ইরাকেও ইস্‌কনের রথযাত্রা!

ইরাকেও ইস্‌কনের রথযাত্রা!



ইরাক, এক যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ। গত কয়েক বছর ধরে সারাবিশ্বে যতগুলো দেশ নিয়ে আলোচিত হয়েছে তাদের মধ্যে ইরাক অন্যতম। এসবের বাইরেও এ কয়েক বছর ঘটেছে আরও বিশেষ কিছু। দেশটিতে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন অনেকটা আমেরিকান সৈন্যদের ইরাকে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই সূচনা হয়েছে। এই বিশেষ একটি আন্দোলন যার মাধ্যমে সূচিত হয়েছে তিনি হলেন ইরাকে কর্মরত এক নির্ভীক সৈনিক পার্থ সারথী দাস। কয়েক বছর পূর্বে চৈতন্য সন্দেশ পত্রিকায় তাকে নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। অনেক প্রকিকূলতার মধ্য দিয়ে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার, Army Commendatin অ্যাওয়ার্ড অর্জন সহ নানাবিধ সংবাদ ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে কৃষ্ণভাবনামৃত অনুশীলনকারী মাঝে অনেক প্রশংসিত হয়েছে। নতুন করে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন ২০০৭ সারে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম রথযাত্রা আয়োজনের জন্য। ঐ রথযাত্রাটি ছিল ইরাকে প্রথমবারের মত শ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ঐ দেশে যেখানে প্রতিমুহূর্তে বুলেট-বোমায় প্রাণ হারানোর ভয় সেই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে রথযাত্রার আয়োজন কিভাবে সম্ভব হয়েছে এ নিয়েই বিস্ময়ে হতবাক অনেকেই। পার্থ-সারথী দাসের এ নির্ভীক পদক্ষেপ অনেকের কাছেই এখনও বিস্ময়ের! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন কোন পরিস্থিতির জন্য থেমে থাকে না। সেই চিরসত্য বাক্যটিই আরও একবার সত্য প্রমাণিত করলেন আমেরিকান এক সাহসী তরুণ কৃষ্ণভক্ত পার্থসারথী দাস। কিভাবে সবকিছু সুসম্পন্ন হল?
প্রথমদিকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিকট থেকে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন বটে! পরে অবশ্য তাহার দৃঢ়তায় সে বাধা অতিক্রম হয়। তবে শর্ত হল বৃহদাকার রথ নয়। তারাই আপতত ছোট একটি পালকিতে করে জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা রাণীকে বসিয়ে শোভাযাত্রা বের করলেন। এর আগে অবশ্য বিগ্রহত্রয়কে সুন্দর পোশাকে ও পুষ্পমাল্য দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা খুব একটা হবে না সেটি আগেই ভবিষদ্বাণী হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে দেখা গের ঐ শোভাযাত্রায় কম করে হলেও শখানেক লোক অংশগ্রহণ করে। ইরাকের রাস্তায় এ ধরনের একটি ব্যতিক্রমী শোভাযাত্রা দেশটির জনগণদের কাছে একদম নতুনই। তারা বুঝে না এ বিগ্রহগুলো কিসের কিংবা এ শোভাযাত্রাটির অর্থই বা কি? তবে যতদূর পর্যন্ত এ রথযাত্রা গিয়েছে লোকদের দৃষ্টি ঐ শোভাযাত্রার দিকেই গেছে। কিছু তো আর না হোক অন্ততপক্ষে বিগ্রহতো দর্শন করেছে। হরেকৃষ্ণ কীর্তন হয়ত খুব উচ্চস্বরে না হলেও অংশগ্রহণকারীদের মুখে মুখে ছিল এটুকু বুঝতে আর বাকি নেই। এ রথযাত্রার পেছনে যার কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি সেই পার্থ সারথী কিন্তু অনেক আগে থেকেই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ সহ শ্রীল প্রভুপাদ প্রদত্ত বিভিন্ন গ্রন্থ ইরাকে বিতরণ করে আসছিলেন। এ সমস্ত গ্রন্থেও ইরাকী জনগণদের মাঝে ইতোমধ্যে যথেষ্ট সাড়া মিলেছে। যার প্রভাবে পার্থ সারথী কৃষ্ণের একজন অন্তরঙ্গ ভক্ত হিসেবে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী প্রচার করে চলেছেন আর ইরাকী জনগণদের উপহার দিয়ে চলছেন জগন্নাথদেবের রথযাত্রার মত চিন্ময় আনন্দ। কিছুক্ষণের জন্য ঐ রথযাত্রা সবাইকে বৈকুন্ঠের আনন্দ দান করেছিল। কৃষ্ণের এ দুঃসাহসিক ভক্ত আরও দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। তার সঙ্গে নতুন করে রয়েছে আরও অনেক ভক্ত সৈনিক যাদের অনেকেই তারই গড়া। অদূর ভবিষ্যতেও হয়ত এ কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন সমগ্র ইরাকে ছড়িয়ে পড়বে। তখন এই ক্ষুদ্র পরিসরের জগন্নাথের রথযাত্রা বিশাল আকৃতির রূপ নেবে। সমস্ত ইরাকি জনগণ তখন হরিনামের প্রেমময়ী ধ্বনিতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে জগন্নাথের সম্মুখে নৃত্য করবে আর ধীরে ধীরে রথও এগিয়ে চলবে এবং সেইসঙ্গে এগিয়ে চলবে নিত্যধাম গোলকধামের প্রতি অগ্রসর হওয়াও। এসব স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি। কেননা এ স্বপ্ন দেখেছিলেন ৫০০ বছর পূর্বে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। তাই কলির পাবনবাতার বলে গেছেনআছে যত পৃথিবীতে নগরাদি গ্রাম সর্বত্র প্রচার হইবে মোর এই নাম। বর্তমানে এ স্বপ্নই বাস্তবায়ন করছেন একনিষ্ঠ কৃষ্ণ ভক্ত পার্থ সারথী দাস। [উল্লেখ্য এখনও প্রতি বছর সেই রথযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।] হরে কৃষ্ণ।



Post a Comment

0 Comments