এক মহান কৃষ্ণ ভক্তের অলৌকিক ঘটনা
একজন অশিক্ষিত দরিদ্র কৃষ্ণ ভক্ত কৃষক ছিলেন। তিনি শাস্ত্র জানেন না, পূজা কিভাবে করতে হয় তাও জানেন না। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন শ্রীকৃষ্ণ আসবে একদিন তার কাছে।
ছোটবেলা হতেই তার এই বিশ্বাস শ্রীকৃষ্ণ তার কাছে আসবেন। কিন্তু কি করবো? কি করলে অথবা কিসে তিনি সন্তুষ্ট হবেন?
একদিন জমানো সব টাকা এবং জমি বিক্রি করে সেই দিয়ে একটি সাদা গাভী ক্রয় করে নিয়ে আসে। এই ভেবে যে শ্রীকৃষ্ণ দুধ খেতে খুব পছন্দ করেন। তাই আমার এই গাভীর দুধ শ্রীগোবিন্দ তৃপ্তি সহকারে সেবা করবেন।
লোকটি খুব সুন্দর করে গাভীকে প্রতিদিন স্নান করাতো। গাভীর ঘরটা তার থাকার ঘরের চেয়েও সুন্দর করে স্থাপন করে। সারাদিন যে গাভীর যত্নেই দিনাতিপাত করে। কারণ যাতে শ্রীকৃষ্ণ এসে তৃপ্তি সহকারে দুধ খেতে পারেন (উল্লেখ্য সব কাজ কর্ম বাদ দিয়ে এমনকি না খেয়েও থাকতো)। ঘাস এবং বিভিন্ন খাদ্য খাওয়াতো গাভীটিকে যাতে বেশি বেশি দুধ হয়।
এভাবে কয়েক বছর কেটে গেল। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ আসে না। এদিকে কৃষক এর অনুরাগ আরোও বেড়ে গেল শ্রীকৃষ্ণ এর প্রতি।
শ্রীকৃষ্ণ বিরহে সে যেন পাথর হয়ে গেছে। কয়েকদিন যাবৎ সে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
গাভীর যত্ন নিতে পারছে না। গাভীকে খাদ্য দিতে পারছে না।
কৃষক চিন্তিত এর মধ্যে যদি শ্রীকৃষ্ণ এসে ফিরে যায়। তিনি একটি লাঠিতে ভর দিয়ে গোশালায় গেলেন।
গিয়ে দেখলেন দুধের পাত্রে দুধ দোয়ানো। গাভীকে কে যেন স্নান করিয়ে দিয়েছে। গাভীর পাত্রে খাদ্য পরিপূর্ণ।
তিনি অবাক হলেন কে এই সব করলো? একটু সামনে এগিয়ে দেখে একজন 12-14 বছরের বালক গোশালার ভেতরে বসে বসে দুধ খাচ্ছে।
তিনি বালকটির বিবরণ এভাবে দেয় :::
......: সে ছিল খুবই সুদর্শন এবং আকর্ষণীয়, মাথায় ছিল পাগরী বাঁধা, পরনে ছিল ধুতি, হাতে বালা, এবং তার কথা যেন মন কেড়ে নেয়।
কৃষক জিজ্ঞেস করলো তুমি কে? আর আমার গাভীর দুধ কেন খাচ্ছ? আর এই কাজগুলো কে করেছে?
বালকটি উত্তর দিল, মহাশয় ' আমি তো এই পথ ধরেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ শব্দ শুনি বৃষ্টির। তবে বৃষ্টি তো হচ্ছে না তাহলে এ রকম শব্দ আসছে কোথা থেকে। একটু এগিয়ে এসে দেখলাম গাভীর স্তন থেকে দুধ পড়ছে। ভাবলাম হয়তো বাছুর নেই তাই দুধ কেউ পান করছে না। তাই ভাবলাম আমিই খাই। আমার খুব ক্ষুধা লেগেছিল। তারপর ভাবলাম যেহেতু গাভীটি আমার ক্ষুধা নিবারণ করেছে তাই এর কিছু যত্ন নিই। আমি কি কোন ভুল করেছি মহাশয়?
কৃষক বললো না তুমি ঠিক করেছো তবে ঘরের কাউকে বিষয়টা বলা উচিত ছিল।
বালকটি উত্তর দিল, একবার ভাবছিলাম বলবো, পরে ভেবে দেখলাম বললে হয়তো আমি এত তৃপ্তি সহকারে দুধ খেতে পারতাম না তাই।
এভাবে কথা বলতে বলতে কৃষক যেন সুস্থ হয়ে উঠলো। বালকটি বললো মহাশয় আমি এখন যাই, আমাকে অনেক দূরে যেতে হবে। কিন্তু কৃষক তাকে যেতে দিবে না।
তুমি এত কষ্ট করেছো যাইহোক তুমি আজ আমার কাছে থাকবে আমি রান্না করবো তুমি খাবে তারপর চলে যেও। বালকটি বললো আপনি অসুস্থ কিভাবে রান্না করবেন? আমি রান্না করতে জানি। আমি রান্না করবো তারপর দুজনে খাব। কৃষক তাকে চাল, ডাল, আলু, কাঁচকলা, পেঁপে ,দুধ, চিনি দিল।
এইগুলো দিয়ে বালকটি খুব সুস্বাদু প্রসাদ রান্না করে। যা খাওয়ার পরে কৃষক বললো, তুমি কে? এত সুস্বাদু খাবার কি পৃথিবীর লোক রান্না করতে পারে? এই কথা বলে যেন সে আবার সব ভুলে গেল। ভগবান এবং ভক্ত একসাথে খেল। এরপর বালকটি রাতেই চলে গেল। কৃষক অনুভব করলো বালকটির সাথে যেন তার যেন জন্মজন্মান্তের সম্পর্ক।। কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারলো না।।
যাইহোক সকাল বেলা কৃষক ভাত খাবে।। সে ভাতের পাতিলের কাছে গেল এবং ঢাকনা উঠাতেই দেখলো স্বর্ণালাঙ্কারে পাতিল ভর্তি।।
কৃষকের আর বুঝতে বাকি রইলো না তার প্রাণনাথ শ্রীকৃষ্ণ এসেছিলেন তার কাছে। সে নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকলো আমি তোমাকে চিনতে পারলাম না।। আমি এই মণিমানিক্য চাই না।
আমি তোমাকে দর্শন করতে চেয়েছি শুধু। । এভাবে বিলাপ করতে করতে সে পাতিলসহ স্বর্ণ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।।। এরপর আর সে ভগবানের দর্শন পায়নি।।
জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত সে শ্রীকৃষ্ণ বিরহে দিনাতিপাত করেছে।
এভাবেই ভগবান তার ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে। কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারি না।
আমি ভক্তের ভার বহন করি। এখানে ভগবান তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না কখনোই।
হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধো দীনবন্ধো জগৎপতে। গোপেশ গোপিকাকান্ত রাধাকান্ত নমোহস্তু তে।।
অনুবাদ:
হে আমার প্রিয় কৃষ্ণ, তুমি করুণার সিন্ধু, তুমি দীনের বন্ধু, তুমি সমস্ত জগতের পতি, তুমি গোপিকাদের ঈশ্বর এবং শ্রীমতি রাধারাণীর প্রেমাস্পদ, আমি তোমার শ্রীপাদপদ্মে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
0 Comments