‘রমা’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
আসছে আগামী
২৪/১০/২০১৯ ইং তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার ‘রমা’ একাদশী ব্রত উপবাস। পারণ পর দিন শুক্রবার ০৫.৩৭ মিঃ থেকে ০৯.২৬ মিনিট এর মধ্যে। আপনি নিজে
একাদশী ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।
‘রমা’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
=====================
একসময় যুধিষ্ঠির মহারাজ শ্রীকৃষ্ণকে বললেন- হে জনার্দন! কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপা করে আমায় বলুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন-হে রাজন! মহাপাপ দূরকারী সেই একাদশী ‘রমা’ নামে বিখ্যাত।
আমি এখন এর মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, আপনি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করুন।
পুরাকালে মুচুকুন্দ নামে একজন সুপ্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র, যম,
বরুণ ও ধনপতি কুবেরের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। ভক্তশ্রেষ্ঠ বিভীষণের সাথেও
তার অত্যন্ত সদ্ভাব ছিল। তিনি ছিলেন বিষ্ণুভক্ত ও সত্যপতিজ্ঞ। এইরূপে তিনি
ধর্ম অনুসারে রাজ্যশাসন করতেন।
চন্দ্রভাগা নামে তার একটি কন্যা ছিল।
চন্দসেনের পুত্র শোভনের সাথে তার বিবাহ হয়েছিল। শোভন একসময় শ্বশুর বাড়িতে
এসেছিল। দৈবক্রমে সেইদিন ছিল একাদশী তিথি। স্বামীকে দেখে পতিপরায়ণা
চন্দ্রভাগা মনে মনে চিন্ত করতে লাগল-হে ভগবান! আমার স্বামী অত্যন্ত দুর্বল,
তিনি ক্ষুধা সহ্য করতে পারেন না। এখানে আমার পিতার শাসন খুবই কঠোর। দশমীর
দিন তিনি নাগরা বাজিয়ে ঘোষণা কর দিয়েছেন যে, একদশী দিনে আহার নিষিদ্ধ। আমি
এখন কি করি! রাজার নিষেধাজ্ঞা শুনে শোভন তার প্রিয়তমা পত্নীকে বলল- হে
প্রিয়ে, এখন আমার কি কর্তব্য, তা আমাকে বলো। উত্তরে রাজকন্যা বলল- হে
স্বামী, আজ এই গৃহে এমনকি রাজ্যমধ্যে কেউই আহার করবে না। মানুষের কথা তো
দূরে থাকুক পশুরা পর্যন্ত অন্নজল মাত্র গ্রহণ করবে না। হে নাথ, যদি তুমি এ
থেকে পরিত্রাণ চাও তবে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন কর। এখানে আহার করলে তুমি
সকলের নিন্দাভাজন হবে এবং আমার পিতাও ক্রদ্ধ হবেন। এখন বিশেষভাবে বিচার করে
যা ভাল হয়, তুমি তাই কর।
সাধ্বী স্ত্রীর এই কথা শুনে শোভন বলল- হে
প্রিয়ে! তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমি গৃহে যাব না। এখানে থেকে একাদশী ব্রত
পালন করব। ভাগ্যে যা লেখা আছে তা অবশ্যই ঘটবে। এইবাবে শোভন ব্রত পালনে
বদ্ধপরিকর হলেন। সমস্ত দিন অতিক্রান্ত হয়ে রাত্রি শুরু হল। বৈষ্ণবদের কাছে
সেই রাত্রি সত্যিই আনন্দকর। কিন্তু শোভনের পক্ষে তা ছিল বড়ই দু:খ দায়ক।
কেননা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় সে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ল। এভাবে রাত্রি অতিবাহিত হলে
