ছাত্রাবস্থায় সবার এই পাঁচটি কথা তপস্যার মতো করে মেনে চলা উচিত


ছাত্রাবস্থায় সবার এই পাঁচটি কথা তপস্যার মতো করে মেনে চলা উচিত
“কাক চেষ্টা বক ধ্যানম্
স্বান নিদ্রা তথৈবচ-
স্বল্পাহারী গৃহত্যাগী
বিদ্যার্থী পঞ্চ লক্ষণম্।”
বর্ণিত শ্লোকটির অর্থ শিক্ষার্থীদের পাঁচটি লক্ষণ থাকতে হবে।


(১) কাকের মতো চেষ্টা করতে হবে; কাক আহার সংগ্রহের জন্যে যেমনি আপ্রাণ চেষ্টা করে।

(২) শিক্ষার্থীদেরকে বকের মতো ধ্যান করতে হবে; জলাশয়ে মাছ ধরার জন্যে ক্ষুধার্ত বক যেরূপ একনিষ্ঠভাবে সাধনা করে-সেরূপ ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

(৩) যখন কোন কুকুর ঘুমায় তখন তার চোখ বন্ধ থাকে কিন্তু সে খুব সচেতন থাকে যে তার চারপাশে কি ঘটনা ঘটছে ঠিক তদ্রুপ স্বল্প নিদ্রা অর্থাৎ পরিমিতভাবে নিদ্রা যেতে হবে।

(৪) স্বল্পাহারী-অল্পহারী মানে জ্ঞানের সন্ধানকারীদের কম আহার গ্রহণ করা উচিত, শুধু আহার নয় পঞ্চ ইন্দ্রিয়কেও দমন করতে হবে, খাওয়া দাওয়াও সীমিত রাখতে হবে। অধিক খেলে অলসতা আসবে।

(৫) গৃহত্যাগী-সংসারের চিন্তা বা সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হবে অর্থাৎ ছাত্রদেরকে গৃহত্যাগী হতে হবে। 

এই পাঁচটি লক্ষণ অর্থাৎ কাকের মতো চেষ্টা, বকের মতো ধ্যান, স্বল্প নিদ্রা, কম অর্থাৎ পরিমিত খাওয়া ও সংসারের চিন্তা থেকে দূরে থাকা। এই পাঁচটি লক্ষণ যাদের মধ্যে থাকে তারাই প্রকৃত বিদ্যার্থী, শিক্ষার্থী।

 
 কাকচেষ্টা বলতে কাকের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ধৈর্য্যশীল পরিশ্রম এবং কাকের প্রচেষ্টাকে বোঝায়


আমরা প্রত্যেকে ছোট বেলায় একটি তৃষ্ণার্থ কাকের গল্প পড়েছিলাম

একটি গ্রামে একটি কালো কাক ছিল। একদিন গরমের দুপুরে আকাশে উড়তে উড়তে হঠাৎ কাকটির খুব জলতেষ্টা পেল। কিন্তু সে কোথাও একটুও জল দেখতে পেল না। এদিক ওদিক উড়ে বেরিয়ে কোথাও এক বিন্দু জলের ফোঁটাও পেল না।

গরমের তাপে নদীর জল শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। এরপর কাক বেচারা হতাশ হয়ে একটি বড় গাছের ডালে গিয়ে বসলো। সেখান থেকে কাকটি দেখতে পেল দূরে একটি বাগানে একটি মাটির কলসি রয়েছে। সেই কলসি দেখে সে আনন্দিত হলো এবং ভাবল নিশ্চয়ই ওর মধ্যে জল আছে।

যেমনি ভাবা, তেমনি কাজ। জল খাওয়ার আনন্দে কাকটি আত্মহারা হয়ে কা-কা-কা করতে করতে কলসিটির সামনে উড়ে গেল। সেখানে গিয়ে কলসিটির ওপরে বসল। এবার সে ওখানে বসে কলসির ভেতরে তাকিয়ে দেখল জল একেবারে কলসির নিচের তলায় রয়েছে।

