*দুশ্চিন্তা কেন*?? সুন্দর উপস্থাপণঃ--গৌর গোপাল দাস--
#"যখন কোন বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, আমাদের আর কিছুই করার থাকে না, তখন দুঃশ্চিন্তা করে লাভ কী? দুঃশ্চিন্তা আগামীদিনের দুঃখ লাঘব করতে পারে না, ববং তা আজকের আনন্দকে হরন করে।_লিও বাসকেগলিয়া এক পরন্ত বিকেলে, আমি আমার ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম, হঠাৎ আমার ফোনে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে একটি হোয়াট্স আ্যাপ মাসেজ এলো, ম্যাসেজটা দেখতে আর পাঁচটা সাধারন মাসেজের মতো হলেও,এর ভেতরের কথাগুলো আমার জীবন ধ্বংস করে দেবার জন্য পর্যাপ্ত ছিল। কিন্তুু এ বিষয়ে আলোচনার পূর্বে আমি হোয়াটস্আ্যপের সফলতার গল্প বলতে চাই, যারা হোয়াটস্আ্যপের সফলতার কারন জানে না, আমি মনে করি তাদের সর্বপ্রথম এই গল্প শোনা উচিত।।
আমরা জানি হোয়াটস্আ্যেপ বিনামূল্যে মাসেজ ও কল করার জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি অ্যাপ, চীন ছাড়া পৃথিবীর যেকোন দেশে কেউ এই আ্যাপ ডাউনলোড করতে পারে। ব্রায়ান অ্যাকটন নামক জনৈক সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হোয়াসটস্আ্যাপ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি স্টান্ডফোর্ড ইউনির্ভাসিটি থেকে স্নতক ড্রিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০০৭ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে আ্যপল ও ইয়াহুতে চাকরি করেন, ২০০৭ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেনে যে, তিনি ও তাঁর বন্ধু জেন কৌম মিলে দক্ষিন আমেরিকা সফরে যাবেন। সফর শেষে তাঁরা দুজনে ফেসবুক ও টুইটারে চাকরির জন্য আবেদন করেন। কিন্তুু দুর্ভাগ্যবশক কারো চাকরি হলো না। ২০০৯ সালের মে মাসে আ্যকটন একটি টুইট করেন।"টুইটারে চাকরি জুটল না, ঠিক আছে, সমস্যা নেই, হয়তো আরো কিছু সময় লাগবে"। এবার টুইটে তিনি লিখলেন, "ফেসবুকেও চাকরি জুটল না, তবে আমার কিছু মহান ব্যক্তিসম্পন্ন মানুষের সাথে দেখা করার সৌভাগ্য হলো, যা আমাকে হয়তো অনেকদূর নিয়ে যাবে"। কিন্তুু তাঁরা পরের পদক্ষেপ সারা পৃথিবীকে বদলে দিলো। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যলিতে প্রতিষ্ঠা করেন হোয়াটস্আ্যাপ। প্রতিষ্ঠার পরপরই এটি অতুলীয় সাফল্যের দরুন ২০১৪ সালের "ফেসবুক কোম্পানি "১৯ বিলিয়ন ডলার বিনিময়ে "হোয়াটস্আ্যাপ কোম্পানি" ক্রয়ের প্রস্তাব জানায়, ২০১৭ সালে হোয়াটস্আ্যাপের ব্যাবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১.৫ বিলিয়ন।।।
অতএব, বুঝতেই পারছেন যেকোন বিষয়ে দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই আ্যাপটি কত শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। আসলে এই আ্যাপটির মাধ্যমেই আমার একটি বির্তকিত ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।
আমার ফোন হঠাৎ বেজে উঠলো। একটি মাসেজ এলো, নোটিফিকেশনে দেখলাম আমার এক পুরনো বন্ধু(যার সাথে বহু বছর যোগাযোগ নেই) একটি ভিডিও পাঠিয়েছে। বহুদিন পর ওর কাছ থেকে মাসেজ পেয়ে মনে মনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তুু ল্যাপটপে জরুরি একটা লেখা টাইপ করেছিলাম, তাই ভাবলাম পরে দেখা যাবে।
