রাধা অষ্টমীর মাহাত্ম্য ♥️♥️

১১ সেপ্টেম্বর রাধাষ্টমী ২০২৪ 💜


পদ্ম পুরানে রাধাষ্টমীর পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, বহু বহু কাল আগে সূর্যদেব পৃথিবী ভ্রমণ করতে এসে পৃথিবীর রূপ, সৌন্দর্য এবং অনাবিল আনন্দ দেখে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং মন্দার পর্বতের গুহায় গভীর তপস্যায় মগ্ন হন। এইভাবে অনেকদিন চলে যায়, সূর্যের অনুপস্থিতিতে পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পৃথিবীবাসী হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ।

সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবী কোনো ভাবেই বাঁচতে পারে না। তখন বাধ্য হয়ে ভীত – সন্ত্রস্ত স্বর্গের দেবতারা শ্রী হরির শরণাপন্ন হন সাহায্যের জন্য। শ্রী হরি অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণু তাদের সকলকে আশা দিয়ে ফিরে যেতে বলেন। তারপর মন্দার পর্বতের গুহায় তপস্যারত সূর্যের সামনে গিয়ে তিনি উপস্থিত হন।

সূর্যদেব খুবই আনন্দিত হয়ে বলেন যে, শ্রী হরির দর্শন পেয়ে তার এতদিনের তপস্যা সার্থক হয়েছে। সূর্যদেবের সাধনায় তুষ্ট হয়ে শ্রী হরি তাকে বর দিতে চাইলে সূর্যদেব বলেন যে, আমাকে এমন একটি গুণবতী কন্যার বর প্রদান করুন, যার কাছে আপনি চিরকাল বশীভূত থাকবেন।

শ্রী হরি সূর্যদেবকে সেই বর প্রদান করেছিলেন এবং বলেছিলেন পৃথিবীর ভার কমানোর জন্য আমি বৃন্দাবনের নন্দালয়ে কৃষ্ণ রূপে জন্মগ্রহণ করব। তুমি সেখানে বৃষ ভানু রাজা হয়ে জন্মাবে। আর তোমার কন্যা রুপে জন্মগ্রহণ করবে রাধা।


এই ত্রিলোকে আমি একমাত্র শ্রীরাধিকারই বশীভূত থাকবো। রাধা এবং কৃষ্ণের মধ্যে কোন প্রভেদ থাকবে না। সকলকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা আমার আছে, কিন্তু এই জগত সংসারে একমাত্র রাধিকাই আমাকে আকর্ষণ করতে পারবে। সেইমতো প্রতিশ্রুতি অনুসারে মর্ত্যের নন্দালয়ে জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণ। সূর্যদেব বৈশ্য কুলে জন্মগ্রহণ করেন বৃষভানু রাজা হয়ে।


তারপর সময় মতো ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষে অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীর বুক পবিত্র করে রাধা রাণী আবির্ভাব গ্রহণ করেন। শ্রীরাধার এই আবির্ভাব তিথিকেই রাধা অষ্টমী বলা হয়। যেটা তার জন্মদিন হিসেবেও পালন করা হয়ে থাকে।


একদিন রাজা বৃষ ভানু নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্নানের জন্য জলে নামতেই আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে, শত সহস্র সূর্যের আলোকের মতো জ্যোতির্ময় একটি স্বর্ণপদ্ম ঠিক যেন যমুনা নদীর মাঝখানে ফুটে আছে। এরপর রাজা বৃষভানু লক্ষ্য করলেন যে সেই স্বর্ণপদ্মের মধ্যে একটি শিশু কন্যাও রয়েছে।


তিনি অবাক হয়ে গেলেন, ঠিক তখনই ভগবান ব্রহ্মা এসে রাজাকে জানালেন যে, রাজা বৃষভানু ও তার পত্নী কীর্তিদা পূর্ব জন্মের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পত্নীকে কন্যা রূপে লাভ করার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। তাই সেই ফলস্বরূপ এই জন্মে রাজা স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পত্নীকে কন্যা রূপে পেয়েছেন।

এরপর রাজা শিশু কন্যাকে নিয়ে এসে তার স্ত্রী কীর্তিদার হাতে তুলে দেন এবং রাজার অন্দরমহল সহ সমস্ত রাজ্যে আনন্দের উৎসব লেগে গেল। রাজা উৎসবের আয়োজন করলেন সমগ্র বৃন্দাবন খুশিতে ভরে উঠল । সেই উৎসবে নন্দ মহারাজও শিশু কৃষ্ণকে নিয়ে সপরিবারে এসেছিলেন রাধা অষ্টমীর উৎসবে।


ওই অনুষ্ঠানের শিশু কৃষ্ণ যখন হামাগুড়ি দিয়ে শিশু রাধারানীর কাছে গিয়েছিলেন সেই মুহূর্তে রাধারানীর চোখ খুলে প্রথম দেখলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে। তার এই আবির্ভাবের দিনটি রাধাষ্টমী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।


রাধাষ্টমীর বিশেষ মাহাত্ম্য


১. কেউ যদি রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে তাহলে কোটি ব্রহ্মহত্যার পাপ বিনষ্ট হয়ে যায় । 

২. রাধাষ্টমী ব্রত একবার পালন করলে সহস্র একাদশী পালনের একশ গুণ ফল লাভ হয় ।

৩. পর্বত সমান স্বর্ণ দান করলে যে ফল লাভ হয় তার একশ গুণ ফল লাভ হয় একবার রাধাষ্টমী ব্রত পালনে ।

