কোনদিকে মৃত্যু নেই
একবার অনেকগুলো ইঁদুর এক জায়গায় জড়ো হয়ে একটি আলোচনা সভা করেছিল। আলোচনার বিষয় ছিল, তাদের বহুজনের ঘনঘন প্রাণহানি হচ্ছে বিড়ালের আক্রমণে, তাই কি করে বিড়ালে হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বড় ইঁদুর বলতে লাগলো, "হে ভাইসব, আমাদের অনেকেই নিহত হয়েছে। কালো বিড়াল আমাদের একে একে খেয়ে ফেলছে। আমরা এখন একটি যুক্তি করি। অন্যত্র চলে যেতে হবে, যেখানে বিড়াল নেই। তবে, সেই জায়গাটি কোথায় তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।"
একজন বলল, "হাঁ আছে, এই গাঁয়ের দক্ষিণ দিকে বেড়াকলমীর জঙ্গল আছে, সেখানে আমরা বাসা করে থাকতে পারি।" অন্যজন বলল, "খবরদার! ওখানে গত সন্ধ্যায় আমি গিয়েছিলাম, সেখানে একটি বড় গোসাপ আমাকে তাড়া করেছিল। আমি কোনোক্রমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি। তার চেয়ে ওই পুবদিকে একটা বটগাছ আছে, সে গাছের উপর কটোর আছে, সেখানে বিড়াল যেতে পারবে না, গোসাপও নেই। অতএব, সেখানেই থাকা ভালো।" অন্যজন বলল, "খবরদার! ওখানেই দিনে কাক আর রাতে পেঁচা আমাদের সবংশ নিপাত করে দেবে। তার চেয়ে পশ্চিম দিকে একটা খড়গাদা দেখা যাচ্ছে, সেখানেই থাকা যাক।" অন্য আরেকজন বলল, "না, না, ওটাও বিপদজনক। প্রতিদিন তিনবেলা করে গরুকে খড় দেওয়ার জন্য লোক সেই গাদা থেকে খড় নেই। সে আমাদের বাসার সন্ধান পেলে পিটিয়েই আমাদের মেরে ফেলবে। তার চেয়ে বরং বাইরে না বেরিয়ে যেখানে আছি সেখানেই আমরা বিরাট গর্ত করে থাকি। অসংখ্য সুড়ঙ্গ করতে হবে। অতি সাবধানে শস্যদানা এনে গর্তগুলোতে জমা করতে হবে। একটি ছোট ছিদ্র রাখতে হবে যাতে বিড়াল আসছে কিনা দেখা যাবে।" এই চিন্তা করে তারা সুড়ঙ্গ করতে লাগল। বহু মাটি গর্তের মুখ দিয়ে উপরে এসে ফেলতে লাগলো। মাটি দেখে বিড়াল আনন্দিত মনে সেখানে বসে থাকল। যেই একটা ইঁদুর মাটি ফেলতে এলো অমনি বিড়ালটি তাকে খপ করে ধরে মেরে ফেলল। এই দুর্ঘটনার ফলে তারা নিস্তব্ধ হয়ে সারাদিন গর্তের মধ্যে পড়ে থাকল। তখন একটি ইঁদুর বলতে লাগল, "এবার আমাদের কোন খাবার নেই, বেরোবার রাস্তাও নেই। উপবাসী থেকেই মরতে হবে।"
একটি পুরানো ইদুর ছিল। সে আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। সে মারা গেল। সে মৃত্যুকালে একটি কথা সবাইকে বলতে লাগল, "তোমরা শোনো, যেখানে যত প্রকার বন্দোবস্ত করো না কেন, সব জায়গায় মৃত্যু হানা দিচ্ছে। জঙ্গলে সাপ, গর্তে বেজি, গাছে কাক, গুদামঘরে মানুষ, বিড়াল, পেঁচা, শেয়াল, কুকুর, বাজ, চিল, বনকাক, গোসাপ, খেঁকশিয়াল, মোরগ এগুলো আমাদের জন্মের আগে থেকেই আছে। আর যদি কেউ আমাদের আক্রমণ নাও করে, তবে রোগব্যাধিই আমাদের মেরে ফেলবে। এই জগতে ধাতই এরকম। অতএব এই জন্মই ভালো নয়।"
হিতোপদেশ -
এই জগত দুঃখময়। এখানে পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি। তাই এখানে জন্মগ্রহণ করা দুঃখেরই কারণ। তাই আমাদের পূর্বপুরুষ মহাজনেরা বৈকুণ্ঠজগত বা ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বলেছেন, যাতে মৃত্যু অবধি হরিভজন করলে পরবর্তী জন্মে চিন্ময় ভগবদ্ধামে গতি হবে এবং পরমানন্দ ও শান্তি লাভ হবে। আর কখনো উদ্বেগ ও যাতনা ভোগ করার জন্য মৃত্যুময় জগতে আসতে হবে না।
0 Comments