মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীশ্রী অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের শুভ আবির্ভাব তিথি (অদ্বৈত সপ্তমী)

মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীশ্রী অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের শুভ আবির্ভাব তিথি (অদ্বৈত সপ্তমী)






দয়া কর সীতাপতি অদ্বৈত গোঁসাই।
তব কৃপাবলে পাই চৈতন্য-নিতাই॥


শ্রীমৎ অদ্বৈত আচার্য ঠাকুর, তাঁর করুণার ফলেই আমরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর করুণা প্রাপ্ত হয়েছি।

তিনিই এজগতে নিতাই গৌরকে অবতরণ করিয়েছেন। তাই তাঁকে বলা হয় 'গৌরআনা ঠাকুর'— যিনি শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে নিয়ে এসেছেন।

আমরা নিরন্তর করুণা ভিক্ষা করি।
আচার্য গোসাঞি প্রভুর ভক্ত-অবতার
কৃষ্ণ-অবতার-হেতু যাঁহার হুঙ্কার ॥

শ্রীল অদ্বৈত আচার্য হচ্ছেন ভক্তরূপে ভগবানের অবতার ।
তাঁর উচ্চ হুঙ্কারের ফলে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীগৌরাঙ্গরূপে অবতরণ করেন ।
(
চৈঃ চঃ আদি ৩.৯২)


(''শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব'' )


যার কৃপায় আমরা গৌর পেলাম সেই মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর শ্রীচরণে শতকোটি প্রণাম,,,।।
জয় জয় মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীঅদ্বৈত চন্দ্র ,,,,,,,
সে-যে অবতারের শিরমণী,, এনেছে আমার গৌরহরি,,
অবতারের শিরমণী,,,,,,,,।।
শিরধ্বনীর তীরে বসে ,, গংঙ্গা জল তুলসী দিয়ে,,,
নয়ন জলে বুক ভাসিয়ে,, এসো গৌর এসো বলে,,,,,,।।
শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর কৃপায় কলিযুগে আমরা শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু পেলাম,,,

মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর আবির্ভাব'' )


