ধারাবাহিক শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা। ♥ পর্ব - ৬ ♥ আজকের লীলা "পুরী-ধামের বর্ননা"

ধারাবাহিক শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা।
 পর্ব - ৬ 
আজকের লীলা "পুরী-ধামের বর্ননা"




স্কন্দপুরানে (উৎকলখন্ড) উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ জগন্নাথ পুরীর পরিধি ১০ যোজন (৮০ মাইল বা ১২৮ কিঃমিঃ) অবধি বিস্তৃত এবং বালুকাময় ভূভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ স্থান উড়্রদেশ বা উড়িষ্যা নামেও খ্যাত। শাস্ত্রে উৎকল দেশকে এ গ্রহের পবিত্রতম স্থান বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ব্রহ্মান্ড পুরাণে বলা হয়েছেঃ
বর্ষাণাং ভারতশ্রেষ্ঠঃ দেশানাং উৎকলঃ স্মৃতঃ।
উৎকলস্য সমদেশো দেশো নাস্তি মহীতলে।।
অর্থাৎ “সমস্ত বর্ষসমূহের মধ্যে ভারতবর্ষ শ্রেষ্ঠ। সমস্ত দেশের মধ্যে উৎকল দেশ বা উড়িষ্যা শ্রেষ্ঠ। এই গ্রহে উৎকল দেশ বা উড়িষ্যার মতো অন্য কোনো দেশ নেই।"
উড়িষ্যার পুরী-ধামঃ- উৎকল নামে খ্যাত। এটি রুশিকুল্য নদী ও মহানদীর মধ্যবর্তী প্রদেশে অবস্থিত পূর্বে এটি উৎকল নামে পরিচিত ছিল।
স্কন্দপুরাণে উৎকল প্রদেশের মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। ঐ পুরাণ অনুসারে, দক্ষিণ মহাসাগরের তটদেশে স্থিত উৎকল পরম পবিত্রকারী স্থান।সমগ্র রাজ্য জুড়ে বহু মন্দির ও তীর্থ বিরাজিত।উৎকল দেশে বসবাসকারী জনগন সদাচারে দৃষ্টান্তস্থানীয়।
সেখানকার ব্রাক্ষণগণ সর্বদাই শাস্ত্র অধ্যায়ণ ও যজ্ঞ সমাদানে নিরত। সৃষ্টির শুরুতে যজ্ঞকর্ম ও বেদপাঠ উৎকল হতে উদ্ভ’দ হয়েছিল। এই প্রদেশে অষ্টাদশ বিদ্যার মহাসাগর স্বরুপ বলে বিবেচিত। শ্রীনারায়নের আজ্ঞায় উড়িষ্যার প্রতি গৃহে লক্ষীদেবী বিরাজ করেন। এই রাজ্যের জনগন অত্যন্ত বিনীত ও স্বভাবগত ভাবে লজ্জায়ন। তাঁরা রোগ-ব্যাধি ও মনোবিকার হতে মুক্ত। তাঁরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের পিতামাতার সেবা করে থাকেন।
তাঁরা অত্যন্ত সত্য পরায়ণ এবং বিষ্ণুর প্রতি ভক্তিমান। উৎকলের মানুষ অপরকে সহ্য করাও নানা কল্যান মূলক র্কম করে তৃপ্তি লাভ করেন। লোভ, দৃষ্টিভাব ও প্রতারণা সেখানে অনুপস্থি। একসময় উৎকলের জনগন ভগবৎ-কৃপায় অত্যান্ত দীর্ঘায়ু ছিল। নারীগণ ছিল পতিনিষ্ঠ, ক্ষত্রিয়গণ সাধারণ মানুষকে রক্ষারুপ স্বর্ধম আচারণ সর্বদা নিয়োজিত থাকতেন। তারা অত্যন্ত দানব্রতশীল ও যুদ্ধে পারদর্শী ছিলেন তারা প্রচুর যজ্ঞের আয়োজন করতেন এবং এ জন্য প্রচুর দক্ষিণা প্রদান করতেন।
যখন উৎকলদেশের এই রকম ক্ষত্রিয়ের গৃহে কোন অতিথিদের সমাগম হত, তাঁরা সেই অতিথিদেরকে তাদের আশাতীত বহু বহু উপকারে পরিতুষ্ট করতেন। বৈশ্যগণ কৃষিকর্মে, গোরক্ষা ও বাণিজ্য সুন্দরভাবে নিয়োজিত থাকতেন। তাঁরা তাদের ভক্তি ও ঐশ্বর্যের দ্বারা সর্বদা ভগবান, গুরুদেব ও ব্রাক্ষণগণের সেবা করতেন। কোনও ভিখারী উৎকলের কোনও বৈশ্যের গৃহে গেলে সে এত ভিক্ষা পেত যে তাঁর আর অন্যের গৃহে যাবার প্রয়োজন হত না।
উৎকলের শুদ্রগণ গীতবাদ্য, কলাবিদ্যা ও শিল্পকর্মে অত্যন্ত সুনিপণ ছিল। তাঁরা অত্যন্ত বাগ্নী, সুবক্তা ছিল। তাঁরা ছিল ধার্মিক ও দান পরায়ণ এবং সর্বদাই তাদের কায়িক শ্রম, মন, বাক্য এবং ধনসম্পদ দ্বারা তাঁরা ব্রাক্ষণগণের সেবা করত। এমনকি বর্ণসংকর গণও তাঁদের পদমর্যাদা অনুসারে ধর্মাচরণ করত। পূর্বে, বড় ঋতুর পর্যায়ক্রমিক আবির্ভাব ক্ষেত্রে কোন অসামঞ্জস্য ঘটত না। অসময়ে বৃষ্টিপাত হত না। বৃষ্টির জলে বা প্লাবনে কখনো শস্যাদি নষ্ট হত না। বায়ু কখনো মানুষকে নির্যাতন করত না এবং কেউই ক্ষুধায় কষ্ট পেত না। পৃথিবীতে যা কিছু পাওয়া যায় উৎকলে তা সবই সুপ্রাপ্য ছিল।

Post a Comment

0 Comments