ষট্ তিলা একাদশীর মাহাত্ম্য

আগামী  ২০-০১-২০২০ ইং রোজ সোমবার 
ষট্ তিলা একাদশী
পারণ পরের দিন ২১-০১-২০২০ মঙ্গলবার কোলকাতার সময়ে সকাল ০৮.০২ মিঃ থেকে ০৯.৫৭ মিনিটের মধ্যে।

ষট্ তিলা একাদশীর মাহাত্ম্য
---------------------------------------------------



মাঘ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের "ষটতিলা" একাদশীর মাহাত্ম্য ভবিষ্যোত্তর পুরাণে বর্ণিত আছে। যুধিষ্ঠির মহারাজ বললেন- হে জগন্নাথ! মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথির নাম কি, বিধিই বা কি এবং তার কি ফল, সবিস্তারে বর্ণনা করুন। তদুত্তরে ভগবান বললেন- হে রাজন! এই একাদশী 'ষট্ তিলা' নামে জগতে বিদিত। একসময় দালভ্য ঋষি মুনিশ্রেষ্ঠ পুলস্তকে জিজ্ঞাসা করেন মর্ত্যলোকের মানুষেরা ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, অন্যের সম্পদ হরণ আদি পাপকর্ম দ্বারা নরকে গমণ করে। যাতে তারা নরক গতি থেকে রক্ষা পায়, তা যথাযথ ভাবে আমাকে উপদেশ করুন। অনায়াসে সাধন করা যায় এমন কোন ব্রতের মাধ্যমে যদি তাদের এই পাপ থেকে উদ্ধারের কোন উপায় থাকে, তবে তা বলুন। ঋষি পুলস্ত্য বললেন, হে মহাভাগ! তুমি একটি গোপনীয় উত্তম বিষয়ী প্রশ্ন করেছ। মাঘ মাসের শুচি, জিতেন্দ্রিয়, কাম, ক্রোধ আদি শূন্য হয়ে স্নানার্থীপর সর্বদেবেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এর পূজা করবে। পূজাতে কোন বিঘ্ন ঘটলে কৃষ্ণ নাম স্মরণ করবে। রাত্রিকাল অর্চনান্তে হোম করবে। তারপর চন্দন, অগুরু, কর্পূর ও শর্করা প্রভৃতি দ্বারা নৈবেদ্য প্রস্তুত করে ভগবানকে নিবেদন করবে। কুষ্মাণ্ড, নারকেল অথবা একশত গুবাক দিয়ে অর্ঘ্য প্রদান করবে ' কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃপালুস্ত্বমগতী নাং গতির্ভব ' ইত্যাদি মন্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে হয়। ' কৃষ্ণ আমার প্রতি প্রীত হোন' বলে যথাশক্তি ব্রাহ্মণকে জলপূর্ণ কলস, ছত্র, বস্ত্র, পাদুকা, গাভী ও তিলপাত্র দান করবে। স্নান, দানাদিকার্যে কালো তিল অত্যন্ত শুভ। হে দ্বিজোত্তম! ঐ প্রদত্ত তিল থেকে পুনরায় যে তিল উৎপন্ন হয়, ততো বছর ধরে দানকারী স্বর্গলোকে বাস করে। তিল দ্বারা স্নান, তিল শরীরে ধারণ, তিল জলে মিশিয়ে তা দিয়ে কর্পুর, তিল ভোজন এবং তিল দান - এই ছয় প্রকার বিধানে সর্বপাপ বিনষ্ট হয়ে থাকে। এই জন্য এই একাদশীর নাম ' ষটতিলা ' । হে যুধিষ্ঠির! একসময় নারদ ও এই ষটতিলা একাদশীর ফল ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে যে কাহিনী আমি বলেছিলাম