দামোদর ব্রত সম্পর্কিত শাস্ত্রীয় নির্দেশাবলী
শ্রীশ্রী
হরিভক্তিবিলাস গ্রন্থের ষোড়শ অধ্যায়ে কার্তিক মাস তথা দামোদর মাস
সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
দামোদর কে?
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম দামোদর। 'দাম'
শব্দের অর্থ রশি এবং 'উদর' হচ্ছে কোমর। মা যশোদা কর্তৃক যাঁর উদরে দাম বা
রশি বন্ধন রয়েছে, তিনিই দামোদর।
দামোদর ব্রত কি?
বৈদিক সংস্কৃতিতে সুপ্রাচীন কাল হতে কার্তিক ব্রত বা দামোদর ব্রত পালিত
হয়ে আসছে। দামোদর ব্রতের সময়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় কর্পূর সমন্বিত ঘৃত বা তিল
তেল দ্বারা প্রদীপ প্রজ্বলন করে ভগবানকে আরতি নিবেদন করতে হয় এবং দামোদর অষ্টকম্ পাঠ করতে হয়।
প্রজ্বলিত কর্পূর সমন্বিত দীপ দ্বারা আরতি করলে সপ্তকল্প যাবত ভগবদ্ধামে
বাস হয়। মনোহরদৃশ্য প্রদীপ দ্বারা শ্রীহরির আরতি করলে কাম-ক্রোধাদি বিদূরিত
হয় এবং পুনর্জন্ম হয় না। দীপের আলোতে ভগবানের মুখমণ্ডল দর্শন করলে
ব্রহ্মহত্যাদি পাপ হতে মুক্ত হওয়া যায়। যে গৃহে দীপদান করা হয় তার সর্বদা ধন, যশ, পুত্র লাভ হয় এবং পূর্বপুরুষগণ সন্তুষ্ট হন।
ঘৃত বা তিলের তৈল যুক্ত কর্পূর মিশ্রিত প্রদীপ দ্বারা ভক্তি সহকারে
ভগবানের চরণে চার বার, নাভি দেশে দুইবার, মুখমণ্ডলে তিনবার এবং সর্বাঙ্গে
সাতবার প্রদীপ ঘুরিয়ে আরতি করুন। মাটির প্রদীপ একবারই ব্যবহারযোগ্য।
ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী
প্রভুপাদের নির্দেশনায় সকল মানুষের মাঝে ভগবানের কৃপাশীর্বাদ ছড়িয়ে দেয়ার
লক্ষ্যে ইসকন ভক্তবৃন্দ সারা বিশ্বব্যাপী এ অনুষ্ঠান উদ্যাপন করছেন।
আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং এশিয়ার
মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত সহ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে এ উৎসব উদ্যাপিত হচ্ছে।
প্রদীপ প্রজ্বলনের মাহাত্ম্য কি?
আরতি নিবেদনের নিয়ম কি?
ইসকন কর্তৃক বিশ্বব্যাপী দামোদর কার্যক্রম
দামোদর মাসের মাহাত্ম্য
" দামোদর মাস একটি অত্যন্ত বিশেষ মাস। কারণ এই মাসে আপনি যাই করুন না কেন তার জন্য আপনি বহুগুণ বেশি সুফল লাভ করবেন। শংখাসুর নামক এক ভয়ঙ্কর অসুর ছিল যার ভয়ে দেবতারা মেরু পর্বতে লুকিয়ে ছিল। সে জানতো না তারা কোথায় ছিল। তাই সে সত্যলোকে গিয়ে মূর্তিমান বেদসমূহকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিল। কেননা এই উপায়ে দেবতারা তাদের কাছে বেদ না থাকায় শক্তি হারাবে, ফলে সে রাজত্ব করতে পারবে। তাই সে সত্যলোকের দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু মূর্তিমান বেদসমূহ তার আসার খবর পেয়ে পালিয়ে যান; সে তাদের তাড়া করে। তারা জলে লুকিয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের জলে দ্রবীভূত করে রাখে। সে ভাবল তারা নিশ্চয়ই কোথাও লুকিয়ে আছে। তাই সে জলের নিচের গুহা, পর্বত আদি খুঁজে দেখতে লাগল, "মূর্তিমান বেদসমূহ কোথায়?" কিন্তু বেদসমূহ জলে মিশে ছিল। তাই দেবতারা ভাবল এই আমাদের সুযোগ, আমাদেরকে যেতে হবে; শুধুমাত্র বিষ্ণুই আমাদের রক্ষা করতে পারে। তাই তারা ক্ষীরসমুদ্রে গিয়ে জপ করতে শুরু করল - তারা ভাবল, "যেহেতু এটি বর্ষা ঋতুর শেষ মাস, ভগবান এখন বিশ্রাম গ্রহণ করেন। যদি আমরা হঠাৎ তাঁকে জাগিয়ে তুলি হয়তো তিনি রেগে যেতে পারেন এবং তা ঠিক হবে না। তাই চলুন আমরা সকলে হরে কৃষ্ণ জপ করি এবং এভাবে যখন তিনি জেগে উঠবেন তিনি ভীষণ আনন্দিত হবেন।" তাই তারা জপ করতে শুরু করল...
