আপনার পুত্রকে কেন ধর্মীয় শিক্ষা দেবেন?
এই জগতে যারা ভগবানের নির্দেশমত জীবন যাপন করেন সেই সন্তানের প্রতি সমস্ত দেবতা, মহাত্মা, ঋষি ও ব্ৰাহ্মণেরা আশীর্বাদ প্রদান করে যে, শাস্ত্রের বাণী পূৰ্ণরুপে সাৰ্থক হয়েছে এই পুত্র দ্বারা।
বৈদিক শাস্ত্রে নিৰ্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বিবাহে পত্নীর পাণিগ্রহণের উদ্দেশ্য হচ্ছে উপযুক্ত পুত্ৰসন্তান লাভ করা। যে তার পিতা-মাতাকে নরকের অন্ধকারতম প্রদেশ থেকে উদ্ধার করতে পারবে।
বিবাহের উদ্দেশ্য ইন্দ্ৰিয়তৃপ্তি নয়, পিতা-মাতাকে উদ্ধারকারী সুযোগ্য পুত্ৰসন্তান লাভ করা। কিন্তু পুত্ৰ যদি অযোগ্য অসুর হয়ে যায়, তা হলে সে পিতা-মাতাকে কিভাবে নরক থেকে উদ্ধার করবে ? তাই পিতা-মাতাকে কৰ্তব্য নিজে বৈষ্ণব হয়ে, পুত্ৰদেরও বৈষ্ণব হওয়ার শিক্ষা দেওয়া, তা হলে পিতা-মাতা যদি ঘটনাক্ৰমে পরবর্তী জীবনে নরকে পতিতও হয়, তার সুযোগ্য পুত্ৰ তাকে উদ্ধার করতে পারবে, ঠিক যেমন পৃথু মহারাজ তাঁর অসুর পিতা রাজা বেনকে উদ্ধার করেছিলেন এবং ধ্রব মহারাজ তাঁর মাতাকে যেভাবে উদ্ধার করেছিল।
ভাগবতে বর্ননা আছে হিরন্যকশিপু তার পুত্র প্রহ্লাদ শ্রীহরির বিষ্ণুভক্ত হওয়াতে তাকে নিজ হাতে হত্যা করতে অনেক চেষ্টা করেছিল। ভক্ত প্রহ্লাদ মহারাজের বিশ্বাস রক্ষা করতে ভগবান নৃসিংহদেব হিরণ্যকশিপুকে বধ করে যখন প্ৰহ্লাদ মহারাজকে বর দিতে চেয়েছিলেন, তখন তাঁর গভীর ভক্তি ও সহনশীলতার জন্য প্ৰহ্লাদ মহারাজ ভগবানের কাছ থেকে কোন বর গ্রহণ করতে চাননি । তিনি মনে করেছিলেন যে, এই প্ৰকার বরগ্রহণ ঐকান্তিক ভক্তের শোভা পায় না। কোন পুরস্কার লাভের আশায় ভগবানের সেবা করাকে প্ৰহ্লাদ মহারাজ এক ধরনের ব্যবসা বলে নিন্দা করেছেন।
যেহেতু প্ৰহ্লাদ মহারাজ ছিলেন বৈষ্ণব, তাই তিনি নিজের স্বাৰ্থে কোন বর প্রার্থনা করেননি, কিন্তু তিনি তাঁর পিতার প্রতি গভীর অনুকম্পা অনুভব করেছিলেন। যদিও তার পিতা তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার করেছিল এবং ভগবান তাকে হত্যা না করলে, প্ৰহ্লাদকে সে হত্যা করত, তবুও প্ৰহ্লাদ মহারাজ তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপুর মঙ্গল কামনা করে ভগবানের কাছে প্ৰাৰ্থনা করেছিলেন। ভগবান তাঁর সেই প্ৰাৰ্থনা তৎক্ষণাৎ পূৰ্ণ করেছিলেন এবং হিরণ্যকশিপু নরকের গভীরতম অন্ধকারাচ্ছন্ন প্ৰদেশ থেকে উদ্ধার লাভ করে তার পুত্রের কৃপায় ভগবদ্ধামে ফিরে গিয়েছিল।
সুপুত্র প্ৰহ্লাদ মহারাজ সর্বশ্ৰেষ্ঠ বৈষ্ণবের আদৰ্শ দৃষ্টান্ত এই যে, তিনি শুধু তাঁর পিতা হিরন্যকশিপুকেই নয় এই জড় জগতে নিরন্তর নারকীয় যন্ত্ৰণাভোগ করছে যে সমস্ত পাপী, তাদের প্রতি তিনি অত্যন্ত কৃপা পরায়ণ ছিলেন। ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ প্ৰহ্লাদ মহারাজের মতো ভগবানের সমস্ত ভক্তরা পাপী জীবদের উদ্ধার করার জন্য এই জড় জগতে আসেন। তারা সহিষ্ণুতা সহকারে সব রকম দুঃখ কষ্ট সহ্য করেন কারণ সেটি জড় জগতের নারকীয় পরিবেশ থেকে পাপীদের উদ্ধারকারী বৈষ্ণবের আর একটি গুণ।
তাই বৈষ্ণবদের বন্দনা করে সবাই প্রনাম ও স্তুতি করেন,
”বাঞ্ছাকল্পতরুভ্যশ্চ কৃপাসিন্ধুভ্য এব চ।
পতিতানাং পাবনেভ্যে বৈষ্ণবেভ্যো নমো নমঃ”॥
কারন বৈষ্ণবদের প্রধান ভাবনা হচ্ছে কিভাবে বদ্ধ জীবদের উদ্ধার করা যায়।
সুপুত্র হল স্বয়ং ভগবানের শুদ্ধভক্ত, আর ভক্তের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, ভগবানের প্রতি অবিচলিত ভক্তিপরায়ণ হওয়ার ফলে, তিনি চিরকাল জীবিত থাকেন।
শাস্ত্রে বলা হয় যে, ”কীৰ্তিস্য স জীবতি”—
“অর্থাৎ যিনি সৎ কীৰ্তি রেখে যান, তিনি চিরকাল জীবিত থাকেন”।
যে সন্তান ভগবদ্ভক্ত হওয়ার খ্যাতি অৰ্জন করেছেন, তিনি নিঃসন্দেহে চিরকাল জীবিত থাকেন।
রামানন্দ রায়ের সঙ্গে যখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আলোচনা হয়েছিল, তখন শ্ৰীচৈতন্য মহাপ্ৰভু তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন,
“ কীৰ্তিগণ – মধ্যে জীবের কোন বড় কীৰ্তি” ?
“ কৃষ্ণভক্ত বলিয়া যাহার হয় খ্যাতি”
বলে রামানন্দ রায় উত্তর দিয়েছিলেন কারণ ভক্ত কেবল নিত্যকাল বৈকুণ্ঠলোকেই বাস করেন না, জড় জগতেও তিনি তার খ্যাতির দ্বারা চিরকাল জীবিত থাকেন।
তাই আপনাদের পুত্রকে কৃষ্ণজ্ঞান দান করুণ, তাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহান ভক্ত হতে শিক্ষা দিন। তাহলে অবশ্যই আপনার এই বৈষ্ণব পুত্র শুধু আপনাকে নয় এ জগতের সকলকে নরক যন্ত্রণা থেকে ত্রান করে, সবাইকে ভগবানের ধামে নিয়ে যাবে।। হরেকৃষ্ণ।
0 Comments