মাতা দূর্গার কাছে আমরা কি কামনা করতে পারি ?





 মাতা দূর্গার কাছে আমরা কি কামনা করতে পারি ?  


মাতা দূর্গা হলেন পরম বৈষ্ণবী। যিনি কৃষ্ণ প্রেম প্রদায়নী।তাই আমাদের প্রাপ্য হবে কৃষ্ণ প্রেম চাওয়া। কারণ জীব কর্মানুসারেই সুখ দুঃখে নিমজ্জিত হয়।এজন্যই ভগবান ব্যাসদেব বলেছেন👉
কৃতপ্রযত্নাপেক্ষস্তু বিহিত-প্রতিষিদ্ধাহবৈয়র্থ্যাদিভ্যঃ[ব্র.সূত্র-২/৩/৪২]

অনুবাদ-পরমেশ্বর কিন্তু জীবকৃত পূর্ব্বতন প্রযত্ন বা চেষ্টা অনুসারেই জীবকে কর্তব্য কর্মে প্রবর্ত্তিত করেন, এবং আবশ্যক মতে নিগ্রানুগ্রহরও পাত্র করেন। অর্থ্যাৎ ভগবান জীবকৃত কর্মানুসারে অনুমতিপ্রদানে জীবকে সমস্ত কর্মে প্রবর্তিত করেন। জীবের সুখ দুঃখ প্রভৃতি তাহার নিজহাতে গড়া। ঈশ্বরের বিধান তাহার কর্মানুসারে।ভগবানের কার্যে কোন পক্ষপাতিত্ব নাই। সৎকর্ম দ্বারা জীবের চিত্তের মলিনতা দূর হয়। কর্মদ্বারা চিত্ত নির্মল হইলেই ভগবদ্ভাব স্ফূর্তি প্রাপ্ত হয়। তাই মাতা দূর্গার কাছে আমাদের একমাত্র প্রাপ্য হলো কৃষ্ণ প্রেম পাওয়া। কেননা "শ্রীমদভগবতের ১০স্কন্ধ হতে আমরা জানতে পারি যে গোপকন্যাগণ শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে প্রাপ্তির জন্য কাত্যায়নীর ব্রত করেছিলেন। এই কাত্যায়নী হলেন মাতা দূর্গা"।
শুকদেবের ভাষাই বলিতেছি 👉👉👉
হেমন্তে প্রথমে মাসি নন্দব্রজকুমারিকাঃ।
চেরুর্হবিষ্যং ভুঞ্জানাঃ কাত্যায়ন্যার্চ্চনব্রতম।।
অনুবাদঃ-শুকদেব বললেন হে রাজন,হেমন্তকালে প্রথম মাসে গোকুলের কুমারীগণ হবিষ্যান্ন ভোজন করিয়া কাত্যায়নী পূজা ব্রত আচরণ করিতে লাগিলেন।👉ভাগবত-১০/১২/০১
আপ্লুত্যাম্ভসি কালিন্দ্যা জলান্তে চোদিতেহরুণে।
কৃত্বা প্রতিকৃতিং দেবীমানর্চ্চুর্নৃপ সৈকতীম।।
গন্ধৈর্মাল্যৈঃ সুরভিভির্বলিভির্ধূপদীপকৈঃ।
উচ্চাবচৈশ্চাপহারৈঃ প্রবালফলতণ্ডুলৈঃ।।
অনুবাদঃ-হে রাজন,তাহারা অরুণোদয়কালে যমুনাজলে স্নান করিয়া জলসমীপে বালুকাময়ী কাত্যায়নী প্রতিমা নির্মাণ পূর্বক সুগন্ধি গন্ধ,মাল্য,ধূপ,দীপ বিবিধ উপকরণ, প্রবাল,ফল তণ্ডুল এবং নানাপ্রকার উপহার দ্বারা দেবীর উপাসনা করিতেন। ভাগবত-১০/১২/০২,৩
কাত্যায়নি মহামায়ে মহাযোগিনাধীশ্বরি।
নন্দগোপসুতং দেবি পতিং মে কুরু তে নমঃ।
ইতি মন্ত্রং জপন্ত্যস্তাঃ পূজাং চক্রুঃ কুমারিকা।।
