ধারাবাহিক শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা।
♥ পর্ব - ১৬ ♥
আজকের লীলাঃ শেঠজী ও জগন্নাথ
♥ পর্ব - ১৬ ♥
আজকের লীলাঃ শেঠজী ও জগন্নাথ
অনেক যুগ আগের কথা, এক শেঠের কাছে এক ব্যক্তি কাজ করত।
শেঠজী ঐ ব্যক্তিকে খুব বিশ্বাস করত। শেঠের যা জরুরী কাজ থাকত সব ঐ ব্যক্তি করত।
ঐ ব্যক্তি পরম ভক্ত ছিল। সেই ব্যক্তি সদা ভগবানের চিন্তা, ভজন, কীর্তন, স্মরণ, সৎসঙ্গ করত। একদিন সেই ব্যক্তি শেঠজীর কাছে, শ্রীজগন্নাথ ধাম যাত্রার জন্য ছুটি চাই। শেঠজী
ছুটি দিল আর সেই ব্যক্তিকে বলল, "ভাই
আমি তো সংসারী মানুষ, সবসময়ই
ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকি তার কারণে কখনো তীর্থযাত্রার সুযোগ হয়
না। তুমি তো যাচ্ছো এই ১০০ টাকা আমার নামে প্রভু জগন্নাথের চরণে সেবায় সমর্পিত করে
দিও।" সেই ব্যক্তি টাকাটা নিয়ে জগন্নাথ দর্শনে যাত্রা শুরু করল। অনেকদিন
পায়ে হেঁটে যাত্রা করে সে জগন্নাথ পুরী পৌঁছাল। মন্দিরে যাওয়ার সময় সে রাস্তায়
দেখল অনেক সাধুসন্ত,ভক্তজন, বৈষ্ণবজন, হরিনাম সংকীর্তনে খুব আনন্দ
করছিল। কীর্তনের আনন্দে
তাদের চোখ
থেকেঅশ্রুধারা পড়ছিল। জোরে জোরে তারা হরিবোল
হরিবোল বলছিল। সংকীর্তনে খুব আনন্দ হচ্ছিল। চারিদিকের সকল ভক্তরা এসে ওখানে
দাঁড়িয়ে হরিনাম সংকীর্তনের আনন্দ নিচ্ছিল।সেই ব্যক্তি দেখছিল সংকীর্তনরত সব
ভক্ত জনদের। সে দেখল সংকীর্তন করতে করতে তাদের ঠোঁট শুকিয়ে গেছে, দেখে মনে হচ্ছে তারা খুব ক্ষুধার্ত। সে
এই ক্ষুধার্ত ভক্তদের দেখে চিন্তা করল, "শেঠজী আমাকে যে টাকা দিল তার থেকে ভক্তদের ভোজনের ব্যবস্থা
করি।" সে ব্যক্তি ঐ ১০০ টাকা থেকে ভোজনের ব্যবস্থা করল। সবাইকে ৯৮ টাকা দিয়ে ভোজন
করালেন। সকলে খুব তৃপ্ত হলেন। তার কাছে শুধু দুই টাকা আছে, সে ভাবল "এই দুইটাই আমি
জগন্নাথের চরণে শেঠজীর নামে সমর্পণ করব। যখন আমি শেঠের কাছে পৌছাব। তখন আমি বলব শেঠজীকে
আমি টাকা সমর্পন করেছি। শেঠজী তো জিজ্ঞাসা করবে না যে ১০০টাকা আমি জগন্নাথের চরণের
সমর্থন করেছি কিনা। শেঠজী বলবে টাকা সমর্পণ করলে। আমি হ্যাঁ বললে ওটা তো
মিথ্যা বলা হবে না এবং কাজও হয়ে যাবে।" ভক্ত সেই ব্যক্তি আকুল মনে জগন্নাথজীর
দর্শন করল মন্দিরে প্রবেশ করল। শ্রীজগন্নাথদেবের এমন অপূর্ব রূপ নয়ন ভরে দর্শন করে
নিজে হৃদয়ে তার রূপ মাধুরী বিরাজমান করল। শেষে সে শেঠজীর দেয়া দুই টাকা জগন্নাথজীর
চরণে দিয়ে বলল, এই
দুইটাকা আমার শেঠজী দিয়েছে।
ঐ রাতে শেঠজী রাতে স্বপ্ন দেখল
শ্রীজগন্নাথজীকে। জগন্নাথ জীবনে স্বপ্নে এসে বলল শেঠজীকে, "তোমার ৯৮ টাকা আমি পেয়েছি। " এই
বলে শ্রী জগন্নাথজী অন্তর্ধান হয়ে গেলেন। শেঠজী জেগে গেল আর ভাবতে লাগল, "আমার কাজের লোক তো খুব সৎ, ভক্ত ও তো খূব বিশ্বাসী। হঠাৎ কি এমন
হল কি এমন দরকার পরল আমার দেয়া টাকার থেকে দুই টাকা ভগবানকে কম দিল? সে দুই টাকা কিসে খরচ করল? কি এমন প্রয়োজন পরল?" এসব কথা শেঠজী বিচার করতে লাগল। অনেক
দিন যাওয়ার পর ভক্ত সেই ব্যক্তি ফিরে আসল আর শেঠজীর কাছে আসল। শেঠজী তখন তাকে
জিজ্ঞাসা করল "আমার টাকা জগন্নাথজীকে সমর্পন করেছ তো?" ভক্ত বলল, " হে শেঠজী টাকা আমি সমর্পণ
করেছি।" শেঠজী বলল, "কিন্তু
তুমি তো ৯৮ টাকা কেন দিলে, দুই
টাকা কি কাজে খরচ করলে? " তখন
ভক্ত চিন্তা করলছিল শেঠজী কিভাবে জানল, ভক্ত তখন সকল কথা খুলে বলল
শেঠজীকে। বলল," সে ৯৮ টাকা দিয়ে ভক্ত সাধুসন্তদের
সেবা করল। আর দুই টাকা শুধু প্রভু জগন্নাথের চরণের সমর্পন করল।" শেঠজী সকল কথা
শুনে বড় খুশি হল এবং ভক্ত ব্যক্তির চরণে এসে পড়ল। আর বলল , " তুমি ধন্য তোমার জন্য আমি শ্রীজগন্নাথদেবের
দর্শন ঘরে বসে পেলাম।" ভগবানের আসলে তোমাদের ধনের কোন দরকার নেই।
ভগবান ঐ ৯৮ টাকা স্বীকার করল কারণ ওটা যে ভক্তের সেবাতে লেগেছে। কারণ, ভক্তের হৃদয়ে ভগবানের বাস। যে দুইটা
চরণের দিল ঐ টাকাটা কোন মূল্য নেই প্রভুর কাছে। 'জগন্নাথ সবাইকে দর্শণ দিতে যাত্রা করবে কিছুদিন পরে, রথযাত্রা সবাই জগন্নাথকে ভক্তি সহকারে
দর্শন করবেন ও কৃপা লাভ করবেন।
0 Comments