পুত্রদা একাদশী মাহাত্ম্য


আগামী ০৬-০১-২০২০ ইং রোজ সোমবার পুত্রদা একাদশী পারণ 
পরের দিন ০৭-০-২০২০ মঙ্গলবার কোলকাতার সময়ে সকাল ১০:৫৭ মিনিটের পরে
পুত্রদা একাদশী মাহাত্ম্য


যুধিষ্ঠির বললেন হে কৃষ্ণ পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি, বিধিই বা কি, কোন দেবতা ঐ দিন পূজিত হন এবং আপনি কার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সেই ব্রতফল প্রদান করেছিলেন কৃপা করে আমাকে সবিস্তারে তা বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে মহারাজ! এই একাদশী ‘পুত্রদা’ নামে প্রসিদ্ধ। সর্বপাপ বিনাশিনী ও কামদা এই একাদশীর অধিষ্ঠত্ব ব্রত নেই। এই ব্রতকারীকে নারায়ন বিদ্বান ও যশস্বী করে তুলেন । এখন আমার কাছে ব্রতের মাহাত্ম্য শ্রবন করুন। ভদ্রাবতী পুরীতে সুকেতুমান কুমার নামে একজন রাজা ছিলেন । তার রানীর নাম ছিল শৈব্যা । রাজদম্পতি বেশ সুখেই দিন যাপন করছিলেন। বংশ রক্ষার জন্য বহুদিন ধরে-কর্মের অনুষ্ঠান করেও যখন পুত্রলাভ হল না তখন রাজা দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে পড়লেন। তাই সকল ঐশ্বয্যবান হয়েও পুত্রহীন রাজার মনে কোন সুখ ছিলনা । তিনি ভাবতেন পুত্রহীনের জন্মবৃথা ও গৃহশূন্য।পিতৃ- দেব-মনুষ্য লোকের কাছে যে ঋণ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, তা পুত্র বিনা পরিশোধ হয় না । পুত্রবান জনের এ জগতে যশলাভ ও উত্তম গতি লাভ হয় এবং তাদের আয়ু, আরোগ্য, সম্পত্তি প্রভৃতি বিদ্যমান থাকে।নানা দুশ্চিন্তা গ্রস্থ রাজা আত্মহত্যা করবেন বলে স্থির করলেন। কিন্তু পরে বিচার করে দেখলেন- ‘আত্মহত্যামহাপাপ, এর ফলে কেবল দেহের বিনাশ প্রাপ্ত হবে, কিন্তু আমার পুত্রহীনতা তো দূর হবে না’। তারপর একদিন রাজা নিবিড় বনে গমন করলেন । বন ভ্রমন করতে করতে দ্বিপ্রহর অতিক্রান্ত হলে রাজ ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হলেন। এদিক ওদিক জলাদির অনুসন্ধান করতে লাগলেন । তিনি চক্রবান, রাজহংস এবং নানা রকম মাছে পরিপূর্ন মনোরম সরোবর দেখতে পেলেন। সরোবরের কাছে মুনিদের একটি আশ্রমছিল। তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন।সরোবর তীরে মুনিগন বেদপাঠ করছিলেন।মুনিবৃন্দের শ্রীচরনে তিনি দন্ডবত প্রণাম করলেন। মুনিগন রাজাকে বললেন হে মহারাজ ! আমরা আপনার প্রতি প্রসন্ন হয়েছি।আপনার কি প্রার্থনা বলুন।রাজা বললেন- আপনারা কে এবং কি জন্যই বা এখানে সমবেত হয়েছেন? মুনিগন বললেন- হে মহারাজ ! আমরা ‘বিশ্বদেব’ নামে প্রসিদ্ধ। এই সরোবরে স্নান করতে এসেছি। আজ থেকে পাঁচদিন পরেই মাঘ মাস আরম্ভ হবে। আজ পুত্রদা একাদশী তিথি।পুত্র দান করে বলেই এই একাদশীর নাম ‘পুত্রদা’।মুনিগন বললেন হে মহারাজ ! আজ সেই পুত্রদা একাদশী তিথি। তাই এখনই আপনি এইব্রত পালন করুন। ভগবান শ্রীকেশবের অনুগ্রহে অবশ্যই আপনার পুত্রলাভ হবে। মুনিদের কথা শোনার পর যথাবিধানে রাজা কেবল ফলমূলাদি আহার করে সেইব্রত অনুষ্ঠান করলেন। দ্বাদশী দিনে উপযুক্ত সময়ে শস্যাদিসহ যোগে পারন করলেন।মুনিদের প্রণাম করে নিজ গৃহে ফিরে এলেন। ব্রত প্রভাবে রাজার যথাসময়ে একটি তেজস্বী পুত্র লাভ হল। হে মহারাজ ! এই ব্রত সকলের পালন করা কর্তব্য। মানব কল্যান কামনায় আপনার কাছে আমি এই ব্রত কথা বর্ননা করলাম। নিষ্ঠা সহকারে যারা এই পুত্রদা একাদশী ব্রতপালন করবে, তারা ‘পুত’ নামক নরক থেকে পরিত্রান লাভ করবে। আর এই ব্রতকথা শ্রবন-কীর্তনে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়। ব্রহ্মান্ড পুরানে এই মাহাত্ম্য বর্ননা করা হয়েছে ।


Post a Comment

0 Comments