সেটি দেখে কাকের আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল। কিন্তু সে ছাড়বার পাত্র নয়। ওখানে বসেই ভাবতে সে লাগল, কি করলে কলসির ভেতর থেকে ওই জল খাওয়া যাবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে কলসির ভেতরের জলটা উপরে উঠে আসে।

কেননা কলসির ভিতরে গিয়ে কাকের পক্ষে জল খাওয়া অসম্ভব। এরপর এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে দেখল তার আশেপাশে বাগানের মাটিতে অনেক ছোট্ট ছোট্ট নুড়ি কাঁকর পড়ে রয়েছে।

এরপর কাঁকর গুলি দেখে কাকটি ভাবল কেননা আমি একটি একটি কাঁকর নিয়ে কলসির ভেতরে ফেলি। তাহলেই কলসির নিচের জল উপরে উঠে আসবে।

তারপর বাগান থেকে এক একটি কাঁকর নিয়ে কলসির ভিতরে সে ফেলতে লাগলো। একটা সময় পর কলসির জল উপরে উঠে এল। তা দেখে কাকবাবাজির তো আর আনন্দ ধরে না। এরপর কলসির কানায় বসে নিজের ঠোট দিয়ে কলসির সব জল খেয়ে তার তেষ্টা মেটালো।

তারপর পেট ভরে জল খেয়ে কাকটি মনের আনন্দে সেখান থেকে উড়ে গেল।প্রয়োজন বোধ করলে উপায় বের হতে পারে। সাফল্য আসে তাদেরই,যারা সেই উপায়টাকে নিয়ে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে পারে। যদি আমরা চাই আমের মধ্যে থাকা প্রতিভাকে আমরা জগতের সামনে প্রকাশ করবো, তাহলে আমাদের অবশ্যই কাকের মতো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে





বক ধ্যানম বলতে বোঝাচ্ছে আপনার লক্ষের দিকে ফোকাস করুন


একটি বক যেমন জলের মধ্যে এক পায়ে দাড়িয়ে থেকে তার সম্পূর্ণ ফোকাস দেয় জলের মধ্যে, শুধুমাত্র মাত্র একটি জায়গায়, মাছেরা জলের মধ্যে চারদিকে চলাফেরা করে বকটি আরো দৃড় ভাবে ফোকাস করতে থাকে এবং বড় মাছের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে

 যদি সে ছোট মাছগুলো শিকার করত তাহলে সে বড় মাছটি শিকার করতে পারতো না, যেহেতু সে বড় মাছটি শিকার করতে চায় তাই সে ছোট মাছগুলোকে চলে যেতে দেয় ঠিক সেই রকম আমাদের জীবনে যেটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ তার  দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং ছোট খাটো জিনিস নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না

মাঝে মধ্যে আমাদের জীবনে ঘটা ছোট খাটো জিনিষের জন্য আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় যেমন : স্বাস্থ্য সমস্যা, আর্থিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, অনেক জিনিষ প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনে ঘটে চলছে সবকিছুকে এতো বেশী গুরুত্ব দিলে চলবে না

 
স্বান নিদ্রা মানে কুকুরের মত ঘুম

 

যখন কোন কুকুর ঘুমায় তখন তার চোখ বন্ধ থাকে কিন্তু সে খুব সচেতন থাকে যে তার চারপাশে কি ঘটনা ঘটছে

যদি কোনো হালকা শব্দ হয় বা যদি কেও পাশ দিয়ে হেঁটেও যায় সে সঙ্ঘে সঙ্ঘে তাদের চোখ খুলে দেখতে থাকে ঠিক সেই রকম যে জ্ঞান প্রাপ্ত করতে চায় এবং সেটি জীবনে প্রয়োগ করতে চায় তাকে অবশ্যই এই সচেতনতার অভ্যাস করতে হবে, যদিও আমাদের চোখ বন্ধ থাকে তা আশারিক ভাবে নয়, আমরা যা করছি আমাদের জীবনে সেই বিষয় নিয়ে আমাদের সচেতন থাকা উচিত