কীর্তন:
গুরুমহারাজ: হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে /
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
ভক্তবৃন্দ: হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে /
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু জেগে উঠে সমস্ত দেবতাদের জপ করতে দেখে সত্যিই খুব আনন্দিত হলেন। তিনি এতটাই আনন্দিত হলেন যে তিনি বললেন, "এই মাসের এই তিথিতে যেকোন কৃষ্ণভাবনাময় বা পারমার্থিক কর্ম করা হোক না কেন আমি তার জন্য ১০০ গুণ বেশি সুফল প্রদান করব"
হরিবোল! (গুরুমহারাজ বললেন)। হরিবোল! (ভক্তরাও বললেন)।
তিথিটি ছিল একাদশী তিথি এবং মাসটি ছিল দামোদর অথবা কার্তিক। হরে কৃষ্ণ! তাই এই দামোদর মাসে আপনারা ১০০ গুণ বেশি সুফল লাভ করেন।
প্রকৃতপক্ষে স্কন্দপুরাণ ও অন্যান্য পুরাণ থেকে আমরা জানতে পারি যে যদি আমরা শ্রীবিগ্রহগণকে প্রদীপ নিবেদন করি তাহলে সেজন্য আমরা ১০০০ গুণ সুফল লাভ করি এবং অন্যান্য কাজের জন্য ১০০ গুণ সুফল লাভ করি। কিন্তু শ্রীবিগ্রহগণকে প্রদীপ নিবেদন সত্যিই ভীষণ শুভ। প্রকৃতপক্ষে এটি আপনার পিতৃপুরুষদের মুক্ত করতে পারে। তাই আমরা আমাদের ভক্তদেরকে উৎসাহিত করছি যেন তারা অন্যদেরকে জপ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।"
-শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ।
২১শে অক্টোবর,২০১০।
সেখানেই কার্তিক মাসের ব্রত
পদ্ধতি, করণীয়, বর্জনীয়, দীপদান প্রভৃতি বিভিন্ন কৃত্যাদি বর্ণিত হয়েছে।
নিম্নে সেগুলোই আলোচিত হলো। বামপার্শ্বস্থ সংখ্যা হরিভক্তিবিলাস গ্রন্থের
শোকসংখ্যা জ্ঞাপক।
কার্তিক কৃত্যসমূহ
১। কার্তিক মাসের অধিষ্ঠাতৃদেব শ্রীরাধিকার সাথে শ্রীদামোদরে আমি প্রপন্ন হই। যাঁর প্রভাবে তাঁর প্রিয়তম কার্তিক মাস সেবিত হবেন।
২। স্কন্দ ও পদ্মপুরাণাদিতে কার্তিক কৃত্যাদি পরিস্ফুটভাবে প্রকাশিত আছে তথাপি এই গ্রন্থে একত্রে সংগ্রহ করে সারাংশ লিখতে হচ্ছে।
৩। এই কার্তিক মাসে বৈষ্ণব বিশেষতঃ নিত্য শ্রীদামোদরের অর্চন, প্রাতঃস্নান, দান ব্রতাদি করবেন।
৪। সেইরূপ বিশেষ বিশেষ দিনে যে শ্রীভগবৎ-পূজনাদি বিশেষ নিয়মে করবেন, তা পূর্বে বিচার পূর্বক লিখা হবে।
-
কার্তিক ব্রতের নিত্যতা স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা-নারদ সংবাদে-
৫। দুর্লভ মনুষ্যজন্ম লাভ করে যে মানব কার্তিক ব্রতে বর্ণিত ধর্ম আচরণ না করেন, হে ধার্মিকবর তাকে মাতৃপিতৃ ঘাতক জানবেন।
৬। দামোদর প্রিয় কার্তিকমাস যে মানব ব্রতহীনভাবে অতিবাহিত করে, সে মানব সর্বধর্ম বর্জিত হয়ে পশুপাখি জন্ম লাভ করে।
