*•¤☆꧁শ্রীবৃন্দাদেবীর আবির্ভাব꧂☆¤•*

꧁শ্রীবৃন্দাদেবীর আবির্ভাব꧂




☆কলিযুগে"ধর্ম"একপাদ, ও শেষে একেবারেই ক্ষয়প্রাপ্ত হবে কেন?

শ্রীমতী বৃন্দাদেবীর আবির্ভাব সম্পর্কৈ শ্রীশ্রীব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে "শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ডে" ষড়শীতিতম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের কাছে নন্দ মহারাজ কেদার কন্যা বৃন্দার বিস্তারিত বিবরণ জানতে চাইলে বৃন্দার আবির্ভাব সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ বর্ণনা করেন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন- "হে পিতঃ! সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মার সায়ম্ভুব নামে এক পুত্র হয়। সায়ম্ভুবের স্ত্রীর নাম শতরূপা।সায়ম্ভুব-শতরূপার প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ নামে দুই পুত্র হয়।উত্তানপাদের পুত্র ধ্রুব।ধ্রুব মহারাজের পুত্র নন্দ সাবর্ণি, তাঁর পুত্র কেদাররাজ।

এই মহা যশস্বী কেদার রাজ পরম বিষ্ণুভক্ত ও সপ্তদ্বীপের অধিপতি ছিলেন।তাঁকে রক্ষা করার জন্য সুদর্শন চক্র তাঁর রাজসভায় অবস্থান করত। স্বয়ং বরুণদেব কেদাররাজকে নয় লক্ষ গাভী, লক্ষ সুবর্ণ, সর্ব শস্যাবৃত্ত উত্তম ভূমি,লক্ষ অশ্ব,লক্ষ হস্তি, উত্তম মণি-মুক্তা-হীরক ইত্যাদি যাবতীয় উত্তম বস্তু প্রদান করেছিলেন। কেদাররাজ প্রত্যহ লক্ষ লক্ষ ব্রাহ্মণকে সুবর্ণ পাত্রে পান-ভোজনাদি প্রদান করতেন,এবং ঐ সঙ্গে স্বর্ণনির্মিত যজ্ঞ সূত্র ও উত্তম অঙ্গুরীয়, রত্ন নির্মিত আসন প্রদান করতেন।অন্যান্য জনসাধারণকে প্রার্থনা অনুযায়ী তাদের অভিলাষ পূর্ণ করতেন। প্রতিদিন প্রাতঃকাল হতে আরম্ভ করে সন্ধ্যাকাল পর্যন্ত ভোজন ও ধনাদি দান চলত।ফলমূল ভোজী জিতেন্দ্রিয় ও বিষ্ণুভক্ত রাজা কেদার সবকিছুই ভগবানে সমর্পণ করে দিবারাত্র কেবল ভগবানেরই নাম জপ করতেন।
বিষ্ণুভক্ত কেদাররাজ একসময় ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে যজ্ঞ সম্পাদন করেছিলেন। সেই যজ্ঞ হতে-