৪. একবার রাধাষ্টমী ব্রত পালনে সহস্র কন্যাদানের ফল লাভ হয় । 

৫. একবার রাধাষ্টমী ব্রত পালনে গঙ্গা আদী সর্ব তীর্থের ফল লাভ হয় । 

৬. যদি কোনো পাপি ব্যক্তি অশ্রদ্ধায় বা অবহেলায়ও রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে তাহলে তার কোটি কূলসহ বিষ্ণুলোকে নিত্যকাল বিরাজ করবে ।

৭. একবার রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে গোহত্যা, ব্রহ্মহত্যাসহ সর্বপাপ বিনষ্ট হয় । 

৮. যদি কোনো মূঢ় ব্যক্তি জেনে বা না জেনে রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে না তাহলে শতকোটি কল্পেও সে নরক যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পাবে না ।

৯. যে নারী রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে না সে কোটি কল্পে নরক বাস করে থাকে এবং কোনোভাবে পৃথিবীতে জন্ম নিলেও তাকে বিধবা হতে হয় ।

১০. যদি কেউ রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম্য শ্রবন করতে পারে তাহলে সে নিত্যকাল বৈকুণ্ঠলোকে বাস করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবে ।


পুরাকালে সত্যযুগে লীলাবতী নামে এক পতিতা বাস করতেন । একদিন সকালে নগর ভ্রমনকালে এক সুসজ্জিত মন্দিরে রাধাঠাকুরানীর পূজা উদযাপন দেখতে পেয়ে ব্রতীদের কাছে ঐ পতিতা ছুটে গেলেন । গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, "হে পূণ্যাত্মা সকল তোমরা এত সাত সকালে অতি যত্ন সহকারে কোন ব্রত উদযাপন করছ" ? তদত্তুরে রাধাব্রতীগণ বলতে লাগলেন যেহেতু ভাদ্র মাসের সীতাষ্টমীতে শ্রীমতি রাধিকা আবির্ভুত হয়েছিলেন, আমরা সেই রাধাষ্টমী ব্রত পালন করছি ।


এই অষ্টমীব্রত গোঘাত জনিত পাপ, ব্রহ্মহত্যা জনিত অথবা স্ত্রী হত্যা জনিত পাপ সহ সকল পাপই নাশ করতে সক্ষম । তাদের কাছ থেকে রাধাষ্টমীর মহিমা শ্রবণ করে সেই পতিতাও স্বেচ্ছায় ব্রত পালনে সংকল্প বদ্ধ হলেন এবং ভক্তগণের সহিত যথাযথভাবে ব্রত পালন করলেন । পরদিন সর্পদংশনে সেই পতিতার মৃত্যু হল । যমদূতেরা ক্রুদ্ধচিত্তে তাকে বন্ধন করে সাথে নিয়ে যমালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলেন ।

পথিমধ্যে শঙ্খ, চক্র, গদ, পদ্মধারী ভগবান বিষ্ণুর দূতগণ উপস্হিত হয়ে লীলাবতীর সকল বন্ধন ছেদন করে দিলেন এবং তাকে সঙ্গে করে রাজহংসযুক্ত দিব্য বিমানে বৈকুণ্ঠলোকে গমন করলেন । এই ভাবে অধঃপতিত বেশ্যাও কেবল মাত্র রাধাষ্টমী পালন করার ফলে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে সরাসরি বৈকুণ্ঠ ধামে গমন করলেন । যে এ রাধাষ্টমী ব্রত পালন করেন না শতকোটি কল্পেও তার নরক হতে নিষ্কৃতি নেই । তারা চিরতরে নরকে পতিত হবেন । পরবর্তীতে জন্ম হলেও বিধবা হয়  🥰🥰🥰

জয় জয় শ্রী রাধা

জয় জয় শ্রী রাধা🦚শ্রী রাধাষ্টমী অনুধ্যান - শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজের সাথে। 


"রাধারাণীর স্থিতি সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত। তিনি বদ্ধজীব নন; তাঁর হৃদয়ে পরমাত্মারূপে বিষ্ণু নেই। তিনি কৃষ্ণ অভিন্ন শক্তি। তাঁরা সম্পূর্ণ এক। কিন্তু কোনোভাবে তাঁরা দুই হলেন এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা কোন শুদ্ধ ভক্তের পদাঙ্ক অনুসরণ করছি আমরা কখনোই তা উপলব্ধি করতে পারব না। যা কিছু আমরা উপলব্ধি করতে পারি, যা কিছু আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি তা কেবল এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে যে, এটিই সর্বোচ্চ! এটিই জীবনের চূড়ান্ত পরম লক্ষ্য! আলোচনার মাধ্যমে, যৌথ আলোচনা সভার মাধ্যমে অথবা ব্যক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে এটি আমরা উপলব্ধি করতে সমর্থ হব না... এটি সম্ভব নয়। কিন্তু একটি আপেক্ষিক উপায়ে আমাদের সীমিত বুদ্ধিমত্তার দ্বারা সর্বপ্রথম এটি উপলব্ধি করতে হবে যে, প্রকৃতপক্ষে এর চেয়ে কোন উচ্চতর তত্ত্ব নেই; এর মধ্যেই সবকিছু নিহিত আছে। 


তাই শুদ্ধভক্তদের পদাঙ্ক অনুসরণ করুন। একজন শুদ্ধ ভক্ত হোন। নিজেদেরকে সমর্পণ করুন। ব্যক্তিগত ইন্দ্রিয় তৃপ্তির আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করুন। কেবল ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাসনা পূরণ করুন। নিরন্তর হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন। সর্বদা স্মরণ করুন!"


~শ্রীল জয়পতাকা স্বামী

৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮১

রাধাষ্টমী প্রবচন, লন্ডন, ইংল্যান্ড।

Post a Comment

0 Comments