৭। হে মুনিবর! যে মানব কার্তিক ব্রত না করে, সে ব্রহ্মঘাতী, গোঘাতী, স্বর্ণচোর ও সর্বদা মিথ্যাবাদী।
৮। বিশেষতঃ যে বিধবা নারী কার্তিক ব্রত না করে, হে মুনিশ্রেষ্ঠ! সে সত্যিই নরকে গমন করে।
৯। কার্তিক মাসে যে গৃহী ব্রত না করে, তার যজ্ঞদানাদি বৃথা হয় এবং কল্পকাল নরকবাসী হয়।
১০। কার্তিক মাস প্রাপ্ত হয়ে যে দ্বিজ ব্রত বিমুখ, দেবরাজসহ দেবগণ সকলে তার প্রতি বিমুখ।
১১। হে বিপ্রেন্দ্র! বহু যজ্ঞ দ্বারা পূজা করে এবং শতবার শ্রাদ্ধ করেও কার্তিকে ব্রত না করার ফলে স্বর্গ প্রাপ্ত হয় না।
১২। কার্তিকে বৈষ্ণবব্রত না করার ফলে সন্ন্যাসী, বিধবা ও বিশেষতঃ বনাশ্রমী ব্যক্তি নরকে যায়।
১৩। হে বিপ্রবর! কার্তিকে যদি সে বৈষ্ণব ব্রত না করল, তার বেদসমূহ অধ্যয়নে কি ফল? এবং পুরাণসমূহ পাঠে কি ফল?
১৪। কার্তিক ব্রত না করায় জন্ম অবধি পুণ্য উপার্জন করলেও সে সকল পুণ্য ভস্মীভূত হয়।
১৫। কার্তিকে ব্রত না করলে যে উৎকৃষ্ট দান, সুমহান তপস্যা ও জপ সকলই বিফল হয়।
১৬। হে নারদ! কার্তিক মাসে উত্তম বৈষ্ণব ব্রত না করলে সপ্ত জন্মার্জিত পুণ্য বৃথা হয়।
১৭। হে মহামুনে! যারা কার্তিকে পবিত্র বৈষ্ণবব্রত না করে ইহলোকে সেই মানবগণকে পাপমূর্তি বলে জানবেন।
১৮। শ্রীবিষ্ণুর নিয়ম না করে যে ব্যক্তি কার্তিক মাস অতিবাহিত করে, হে নারদ সে জন্মার্জিত পুণ্যের ফল পায় না।
১৯। হে মুনে! নিয়মব্যতীত যে কার্তিক মাস যাপন করে এবং চাতুর্মাস্য ব্রত না করে, সে কুলাধম ব্রহ্মঘাতী।
২০-২২।
হে শ্রীনারদ! যে বা যারা পিতৃপক্ষে পিতৃগণের পিণ্ডদান না করে, কার্তিকে
ব্রত না করে, শ্রাবণী পূর্ণিমাতে ঋষিতর্পণ না করে। চৈত্রমাসে বিষ্ণুর দোল
না করে, পবিত্র জলে মাঘস্নান না করে, পুষ্যানক্ষত্রে আমলকীব্রত না করে,
শ্রাবণে জন্মাষ্টমী না করে, শ্রাবণদ্বাদশীতে সঙ্গমে স্নান না করে, সেই
মূঢ়গণ কোথায় যাবে আমি তা জানি না।
পদ্মপুরাণে শ্রীনারদ-শৌনকাদি মুনিগণ-সংবাদে --
২৩। ভারতবর্ষে যে মানব কার্তিক মাস নিয়মব্যতীত অতিবাহিত করে, সে হাতে চিন্তামনি পেয়ে কাদাজলে নিক্ষেপ করে।
২৪। হে বিপ্রগণ! নিয়মব্যতীত যে ব্যক্তি কার্তিক মাস যাপন করে, তার প্রতি কৃষ্ণ বিমুখ, যেহেতু ঊর্জ্জাব্রত শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়।
৩২। সর্বতীর্থে যে স্নান, সর্বদানের যে ফল, কার্তিক মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না।
৩২। সর্বতীর্থে যে স্নান, সর্বদানের যে ফল, কার্তিক মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না।