তা এখন তোমার কাছে বর্ণনা করছি। পুরাকালে মর্ত্যলোকে এক ব্রাহ্মণী বাস করত। সে প্রত্যহ ব্রত আচরণ ও দেব পূজা পরায়ণা ছিল। উপবাস ক্রমে তার শরীর অত্যন্ত ক্ষীণ হয়েগিয়েছিল। সেই মহাসতী ব্রাহ্মণী অন্যের কাছ থেকে দ্রব্যাদি গ্রহণ করে দেবতা, ব্রাহ্মণ, কুমারীদের ভক্তি ভরে দান করত। কিন্তু কখনও ভিক্ষুককে ভিক্ষাদান ও ব্রাহ্মণজাতি অন্নদান করেনি। এইভাবে বহু বছর অতিক্রান্ত হল।আমি চিন্তা করলাম, কষ্টসাধ্য বিভিন্ন ব্রত করার ফলে এই ব্রাহ্মণীর শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। সে যথাযথ ভাবে বৈষ্ণবদের অর্চনও করেছে, কিন্তু তাদের পরিতৃপ্তির জন্য কখনও অন্নদান করেনি।তাই আমি একদিন কাপালিক রূপ ধারণ করে তামার পাত্র হাতে নিয়ে তার কাছে গিয়ে ভিক্ষা প্রার্থনা করলাম। ব্রাহ্মণী বলল - হে ব্রাহ্মণ! তুমি কোথা থেকে এসেছ, কোথায় যাবে, তা আমাকে বলো। আমি বললাম - হে সুন্দরী! আমাকে ভিক্ষা দাও। তখন সে ক্রুদ্ধ হয়ে আমার পাত্রে একটি মাটির ঢিলা নিক্ষেপ করল। তারপর আমি সেখান থেকে চলে গেলাম। বহুকাল পরে সেই ব্রাহ্মণী ব্রত প্রভাবে স্বশরীরে স্বর্গে গমন করল। মাটির ঢেলা দানের ফলে একটি মনোরম গৃহ সে প্রাপ্ত হল। কিন্তু হে নারদ! সেখানেকোন ধান ও চাল কিছুই ছিল না। গৃহশূন্য দেখে মহাক্রোধে সে আমার কাছে এসে বলল - আমি ব্রত, কৃচ্ছ্রসাধন ও উপবাসের মাধ্যমে নারায়ণের আরাধনা করেছি। এখন হে জনার্দন!আমার গৃহে কিছুই দেখছি না কেন? হে নারদ! তখন আমি তাকে বললাম -তুমি নিজ গৃহে দরজা বন্ধ করে বসে থাকো। মর্ত্যলোকের মানবী স্বশরীরে স্বর্গে এসেছে শুনে দেবতাদের পত্নীরা তাকে দেখতে আসবে। কিন্তু তুমি দরজা খুলবে না। তুমি তাদের কাছে ষট্ তিলা ব্রতের পূণ্যফলপ্রার্থনা করবে। যদি তারা সেই ফল প্রদানে রাজি হয়, তবেই দরজা খুলবে। এরপর দেবপত্নীরা সেখানে এসে তার দর্শন প্রার্থনা করল। ষট্ তিলা ব্রতের ফল পেলেই কেবল সেই মানবী দর্শন দেবেন জেনে তাদের মধ্যে এক দেবপত্নী তারা ষট্ তিলা ব্রত জনিত পূণ্যফল তাকে প্রদান করল। তখন সেই ব্রাহ্মণী দিব্যকান্তি বিশিষ্টা হল এবং তার গৃহ ধনধান্যে ভরে গেল। দ্বার উদঘাটন করলে দেবপত্নীরা তাকে দর্শন করে বিস্মিত হলেন। হে নারদ! অতিরিক্ত বিষয় বাসনা করা উচিত নয়। বিত্ত শাঠ্যও অকর্তব্য। নিজ সাধ্য মতো তিল, বস্ত্র ও অন্ন দান করবে। ষট্ তিলা ব্রতের প্রভাবে দারিদ্রতা, শারীরিক কষ্ট, দুর্ভাগ্য প্রভৃতি বিনষ্ট হয়। এই বিধি অনুসারে তিলদান করলে মানুষ অনায়াসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়।

Post a Comment

0 Comments