শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার মহিমা
...জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমাতেই শ্রীজগন্নাথদেব অবতরণ করেছিলেন। এই দিনই শ্রীজগন্নাথের পুণ্য জন্মদিবস। তাঁরই আজ্ঞাক্রমে ঐ জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমা দিবসে তাঁর মঙ্গল অধিবাস। ...মহাভাগবতবর শ্রীইন্দ্রদ্যুম্ন মহারাজ এই বিধানেই শ্রীজগন্নাথ জন্মতিথি প্রত্যেক জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমায় মহাস্নান যাত্রা মহোৎসব করতেন। অদ্যাবধি শ্রীনীলাচলধামে তদ্রুপ মহাস্নান মহোৎসব উদযাপিত হয়।...শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার পর শ্রীজগন্নাথদেব যে গণেশ বেশ বা হস্তিবেশ ধারণ করেন সে সম্বন্ধে একটি প্রাচীন কাহিনী উৎকল ভাষায় রচিত ‘দার্ঢ্যতাভক্তি’ নামক গ্রন্থে পাওয়া যায়।
একবার কর্ণাটক দেশের কানিয়ারি গ্রামের গণপতি ভট্ট নামক একজন ব্রাহ্মণ শ্রীনীলাচলে স্নানযাত্রা দিবসে উপস্থিত হয়েছিলেন। ব্রাহ্মণটি গাণপত্য বা শ্রীগণেশের একান্ত ভক্ত ছিলেন। স্নানাভিষেকের পর শ্রীজগন্নাথকে স্বীয় অভীষ্টদেব শ্রীগণপতি মূর্তিতে দেখতে না পেয়ে গণপতি ভট্ট ‘ব্রহ্ম নীলাচলে নাই’ এরূপ সিদ্ধান্ত করেন। বাঞ্ছাকল্পতরু শ্রীজগন্নাথদেব গণপতি ভট্টের ঐকান্তিক বিশ্বাসে মুগ্ধ হয়ে গজাননরূপে প্রকটিত হন এবং গণপতি ভট্টের প্রার্থনানুসারে ‘যাবচ্চন্দ্র দিবাকর’ স্নানযাত্রা মহোৎসবের পর ভক্তবৎসল-বাঞ্ছাকল্পতরু নামের সাক্ষ্যস্বরূপ শ্রীগণেশ বেশ ধারণ করতে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। সেই সময় হতে স্নানযাত্রার পর নিয়মিতরূপে শ্রীজগন্নাথ ও বলরামের স্নান বেদিতেই ‘গণেশবেশ’ এবং সুভদ্রাদেবীর ‘পদ্মবেশ’ হয়ে থাকে।...মহাভাগবত মহারাজ শ্রীইন্দ্রদ্যুম্নের প্রতি শ্রীজগন্নাথের এইরূপ আদেশ ছিল যে এই মহাস্নানযাত্রার পরবর্তী পঞ্চদশ দিবসকাল শ্রীভগবানকে অঙ্গরাগবিহীন বিরূপ অবস্থায় কেউ দর্শন করবে না। যথা-
ততঃপঞ্চদশাহাদি স্নাপয়িত্বা তু মাৎ নৃপ।
অচিত্রং বা বিরূপং বা ন পশ্যেত কদাচন॥
শ্রীজগদীশের আজ্ঞানুসারে এই পঞ্চদশ দিবসকাল শ্রীমন্দিরের দ্বার রুদ্ধ থাকে। এই সময়কে ‘অনবসরকাল’ বলা হয়। স্নানযাত্রার সময় স্নানাধিক্যহেতু শ্রীজগন্নাথদেব নব-লীলামাধুর্য বিস্তার করার জন্য পক্ষকাল জ্বরলীলা প্রকাশ করেন। শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের জ্বর হয়েছে বলে এই সময় পাচন (মিষ্টরসের পানাবিশেষ) ভোগ প্রদান করা হয় এবং অনবসরকালের প্রতিদিন মিষ্টান্ন ভোগ প্রদান করা হয়। তারপর শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের শ্রীঅঙ্গরাগ করা হয়। পক্ষকাল বিশ্রামের পর যখন বিগ্রহগণ নবমূর্তিতে প্রকটিত হয়ে নানাবিধ বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে প্রথম দর্শন দান করেন তখন সেই উৎসবকে জগন্নাথের ‘নেত্রোৎসব’ বা ‘নব-যৌবনোৎসব’ বলা হয়।
0 Comments