 চারিপাশে আমাদের কি ঘটছে, আমরা আমাদের চারপাশের মানুষ-জন ঘটনা, বস্তু, জিনিসপত্র সব কিছু খেকেই শিক্ষা অর্জন করতে পারি যদি আমরা সচেতন থাকি



অল্পহারী মানে জ্ঞানের সন্ধানকারীদের কম আহার গ্রহণ করা উচিত

অল্পহারী মানে জ্ঞানের সন্ধানকারীদের কম আহার গ্রহণ করা উচিত, শুধু আহার নয় পঞ্চ ইন্দ্রিয়কেও দমন করতে হবে, যেমন জিহ্বার মাধ্যমে আমরা যা আহার করি, কানের মাধ্যমে আমার যা শ্রবন করি, সেটাও একধরনের আহার, চোখের মাধ্যমে আমরা যা দেখি (প্রাকৃতিক দৃশ্য়, মানুষ, আরো কতো কি) এটাও এক ধরনের আহার

 
আমাদের প্রত্যেকটা অনুভূতি হলো এক একটা আহার


তাই বিদ্যার্থীদের খুব সচেতন থাকতে হবে যে তারা কি গ্রহণ করছে তাদের ইন্দ্রিয়ের দ্বারা, কারন আমরা আমাদের অনুভূতি দিয়ে যেটা দান করবো সেটাকে আমাদের হৃদয় এবং মস্তিস্কের অনেক গভীরে প্রবেশ করবে এবং আমাদের ব্যবহার ঠিক সেই রকম হবে, সংস্কৃতে এটাকে বলে সংস্কার

সংস্কার মানে আমাদের মন মানসিকতার ব্যবহার কি রকম হবে, আমরা অনেক ধরনের জিনিষ বা ঘটনা আমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করাই, যেটা আমাদের মনে খারাপ প্রভাব ফেলে, কখনো কখনো এই খারাপ প্রভাব আমাদের জীবনকে ধ্বংস করে দেই, এই জন্য স্বল্পহারি মানে আমাদের জীবনকে এমনভাবে পরিচালিত করতে হবে যাতে মন অন্য কোনো দিকে ধাবিত না হয়, সেজন্য আমাদের বাছাই করা দরকার কোন জিনিসটার মূল্য কি রকম

 যদি আমরা আজে বাজে চিন্তা দিয়ে মনকে ভেঙ্গে চুরে চুরমার করে দিই তাহলে আমাদের মন আর ভালো জীনসটা গ্রহণ করতে পারবে না, অকারণে মানসিক চাপ বেড়ে যাবে,


গৃহত্যাগী মানে গৃহ ত্যাগ করে প্রকৃত জ্ঞানের সন্ধান করা



আগেরকার দিনে বির্দার্থীরা গৃহ ত্যাগ করে গুরুর কাছে গিয়ে জ্ঞান অর্জন করত, তাই গুরুর আশ্রমকে বলা হত গুরুকুল, গৃহত্যাগী বলতে এটা নয় যে গৃহ পরিত্যাগ করা

 গৃহের সুবিধাযুক্ত জায়গা ত্যাগ কর, এখানে সুবিধাপূর্ণ জায়গার সাথে গৃহের তুলনা করা হয়েছে, যদি আমরা সুবিধাপূর্ণ জায়গায় বাস করি সেখানে কখনো আমরা আমাদের জীবনের প্রকৃত মূল্য বুঝতে পারবো না, মাতা পিতার আদর ভালবাসাতেই আমাদের জীবন অগ্রসর হতে পারবে না

 গৃহত্যাগী মানে আরাম আয়েশ যুক্ত সুযোগ সুবিধাগুলো ত্যাগ করা



Post a Comment

0 Comments