কলিযুগে পাবনাবতারী,,শ্রীশ্রী নিতাই-গৌরাঙ্গদেবকে এই ধরাধামে আনয়নকারী মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীঅদ্বৈত আচার্য প্রভু গঙ্গাজল তুলসীদলে আরাধনা করে এই প্রভুদ্বয়কে এই জগতে অবতীর্ণ করেছিলেন,, সেই স্হানের নাম বর্তমানে বাবলা বলে পরিচিত,,,,,,। গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের নিকট পঞ্চধামের মধ্যে শান্তিপুর ধাম একটি। অদ্বৈত আচার্য প্রভুর পিতা কুবের পন্ডিত পুত্রবিরহে বিরহাম্বিত হয়ে শান্তিপুরে অবস্হান করছিলেন,, সেই সময় নাভাদেবী গর্ভবতী হন। তারপর রাজার আহ্বানে লাউড়ে গমন করেন। সেখানে অদ্বৈত আচার্য প্রভুর জন্ম হয়। অদ্বৈত আচার্য প্রভু বারো বৎসর অবধি লাউড়ে বসবাস করে তারপর শান্তিপুরে আগমন করেন। তার কিছুদিন পর কুবের পন্ডিত শান্তিপুরে এসে কতকাল অবস্হানের পর এখানেই সস্ত্রীক অন্তর্হিত হন। অদ্বৈত আচার্য প্রভু পিতৃ - মাতৃ পারলৌকিক কার্যাদি করে তীর্থভ্রমনে বাহির হন। তীর্থভ্রমন করতে করতে শ্রীধাম বৃন্দাবনে এসে মদন গোপালদেবের আদেশে নিকুঞ্জ বন হতে বিশাখার নির্মিত চিত্রপট এবং গণ্ডকীতে গিয়ে এক শালগ্রাম শিলা গ্রহণ করলেন। তারপর শান্তিপুরে আগমন করলেন। কিছুকাল পরে শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীপাদ চন্দন আনবার উদ্দেশ্যে নীলাচলে গমনপথে শান্তিপুরে আগমন করার পর অদ্বৈত আচার্য গোঁসাই তাঁর কাছ থেকে দীক্ষামন্ত্র গ্রহণ করেন এবং তাঁরই নির্দেশে অদ্বৈত আচার্য প্রভু শ্রীরাধিকার চিত্রপট নির্মান করে জগতে গোপী আনুগত্যে যুগল কিশোরের সেবা প্রবর্তন করেন। তারপরে অদ্বৈত গোঁসাই এই বাবলাতে অবস্হান করে গঙ্গাজল তুলসীদলে শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের আরাধনা করতে আরম্ভ করলেন এবং কৃষ্ণচন্দ্রকে এই জগতে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানাতে লাগলেন। কতদিনে শ্রীগৌরাঙ্গদেব প্রকট হয়ে লীলারঙ্গে এই স্হানে আগমন করে সপার্ষদে বহু লীলা করেছেন। পরবতীকালে সংকীর্তন বিলাসকালে সন্ন্যাস গ্রহনের পরে বৃন্দাবনে যাত্রার উদ্দেশ্যে রাঢ়ে আগমন এবং প্রত্যাবর্তনকালে প্রভু শান্তিপুরে অবস্হান করে অত্যদ্ভুত লীলা প্রকাশ করেছিলেন। শ্রীপাদ মাধবেন্দ্রপুরীর তিরোধান মহোৎসবে অদ্বৈত আচার্য প্রভুর অতুল ঐশ্বর্যের মহিমা শ্রীমন মহাপ্রভু নিজ মুখে প্রশংসা করেছেন। শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্য প্রভু প্রেমকলহ লীলা চৈতন্য-চরিতামৃতে বর্ণিত আছে। এখানে প্রভু সীতানাথ পৌর্ণমাসী স্বরুপা শ্রীদেবী ও সীতাদেবী নামক পত্নীদ্বয়ের সমবিহারে প্রকট লীলাবিলাস করেছেন। হরিদাস ঠাকুর,,যদুনন্দন আচার্য আদি প্রিয় পার্যদদের সঙ্গে প্রভু সীতানাথ এখানে বহু লীলা করেছেন। এখানে শ্রীঅচ্যুতানন্দ,,কৃষ্ণমিশ্র,, গোপাল,, বলরাম,,আদি অদ্বৈত আচার্য প্রভুর পুত্রগণের বিহারভুমি। বর্তমানে শান্তিপুরের বাবলার ভজনস্হলীর চারিপাশে আম, তমাল, বকুল, বাঁশবাগান, এবং আরও বহু রকমের গাছগাছালি এই স্হানকে মনোরম পরিবেশ করে রেখেছে। প্রাচীরের বাহিরে সুবিস্তৃত আমবাগানের ছায়া সুনিবিড় স্নিগ্ধতা মনপ্রাণ শীতল করে। মন্দিরে শ্রীশ্রী গৌরনিতাই সীতানাথ মুর্তি বিরাজমান রয়েছেন এবং অদ্বৈত আচার্য প্রভুর সেবিত সেই শালগ্রাম শিলা বর্তমানে আছেন। মুল মন্দিরের পিছনে একটা ছোট মন্দির আছে যেখানে প্রভুর ভজনের স্হান রয়েছে। পাশে হরিদাস ঠাকুরের ভজন স্হান আছে।
সেই নবদ্বীপ ধাম এবং শ্রীমায়াপুর ধাম দর্শণ পরিক্রমা করিয়ে আমার ''গৌরসুন্দর '' আমার এই মানব জনম ধন্য করিয়েছেন।।
প্রতি বছরই গোবিন্দ দ্বাদশীতে শ্রীলমাধবেন্দ্রপুরীপাদের স্মরণ তিথিতে এখানে প্রধান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীমায়াপুরের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃতর সংঘের ( ইস্ কন ) ভক্তরা এসে সেই উৎসব উদযাপন করেন। হাজার হাজার মানুষকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এটাই এই শান্তিপুরের বর্তমানে সবচাইতে বড় উৎসব,,,,,,,,।।



পণতীর্থ ধামের মাহাত্ম্য



* পণতীর্থের পরিচয় :

