নিজের কর্মদক্ষতা বাড়াতে চাও ? আজই জেনে নাও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর ৮ টি অভ্যাস

নিজের কর্মদক্ষতা বাড়াতে চাও ?আজই জেনে নাও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর ৮ টি অভ্যাস 

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন – ” আমার মনে হয় আমার মেধার প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ আমার জীবনের কাজে লাগাতে পেরেছি । ” উইলিয়াম জেমস মনে করেন মানুষ তার সম্ভবনার কেবলমাত্র শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগ ব্যবহার করেন। বেশিরভাগ মানুষের জীবনেই সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো যে তাদের জীবনের সম্ভাবনা অবশিষ্ট থাকতেই তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়। তারা জীবদ্দশায় যথাযথভাবে বাঁচার চেষ্টা করে না। তাদের ক্ষমতা মরচে ধরে নষ্ট হয়। প্রয়োগের ফলে নষ্ট হয় না । জীবনের সবচেয়ে নিদারুণ আফশোস হল — ” আমার করা উচিত ছিল কিন্তু করিনি।”
বেশিরভাগ মানুষ থাকে তাদের সম্ভাবনাময় শৃঙ্খলিত বৃত্তে । তারা জীবনের সহজ কিছু কাজ ছাড়া বেশি জানতে বা শিখতে অনাগ্রহী। আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে রয়েছে অসীম কর্মক্ষমতা কিন্তু আমরা সেটা আমাদের ভিতরেই রাখি, কখনো তা বাইরে আনতে চাই না , হয়তো সময় ,সুযোগ, পরিবেশের অভাববোধ করি বা ভয় পাই । কখনো হয়তো নিজের কাছে না পারার হাজারটা অজুহাত খাড়া করে নিজেরই ক্ষতি করতে থাকি অজান্তে । ফলে আমরা পিছিয়ে পড়তে থাকি । কিন্তু যারা জগৎবিখ্যাত তাঁরা তাঁদের প্রতিভাকে ক্ষণে ক্ষণে কাজে লাগাতে থাকেন । তাঁরা প্রতিনিয়ত নিজেদের আরো সমৃদ্ধ করার পিছনে সময় দেন। চলো তাহলে জানা যাক কী কী উপায়ে আমরা আমাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারি—

(১) কাজের প্রতি ভালোবাসা :- 

আমরা অনেকেই অনেক ধরনের পেশার সাথে যুক্ত, হয়তো কেউ স্টুডেন্ট, কেউ চাকুরিজীবী কিংবা কেউ ব্যাবসায়ী ইত্যাদি। কিন্তু কাজের প্রতি নিরুৎসাহের কারনে আমরা আমাদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারি না । কখনো কখনো কাজগুলো শুধুমাত্র মাস শেষে একটা মোটা টাকা পাওয়া যাবে তার আশায় করা হয় । কিংবা কখনো নামের পেছনে ছুটতে ছুটতে দিনরাত একাকার করে প্রতিযোগিতার খাতায় নিজেদের নাম লেখাই । সেখানে কাজটির প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকে সেটা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায় আমাদের । কাজের প্রতি এই ভালোবাসার অভাববোধ থেকেই আসে হতাশা , দুশ্চিন্তা , নতুন কিছু করার প্রতি অনাগ্রহ । তুমি যখন অন্যের ইচ্ছা পূরণের জন্য কাজ বেছে নেবে তখন সেখানে খুশি খুঁজে পাবে না । তাই সর্বপ্রথম নিজের ভালোলাগার কাজটিকে ভালোবাসো এবং বিশ্বাস করো যে তুমি ব্যতিক্রম কিছু করতে সক্ষম । যখন তুমি তোমার ভালোবাসার কাজটি গভীর মনোযোগের সঙ্গে কোনো উদ্দেশ্য পূরনের জন্য করবে তখন সেটা অসাধারণ হয়েই তোমার হাতে ধরা দেবে । ফোর্বস এর সমীক্ষা বলছে, ৮১ শতাংশ মানুষ তার চাকুরি নিয়ে খুশি নন। এই অখুশি হওয়ার পিছনে হয়তো একশো কারন থাকতে পারে । কিন্তু এই একশো কারনের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কারন যেটা আমার মনে হয় সেটা হল তারা তাদের ভালোলাগার কাজটিকে বেছে নেয় নি কিংবা ভালোবেসে তার উপর নতুন কিছু করার কথা ভাবে নি । তাই কর্মদক্ষতা বাড়াতে আমাদের প্রথমেই যেটা করা উচিত তা হলো নিজের ভালোলাগার কাজটিকে বাছাই করা , তারপর সেই কাজটির সঙ্গে নিজের গভীর প্রণয় ঘটানো তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটা শক্তি তৈরি হবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ।