"কমলা কলয়া জাতা যজ্ঞ কুণ্ডসমুদ্ভবা।
বহ্নিশুদ্ধাং শুকধানা রত্ন ভূষণ ভুষিতা॥"
অর্থাৎ কেদার রাজের যজ্ঞকুণ্ড থেকে কমলা লক্ষ্মীর অংশে জাতা এক বহ্নি-শুদ্ধ-বস্ত্র পরিহিতা রত্নভূষণ সমুহে বিভুষিতা এক কন্যা আবির্ভূতা হন।সেই কন্যা আবির্ভূতা হয়ে কেদাররাজকে বললেন,--হে মহারাজ!যজ্ঞকুণ্ড থেকে আবির্ভূতা আমি আপনার কন্যা। রাজা কেদার সেই কন্যাকে পূজা করে পত্নিকে প্রদান করলেন এবং সেখানেই অবস্থান করতে লাগলেন। সেই কন্যা পিতামাতাকে বিনয় সহকারে ভক্তি করে তাদের অনুমতি নিয়ে তপস্যা করার জন্য যমুনা নদীর তীরবর্তী এক রমনীয় পুষ্পবণে গমন করলেন। কেদাররাজের এই কন্যার নাম 'বৃন্দা'। যেহেতু তাঁর তপস্যার বন, সেই হেতু যমুনা তীরবর্তী ঐ বনের নাম ("বৃন্দাবন")।কেদার কন্যা বৃন্দা ঐ বনে বহুকাল যাবৎ তপস্যায় মগ্ন ছিলেন। একসময় ব্রহ্মা তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর তপস্যার স্থান বৃন্দাবনে আগমন করলেন।বৃন্দা বরনীয় ভগবানকে পতিরূপে লাভ করার বর প্রার্থনা করলেন। ব্রহ্মা তখন বৃন্দাকে এই বর প্রদান করলেন যে,-তুমি শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করবে। তদানন্তর একসময় সতী বৃন্দাদেবী রত্নাভরণে বিভূষিতা হয়ে বসন্তকালে যমুনা নদীর তীরে ঈষৎ হাস্য বদনে পুষ্প শয্যায় শয়ন করে অবস্থান করছিলেন।এদিকে ব্রহ্মা সাধ্বী মনোহরা সেই বৃন্দাকে পরীক্ষা করার জন্য পরম মনোহর ধর্মকে তাঁর নিকট প্রেরণ করলেন। তখন বৃন্দা সেই নির্জন স্থানে চন্দন চর্চিত, রত্নে বিভুষিত এক অতি উত্তম যুবক পুরুষকে দর্শন করলেন।বৃন্দা তাকে দেখে ভক্তি সহকারে পূজা করে তাকে প্রণাম করলেন।তারপর সুমিষ্ট ফলমুলাদি তাকে প্রদান করে ভোজন করালেন। বিপ্ররূপী ধর্ম আনন্দিত হয়ে বৃন্দার পূজা গ্রহণ করে কামুকী রমণীগণের অভিলষিত কিন্তু সতী সাধ্বী রমনীগণের অসহনীয় বাক্য বলতে লাগলেন।

ধর্ম বলতে লাগলেন,-"হে মনোহরে! তোমার নাম কি?কার কন্যা তুমি?এই নির্জন বনে তুমি কি কর? তোমার অভিলাষ কি? তোমার মনোবাঞ্ছিত বর আমার নিকট প্রার্থনা কর।"

বৃন্দা বললেন,--"হে ব্রাহ্মণ! আমি কেদার রাজকন্যা বৃন্দা।এই নির্জন বনে আমি শ্রীহরিকে লাভ করার জন্য তপস্যা করছি।'শ্রীহরি আমার পতি হোন'-এই বাঞ্ছিত বর প্রদানে আপনি যদি সমর্থ হন তবে আমাকে বর প্রদান করুন।আর যদি অসমর্থ হন তবে অন্য প্রশ্ন না করে স্বস্থানে গমন করুন।বিপ্ররূপী ধর্ম বললেন যিনি ভক্তগণকে অনুগ্রহ করার জন্য মূর্ত্তি পরিগ্রহ করেন তিনি লক্ষ্মী ও সরস্বতী ব্যতীত অন্য কোন্ রমনী তাঁকে পতিরূপে লাভ করতে সমর্থ হবে? যিনি দ্বিভুজ কিশোর সেই শ্রীহরি বংশীবদন কৃষ্ণ রাধাপতি নিত্য গোলকে অবস্থান করেন। ব্রহ্মা সেই কৃষ্ণকে জন্মে জন্মে ভজনা করেও যথার্থরূপে জ্ঞাত হতে পারেননি। মৃত্যুঞ্জয় শিব পঞ্চবদনে যাঁর স্তব করেও জানতে পারেননি, সেখানে অন্য কে তাকে জানতে পারবে?দেবী দুর্গা,বসুন্ধরা,গজানন,ষড়ানন,মুনিগণও তাঁকে ভজনা করে জানতে পারেন নি!হে কল্যাণী! তুমি সেই শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করতে বাসনা করছ? শ্রীকৃষ্ণ একমাত্র রাধিকারই লভ্য,অন্য কারও কদাচ লভ্য নহেন।"

