আমি কিভাবে কৃষ্ণভক্ত হলাম - শ্রীমৎ ভক্তিপ্রিয়ম গদাধর গোস্বামী মহারাজ

আমি কিভাবে কৃষ্ণভক্ত হলাম - শ্রীমৎ ভক্তিপ্রিয়ম গদাধর গোস্বামী মহারাজ
ইসকন বাংলাদেশের প্রথম সন্ন্যাসীর জীবন কথা
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের কৃপাধন্য শিষ্য ইসকনের অন্যতম আচার্য শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজের কৃপাপুষ্ট বাংলাদেশ ইসকনের প্রথম সন্ন্যাসী শ্রীমদ্ ভক্তিপ্রিয়ম গদাধর গোস্বামী মহারাজ ১৯৬৫ সালের ১৭ মার্চ (বাংলা ৪ চৈত্র ১৩৭১) রোজ শুক্রবার সকাল ৭.৩০ টায় শতভিসা নক্ষত্র শিবযোগ মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে রংপুর জেলার অন্তর্গত তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার কামার পাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত বৈষ্ণব পরিবারে আবির্ভূত হন।
তাঁর বাল্য নাম ছিল শ্রী গদাধর মহন্ত। পিতা: শ্রী শচীন্দ্রনাথ মহন্ত, মাতা: শ্রীমতি গৌরিবালা মহন্ত। তিনি ছিলেন তাঁর পিতা-মাতার চার পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সন্তান। সম্ভান্ত বৈষ্ণব পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ফলে, জীবনের প্রথম থেকেই পিতা-মাতার কাছে তিনি ভগবদ্ভক্তির অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি প্রতিদিন তার পিতৃদেব যখন পূজার উদ্দেশ্যে বাড়িব পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিকলী নদীতে প্রাতঃস্নান করতে যেতেন, তখন তিনিও তাঁর সাথে স্নান করতে যেতেন। এভাবে বাল্যকাল হতেই তিনি ধর্মাচার অনুশীলন শুরু করেন।
সয়ার কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করার পর এই বর্ষীয়ান ভাগবত প্রবক্তা তারাগঞ্জ ও/এ উচ্চ বিদ্যালয় ও তারাগঞ্জ ও/এ ডিগ্রী কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরে ১৯৮৯ সালে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় দর্শন বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। মূলত তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত অবস্থায় সাধুসঙ্গ ও ভাগবত অনুষ্ঠানে প্রায়ই যোগ দিতেন এবং আর একটি মজার কাহিনি হচ্ছে এই আধুনিক যুগেও তিনি ধূতি পড়ে স্কুল-কলেজে যেতেন। তাঁর সমবয়সী বন্ধুদের নিয়ে কার্তিক ও বৈশাখ মাসে নগর সংকীর্তন করতেন। এভাবে তিনি বাল্যকাল থেকেই আধ্যাত্মিক জ্ঞান চর্চায় আসক্ত হয়ে পড়েন এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথসহ মহাভারত, শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত ও শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করতেন, ফলে তিনি জাগতিক শিক্ষার প্রতি ক্রমে ক্রমে অনাসক্ত এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রতি আসক্ত হন ও ইসকনের সান্নিধ্যে আসেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী প্রচারে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে ইসকনের লাইফ মেম্বার হন। ১ এপ্রিল ১৯৯০ সালে দিনাজপুর জেলার কাহারুল মহারাজগঞ্জে শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজের নিকট হরিনাম দীক্ষা প্রাপ্ত হন এবং শ্রী গদাধর প্রিয় দাস ব্রহ্মচারী নামে পরিচিতি লাভ করেন।
দীক্ষার পরেই তিনি ঢাকায় শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ জিউ মন্দিরে (ওয়ারি) ১ মাস ব্যাপক প্রচার কার্য করেন। পরে উত্তরবঙ্গের ইসকন প্রচার কেন্দ্র তারাগঞ্জ থেকে ব্যাপক প্রচার কার্য শুরু করলেন এবং তারাগঞ্জ প্রচার কেন্দ্রকে ১৯৯০ সালে নামহট্টে প্রবর্তন করেন। ১৯৯১ সালের ২৩ এপ্রিল যশোর কেশবপুর কাঁটাখালি গৌর-নিতাই মন্দিরে শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরু মহারাজের নিকট গায়ত্রী দীক্ষা প্রাপ্ত হন।
১৯৯৩ সালে প্রথম শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজ তারাগঞ্জ নামহট্ট মন্দিরে ১৯ জনকে নিয়ে হরিনাম দীক্ষার আয়োজন করেন এবং এই দীক্ষা অনুষ্ঠানে তার মাতাও শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজের নিকট দীক্ষা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে ইসকনের অন্যতম আচার্য শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজ তারাগঞ্জ নামহট্ট মন্দিরকে শ্রীশ্রী রাধা মদনমোহন জিউ মন্দির হিসেবে শুভ উদ্বোধন করেন এই মন্দিরেই ভক্তিপ্রিয়ম গদাধর গোস্বামী মহারাজ অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত থেকে অক্লান্ত ও নিরলসভাবে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী প্রচার কার্য করেন। ২০১৩ সালের ২৭ মার্চ গৌরপূর্ণিমা তিথিতে শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজের নিকট ভগবদ্ভক্তির আসন সন্ন্যাস দীক্ষা প্রাপ্ত হন এবং শ্রীমৎ ভক্তিপ্রিয়ম গদাধর গোস্বামী মহারাজ নামে খ্যাত হন।

Post a Comment

0 Comments