(২) অভিজ্ঞতা অর্জন করা :-

কর্মদক্ষতা বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে সফলতার অভিজ্ঞতা অর্জন করা। তুমি যে কাজটা করছ সেই কাজে যারা বিজ্ঞ বা পারদর্শী তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করা । বিজ্ঞ বা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের শরনাপন্ন হও, কখনোই ভেবোনা সব উত্তর তোমার কাছে আছে। জেনে নাও কিভাবে তাঁরা সেই জায়গায় পৌঁছেছে যে জায়গায় তুমি পৌঁছাতে চাও । কিভাবে তাঁরা সফলতার প্রতিটি সিঁড়ি বেয়ে ওপড়ের দিকে উঠছে , কীভাবে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েও তাঁরা হার না মেনে এগিয়ে গেছে , তাঁদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণ করো । তুমি যদি কোনো কাজে সফলতা পেয়ে থাক সেখানে তুমি কী ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছিলে যা তোমাকে ইতোপূর্বে সফল হতে সাহায্য করেছিল তা লিখে রাখ । কারন কোনো কাজে সফল হলে নিজের কর্মদক্ষতার উপর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় । যেকোনো সফলতাই আমাদের কর্মদক্ষতার শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দেয় ।

(৩) তালিকা, পরিকল্পনা,কাজ :-

কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য সমায়ানুবর্তী হওয়ার পাশাপাশি আমাদের চারপাশে কাজের সঠিক পরিবেশ তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন।
তালিকা:- দিনের শুরুতে করনীয় কাজের তালিকাগুলি বানিয়ে ফেল । কাজগুলিকে গুরুত্বের ভিত্তিতে বিন্যস্ত কর । কোনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,কোনটি বিশেষ জরুরী, কোনটি কম গুরুত্বপূর্ণ তার তালিকা বানাও। Prioritize করার ক্ষেত্রে অনেক কার্যকরী একটা পদ্ধতি হলো ” The Eisenhower method” যা ‘ Eisenhower matrix বা Eisenhower box নামেও পরিচিত । একটা কথা মনে রেখো অসম্ভব কোনো কাজকে তালিকায় রেখো না ।

পরিকল্পনা :-

সবসময় হাতের কাছে একটি নোটবুক রাখো । পরিকল্পনা করো কাজটি কখন কিভাবে করবে। তার জন্য একটি বাস্তবসম্মত সময়সীমা নির্ধারণ কর। তবে শুধু নির্ধারণ করলেই যে কাজ হবে তা কিন্তু নয় , সেই সময়সীমা অনুসরণ করে কাজ সম্পাদন করতে পারলেই আসবে সফলতা ।

কাজ :-

যে কাজগুলো কঠিন সে কাজগুলো আগে করার চেষ্টা কর । বলা হয়ে থাকে সকালবেলা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে । এইসময় যদি কাজগুলি করে ফেলা যায় তবে হয়তো কঠিন বিষয়টিও আমাদের কাছে সহজ হতে থাকবে । যে কাজগুলি করতে তুমি ভয় পাও সেগুলি একটি নোটবুকে লিখে রাখ । কারন মনোবিজ্ঞানীরা বলে তালিকায় কাজটি লিখে রাখলে তা সম্পন্ন করার প্রতি মানুষের ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায়।

(৪) কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলি করো :- 

বিকাশ সর্বদা আমাদের প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় ।আর প্রগতি সর্বদা অগ্রগতির দিকে । আমরা বেশিরভাগ মানুষই একটি নিশ্চিত জীবন খুব ভালোবাসি, অনিশ্চিত জীবন কিংবা চ্যালেঞ্জিং কোনো কিছু আমাদের ভয়-ভীত করে তোলে । গন্ডির বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে বেশিরভাগ মানুষেরই থাকে না । আমরা নিজে যে পেশায় থাকি সেটার ভালো মন্দ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না বা ভাবতেও চাই না । যখনই কেউ আমাদের নিজের গন্ডীর বাইরে কিছু দেখায় বা করতে বলে তখনই আমাদের মনে একটা নেতিবাচক চিন্তার উদ্রেক হয় । যা আমরা দেখে বা শুনে অভ্যস্ত নই , সেখানে প্রথম কাজ হলো বুঝতে চেষ্টা করা । মনে রেখো কমফোর্ট জোন সর্বদা আমাদের বৃদ্ধি বা বিকাশের থেকে দূরে রাখে । নতুন কিছু জিনিস শিখতে বা করতে বাধা দেয় । তাই নিজের কর্মদক্ষতা বাড়াতে আজই কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসো আর তোমার সামনে থাকা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জিং কাজগুলি গ্রহন করো । নতুনভাবে ভাবার দক্ষতা অর্জন করো ।

