শ্রীল প্রভুপাদ ও হরে কৃষ্ণ আন্দোলন (ইসকন) সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্রের ভবিষ্যত বাণী (পর্ব ০১)

শ্রীল প্রভুপাদ ও হরে কৃষ্ণ আন্দোলন (ইসকন) সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্রের ভবিষ্যত বাণী (পর্ব ০১)



ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর লীলা সংবরণ করে গোলোক বৃন্দাবনে ফিরে যাচ্ছিলেন তখন ভাগীরথী গঙ্গা দেবী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আর্তি সহকারে প্রশ্ন করেছিলেন-

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণজন্ম খন্ড, ১২৯ অধ্যায়, গঙ্গাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বরদান অংশ থেকে উদ্ধৃত

ভাগীরথ্যুবাচ
হে নাথ রমণশ্রেষ্ঠ যাসি গোলোকমুত্তমম।
অস্মাকং কা গতির্নাথ ভবিষ্যতি কলৌ যুগে।। ৫০

অনুবাদ -
ভাগীরথী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, “হে নাথ! হে রমণশ্রেষ্ট! আপনি পরম উত্তম স্বীয় ধাম গোলোক বৃন্দাবনে ফিরে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে কলি যুগ আরম্ভ হবে। সেই কলুষিত যুগে আমার কি গতি হবে?“

এখানে গঙ্গা দেবী ভীত হয়েছিলেন কারণ কলিযুগে বহু পাপী ব্যক্তি তাঁর জলে স্নান করবে এবং তাদের সকল পাপ সেই পবিত্র নদীতে রেখে যাবে। এভাবে তিনি সকলের পাপভারে কলুষিত হয়ে যাবেন। তাই তিনি ভগবানকে এই প্রশ্ন করেছেন।

শ্রী ভগবান উবাচ
কলেঃ পঞ্চ সহস্রাণি বর্ষাণি তিষ্ঠ ভূতলে।
পাপানি পাপিনো যানি তুভ্যং দাস্যন্তি স্নানতঃ।। ৫১
মম্মন্ত্রোপাসকস্পর্শাদ্ভস্মীভূতানি তৎক্ষণাৎ।
ভবিষ্যন্তি দর্শনাচ্চ স্নানাদেব হি জাহ্নবি।। ৫২
হরের্নামানি যত্রৈব পুরাণানি ভবন্তি হি।
তত্র গত্বা সাবধানমাভিঃ সার্দ্ধঞ্চ শ্রোষ্যসি।। ৫৩

অনুবাদ -
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে গঙ্গে! তুমি পাঁচ হাজার বছর এই ভূতলে ধৈর্য সহকারে অবস্থান করো। পাপীরা তোমার জলে স্নান করার ফলে যে পাপ তোমাকে স্পর্শ করবে তা সেই সময় আমার মন্ত্র উপাসকদের অঙ্গ স্পর্শ মাত্রই তৎক্ষণাৎ ভস্মীভূত হয়ে যাবে। আমার নামরূপী মন্ত্র(হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র) উপাসকেরা ভবিষ্যতে তোমার জলে স্নান করার জন্য ও তোমাকে দর্শন করার জন্য আসবেন। হে জাহ্নবি! তাদের স্পর্শে তুমি পাপমুক্ত হবে। সেই সময় যেখানে যেখানে ভাগবত পুরাণাদি পাঠ হবে এবং হরিনাম কীর্তন হবে, তুমি সেখানে গিয়ে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে তা শ্রবণ করিও।

এখানে ৫২ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন যে, মৎ মন্ত্র উপাসক অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের নাম সমন্বিত মহামন্ত্র জপকারী ভক্তরা তাঁর অপ্রকটের ৫০০০ বছর পরে আবির্ভূত হবেন এবং গঙ্গা দেবীর ততদিত ধৈর্্য্য সহকারে অপেক্ষা করা উচিত।