৩৩-৩৪। একদিকে সর্বতীর্থ, দক্ষিণাসহ সর্বযজ্ঞ, পুস্করে বাস, কুরুক্ষেত্র ও
হিমাচলে বাস, মেরুতুল্য সুবর্ণ দান। হে বৎস! অন্যদিকে সর্বদা কেশববপ্রিয়
কার্তিক মাস।
৩৫। কার্তিকে শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে যে কিছু পুণ্য করা হয়। সে নারদ! তোমার নিকট সত্য বলছি, তা সকল অক্ষয় হয়।
৩৬। মাস সকলের মধ্যে কার্তিক মাস নিশ্চয়ই উত্তম। পুণ্যগণের মধ্যে পরম পুণ্য, পবিত্রকারি গণের মধ্যে পরম পবিত্র।
৩৭-৩৮। হে নারদ! হে বিপ্রেন্দ্র! যেমন নদীসমূহের, পর্বতসমূহের, হে বিপ্রর্ষে! সমুদ্রসমূহের ক্ষয় জানা যায় না, সেই রকম হে ব্রাহ্মণ্, হে মুনে! কার্তিক মাসে যে যৎকিঞ্চিৎ পুণ্য করা যায় তার ক্ষয় নাই, এই রকম পাপেরও ক্ষয় নাই।
৩৯। কার্তিকের সমান মাস নাই, সত্যযুগের সমান যুগ নাই, বেদের সমান শাস্ত্র নাই। গঙ্গার সমান তীর্থ নাই।
৪০। সর্বদা বৈষ্ণবগণের প্রিয় কার্তিক শ্রেষ্ঠ মাস। কার্তিকে উৎপন্ন সকল বস্তু বৈষ্ণবগণ ভক্তিপূর্বক সেবা করেন, হে মহামুনে! বৈষ্ণব নরকস্থ সকল পিতৃগণকে উদ্ধার করেন।
পদ্মপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে
৪১। দ্বাদশ মাস মধ্যে কার্তিক মাস শ্রীকৃষ্ণ প্রিয়। তাতে অল্প উপায়ন দ্বারা তিনি সম্যক্ পূজিত হয়ে বিষ্ণুলোক
দান করেন, এইরকম আমি নিশ্চয় করেছি।
৪২। যেমন দামোদর ভক্তবৎসল সর্বজন বিদিত, তাই এই দামোদর মাস সেইরূপ ভক্তবৎসল; স্বল্প সেবাকেও বহু করে নেন।
৪৩। দেহধারীগণের মধ্যে মানব দেহ দুর্লভ ও ক্ষণভঙ্গুর, তার মধ্যেও দুর্লভ কাল শ্রীহরিপ্রিয় কার্তিক মাস।
৪৪। কার্তিকে দ্বীপদান দ্বারা এই পরমেশ্বর শ্রীহরি প্রীত হন, পরদত্ত দীপ প্রবোধন ফলেও শ্রীহরি সুগতি দান করেন।
স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে-
৪৫। এই জগতে ব্রতসমূহের ফল মাত্র এক জন্ম অনুগমন করে কিন্তু কার্তিকে ব্রতের ফল শতজন্ম অনুগমন করে।
৪৬। হে বিপ্রেন্দ! কার্তিক ব্রতে মথুরায় অক্রুর তীর্থে সম্পূর্ণ উপবাস করে ও স্নান করে যে ফল প্রাপ্ত হয়, কার্তিক ব্রতের নিয়ম শ্রবণ করেও সেই ফল প্রাপ্ত হয়।
৪৭। বারাণসীতে, কুরুক্ষেত্রে, নৈমিষারণ্যে, পুষ্করে ও অর্বুদতীর্থে গমন করে যে ফল লাভ হয়, কার্তিকে ব্রত করে সেই ফল লাভ হয়।
৪৮। সর্বদা যজ্ঞসমূহ দ্বারা যজন না করেও পিতৃগণের শ্রাদ্ধ না করেও কার্তিকমাসে ব্রতদ্বারা বিষ্ণুধামে গমন করে।
৪৯। নিত্যভক্ষ্য দ্রব্যসমূহের মধ্যে কার্তিকে কিঞ্চিৎ নিয়ম করে সঙ্কোচ করলে নিশ্চয়ই পবিত্র কৃষ্ণসারূপ্য প্রাপ্ত হয়।
৫০। হে মুনিসত্তম! কার্তিকে ব্রত করলে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্র পাপার্জ্জিত কুজন্ম প্রাপ্ত হয় না।
