শ্রী_বিট্টলনাথজীর_কথা
পবিত্র শয়ন একাদশী। এই তিথিতে মহারাষ্ট্রের পান্ডারপুরে শ্রীবিট্ঠলনাথজী প্রকট হন। শ্রীবিট্ঠলনাথজী স্বয়ভু বিগ্রহ। তিনি স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। কারো দ্বারা প্রতিষ্ঠিত না। উনি সাক্ষাৎ ওখানে আছেন।
কেন কৃষ্ণের নাম বিট্ঠলনাথ হল? বিট্ঠলনাথজীকে আবার পণ্ডুরনাথ,শ্রীপুণ্ডরীকনাথজী, রামকৃষ্ণহরি, আরো অনেক নামে ডাকে ভক্তরা।
এই পান্ডুরপুরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এমন অপরূপ রূপে ভক্তদের দর্শন ও স্পর্শ প্রদান করে। আজ জানব কেন তিনি এখানে এই রূপে আছেন।
🌻মাতৃপিতৃ ভক্ত পুণ্ডরীককে দর্শন দিতে ভগবান আসলেন আর ভক্তের প্রার্থনাতে ওখানে অবিচল রূপে রয়ে গেলেন। ভগবান নাম হল শ্রীবিট্ঠলনাথজী/ শ্রীপুন্ডরীকনাথজী।
🌻শ্রীপুন্ডরীক নামে এক ব্যক্তির জন্ম ব্রাহ্মণ কুলে হয়েছিল। সব শাস্ত্রের তাঁর জ্ঞান ছিল। সাধনাতে বড় অভিরুচি ছিল। নিরন্তর জপ, তপ, তীর্থ পর্যটনে থাকতেন তিনি। একবার নিজের বৃদ্ধ মাতা পিতাকে ঘরে রেখে সপত্নীক তিনি তীর্থযাত্রা করতে চলে যান কাশীপুরীতে।
🌻 তারা এক পান্ডার ঘরে ছিলেন। সে পন্ডাজী বড় পিতৃ মাতৃ ভক্ত ছিলেন। রাত্রির সময় শ্রীপুন্ডরীকজী দেখলেন কিছু দিব্যস্বরূপ স্ত্রী পুরুষ সকলে ঐ পান্ডাজী ঘরে আসলেন। প্রথম সেই স্ত্রী পুরুষ সেই পান্ডাজীর দর্শন করলেন, তারপর সব লোক সেবাতে লেগে গেল। কেউ জল ছিটাতে লাগল, কেউ ঝাড়ু দিচ্ছিল, কেউ ঘটে জল ভরে আনছিল, কেউ অন্য কাজ করছিলেন। এসব দেখে পুন্ডরীকজী বড় আশ্চর্য হয়ে গেলেন। শেষে তিনি তাদের কাছে গিয়ে বিনম্রতাপূর্বক জিজ্ঞাসা করলেন----"আপনারা আমাকে যোগ্য মনে করলে কৃপা করে বলবেন এই দিব্যরূপধারী আপনারা কে? আর এত তেজস্বী হয়েও আপনারা এই সব কিঙ্করের মত সেবা করছেন কেন?"
🌻তখন সবাই নিজেদের পরিচয় দিলেন---"আমি গঙ্গা, আমি যমুনা, আমি সরস্বতী, আমি অমুক দেবী আর আমি অমুক দেব।" আমরা এই পাণ্ডাজীর মাতৃপিতৃ ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে আমরা ওনার দর্শন করতে আসি আর ওনার সেবা করে নিজেকে কৃতার্থ মনে করি।"
মাতা পিতার সেবার কী অদ্ভুত মহিমা!! এ দেখে শ্রীপুন্ডরীকজীর বড় আত্মগ্লানি হল, আমার একি ভুল হল দেখো, আমি আমার বৃদ্ধ পিতা মাতার সেবা ছেড়ে জপ, তপ, তীর্থ, যোগ যজ্ঞ করতে লাগলাম।"
🌻তখন পুন্ডরীকজী পান্ডাজীকে প্রণাম করলেন ঐ রাতে ঘরের জন্য প্রস্থান করলেন আর ঘরে এসে প্রাণপণে মাতা-পিতা সেবা করতে লাগলেন আর জপ তপ করতে লাগলেন। শ্রীপুন্ডরীকজী মাতৃপিতৃ ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে স্বয়ং ভগবান তাঁকে দর্শন দিতে এবং এমন পিতামাতার সেবককে দর্শন করতে তাঁর মনে ইচ্ছা হল।
🌻 সংযোগ হল ঐ দিনে শ্রীদ্বারিকাপুরীতে ভগবান শ্রীদ্বারকানাথ শ্রীকৃষ্ণের রাণীনিবাস কিছু কলহ হচ্ছিল,যাতে মহারাণী শ্রীরুক্মিণীজী শ্রীকৃষ্ণের উপর রাগ করলেন। কারণ শ্রীকৃষ্ণ আপনি কেন শ্রীসত্যভামাজীকে অধিক ভালবাসেন? তাই রুক্মিণীজী চুপিচুপি মহল ছেড়ে বনে চলে আসেন। রাগ ভাঙ্গাতে পরম প্রবীণ প্রভু যেমন তেমন করে রুক্মিণীজী রাগ ভাঙালেন আর বললেন, "দেখো ভাগ্যের ফল আমাদের, কিছু দূরে এক ভক্তরাজ থাকে, প্রথমে চলো আমরা তাকে দর্শন করি, তারপর দ্বারকা যাব। শ্রীরুক্মিনীজী আজ কলহকে শুভ মনে করলেন, কলহের কারণে আজ এক পরম ভক্তের দর্শন হবে তাই।
