*** কাঙ্গালের ঈশ্বর ***

*** কাঙ্গালের ঈশ্বর ***





একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দরীদ্র বিদূরের প্রীতির বশে একদিন তার ঘরে এসে উপস্থিত হলেন। ভগবান এসে আমার কুঁড়েঘরে দাঁড়িয়েছেন এই দেখে বিদুর পত্নী আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। বহু আকাঙ্খিত মহালগ্ন এসেছে। দরীদ্রের পর্ণকুটীরে ভগবানের আগমন ।


বিদুর পত্নি মনে মনে ভাবলেন এই মহামান্য অতিথির সম্মান করবো আমি কেমন করে ? আমার গৃহে তো তেমন কিছু নেই। প্রার্থনা করলেন,.... হে দীননাথ! হে রাজেশ্বর! ক্ষমা করো প্রভূ তোমার পুজার আয়োজন নেই আমার কাছে। তুমি দয়া করে আমার কুটিরে এসেছো। তোমার চরণধুলিতে আজ এ পর্ণকুটির ধন্য। কিন্তু তোমার সম্বর্ধনার যোগ্য উপহার এই দরীদ্রের কুটিরে কিছুই নেই হে প্রভু। দরীদ্রের আছে শুধু ভালোবাসা আর নয়নভরা অশ্রু।! বিদুরপত্নীর আঁখিদুটি এই ব্যাথার ক্রন্দনে ভরে গেল। হঠাৎ মনে পড়ে গেল কুটিরে কয়েকটা কলা ছিল। ছুটে গিয়ে কলাগুলি নিয়ে এলেন। আর প্রেমাশ্রুপূর্ণ নয়নে বললেন,... হে প্রভো, হে করুনাময়, আজ এই দিনটিরআশায় আমি কতদিন কতরাত অপেক্ষা করেছিলাম। তোমার এই কৃপা দিয়ে আজ তুমি মহাধনে ধনী করলে এই কাঙালকে। হে কাঙ্গালের ঈশ্বর আমাকে যে ভাবে তোমার ইচ্ছা তুমি সেই ভাবেই রেখো কিন্তু তোমার এই শ্রীচরণ স্মরণরুপ মধুপান থেকে যেন মুর্হুতের জন্যও বঞ্চিত কর না।


এই সব বলতে বলতে একটা করে কলার খোসা ছাড়িয়ে গোবিন্দের শ্রীহস্তে দিতে লাগলেন। বিদুর পত্নী প্রেমাবেশে তখন হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য।নয়ন দিয়ে নয়,তিনি প্রেমপূত মন দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ দর্শন করছেন, সেই প্রেমাবেশে মনের ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি গোবিন্দের অাগমনে আত্মহার হয়ে"" কলার খোসা ছাড়িয়ে কলাটা ফেলে দিয়ে খোসাটা গোবিন্দের হাতে দিতে লাগলেন।

আর ভাবগ্রাহী জনার্দন তখন হাসিমুখে ভক্তের কৃষ্ণ প্রীতিরস আস্বাদন করে মহা আনন্দে আত্মহারা হয়ে কলার বাকলটাই খেয়ে নিলেন।প্রীতিরস মিশ্রিত বাকলই ভগবানের কাছে অমৃত। মহাতৃপ্তির সঙ্গে খেতে লাগলেন মহালোভীর মত। গোবিন্দ সর্বদা প্রেমের ভিখারী প্রেমের কাঙাল। ভক্তের প্রেমে বশীভুত হয়ে যে কি সুখ, কি যে মাধুর্য্য তা আস্বাদনের জন্য তিনি সর্বদা লোলুপ।

ঠিক তখনি বিদুর এসে দেখেন, সেই পরমাকাঙ্খিত করুনাময় আজ কৃপা করে আমার ঘরে এসেছেন। কিন্তু আমার পত্নী এ কি করছে? কলার খোসা খেতে দিচ্ছে গোবিন্দকে? বিদূর নিজ পত্নীকে বকছেন ,বাহ্যজ্ঞান ফিরে পেয়ে চমকে উঠলেন বিদুর পত্নী। পরমেশ্বর, যার চরণে স্মরন মাত্র মন আনন্দিত হয় তাকে আমি কি দিচ্ছি। আর কন্দন করতে লাগলেন , যে কিনা সব সময় ক্ষীর, ননী, অমৃত দ্রব্য দিয়েও তৃপ্ত না তাকে কি করে কলার খোসা খাওয়ালাম? এই ভেবে দুঃখে, কষ্টে,লজ্জায় বিদুর পত্নী ক্রন্দন করতে করতে বারংবার ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলেন। ভগবান বললেন বিদুর তুমি বকছো কেন? তুমি জানো বিদুর আমি কি অমৃত রস আস্বাদন করছিলাম? আমার ভক্তের হাতের দেওয়া বস্তুর যে কি অপূর্ব স্বাদ তা আমি রাজ ভোগে ও পাই না বিদুর ।জানতো ভক্তের এই প্রেমের জন্য আমি কাঙ্গালের মতো ত্রিভুবন ঘুরতে থাকি ।যদি একবার কেউ ভক্তি সহকারে আমাকে হা কৃষ্ণ হা কৃষ্ণ বলে ডাকে আমি তখনই তার হয়ে যাই ।

হিতোপদেশ

ভগবান কে একটু হৃদয় দিয়ে ভক্তি সহকারে ডাক লেই ভগবান ধরা দেন ।ভগবান ধরা দেওয়ার জন্য বসে থাকেন ।তাই প্রেম ও ভক্তি সহকারে ভগবান কে ডাকতে হবে ।

Post a Comment

0 Comments