হে সুবদনে! আমি দেবগণ ও দৈত্যগণ হতেও অধিক বলশালী এবং নৃপগণের ঈশ্বর। অতএব, তুমি আমাকে পতিরূপে বরণ কর। ত্রিলোক মধ্যে যতকিছু বস্তু আছে, সেই সমস্ত সুখকর বস্তু আমার করুণায় উপভোগ করতে পারবে।তুমি আমার সাথে অতি রমনীয় স্থানে গমন করে বিহার কর,তোমার কল্যাণ হবে। এভাবে শ্রীকৃষ্ণ নন্দ মহারাজের কাছে বর্ণনা করলেন।বিপ্ররূপী ধর্ম বৃন্দাকে পরীক্ষা করতে গিয়ে কি সংঘটিত হল সে সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ নন্দ মহারাজকে বললেন,-
শ্রীভগবানুবাচ-
"ইত্যেবমুক্ত্বা সম্ভোক্তুং গচ্ছন্তং ত্বং ছলেন চ।
ন বাস্তবং পরীক্ষার্থং সতীত্বং বোধিতুং ব্রজ॥"
শ্রীভগবান বললেন- "হে পিতঃ ব্রজরাজ!এরূপ কথা বলে সেই বিপ্ররূপী ধর্ম(বাস্তবে সত্য নয় ছল করে) কেদার কন্যা বৃন্দার সতীত্ব বোঝার জন্য এবং তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য বৃন্দাকে সম্ভোগ করতে উদ্যত হলেন। এরূপ অবস্থা দেখে বৃন্দার বদন ও নয়ন ক্রোধে রক্তবর্ণ হল,বিপ্ররূপী ধর্মকে লোকহিতকর ও যোগযুক্ত বাক্য বললেন-
শ্রীবৃন্দোবাচ-
ধৈর্যং কুরু মহাভাগ শ্রেষ্ঠ জাতিষু ব্রাহ্মণঃ।
ব্রাহ্মণানাং তপোমূলং সত্যং বেদো ব্রতং ধৃতিঃ॥
পরস্ত্রী সহ সম্ভোগঃ স্বভাবশ্চাপ্য ধর্মিনাম।
পতি ব্রতানাং গমনে বলৎকারেন নিশ্চিতম্॥
মাতৃগামী ভবেৎ সদ্যো ব্রহ্মহত্যাশতং ভবেৎ।
কুম্ভীপাকে পচ্যতে চ যাবচ্চন্দ্র দিবাকরৌ॥
তাড়িতো যমদূতশ্চৈ লৌহদণ্ডেন মুর্ধনি।
ক্ষণং সুখং চিরদুঃখং সর্বনাশস্য কারণম্॥"

"শ্রী বৃন্দা বললেন--হে মহাভাগ! আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। আপনি শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ, তপস্যা, সত্য, ব্রত- এ সকলই ব্রাহ্মণের প্রকৃত ধর্ম। অধার্মিক পুরুষই পরস্ত্রী সম্ভোগ করে এবং পরে সমূলে বিনাশ প্রাপ্ত হয়। যে ব্যক্তি বলপূর্বক পতিব্রতা স্ত্রী গমন করে, সে ব্যক্তি মাতৃগামী হয়, এবং শত ব্রহ্ম হত্যার পাপভাগী হয়। সে চন্দ্র ও সূর্যের অবস্থিতি কাল পর্যন্ত কুম্ভীপাক নরক যন্ত্রণা ভোগ করে। যমদূত গরম লৌহ দণ্ডের দ্বারা তার মস্তকে আঘাত করে। সুতরাং পতিব্রতা গমণে ক্ষণিক সুখ দান করে বটে,চিরকাল দুঃখ ও সর্বনাশের কারণ হয়ে থাকে।
তুমি নির্জন স্থান দেখে আমাকে বল-পূর্বক গ্রহণ করতে উদ্যত হয়েছ, কিন্তু হে ব্রাহ্মণ!এখানেই সমস্ত দেবগণ ও লোকপালগণ অবস্থান করছেন। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ আত্মারূপে, শিব-জ্ঞান রূপে, দুর্গা-বুদ্ধি রূপে, ব্রহ্মা মন-রূপে,দেবগণ ইন্দ্রিয়-বর্গ রূপে সকল প্রাণীতে সাক্ষী হয়ে বিরাজ করছেন। সুতরাং হে জ্ঞানহীন ব্রাহ্মণ!--গুপ্ত স্থান বা নির্জন স্থান কোথায়? তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও স্বস্থানে গমন কর। তোমার কল্যাণ হোক! ব্রাহ্মণ অবধ্য, অন্যথায় আমি তোমাকে ভর্ৎসনা করতে সমর্থ। বৎস! তুমি যথাসুখে স্বস্থানে গমন কর।"
এভাবে বৃন্দাদেবী অনেক নীতি-পূর্ণ উপদেশ প্রদান করে আরও গভীর সতর্কবাণী প্রদান করলেন।
বৃন্দোবাচ-

