসটা কি এ সম্পর্কে অধিকাংশেরই কোনরূপ ধারণা নেই। লোকজনের এ অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে একদল স্মার্ত অসুর আবার ফেসবুকে প্রচার করে বেড়াচ্ছে, অম্বুবাচীতে পূজার্চনা নিষেধ! জপ নিষেধ! উপবাস নিষেধ! আর শাস্ত্রবিমুখ কিংবা ভক্তসঙ্গ না করা লোকেরাও সে সব কথা শুনে তালে তাল দিচ্ছেন! এসব দেখে অবাক হতে হয়!

 অথচ ব্যাসপ্রণীত প্রামাণিক শাস্ত্রসমূহে অম্বুবাচীতে দেবপূজা নিষেধ কিংবা যজ্ঞ হোম নিষেধ- এরূপ কোন বিধান পাওয়া যায় না। এগুলো সব স্মার্ত অসুরদের মনগড়া নতুন নতুন ফতোয়া। যারা এ সময়টাতে দেবপূজা নিষিদ্ধ বলে, তাদের দেববিদ্বেষী অসুর বলে জানবেন। 


ব্যাসদেব প্রণীত প্রামাণিক শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, ভগবান শ্রীবরাহদেব অম্বুবাচী দিনে বসুন্ধরা দেবীর পূজার প্রচলন করেছিলেন এবং এ দিন ত্রিভূবনে ভূদেবীর পূজা হয়। সেজন্য এ দিন মাটি খনন নিষিদ্ধ। ব্যাস, এটুকুই বিধান। এর বাইরে অতিরিক্ত কোন বিধি নিষেধ নেই। জপ, পূজা, একাদশী, হোম সবকিছুই বিধিবৎ চলবে। এ সময়ে শ্রীজগন্নাথদেব আপন মাসির বাড়ি গুন্ডিচা মন্দিরে সাড়ম্বরে সেবিত হোন। 


অম্বুবাচী সংক্রান্ত একাধিক শাস্ত্রীয় রেফারেন্স-


শ্রী বরাহদেব বসুন্ধরা দেবীকে বললেন-

"বসুধে! তুমি সকলের আধারভূতা হও এবং সকল মুনি, মনু, দেব সিদ্ধ ও মানবগণ — তোমাকে সুখে পুজা করুন। দেবতা প্রভৃতি সকলেই #অম্বুবাচী-ত্যাগ- দিবসে এবং গৃহারম্ভ, গৃহপ্রবেশ, বাপী-তড়াগারম্ভ, গৃহপ্রতিষ্ঠা ও কৃষিকার্য্যে আমার বরপ্রভাবে তোমায় পূজা করিবে ; আর যে মূঢ়গণ তোমার পূজায় বিরত থাকিবে, তাহার নিশ্চয় নরকগামী হইবে।"

 বসুধা বলিলেন, " হে ভগবান ! আমি আপনার আজ্ঞানুসারে অনায়াসে সচরাচর বিশ্ব সমস্তই ধারণ করিব। কিন্তু ভগবন্ ! মুক্তা, শুক্তি, শিবলিঙ্গ, বিষ্ণুশিলা, শঙ্খ, প্রদীপ, রত্ন, মাণিক্য, হীরা, মণি, যজ্ঞসূত্র, পুষ্প, পুস্তক, তুলসীদল, জপমালা, পুষ্পমালা, কর্পূর, সুবর্ণ, গোরোচনা, চন্দন, শালগ্রাম-চরণামৃত সাক্ষাৎ-সম্বন্ধে এই সমস্ত বহন করিতে আমার ক্লেশ হইবে, এই জন্য ঐ সকল বহন করিতে আমি সক্ষম নহি।"  

ভগবান বলিলেন, "সুন্দরি! যে মূঢ়গণ, এই সমস্ত দ্রব্য তোমার উপরে রাখিবে, তাহারা দিব্য শতবর্ষ পর্যন্ত কালসূত্র নামক নরকযাতনা ভোগ করিবে।"

[ #শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৮ম অধ্যায়, শ্লোক-৩৫-৪২]


যমরাজ সাবিত্রীকে বললেন-

"ভারতে যে মানব, #অম্বুবাচীতে মৃত্তিকা-খনন ও সাধারণ দিনে জলে মূত্রাদি ত্যাগ করে, গুরু, মাতা, পিতা, সাধ্বী ভাৰ্য্যা এবং পুত্র কন্যাকে পোষণ না করে, তাহারও ব্রহ্মহত্যার পাতক হয়।"

[ #শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৩০শ অধ্যায়, শ্লোক-১৬২,১৬৩]


শুক্র চন্দ্রকে বললেন-

"যে নরাধম #অম্বুবাচিদিবসে মৃত্তিকা খনন করে, সে চন্দ্ৰপাপে শতযুগ—কালসূত্র নরকে গমন করুক । যে নারী স্বপতিকে বঞ্চনা করিয়া পরপুরুষে গমন করে সে, চন্দ্র-পাপে চারিযুগ বহ্নিকুণ্ড নরকে গমন করুক।

[ #শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, অধ্যায় ৫৮, শ্লোক-৭০,৭১]


© প্রচারে- ° প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন ° গ্রুপ

©প্রচার সহযোগী- ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা পেইজ

।। হরে কৃষ্ণ ।।

Post a Comment

0 Comments