একটুপর আবার একটা ম্যাসেজ এলাে।আমার মনােযােগ আবার ফোনের দিকে গেল।কিছুটা বিরক্তি নিয়েই আমি বিষয়টি এড়িয়ে গেলাম । এরপর একের পর এক ম্যাসেজ আসতেই থাকলাে ।একবার ভাবলাম ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখবাে । কিন্তু এত বেশি ম্যাসেজ আসতে থাকলাে যে , চেক না করে পারলাম না । হােয়াটসঅ্যাপ খুলে অবাক বিস্ময়ে দেখলাম , ম্যাসেজের বন্যা বয়ে গেছে । প্রায় প্রতিটি ম্যাসেজেই একটি জিনিস কমন- ৩.৪ মেগাবাইটের একটি ভিডিও । আমি অবাক হয়ে দেখলাম , আমারই একটি ভিডিও সবাই আমাকে পাঠাচ্ছে । ভিডিওটি ছিল আমার প্রবচনের একটি অংশ।আমাদের মন্দিরে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীর সামনে একটি প্রবচন দিতে গিয়ে আমি মজা করে একটি কৌতুক বলেছিলাম ।
কৌতুকটা ছিল এরকম “ ভারতের কোনাে স্কুলে
১০ বছর চাকরি করার পর একজন শিক্ষক গড়ে কত অর্থ সঞ্চয় করেন ? হয়তাে
১ লাখ বা ২ লাখ রুপি । এখনকার একজন সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ১০ বছর কাজ করে গড়ে কত অর্থ জমাতে পারেন না..?
হয়তাে ৪০ বা ৫০ লাখ রুপি । একজন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ,১০ বছর দুর্নীতি করে
৩০ থেকে ৪০ কোটি রুপি জমাতে পারেন । এবার ভাবুন , একজন বিখ্যাত ভণ্ড সাধু ; যিনি শুধু মানুষকে দেখানাের জন্য এরকম গেরুয়া পােশাক পড়েন ( আমি আমার গেরুয়া রঙের জামাটা দেখিয়ে বললাম ) তিনি ১০ বছরে কত অর্থ জমাতে পারেন ? মাত্র কয়েকশ কোটি রুপি । ” কৌতুকটা শুনে অনেকেই মুখ চেপে হাসছিল , আর ভাবছিল আমি বােধহয় কোনাে সাধুকে ইঙ্গিত করে কৌতুকটা বলেছি কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমি নির্দিষ্ট কারাে কথা চিন্তা করে এটি বলিনি কৌতুক শেষে আমি মজা করে বললাম , “ এবার ভেবে দেখাে , কোন পেশায় যাবে । ” একথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাে । কয়েকজন তাে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিচ্ছিল । ওদের হাসির শব্দ মার্বেল পাথরের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল ভিডিও ক্লিপটা এখানেই শেষ।প্রথমে আমার খুব ভালাে লাগলাে এটা ভেবে যে , মানুষ আমার কথা পছন্দ করছে । মানুষের স্বভাবই এমন যে , অন্যকে আনন্দ দিতে পারলে নিজেও আনন্দিত হয় । কিন্তু যখন আমি ম্যাসেজগুলাে একের পর এক দেখতে লাগলাম , তখন বুঝতে পারলাম , এই বিষয়ে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে । একজন লিখেছে , “ আপনি নিজে একজন গেরুয়া পরিহিত সাধু হয়ে কীভাবে ভারতের অন্যান্য বিখ্যাত গুরুর সম্পর্কে এমন মানহানিকর মন্তব্য করেন ।
” আরেকজন লিখেছে “ আপনার এধরনের বক্তব্য অপরাধমূলক ও আপত্তিকর বলে আমি মনে করি । ” এ কেমন অবিচার ? আমার বিশাল আলােচনার একটি অংশকে ব্যবহার করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে ।
মানুষ তার অর্জিত জ্ঞানকে পেশাগত জীবনে শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য কীভাবে ব্যবহার করে , এ বিষয়টি বােঝানাের জন্যই আমি এ কৌতুকটি বলেছিলাম । আমি আমার শ্রোতাদের আনন্দ দানের মাধ্যমে কিছু শেখাতে পছন্দ , বটে ; কিন্তু সর্বোপরি আমি একজন সাধু , কোনো কমেডিয়ান নাই ।
0 Comments