পণতীর্থ হচ্ছে শ্রীদ্বৈত আচার্যের প্রকটভূমি (যদিও অদ্বৈত আচার্যের স্মৃতিচিহ্ন নদীগর্ভে বিলনি হয়ে গেছে)। এই স্থানটি অদ্বৈত প্রকাশ, অদ্বৈত মঙ্গল ও ভক্তিরত্মাকরসন বহু বৈষ্ণব গ্রন্থে এক মহান তীর্থস্থান রূপে পরিগণিত হয়েছে।
অদ্বৈত প্রকাশ গ্রন্থে লাউড়কে কারণ সাগরের আবির্ভাব রূপে বর্ণনা করা হয়েছে- শ্রী লাউড় ধাম কারণ রত্মাকর হয়। এই স্থানটি বর্তমান যাদুকাটা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। নদীর পূর্বপাড়ে রয়েছে রাজারগাঁও (নবগ্রাম)। যেখানে একটি ছোট মন্দির রয়েছে। নদীর পশ্চিম তীরে রয়েছে ইস্কনের একটি বৃহৎ ও নয়নাভিরাম মন্দির। সেখানে স্থাপিত হয়েছে, শ্রীশ্রী রাধা-মদনগোপাল বিগ্রহ, শ্রীজগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারাণীর বিগ্রহ এবং অদ্বৈত আচার্য্যর বিগ্রহ। এখানে মধুকৃষ্ণা এয়োদর্শীতে বিশাল অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়।

* পণর্তীথের ইতিহাস :

অদ্বৈত প্রকাশগ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, একদিন রাত্রিতে অদ্বৈত প্রভুর জননী নাভাদেবী স্বপ্নে দর্শন করেন যে, তিনি সমস্ত তীর্থ জলে স্নান করছেন। প্রভাতে ধর্মশীলা নাভাদেবী স্বপ্নের কথা স্মরণ করে ও তীর্থ গমনের বিবিধ অসুবিধার বিষয় চিন্তা করে বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন, এমন সময়ে পুত্র অদ্বৈতাচার্য সেখানে উপস্থিত হয়ে মাতার বিমর্ষতার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাঁর মাতা তাঁকে স্বপ্ন দর্শনের কথা অবহিত করেন এবং তীর্থযাত্রায় অপারগতার কথা প্রকাশ করে বিমর্ষ হয়। তিনি মাকে বিষন্ন দেখে পণ (প্রতিজ্ঞা) করলেন যে, এই স্থানেই সকল তীর্থের আবির্ভাব করাবেন।
অদ্বৈতাচার্য অপ্রাকৃত শক্তির বলে তীর্থসমূহকে আকর্ষণ করে লাউড়ের এক ক্ষুদ্র পাথরের অপরে একটি ঝর্ণার জলের ধারায় তীর্থ পরিপূর্ণ হয়ে গেল। অদ্বৈত জননী তাতে স্নান করে পরিতৃপ্ত হলেন।
মাতার বিস্ময় দৃষ্টে অদ্বৈত আরও বলেছিলেন-
প্রভু কহে- দেখ মাতা সদা জল ঝরে,
শঙ্গ আদি ধ্বনি কৈলে বহুজল পড়ে।
আশ্চর্য দেখিয়া মাতা নমস্কার কৈলা;
ভক্তি করি স্নান করি দানাদিক সমাপিলা।
তদবধি পণাতীর্থ হইল বিখ্যাত
বারণী যোগেতে স্নান বহু ফলপ্রদ।
-
অদ্বৈত্য প্রকাশ-2য় অধ্যায়।


প্রায় পাঁচশ বছর পূর্বে এইরূপে লাউড়ে এক তীর্থের উৎপত্তি হয়। অদ্বৈতের ন্যায় তীর্থসমূহও পণ করেছিলেন যে, প্রতি বারুণীতেই এস্থলে তাঁদের আবির্ভাব হবে। এই পণ শব্দ হতেই পণতীর্থ নাম হয়েছে। পণতীর্থে বারুণী যোগে বহুলোকের সমাগম হয়।
এই তীর্থের একটা আশ্চর্য সংবাদ এই যে, শঙ্খধ্বনি বা উলুধ্বনি করলে অথবা করতালি দিলে, পর্বত হতে তীব্রবেগে জলরাশি পতিত হয়।



Post a Comment

0 Comments