গুন্ডিচা মন্দির মার্জন মহিমা

গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন হচ্ছে আমাদের হৃদয়কে মার্জন করার প্রতীক।

গুন্ডিচা মন্দির মার্জন মহিমা


রথযাত্রার দিন শ্রীজগন্নাথ গুণ্ডিচা মন্দিরে যান। সারা বছরের ৮/৯ দিন সেখানে থাকেন। আর পৌনে বার মাস গুণ্ডিচা মন্দির ফাঁকা থাকে। এক বছরের ধুলো বালি ময়লা মন্দিরে জমে আছে। পড়িছার দ্বায়িত্ব মন্দির পরিস্কার করা। কিন্তু শ্রীমনমহাপ্রভূ পড়িছার কাছে এই দ্বায়িত্ব যেচে নিলেন। সাংসারিক জীবের কাছে ময়লা আর্বজনা পরিস্কার করা হীন কাজ, দাস দাসীদের কাজ। কিন্তু শ্রীমন মহাপ্রভূ যিনি স্বয়ং গোলক বিহারী শ্রীকৃষ্ণ, যিনি অনন্তকোটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর, অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ডের ব্রহ্মা, কত কত রুদ্র যার চরন সেবার জন্য লালায়িত আজ তিনি কি করছেন? আজ তিনি নিজের শ্রীহস্তে গুণ্ডিচা মন্দির পরিস্কার করার দ্বায়িত্ব নিলেন। এ কি তার যোগ্য কর্ম? এই গুণ্ডিচা মার্জন লীলার কয়েকটি কারন রয়েছে।
- শ্রীমান মহাপ্রভূর দুটি ভাব। ভক্তভাব এবং ভগবত ভাব। ভক্তভাবে প্রভূ আমাদের নিজে আচরন করে জীবকে শিক্ষা দিলেন। এই শিক্ষা সেই দয়াময় না দিলে আর কে দেবেন? মন্দির মার্জন কর্মটি জগন্নাথের জন্য। সুতরাং এটাও ভজনাঙ্গ। যে ভজনাঙ্গে ভগবত কৃপা লাভ সম্ভব। গুণ্ডচায় এক বছরের ধুলো ময়লা জমে আছে, সেখানে আমার প্রাণপ্রীয় জগন্নাথ কেমন করে থাকবেন, এই কথা ভেবে ভগবত প্রেমিক ভক্তের হৃদয় বিকল হয়ে যায় ভগবানের প্রতি ভক্তের প্রীতির আধিক্য জনিত কারনে। সন্তান যখন শরীরে ময়লা মেখে রাখে তখন দাস- দাসী নয়, মা ছুটে আসেন সন্তানকে পরিস্কার করার জন্য কারন সন্তানের প্রতি মায়ের প্রীতির আধিক্য। এ কাজ কি কোনো হীন কাজ হতে পারে?দক্ষিনাঞ্চলের স্বাধীন নরপতি প্রতাপ রুদ্র রাজাও নিজে রথাগ্রে চন্দন সুবাসিত জল ছড়িয়ে ঝাড়ু দিতেন।
- গুণ্ডিচা মার্জন লীলাটিতে প্রভুর ভগবত ভাবও আছে। ভগবানতো শুধুমাত্র সেবা গ্রহন করেন কিন্তু সেবা করে যে কত সুখ কি তার আনন্দ তা আস্বাদনের লোভেও প্রভূ গুণ্ডিচা মার্জনের দ্বায়িত্ব নিয়েছিলেন। কৃষ্ণ লীলাতেও প্রভূ একই কাজ করেছিলেন। যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে ব্রাহ্মনদের পাদ প্রক্ষালনের ভার নিয়েছিলেন। ব্রাহ্মনের পদসেবায় যে আনন্দ তার লোভ চতুর চড়ামনি শ্রীকৃষ্ণ ত্যাগ করতে পারেননি। জীবশিক্ষার জন্য তিনি দেখিয়ে দিলেন যে," যিনি বড় তিনিই হীন সেবা করতে পারেন "। কিন্তু কৃষ্ণলীলার মতো গুণ্ডিচা মার্জন লীলার আনন্দ প্রভূ একা ভোগ করেন নি। প্রভূ আমাদের দাতার শিরোমণি, তাই প্রিয় পার্ষদ সকলকেই ঐ আনন্দের ভাগ দিলেন। অল্প অল্প ভাগ নয়, প্রভূ বললেন -----
" কে কত কুড়ায় সব একত্র করিব। যার অল্প তাঁর ঠাঞি পিঠা পানা লব। "....... অর্থাৎ যে যত খুশি পরিশ্রম করে সেবার সুযোগ নিয়ে নাও।

- গুণ্ডিচা মার্জন লীলার আরও একটি গুঢ় তাৎপর্য আছে এবং এটাই প্রভূর নদীয়া লীলার বৈশিষ্ট্য। শ্রীশ্রী গৌরসুন্দর হলেন রাধাভাবাবিষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণ।শ্রীরাধার ভাবে আবিষ্ট হয়ে আজ তিনি গুণ্ডিচা মার্জন করছেন। রথযাত্রার ছলে শ্রীজগন্নাথ বৃন্দাবন লীলারস আস্বাদনের জন্যই মন্দির থেকে বেড়িয়ে আসেন। শ্রীরাধা ভাবে আবিষ্ঠ মহাপ্রভূ মনে মনে ভাবছেন ------- বহুকাল পরে তার প্রাণবল্লভ দ্বারকা বা কুরুক্ষেত্র থেকে ব্রজে আসবেন। তাই তার আনন্দের সীমা নাই। সেই আনন্দের প্রেরণায় প্রাণবল্লভকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সখীদের সঙ্গে নিয়ে বহুকাল পরিত্যক্ত নিকুঞ্জ মন্দির পরিস্কার করছেন। তার ভক্তবৃন্দ সখীবৃন্দ আর তিনি রাধা ।

Post a Comment

0 Comments