সূর্যোদয়কালে তার মৃত্যু হল। রাজা মুচুকুন্দ সাড়ম্বরে তার শবদাহকার্য
সুসম্পন্ন করলেন। চন্দ্রভাগা স্বামীর অন্তেষ্টিক্রিয়া সমাপ্ত করে পিতার
আদেশে পিতৃগৃহেই বাস করতে লাগলেন।
কালক্রমে রমাব্রত প্রভাবে শোভন
মন্দরাচল শিখরে অনুপম সৌন্দর্যবিশিষ্ট এক রমনীয় দেবপুরী প্রাপ্ত হলেন।
একসময় মুচুকুন্দপুরের সোমশর্ম্মা নামে এক ব্রাহ্মণ তীর্থভ্রমণ করতে করতে
সেখানে উপস্থিত হলেন। সেখানে রত্নমন্ডিত বিচিত্র স্ফটিকখচিত সিংহাসনে
রত্নলঙ্কারে ভূষিত রাজা শোভনকে তিনি দেখতে পেলেন। গন্ধর্ব ও অপ্সরাগণ
দ্বারা নানা উপচারে সেখানে তিনি পূজিত হচ্ছিলেন। রাজা মুচুকুন্দের
জামাতারূপে ব্রাহ্মণকে দেখে আসন থেকে উঠে এসে তাঁর চরণ বন্দনা করলেন।
শ্বশুর মুচুকুন্দ ও স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ নগরবাসী সকলের কুশলবার্তা
জিজ্ঞাসা করলেন। ব্রাহ্মণ সকলের কুশল সংবাদ জানালেন। জিজ্ঞাসা করলেন- এমন
বিচিত্র মনোরম স্থান কেউ কখনও দেখেনি। আপনি কিভাবে এই স্থান প্রাপ্ত হলেন,
তা সবিস্তারে আমার কাছে বর্ণনা করুন। শোভন বললেন যে, কার্তিক মাসের
কৃষ্ণপক্ষীয়া ‘রমা’ একাদশী সর্বব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমি তা
শ্রদ্ধারহিতভাবে পালন করলেও তার আশ্চর্যজনক এই ফল লাভ করেছি। আপনি কৃপা করে
চন্দ্রভাগাকে সমস্ত ঘটনা জানাবেন।
সোমশর্ম্মা মুচুকুন্দপুরে ফিরে এসে
চন্দ্রভাগার কাছে সমস্ত ঘটনার কথা জানালেন। ব্রাহ্মণের কথা শুনে অত্যন্ত
আনন্দিত চন্দ্রভাগা বললেন- হে ব্রাহ্মণ! আপনার কথা আমার কাছে স্বপ্ন বলে
মনে হচ্ছে। তখন সোমশর্ম্মা বললেন-হে পুত্রী, সেখানে তোমার স্বামীকে আমি
স্বয়ং সচক্ষে দেখেছি। অগ্নিদেবের মতো দীপ্তিমান তার নগরও দর্শন করেছি।
কিন্তু তার নগর স্থির নয়, তা যাতে স্থির হয় সেই মতো কোন উপায় কর। এসব কথা
শুনে চন্দ্রভাগা বললেন, তাকে দেখতে আমার একান্ত ইচ্ছা হচ্ছে। আমাকে এখনই
তার কাছে নিয়ে চলুন। আমি ব্রত পালনের পুণ্যপ্রভাবে এই নগরকে স্থির করে দেব।
তখন সোমশর্ম্মা চন্দ্রভাগাকে নিয়ে মন্দার পর্বতে বামদেবের আশ্রমে উপনীত
হলেন। সেখানে ঋষির কৃপায় ও হরিবাসর ব্রত পালনের ফলে চন্দ্রভাগা দিব্য শরীর
ধারণ করল। দিব্য গতি লাভ করে নিজ স্বামীর নিকট উপস্থিত হলেন। প্রিয় পত্নীকে
দেখে শোভন অতীব আনন্দিত হলেন।
বহুদিন পর স্বামীর সঙ্গ লাভ করে
চন্দ্রভাগা অকপটে নিজের পুণ্যকথা জানালেন। হে প্রিয়, আজ থেকে আট বছর আগে
আমি যখন পিতৃগৃহে ছিলাম তখন থেকেই এই ‘রমা’ একাদশীর ব্রত নিষ্ঠাসহকারে পালন
করতাম। ঐ পুণ্য প্রভাবে এই নগর স্থির হবে এবং মহাপ্রলয় পর্যন্ত থাকবে।
হে মহারাজ! মন্দরাচল পর্বতের শিখরে শোভন স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ দিব্যসুখ
ভোগ করতে লাগলেন। পাপনাশিনী ও ভক্তিমুক্তি প্রদায়িনী ‘রমা’ একদশীর
মাহাত্ম্য আপনার কাছে বর্ণনা করলাম। যিনি এই একাদশী ব্রত শ্রবণ করবেন, তিনি
সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণলোকে পূজিত হবেন।
হরে কৃষ্ণ
0 Comments