৫১। হে মুনিশার্দ্দুল! কার্তিকে নিজশক্তি অনুসারে বিষ্ণুব্রত শাস্ত্রবিধিমত যিনি করেন, সংসার-মুক্তি তাঁর হস্তগত।
৫২। সুপবিত্র কার্তিক মাসে দেব, ঋষি ও পিতৃগণের সেবিত ব্রত করলে অতি অল্পেও মানবগণের মহাফল লাভ হয়।
১৮৭। কার্তিক মাসে রাজমাষ (বরবটি) ও শিমসমূহ ভক্ষণ করলে, হে মুনিবর কল্পকাল নরকবাসী হয়।
৩৫। কার্তিকে শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে যে কিছু পুণ্য করা হয়। সে নারদ! তোমার নিকট সত্য বলছি, তা সকল অক্ষয় হয়।
৩৬। মাস সকলের মধ্যে কার্তিক মাস নিশ্চয়ই উত্তম। পুণ্যগণের মধ্যে পরম পুণ্য, পবিত্রকারি গণের মধ্যে পরম পবিত্র।
৩৭-৩৮। হে নারদ! হে বিপ্রেন্দ্র! যেমন নদীসমূহের, পর্বতসমূহের, হে বিপ্রর্ষে! সমুদ্রসমূহের ক্ষয় জানা যায় না, সেই রকম হে ব্রাহ্মণ্, হে মুনে! কার্তিক মাসে যে যৎকিঞ্চিৎ পুণ্য করা যায় তার ক্ষয় নাই, এই রকম পাপেরও ক্ষয় নাই।
৩৯। কার্তিকের সমান মাস নাই, সত্যযুগের সমান যুগ নাই, বেদের সমান শাস্ত্র নাই। গঙ্গার সমান তীর্থ নাই।
৪০। সর্বদা বৈষ্ণবগণের প্রিয় কার্তিক শ্রেষ্ঠ মাস। কার্তিকে উৎপন্ন সকল বস্তু বৈষ্ণবগণ ভক্তিপূর্বক সেবা করেন, হে মহামুনে! বৈষ্ণব নরকস্থ সকল পিতৃগণকে উদ্ধার করেন।
পদ্মপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে
৪১। দ্বাদশ মাস মধ্যে কার্তিক মাস শ্রীকৃষ্ণ প্রিয়। তাতে অল্প উপায়ন দ্বারা তিনি সম্যক্ পূজিত হয়ে বিষ্ণুলোক
দান করেন, এইরকম আমি নিশ্চয় করেছি।
৪২। যেমন দামোদর ভক্তবৎসল সর্বজন বিদিত, তাই এই দামোদর মাস সেইরূপ ভক্তবৎসল; স্বল্প সেবাকেও বহু করে নেন।
৪৩। দেহধারীগণের মধ্যে মানব দেহ দুর্লভ ও ক্ষণভঙ্গুর, তার মধ্যেও দুর্লভ কাল শ্রীহরিপ্রিয় কার্তিক মাস।
৪৪। কার্তিকে দ্বীপদান দ্বারা এই পরমেশ্বর শ্রীহরি প্রীত হন, পরদত্ত দীপ প্রবোধন ফলেও শ্রীহরি সুগতি দান করেন।
স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে-
৪৫। এই জগতে ব্রতসমূহের ফল মাত্র এক জন্ম অনুগমন করে কিন্তু কার্তিকে ব্রতের ফল শতজন্ম অনুগমন করে।
৪৬। হে বিপ্রেন্দ! কার্তিক ব্রতে মথুরায় অক্রুর তীর্থে সম্পূর্ণ উপবাস করে ও স্নান করে যে ফল প্রাপ্ত হয়, কার্তিক ব্রতের নিয়ম শ্রবণ করেও সেই ফল প্রাপ্ত হয়।
৪৭। বারাণসীতে, কুরুক্ষেত্রে, নৈমিষারণ্যে, পুষ্করে ও অর্বুদতীর্থে গমন করে যে ফল লাভ হয়, কার্তিকে ব্রত করে সেই ফল লাভ হয়।
৪৮। সর্বদা যজ্ঞসমূহ দ্বারা যজন না করেও পিতৃগণের শ্রাদ্ধ না করেও কার্তিকমাসে ব্রতদ্বারা বিষ্ণুধামে গমন করে।