🌻তারপর শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিণী দুইজনে ভক্ত শ্রীপুন্ডরীকজী ঘরে পৌছালেন। ঐ সময় ভক্তজী একমনে মাতা পিতার সেবা করছিলেন। ভগবান পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন, আর বললেন--"পুণ্ডরীক, তোমার ভক্তিতে আজ আমি প্রসন্ন হয়ে তোমাকে দর্শন দিতে এলাম, আমাদের দর্শন করো।"
🌻 শ্রীপুন্ডরীকজী বললেন, "এখন আমি সেবাতে ব্যস্ত, কিছুক্ষণ আপনি অপেক্ষা করুন, আমি সেবা শেষ করে তারপর আপনাদের দর্শন করব।"
🌻 ভগবানকে বসার জন্য পিছনে একটা ইট এগিয়ে দিলেন পুন্ডরীকজী। শ্রীভগবান ইটের উপর দাঁড়িয়ে রইলেন । (শ্রীপুণ্ডরীকনাথ ভগবানের এক নাম হল ইট্টল হয়ে গেল। মহারাষ্ট্রের ভক্তদের পদে ইট্ঠল নাম আছে। এই ইট্ঠল শব্দ এখন বিট্ঠল রূপে প্রসিদ্ধ হল। কোন কোন ভাবে ভক্তরা "বিষ্ণু" কে জনভাষায় "বিঠু" রূপে আবার "বিট্ঠল" রূপ সম্বোধন করেন।
🌻মাতা পিতার সেবার শেষে ভক্ত পুণ্ডরীক ভগবানের শ্রীচরণকমলে প্রণাম করলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-রুক্মিণীজী ভক্তের মাথায় নিজ বরদহস্তকমল দিলেন আর মনের মত বর চাইতে বললেন। ভক্ত পুন্ডরীক তো ভগবানের দর্শন করে স্বয়ংকে কৃতার্থ মনে করতে লাগলেন।
🌻পরন্তু "সর্ব ভবন্তু সুখিনঃ।" সেই দিব্য ভাবনায় ভাবিত হয়ে তিনি বর চাইলেন, "প্রভু আপনি এই রূপ সদা এখানে বিরাজমান থাকেন। ভক্তরা আপনার দর্শন করে ধন্য হবে।"
ভক্তবৎসল ভগবান বললেন," এবমস্তু। তুমি যা চাও তাই হবে আমি এখানে সদা বিরাজমান থাকব।"
🌻আজ পর্যন্ত ইটের উপর দাঁড়িয়ে অসংখ্য অসংখ্য ভক্তদের নিজ মঙ্গলময় দর্শন দিয়ে পরমানন্দ প্রদান করেন।
🌻ভগবান শ্রীবিটঠলনাথজী কতখানি ভক্তবৎসল তাঁকে দর্শন করতে গেলে তার অনুভব হয়। জগন্নাথ পুরী বিখ্যাত মহাপ্রসাদের জন্য, রামেশ্বর বিখ্যাত শয়নারতি, ভগবান ওখানে স্নান করেন।
কোথাও শ্রীবিগ্রহ ভক্তরা স্পর্শ করে আনন্দ পায় না, দূর থেকে দর্শন হয় । বিট্ঠলনাথজী এমন দর্শন যতবার মন চাই ভক্তরা ততবার স্পর্শ করতে পারেন। যেন ভক্তদের স্পর্শ পাবে, ভালবাসা পেতে তিনি কোমড়ে হাত দিয়ে যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। ভক্তবৎসল কত তিনি তা কাছে না গেলে অনুভব হবে না।
🌻শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য পান্ডারপুরে আসেন বিঠ্ঠলদেব দর্শন করে, মায়াবাদ ভুলে গিয়ে পান্ডুরঙ্গা নামে সুন্দর স্তোত্র রচনা করেন।
🌻শ্রীবিল্বমঙ্গল ঠাকুর ভ্রমনকালে পান্ডারপুর আসেন। তীর্থযাত্রীরা সতর্ক করেন, ভীমা নদীর পারে হাটবেন না। কিন্তু সেখানে শ্রীবিল্বমঙ্গল ঠাকুর ভগবান এর উপস্থিতিতে বিঠ্ঠলদেবের দর্শন করেন।
🌻মহান আচার্য তুকারাম যিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিষ্য ছিলেন। তিনি ও বিঠ্ঠলদেবের অন্যতম ভক্ত ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন, "যারা এই শ্রী বিগ্রহ কে প্রতিষ্ঠিত বলবেন তাদের মুখ কৃমিতে পূর্ণ হবে"।
🌻শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জৈষ্ঠ ভ্রাতা 'বিশ্বরূপ' এই পান্ডারপুরে সিদ্ধি লাভ করে, চিন্ময় ধামে প্রবেশ করেন।
0 Comments