আমরা ভালো মন্দ যেরকমই হইনা কেন কিছু মানুষ আমাদের অপছন্দ করে এবং আমরাও
কিছু মানুষকে অপছন্দ করি। আমরা যখন কোথাও লোকের মাঝে যাই – সেখানে এমন
একজন অন্ততঃ থাকে যে সবকিছুই জানে এবং আমাদের পছন্দের বা আবেগের বিষয়ে
এমনভাবে বিষোদ্গার করে ফেলে। যার ফলে ঐ বিষয়টিই আমাদের ঘৃণার বিষয় হয়ে ওঠে।
আর ঐভাবেই ঐ মানুষটিও চিরতরে অপছন্দের তালিকাভুক্ত হতে থাকে। এমনিভাবে
অনেকেই আমাদের অপছন্দ কিংবা আমরাও অনেক মানুষের অপছন্দের তালিকাভুক্ত হয়ে
থাকি। মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে এর মূল কারণ আমাদের emotional intelligence. বাহ্যিক আচরণ বা অভ্যাসের বিচারে মানুষের অপছন্দের অনেকগুলি কারণের থেকে প্রধান ৭টি কারণ বা অভ্যাসগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।
মানুষের অপছন্দের প্রধান ৭টি কারণ বা অভ্যাস
১. ফোড়ন কাটা :-
মনে রাখতে হবে সামনের মানুষটি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতেই চায়। গল্প ,কিংবা
কোনো সমস্যা যাই বলুক না কেন কারো কথার মাঝখানে বারবার ফোড়ন কাটা অপরের
ভীষণ অপছন্দের বিষয়। এইভাবে যারা বেশি কথা বলেন এবং অপরের কথার মাঝে বিঘ্ন
সৃষ্টি করেন তাদের এই অভ্যাস অপরের অপছন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সামনের
মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পরেই নিজের বক্তব্য বলা উচিত।
২.বেশি ভালো হওয়া :- অবাক হবার কিছু নেই। একথা সত্যি যে খুব ভালো হওয়াটাও অপরের অপছন্দের একটা বড় কারণ। কোনো বিষয়ে খুব ভালো হয়ে থাকলে সেই মানুষের সামনে নিজেকে খুব হীন ও ছোট মনে হয়। আর সেটাই কোনো মানুষ চায় না। আরেকটা বিষয় হল – বেশি ভালো কেউ হলে লোকে তাকে অবিশ্বাস করে – এতো ভালো মানুষ হতেই পারে না। তখন তার দোষ খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে ভালো লোকেরা আত্মীয় স্বজন থেকে একটু দূরেই সরে যেতে থাকেন।
৩. দেখানোর চেষ্টা :- মনোযোগ আকর্ষণ করতে গিয়ে আমি এই করেছি ,ওই করেছি ,অমুকের সাথে আমার যোগাযোগ আছে….ইত্যাদি দেখানোর মতো প্রচেষ্টাগুলি অপরের অপছন্দের কারণ হয়। কারো সঙ্গে পরিচয়ের সময় দেখা যায় অনেকেই নিজের যাবতীয় গুণাবলী উজাড় করে দিতে গিয়ে সামনের মানুষটির মৌখিক বাহবা পেলেও প্রকৃতপক্ষে হয়ে ওঠেন অপছন্দের মানুষ। তাছাড়া আমরা প্রায়শই অপরের কাছে নিজের উদারতার কথা কিংবা অন্য কাউকে সাহায্য করার মতো কৃতিত্ব দেখাতে চাই। এই স্বভাবটি ভীষণভাবেই অপরের অপছন্দের কারণগুলির মধ্যে একটি।
৪. আমি যাকে পছন্দ করব না সেও তাই করবে :- সামনের মানুষটিকে যদি আমি মনে মনে অপছন্দ করি তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেও আমাকে অপছন্দ করবে। মানুষের সকল ভাষার উপরে হল শারীরিক ভাষা। যার দ্বারা অপরে বুঝে যায় যে তাকে আমরা অপছন্দ করছি । এটা একটা বৈশ্বিক নিয়ম। অপছন্দের বিনিময়ে অপছন্দই পাওয়া যায়। কাজেই কারো পছন্দের মানুষ হতে হলে তাকে অন্তর থেকে পছন্দ করতে হবে।
৫.Emotion লুকোনোর চেষ্টা :- আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ইমোশন লুকোনোর চেষ্টা করি । মুখে মুখে খুব ভালো বলছি অথচ আড়ালে তার সম্পর্কে রাগ ক্ষোভ প্রকাশ করছি – এটা মানুষের অপছন্দের বিষয়। মানুষ সর্বদা চায় যে কারো পছন্দ অপছন্দ যাই হোক না কেন আবেগ লুকোতে নেই। শান্ত মাথায় তাকে সরাসরি অপছন্দের কারণটি বলা উচিত। ফলে খোলামেলা আলোচনায় ধারণাগুলি পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিরক্তি এলেও তাকে সংযতভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে আবেগ লুকোনো আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়। আবেগ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরে আলোচনা করা হবে।
৬. বক্তিগত বিষয় প্রকাশ করা :- বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার আগেই কোনো মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের শুরুতেই বক্তিগত বিষয়গুলি তাকে বলে ফেলা উচিত নয়। কারণ একজন মানুষ অপরকে জেনে বুঝে ওঠার আগেই এত ঘটনার বিবরণ কারো শুনতে ভালো নাও লাগতে পারে। তাই খুব কাছের মানুষ না হলে একান্ত বাক্তিগত বিষয়গুলি শেয়ার করতে নেই। মানুষ অপরের দীর্ঘ অপ্রয়োজনীয় কথা কেউ শুনতে পছন্দ করে না।
৭.অন্যান্য বিষয় :- এছাড়াও কিছু কিছু স্বভাব বা অভ্যাস রয়েছে যেগুলো মানুষের অপছন্দের কারণ হিসেবে মনস্তাত্বিকদের আলোচনায় প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
- ক ) অহেতুক অভিযোগ জানানো
- খ ) কোনো কিছু চাওয়া
- গ ) কাউকে ব্যবহার করার চেষ্টা
- ঘ ) বদমেজাজ
- চ ) কারো পছন্দকে ঘৃণা করা ইত্যাদি।
0 Comments