"তপস্যাসু মম গতমষ্টোত্তর শতং যুগম্।
নাস্তি গোত্রং মৎপিতশ্চু ন মাতা, ন পিতা মম॥
সর্বান্তরাত্মা ভগবান কৃষ্ণ রক্ষতি মাং দ্বিজ।
কৃষ্ণেন স্থাপিতো ধর্ম মাঞ্চ রক্ষতি নিত্যশঃ॥
আদিত্যশ্চ তথা চন্দ্রঃ পবনশ্চ হুতাশনঃ।
ব্রহ্মা শম্ভু ভগবতী দুর্গা রক্ষতি মাংস সদা।
মা মাতরং পরিত্যজ্য গচ্ছ বৎস যথাসুখম্॥

শ্রীবৃন্দা বললেন--"এখানে তপস্যায় আমার অষ্টোত্তর শত(১০৮) যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে, আমার পিতার গোত্রের কোন ব্যক্তি নেই, আমার মাতা পিতাও বর্তমান নেই। হে দ্বিজ! সর্বপ্রাণীর অন্তরাত্মা স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাকে নিরন্তর রক্ষা করেন। আর শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক স্থাপিত ধর্মও আমাকে রক্ষা করছেন। চন্দ্র,সূর্য, বায়ু, অগ্নি, ব্রহ্মা, শিব-দূর্গা আমাকে নিরন্তর রক্ষা করছেন। অতএব হে বৎস! মাতৃরূপা আমাকে ত্যাগ করে তুমি যথাসুখে অন্যত্র গমন কর, তোমার মঙ্গল হোক!"
শ্রীবৃন্দাদেবীর নীতিপূর্ণ বাক্য শ্রবণ করেও বিপ্ররূপী ছদ্মবেশী 'ধর্ম' অন্যত্র গমন করলেন না। বরং বৃন্দাকে গ্রহণ করার জন্য তাঁর সন্নিকটে গমন করতে লাগলেন। তখন সেই বৃন্দাদেবী ক্রোধান্বিত হয়ে ধর্মকে অভিশাপ দান করতঃ বললেন--
"শশাপেতি চ সা কোপাদ্ ব্রহ্মবন্ধো ক্ষয়ভব। ক্ষয়ো ভব দুরাচার হে পাপীষ্ঠ ক্ষয়ো ভব॥"
হে নীচাশয় ব্রাহ্মণ! তোমার ক্ষয় হোক। হে পাপীষ্ঠ! তোমার ক্ষয় হোক!--এভাবে "ক্ষয় হোক"--শাপবাণী তিনবার উচ্চারণ করলেন। পুণরায় শাপ দান করতে উদ্যতা হলে সূর্যদেব এসে তাঁকে নিবারণ করলেন। এ সময় ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবাদি অন্যান্য দেবগণ আগমন করলেন। বৃন্দার শাপে ক্ষয়গ্রস্থ হয়ে অমাবস্যার ভীত চন্দ্রের ন্যায় কলারূপে(১৬ ভাগের এক ভাগ) অতি কৃশ, দগ্ধ ও মলিন হয়ে বিপ্ররূপী ধর্ম নিশ্চেষ্ট হলেন। সেই সময়ে বিষ্ণু বললেন--"হে জন্ম-মৃত্যু-জরাহরণকারিনী বৃন্দে! তুমি আমার ভক্ত ধর্মকে জীবিত করে রক্ষা কর।
ব্রহ্মা বললেন--হে বৃন্দে ! ধর্ম ব্যতীত জগৎ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। চন্দ্র, সূর্য, অনন্ত ও বসুন্ধরা কম্পিত হচ্ছে। তুমি ধর্মকে রক্ষা কর।
শিব বললেন--ধর্ম ছাড়া সমস্ত জগৎ বিনষ্ট হবে।ধর্মকে তুমি রক্ষা কর।
সূর্য বললেন--হে দেবী! তুমি ক্ষীণ ধর্মকে জীবিত করে সৃষ্টি রক্ষা কর।
এভাবে ইন্দ্র,অনন্ত,বরুণ,পবন প্রমুখ দেবতাগণ ধর্মকে জীবনদানের জন্য বৃন্দাকে অনুরোধ করলেন। দেবগণের এই প্রকার অনুরোধ শুনে তপস্বিনী বৃন্দা গাত্রত্থান পূর্বক প্রণাম করে দেবগণকে বলতে লাগলেন।
শ্রীবৃন্দাদেবী বললেন-হে দেবগণ! ধর্ম যে ব্রাহ্মণ রূপ ধারণ করে আমাকে পরীক্ষার জন্য এসেছে তা আমি জানতে পারিনি। আমাকে গ্রহণ করতে উদ্যত হলে আমি কোপ বশতঃ তার ক্ষয় সাধন করেছি। আমি আপনাদের কৃপা প্রসাদে অবশ্যই ধর্মকে রক্ষা করব। এই কথা বলে বৃন্দাদেবী পুনরায় বলতে লাগলেন-