৪৯। নিত্যভক্ষ্য দ্রব্যসমূহের মধ্যে কার্তিকে কিঞ্চিৎ নিয়ম করে সঙ্কোচ করলে নিশ্চয়ই পবিত্র কৃষ্ণসারূপ্য প্রাপ্ত হয়।
৫০। হে মুনিসত্তম! কার্তিকে ব্রত করলে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্র পাপার্জ্জিত কুজন্ম প্রাপ্ত হয় না।
৫১। হে মুনিশার্দ্দুল! কার্তিকে নিজশক্তি অনুসারে বিষ্ণুব্রত শাস্ত্রবিধিমত যিনি করেন, সংসার-মুক্তি তাঁর হস্তগত।
৫২। সুপবিত্র কার্তিক মাসে দেব, ঋষি ও পিতৃগণের সেবিত ব্রত করলে অতি অল্পেও মানবগণের মহাফল লাভ হয়।
কার্তিক ব্রতে বর্জনীয় দ্রব্যসকল পদ্মপুরাণে ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে-
৯২। রাত্রিশেষে হরি জাগরণ, প্রাতঃস্নান, তুলসীবন সেবন, দীপদান, শেষে উৎসব উদ্যাপন- কার্তিকে এই সকল ব্রত।
৯৩। সম্পূর্ণ কার্তিক মাসে ব্রতকারী পাঁচটি ব্রত অঙ্গ পালন দ্বারা ভুক্তি মুক্তি ফল প্রাপ্ত হন।
৯৪। কার্তিকে হরি জাগরণ বিষ্ণুমন্দিরে, শিবালয়ে, অশ্বত্থমূলে বা তুলসীবনে করবে।
৯৫। কার্তিক-ব্রতী বিপদাপন্ন হয়ে স্নানের জন্য যখন জল না পাবেন, অথবা ব্যাধিবশতঃ স্নানে অসমর্থ হলে শ্রীবিষ্ণুর নাম দ্বারা মন্ত্র স্নান করবেন।
৯৬। ব্রতকারী হয়ে যিনি উদ্যাপন বিডি করতে অসমর্থ, তিনি ব্রত সংপূর্তির জন্য যথাশক্তি ব্রাহ্মণগণকে ভক্তিপূর্বক ভোজন করাবেন।
৯৭। কার্তিকে দীপদানে অসমর্থ হলে পরের প্রদত্ত দীপকে উদ্দীপিত করবে অথবা যত্নসহকারে বাতাসাদি হতে পর দীপকে রক্ষা করবে।
৯৮। তুলসী সেবার অভাবে বৈষ্ণব দ্বিজকে পূজা করবেন, ব্রতী এ সকলের অভাবে ব্রত সম্পূর্ণের জন্য ব্রাহ্মণগণের, গাভীগণের বা অশ্বত্থ ও বটবৃক্ষের সেবা করবে।
১৮৮। কার্তিক মাসে যে ব্যক্তি কলমী শাক, পটল, বেগুন, আচার (চাটনি) ত্যাগ না করে, তাকে কল্পকাল নরকবাসী হতে হয়।
১৮৯। ধর্মাত্মা ব্যক্তি কার্তিক মাসে মৎস্য ও মাংস ভক্ষণ করবেন না।
১৯০। পরান্ন, পরশয্যা, পরধন, পরস্ত্রী-কার্তিকে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি বিশেষভাবে বর্জন করবেন।
১৯০। কার্তিক মাসে তৈল মর্দন, শয্যা, পরান্ন ও কাসার পাত্রে ভোজন ত্যাগ করলে পরিপূর্ণ ব্রতী হওয়া যায়।
১৯২। কার্তিক মাস উপস্থিত হলে পরান্ন দর্শন করে যে মানব বর্জন করে, প্রতিদিন কৃচ্ছব্রতের ফল প্রাপ্ত হন।
পদ্মপুরাণে শ্রীরুক্মাঙ্গদ-মোহিনী-সংবাদে-
১৯৩। কার্তিকে তৈল, মধু, কাসার পাত্র ও পঁচা বাসি অম্ল দ্রব্য, আচার ইত্যাদি বর্জন করবে।
১৯৪। হে সুভ্রু! মৎস্য, কচ্ছপ মাংস ঔষধ হিসেবেও অন্য মাংস ভক্ষণ করবে না। কার্তিকে মাংস ভক্ষণে চণ্ডাল হয়।
0 Comments