নো রিস্ক নো গেইন । ঝুঁকি নিতে পারলেই জীবনে সাফল্য আসবে ।
একটা গ্রামে পিন্টু আর
মিন্টু নামে দুই যুবক
বাস করত । তারা
দুজনেই বেকার । দিনমজুরের
কাজ ছাড়া গ্রামে আর
কোনো কাজই তারা দেখছে
না । এইদিকে
নব বিবাহিতা স্ত্রী নিয়ে দুজনের
একই রকম পারিবারিক অবস্থা
। ভিন্ন মানসিকতার
হলেও দুজনের একটাই সাধারণ
সমস্যা , আর সেটা হলো
কী করে টাকা রোজগার
করা যায় ।
এই সব ভাবতে ভাবতে পিন্টুর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল । সে মিন্টুকে
বলল দুজনে মিলে যদি একটা মহিষ কেনা যায় , তাহলে কেমন হবে । মহিষের দুধ
বিক্রি ক’রে কিছু টাকা পাওয়া যাবে । আর মহিষের বাচ্চাও হবে , ফলে মহিষের
সংখ্যা বাড়তে থাকবে । দুধও বেশি বেশি হবে । আর এভাবে দুজনই একদিন অনেক
টাকার মালিক হয়ে যাবে । মহিষের সংখ্যা যখন বাড়বে , তখন অনেক লোক রাখবে
দেখাশুনার জন্য —-এভাবে দুজনই একদিন ধনী হয়ে উঠবে ।
এভাবে পিন্টু তার
ভাবনার কথা মিন্টুকে জানায়
। এই প্রস্তাবটি
মিন্টুরও খুব ভালো লাগে
। সেও প্রস্তাবে
রাজী হয়ে যায় ।
তারা দুজনে কথা পাক্কা
করে ফেলে । খুব
আনন্দ আর উদ্দীপনা নিয়ে
দুজনেই বাড়ি যায় ।
দুজনেই তাদের এই উদ্যোগের
কথা নিজের স্ত্রীকে জানায়
।
পিন্টুর স্ত্রী সব শুনে খুব আনন্দের সঙ্গে তার গয়না খুলে স্বামীর হাতে
দিয়ে বলল ” খুব ভালো পরিকল্পনা , আমার গয়না বিক্রি করে মহিষ কেনো । যখন
বেশি বেশি রোজগার হবে , গয়না কিনতে আর কতক্ষন । ” স্ত্রীর কথায় গর্বিত
হয় পিন্টু ।
ঐদিকে
মিন্টু তার পরিকল্পনার কথা
স্ত্রীকে জানালে তার স্ত্রী
বলে , ” দেখো একে তো
আমাদের কিছুই নেই ।
খালি কয়েকটা মাত্র গয়না
সম্বল । আর
তা বিক্রি করে মহিষ
কিনবে । কিন্তু
যদি মহিষ মরে যায়
…..”
মিন্টুর মনেও খটকা লাগে । মনে হয় তার স্ত্রী ঠিকই বলছে । কারণ মহিষ যদি
মরে যায় , একমাত্র সম্বল গয়নাগাটিও যাবে — মহিষও যাবে । এত ঝুঁকি
নেওয়াটা ভুল হবে ।
পরের দিন দুই বন্ধুর
দেখা হলে মিন্টু বলে
” ভাই পিন্টু , মহিষ যদি মরে
তাহলে…. ? “
পিন্টু
বলে , ” এসব বাজে কথা
ভাবছিস কেন ? কেনার আগেই
মহিষ মরার কথা ভাবছিস
? আর মহিষ কোন কারণেই
বা মরতে যাবে ? ”
মিন্টু
একই সুরে হতাশ জবাব
দেয় , ” তা তো বুঝলাম
যে মহিষ মরবে না
। কিন্তু ধর
, যদি মরে ? তাহলে কী
হবে ? “
পিন্টু
অত্যন্ত স্নেহ ভ’রে
জবাব দেয় , “তোর ‘তাহলে’র
জবাব আমার কাছে নেই
। ”
মিন্টু
বলে ” এই তাহলে’র
জবাব আমার কাছে আছে
। আমরা বরবাদ
হয়ে যাবো । সব
হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো
। “
অত্যন্ত