"তপঃ সত্যং যদি মম সত্যঞ্চ বিষ্ণুপুজনম্।
তেন পুণ্যেন সদ্যেঽত্র দ্বিজ ভবতু বিজ্বরঃ॥
যদি মেঽনশনং সত্যং ব্রত্যং সত্যং তপঃ শুচিঃ।
তেন পুণ্যেন সত্যেন দ্বিজো ভবতু বিজ্বরঃ॥
যদি নারায়ণঃ সত্যোঃ সর্বাত্মা নিত্য বিগ্রহঃ॥
জ্ঞানাত্মকঃ শিবঃ সত্যো দ্বিজ ভবতু বিজ্বরঃ॥"

"যদি আমার তপস্যা সত্য হয় এবং বিষ্ণু পূজন সত্য হয়,তবে সেই পূণ্যবলে এ স্থানে এই ব্রাহ্মণ রূপী ধর্ম পাপ জনিত ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়ায় সন্তাপ মুক্ত হোন। যদি আমার অনশন-উপবাস সত্য হয়, অন্যান্য ব্রতচারণ সত্য হয়, তপস্যা সত্য হয়, পবিত্রতা সত্য হয় তবে সেই পূণ্যবলে এই ব্রাহ্মণবেশী 'ধর্ম' নিশ্চিতই সন্তাপ মুক্ত হোন। যদি সর্বাত্মা নারায়ণ সত্য হয়, জ্ঞানাত্মক শিব সত্য হয়, এই ব্রাহ্মণ রূপী 'ধর্ম' মৎ-প্রদত্ত শাপমুক্তি বিষয়ে নিশ্চিত রূপে সন্তাপ মুক্ত হোন।
ইত্যবসরে ধর্মপত্নী মূর্তিদেবী আগমন করে শোকে ব্যাকুলা হয়ে ভূতলে পতিতা হলেন। মূর্তিদেবী শ্রীবিষ্ণুর পাদপদ্মে মস্তক স্থাপন করে বলতে লাগলেন-- "হে নাথ! হে করুণাময় জগন্নাথ! আমার প্রিয়তম পতিকে সত্বর জীবিত করুন। সতী নারীর একমাত্র পতিই গতি। একমাত্র পতিই সতীর অভিলষিত বস্তু দানে সমর্থ। হে দীনবন্ধো! আমার পতির প্রাণদান করুন।ভগবান বিষ্ণুর চরণকমলে এভাবে প্রার্থনা করে ধর্মপত্নী মূর্তিদেবী তথায় অবস্থান করে রোদন করতে লাগলেন।