অনুবাদঃ-ঐ কুমারীগণ কাত্যায়নী সম্বোধন পূর্ব্বক, " অগ্নি মহামায়ে,মহাযোগিনি, অধীশ্বরী কাত্যায়নী দেবি,তুমি নন্দসুত শ্রীকৃষ্ণকে আমার পতি কর, তোমাকে প্রণাম করিতেছি" এইরূপ মন্ত্র জপ করিতে করিতে পুজা করিতে লাগিলেন।
এই ভাবে তাহারা একমাস ব্যাপিয়া এইরূপ ব্রত আচরণ করিলেন।তাহারা নন্দসুত আমার পতি হউক এইরূপ প্রার্থনাসহকারে ভদ্রকালীর পুজা করিয়াছিলেন।কারণ পরমপুরুষ ভগবান কৃষ্ণের একটি পরাশক্তি আছে, তাহাই স্বরূপাত্মিকা মাতা দূর্গা। এই মহাবিষ্ণুস্বরূপণী পরাশক্তির বিজ্ঞান মাত্রই পরমপুরুষকে প্রাপ্ত হওয়া যায়। ইনি প্রেম সর্ব্বস স্বভাবা গোকুলেশ্বরী হলাদিনী শক্তি। ইহা৷ আশ্রয়ে আদিদেব অখিলেশ্বরকে সহজে জ্ঞাত হওয়া যায়। কিন্তু ইহার মহামায়া নামে একটি আবরণী শক্তি আছে,তাহার দ্বারা নিখিল জগৎ ও সমস্ত দেহাভিমানী ব্যক্তি মুগ্ধ হইতেছে। অতত্রব দৃষ্ট হয় সমস্ত কৃষ্ণমন্ত্রের অধিষ্ঠাতৃদেবতা মাতা দূর্গা।ইনিই শুদ্ধসত্ত্বস্বরূপা চিচ্ছক্তিবৃত্তি, একানংশা নামক শ্রীকৃষ্ণের কনিষ্ঠা ভগিনী।যোগমায়াই মন্ত্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, ইনিই এই কুমারীগণের দ্বারা উপাসিতা হইয়াছেন এবং শ্রী কৃষ্ণকে পতি রূপে পাইয়াছেন। কারণ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে 👉👉👉
যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্৷
মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।
অর্থ: যে যেভাবে আমার প্রতি আত্মসমর্পণ করে, প্রপত্তি স্বীকার করে, আমি তাকে সেইভাবেই পুরষ্কৃত করি। হে পার্থ, সকলেই সর্বতভাবে আমাকে অনুসরণ করে।
অতত্রব বলা যায় গোপকন্যারা যেহেতু শ্রীকৃষ্ণকে পতি রূপে পাইবার জন্য মাতা দূ্র্গার উপাসনা করেছিলেন, সেহেতু শ্রীকৃষ্ণ তাদের পতি রূপেই পুজিত। তাই আসুন মাতার কাছে একটাই প্রার্থনা করি তাহলো কৃষ্ণ প্রেম। যেভাবে চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছিলেন 👉
★ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং
কবিতাং বা জগদীশঃ কাময়ে★
★মম জন্মানি জন্মানিশ্বরে
ভবতাদ্ভক্তীরহৈতুকি ত্বয়ি★
অনুবাদ---- হে প্রভো!আমি ধন চাই না,অনুগামী লোকজন চাই না, সুন্দরী নারী,মুক্তি এসব কিছুই চাই না।আমার একমাত্র প্রার্থনা যেন জন্মে জন্মে তোমার "অহৈতুকি প্রেমাভক্তি সেবা" করতে পারি।
জয় মাতা দূর্গা।

Post a Comment

0 Comments