(৫) নিয়মিত বিরতি নাও :- 

কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পেলে বিশ্রাম নিয়ে নাও । কারন অতিরিক্ত কাজের চাপ আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় ফলে অনেকসময় বেড়ে যায় বিষাদ । তাই কখনো কাজের ফাঁকে বিরতি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাও । কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে নতুন কোনো জায়গায় ছুটি কাটাও । নতুন জায়গা দেখ, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা কর, কথা বলো ফলে বিরতির শেষে নতুন উদ্যমে কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে এবং এর থেকে নতুন কিছু শিখে তুমি তোমার কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারবে । 

(৬) অন্যদের সাথে নিজের তুলনা বন্ধ করো :- 

তুলনা আমাদের মধ্যে একধরনের হতাশার সৃষ্টি করে , আমাদের আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানে , আমরা ডিপ্রেশড্ হয়ে পড়ি , আর ডিপ্রেশন থেকে আসে কাজের প্রতি হতাশা, অনিচ্ছা, অনাগ্রহ ।তাই সবার আগে অন্যদের সাথে নিজের তুলনা বন্ধ করতে হবে এবং নিজেকে নিয়ে ভাবা শুরু করতে হবে । শুরু করতে হবে নিজের কাজটি নিয়ে ভাবতে । তুলনা যদি করতেই হয় , নিজের সঙ্গে নিজের তুলনা করো , কালকের তুমি থেকে আজকের তুমিটার তুলনা করো । আর আগ্রহ এবং আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে কাজটি করে যেতে হবে তবেই বাড়বে কর্মদক্ষতা । 

(৭)দূরদর্শিতা :-

এ কথা আমরা সবাই জানি যে সামনে কিভাবে এগুব, কিভাবে কি করবো —এই ভাবনাগুলি আমাদের এক অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়। তাই তার থেকে মুক্তি পেতে হলে চাই কাজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আগাম অনুমান বা দূরদর্শিতা । যদি নিজের কর্মদক্ষতা বাড়াতে চাও তবে নিজের দূরদর্শিতার পরিচয় দাও এই ভেবে যে , তুমি তোমার কাজের মাধ্যমে তোমার কতটা উন্নতি দেখতে চাও সেটা ঠিক করো । আর এই কাজের ভবিষ্যৎ কতটা , নিরাপত্তা কতটা যদি আগাম অনুমান করতে পারো তবে তোমার নতুন নতুন কর্মপন্থাও সামনে আসবে । আর এই নতুনত্বই কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেবে । কাজে মজাও আসবে। আর সব কাজই মানুষ ভবিষ্যৎ ভেবেই করে। তাই কর্মদক্ষতা বাড়াতে দূরদর্শী হওয়া দরকার। 

(৮)যোগাযোগ দক্ষতা :-

যোগাযোগ দক্ষতা বা communication skill মানুষের ব্যক্তিত্বের একটি বড় গুন । যে কোনো কাজই আমরা করি অন্য মানুষের জন্য , হয় কোনো প্রোডাক্ট বা পরিষেবা সরবরাহ করার জন্য। তাই অন্যদের সঙ্গে নিজের ভালো সম্পর্ক স্থাপিত না হলে সফলতা আসে না । মানুষ কি বলছে তা নয় , বরং মানুষ কি বলতে চাইছে তার প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন । নিজের কর্মের সাফল্য নির্ভর করে সবার মধ্যে কতটা তা প্রভাবিত করছে তার উপর । তাই সেই বেশি সফল হয় , যার সম্পর্ক স্থাপনের দক্ষতা ভালো। শুধু তাই নয় অন্যদের থেকে অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা নিতে হলেও এই দক্ষতার প্রয়োজন । তাই নিজের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াও তাহলে তোমার কর্মদক্ষতাও বাড়বে ।

যাই হোক বন্ধুরা , আশা করি এই ৮টি টিপস মেনে চলবে আর নিজের কর্মদক্ষতাও বাড়াতে পারবে ।



Post a Comment

0 Comments