বেদনাহত হয়ে পিন্টু বলে
, ” কিন্তু তুই কেন বার
বার ভাবছিস যে মহিষটা
মরে যাবে …..একটু অন্যভাবে ভেবে
দেখ , মহিষটা দুধ দেবে
। আমরা বিক্রি
করবো । প্রথমে
পয়সাগুলো জমাবো । তারপর
আরও মহিষ কিনবো ।
অনেক পয়সা হবে যখন
, তখন অনেক গয়না কেনা
যাবে , বাড়িও বানানো যাবে
। এভাবে দুধের
বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠব দুজন
। ”
কিন্তু
মিন্টুর ওই এক বুলি
এক জিকির ” ব্যবসা টাকা বাড়ি
গয়না সব হবে তখনই
, যখন মহিষটা বেঁচে থাকবে
। ”
এরপর অনেক বোঝানোর পরেও
মিন্টু তোতাপাখির মতো বলতে থাকে
মহিষ মরার কথা ।
পিন্টু আর বোঝাতে পারে না শুধু বলে , ” দেখ মিন্টু , ঐরকম ভাবলে তুই
কোনোদিনও কোনো কাজ করতে পারবি না । এই ধরণের ভাবনা ঠিক নয় । কারণ তুই আগে
অন্ধকার দিকটাই দেখছিস । ” এইভাবে দুই বন্ধুর তর্কের পর কয়েকদিন গেল ।
পিন্টু একাই একটা দুগ্ধবতী মহিষ কিনে ফেলে । সে এখন আর দিন মজুরের কাজে
যায় না । সকাল থেকে সন্ধ্যা মহিষের দেখাশুনা করে , দুধ দোয় । প্রথম
কিছুদিন দুধের গ্রাহক খুঁজতে , মহিষের পরিচর্যা করতে কষ্ট হয়েছিল । ধীরে
ধীরে পিন্টু এই কাজগুলোতে দক্ষ হয়ে উঠতে লাগলো ।
আর দিনমজুরের কাজের শেষে মিন্টু রোজ তার কাছে আসতো , আর পিন্টুর সংঘর্ষ
করার , পরিশ্রমের বিষয়টি দেখতো । আর ভাবতো তাদের দিনমজুরের জীবন কত ভালো
ছিল । রোজ সকালে কাজে যেত আর বিকেলে ফিরে এসে সন্ধ্যায় কাজ কর্মহীন আড্ডা
দিতে পারত । এখন পিন্টুর জীবনে আড্ডা দেবার অবসর নেই । তার উপর এত ঝুঁকি
নিয়ে কেন যে মহিষ কিনলো । যদি মরেই যায় । সবই যাবে তার ।
আর ঐ দিকে কালো মহিষের মধ্যেই জীবনের আলো দেখতে পায় পিন্টু । সে
দ্বিগুন উৎসাহে কাজ করতে লাগলো । এটা ঠিক যে তার কাছে এখন অবসর নেই ।
কিন্তু সুন্দর ভবিষ্যতের কল্পনায় সময় নষ্ট করতে সে রাজি নয় ।
এইভাবে দিন যায় । আস্তে আস্তে তার গ্রাহক বাড়তে থাকে । মহিষ বাড়তে
থাকে । কাজের লোকও বাড়তে থাকে । মহিষও তার মরে নি ।অন্যদিকে মিন্টু মহিষের
মরার কথা ভাবে আর একইভাবে দিনমজুরের কাজ করে যায় । পিন্টু ধনী হতে থাকে
ক্রমশঃ ।
বন্ধুরা , এই
গল্পের ভেতরের বিষয়টিকে যদি আমরা বুঝতে পারি , তাহলে আমাদের জীবনে পদক্ষেপ
নেবার শিক্ষাটি অর্জন করতে পারবো । এসো খুব কম কথায় দেখে নেই আমরা সেসব :
১. কিন্তু , যদি , তবে ইত্যাদির
জালে আটকে পড়তে নেই
।
২. নেতিবাচক ভাবনা কখনোই মাথায়
আনতে নেই ।
৩. পজিটিভ ভাবনাই পারে জীবনে সাফল্য এনে দিতে ।
৪. নো রিস্ক নো গেইন । ঝুঁকি নিতে পারলেই জীবনে সাফল্য আসবে ।
0 Comments