শ্রীভগবান বললেন- "হে বৃন্দে! তুমি তপস্যা দ্বারা ব্রহ্মার আয়ু পরিমিত আয়ুলাভ করেছ। সেই আয়ু তুমি ধর্মকে প্রদান করে গোলকধামে গমন কর। তোমার এই তপস্যা দ্বারা তুমি পরে আমাকে নিশ্চিতরূপে প্রাপ্ত হবে। বরাহকল্পে তিনি গোলক বৃন্দাবন হতে এই ব্রজমণ্ডলে এসে জন্মলাভ করবে। রাসমণ্ডলে রাধিকা ও গোপীগণের সাথে আমাকে প্রাপ্ত হবে। ভগবান বিষ্ণুর কথা শ্রবণ করে বৃন্দা নিজের আয়ু ধর্মকে প্রদান করলেন। তখন তপ্ত স্বর্ণ বর্ণবিশিষ্ট পূর্ণ ধর্ম উত্থিত হলেন এবং পূর্ব হতেও সুন্দর রূপ ধারণ করে শ্রীমান ধর্ম বিষ্ণুকে প্রণাম করলেন।

শ্রীবৃন্দাদেবী বললেন--"হে দেবগণ! আমার বাক্য অলঙ্ঘনীয়, আপনারা সাবধানে আমার বাক্য শ্রবণ করুন। আপনারা অবগত হোন যে, আমার বাক্য কখনোই মিথ্যা হবে না। আমি ক্রোধান্বিত হয়ে তিনবার "ক্ষয়ো ভব"--বলে শাপোক্তি প্রদান করেছি। পুনরায় বলতে উদ্যতা হলে সূর্যদেব এসে আমাকে নিবারণ করেন। ধর্ম যেরূপে পূর্বে এবং এখন বিরাজিত আছেন, সেরূপে সত্যযুগে ইনি পরিপূর্ণরূপে বিরাজ করবেন।ত্রেতাযুগে তিনপাদ ও দ্বাপরে দ্বিপাদ রূপে অবস্থান করবেন। কলিযুগে ধর্ম একপাদে অবস্থান করবেন। কলির শেষে (ষোড়শাংশ) কলা (ষোলো ভাগের এক ভাগ)রূপে অবস্থান করবেন।

পুনরায় সত্যযুগ এলে পূর্ববৎ চারিপাদে অর্থাৎ পূর্ণরূপে অবস্থান করবেন। যেহেতু আমার মুখ হতে তিনবার ক্ষয় শব্দ নির্গত হয়েছে সেহেতু ক্রমানুসারে প্রতিযুগে একপাদ করে ধর্ম ক্ষয়প্রাপ্ত হবেন। পুনরায় চতুর্থবার ক্ষয়প্রাপ্তি রূপে শাপদানের কথা মনে উদিত হলে সূর্যদেব আমাকে নিবারণ করেন। সেই কারণে ধর্ম কলির শেষে কলাময় হবেন। পূর্বে আমার শাপদানের পর ধর্ম যেরূপ দুর্গম সঙ্কট কালে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছিলেন তেমনি কলির শেষেও ইনি নিশ্চিত ক্ষয়প্রাপ্ত হবেন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নন্দ মহারাজকে বললেন হে পিতঃ!এভাবে যখন বৃন্দা ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন তখন গোলক হতে এক অতীব সুন্দর ও শুভকর রথ এসে উপস্থিত হল। সমস্ত দেবগণ অপূর্ব সুন্দর রথ দর্শন করলেন।এই রথ মূল্যবান রত্ননির্মিত উৎকৃষ্ট বস্ত্র, পুষ্পাদি দ্বারা অপূর্ব রূপে সজ্জিত ছিল।শ্রীবৃন্দাদেবী বিষ্ণু-ব্রহ্মা ও শিবাদি দেবগণকে প্রণাম করে রথ দর্শন পূর্বক তাতে আরোহণ করে গোলক বৃন্দাবনে গমন করলেন। দেবগণ স্বস্থানে প্রস্থান করলেন। পরবর্তীতে এই মর্ত্যলোকে অপ্রাকৃত ব্রজভুমিতে বৃন্দাদেবী আবির্ভূত হয়ে রাধাকৃষ্ণের প্রেমময়ী লীলাবিলাসে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

জয় জয় বৃন্দাদেবী তুলসী
*••••••••┈┉━❀❈🙏🏻❈❀━┉┈••••••••*

Post a Comment

0 Comments