বোকার বাবার শ্রাদ্ধ গল্পে উপদেশ


গল্পে উপদেশ .........
 বোকার বাবার শ্রাদ্ধ



এক গাঁয়ে এক নির্বোধ বোকা কালা লোক বাস করত। একদিন তার বাবার মৃত্যু হল। তখন গ্রামের লোকজন এসে বলল, “তোমার বাবা মারা গেছে।” বোকা বরবার বলতে লাগল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ।” অর্থাৎ, সে কিছুই বুঝতে পারছে না। গ্রামের লোকেরা তার কানে জোরে জোরে বলে তাকে বুঝিয়ে দিল। বোকা বললো, “এখন কি করতে হবে, তোমরা কর।” আত্মীয়রা তার বাবার অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সমাপন করে বোকাকে কাছা ও উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে “পুরোহিতের কাছে পরামর্শ কর কিভাবে তোমার বাবার শ্রাদ্ধ কার্য করতে হবে।” আত্মীয়দের কথামতো পুরোহিতের কাছে উপস্থিত হল। পুরোহিত মশাই তোত্লা ছিলেন। তিনি বলে উঠলেন, কি- কি-কি- রে? তো- তো- তোর কে মারা গেছে” বোকা লোকটি বলতে লাগল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ।” পুরোহিত মশাই বুঝলেন এটি গভীর বধির। পুরোহিত মশাই শ্রাদ্ধের দিন নির্দিষ্ট করে দিলেন ও তোতলামী ভারে বললেন, তু-তু-তুই আমাকে দু-দু-দুই শত টা-টা-টাকা দি-য়ে যাবি। ছে-ছে-ছে ছেরাদ্ধের আগের দিন বা-বা-বাড়ী পরিষ্কার করে রাখবি। আ-আ-আ-আমি গি-ই-ই-ই-য়ে ছে-ছে-ছে ছেরাদ্দের ক-রব। এইকথা শুনে বোকা তার স্ত্রী দিয়ে বাড়ী ঘর সব পরিষ্কার করাল। আসনে বসে পুরোহিত মশাই কালা যজমানকে শিখিয়ে দিলেন- আ-আ-আ-আ-আমি যা-আ-আ- ব-ব-ব-ব-ল-ব, তু-তু-তুই তা-তা-তাই ব-ব-ব বলবি। আ-আ-আ-আর আ-আমি- যাক-ক-ক-করব, তু-তু-তুই তা-তা-তাই করবি।” কালাযজমান তাই শিখে নিল। পুরোহিত মশাই মন্ত্র আরম্ভ করলেন- “ব-ব-ব-বল ছি-ছি-ছি-ছি-ছিরি বি-ই-ই-ষ্ণু।” বোকা পুরোহিতের মুখোচ্চারিত উক্ত মন্ত্রগুলি তার তোতলামির ভঙ্গিতে বলতে লাগল। তাই তিনি শুনে পুরোহিত মশাই মনে করলেন সে তাকে ব্যঙ্গ করছে। তাই তিনি রেগে গিয়ে বললেন-“তু-তু-তু তুই আ-আ–মাকে ক্ষে-ত্র্যা-পাচ্ছিস।” বোকা তদ্রুপ পুরোহিতের ন্যায় বক্তব্য বলতে লাগল। পুরোহিত মশাই এই কথা শুনে তো রেগেই গেলেন। তিনি বোকা গালে খুব জোরে একটি থাপ্পর মারলেন। পুরোহিতের পূর্বের উপদেশ অনুযায়ী বোকা পুরোহিতের গালে লাগিয়ে দিল এক চড়। চড় খেয়ে পুরোহিত মশাই রাগে গড় গড় করতে করতে “শা-শা-শা- শালা তু-তু-তু-তুই আ-আ-আ-মাকে মা-মা-মা-মারলি?”- বলেই বোকাকে জাপটিয়ে ধরে উলটিয়ে ফেলে দিলেন। বোকাও তাকে জাপটিয়ে ধরে উলটিয়ে ফেলে দিলেন। এইভাবে একের পর এক জড়াজড়ি। এইভাবে একের পর এক জড়াজড়ি করতে করতে এগিয়ে চলেছে শ্রাদ্ধের উপকরন পন্ড কর নর্দমার দিকে। বোকার স্ত্রী এদিকে শঙ্খধ্বনি করছে। যখন নর্দমায় গিয়ে গড়িয়ে পড়ল তখন বোকার স্ত্রী মাথায় হাত চাপড়ে বলছে “আমার শ্বশুরের শ্রাদ্ধ অতদূর পর্যন্ত গড়িয়ে আসবে জানলে ও ই জায়গা পরিষ্কার করে রাখতাম।” গ্রামের লোকজন এসে ও দের যখন ছাড়িয়ে দিলেন, তখন পুরোহিত বললেন “ছা-ছা-ছা-ছার শালা।” বোকাও পুরোহিত ন্যায় বলল। গ্রামের লোকজন উভয় কে বাড়ী পাঠিয়ে দিলেন।

। হিতোপদেশ।

জগতে অধিকাংশ মানুষ সাধু শাস্ত্র অনুসরণ না করে কুসংস্কারের বশীভূত হয়ে গুরুবাক্য লঙ্ঘন করে ইন্দ্রিয়পরায়ণ হয়ে ধর্মের নামে অধর্মের সৃষ্টি করে। যার ফলে গুরুশিষ্য উভয়ে নরকের পথের পথিক হয়। তাই নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয় লিখেছেন-
সাধু-শাস্ত্র-গুরুবাক্য হৃদয়ে করিয়া ঐক্য
আর না করিহ মনে আশা।”

Post a Comment

0 Comments