পুরাণশ্রবণাচ্চৈব হরের্নামানুকীর্ত্তনাৎ।
ভস্মীভূতানি পাপানি ভবিষ্যন্তি ক্ষণেন চ।। ৫৪
যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যাদিকানি চ।
ভস্মীভূতানি তান্যেব বৈষ্ণবালিঙ্গনেন চ।। ৫৫
তৃণানি শুষ্ককাষ্ঠানি দহন্তি পাবকে যথা।
তথা হি বৈষ্ণালাপে পাপানি পাপিনামাপি।। ৫৬

অনুবাদ -
ভাগবত পুরাণাদি শ্রবণ ও হরিনাম কীর্তন শ্রবণের ফলে ভবিষ্যতে ক্ষণমধ্যে সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হয়ে যাবে। বৈষ্ণব ভক্তদের আলিঙ্গন করলে ব্রহ্মহত্যাসহ আরো যত পাপ রয়েছে তা সবই ভস্মীভূত হয়ে যায়। প্রজ্জ্বলিত আগুন যেমন শুষ্ক তৃণ ও শুষ্ক কাঠকে দহন করে তেমনই বৈষ্ণব ভক্তদের সাথে আলাপ করলে (তাদের কথা শ্রবণ করলে) পাপী ব্যক্তিদের পাপও ভস্মীভূত হয়ে যায়।

এখানে বিশ্বের প্রতিটি ইসকন মন্দিরে প্রতিদিন নিয়মিত ভাগবত পুরাণ পাঠ হয় এবং হরিনাম সংকীর্তন হয়। সেখানে বৈষ্ণব ভক্তদের সাথে আলোচনা করা যায়। এই সমস্ত বিষয় শ্রীকৃষ্ণের ভবিষ্যত বাণীর সাথে হবহু মিলে যাচ্ছে।

পৃথিব্যাং যানি তীর্থানি পূণ্যান্যপি চ জাহ্নবি।
মদ্ভক্তানাং শরীরেষু সন্তি পুতেষু সতন্তম।। ৫৭
মদ্ভক্তপাদরজসা সদ্যঃপূতা বসুন্ধরা।
সদ্যঃপূতানি তীর্থানি সদ্যঃপূতং জগৎ তথা।। ৫৮

অনুবাদ - হে জাহ্নবি! পৃথিবীতে যত পূণ্যময় তীর্থ স্থান রয়েছে আমার ভক্তদের দেহে সেইসব তীর্থ সর্বদাই বিদ্যমান থাকে। আমার ভক্তদের চরণের ধূলিতে এই পৃথিবী সদ্যই পবিত্র হয় এবং তীর্থসমূহ সদ্যই পবিত্র হয়ে সারা জগতকে পবিত্র করার শক্তি অর্জন করে।

তদুপস্পর্শমাত্রেণ পূতে বায়ুশ্চ পাবকঃ।
কলের্দশসহস্রাণি মদ্ভক্তাঃ সন্তি ভূতলে।। ৬০

অনুবাদ - আমার মন্ত্র উপাসক ভক্তদের দেহের সাথে যে বায়ুর স্পর্শ হয় সেই বায়ুও অত্যন্ত পবিত্র হয়ে যায়। কলিযুগে দশ হাজার বছর আমার ভক্তগণ এই ভূলোকে বিরাজ করবেন।

এখানে ইসকনের প্রতিষ্টাতা আচার্য শ্রীল এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদও বলেছেন যে, এই হরে কৃষ্ণ আন্দোলন এই জগতে আগামী ১০,০০০ বছর ধরে অবস্থান করবে।

একবর্ণা ভবিষ্যন্তি মদ্ভক্তেষু গতেষু চ।
মদ্ভক্তশূন্যা পৃথ্বী সা কলিগ্রস্তা ভবিষ্যতি।। ৬১

অনুবাদ - দশ হাজার বছর পরে আমার ভক্তগণ যখন এই ধরাধাম থেকে চলে যাবেন, তখন সারা পৃথিবী একবর্ণ সমন্বিত (কেবল শুদ্র জনগণ) হয়ে যাবে। আমার ভক্তশূন্য সেই পৃথিবীকে কলি গ্রাস করবে।

শ্রীল প্রভুপাদ কি জয়!

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত ইসকন কি জয়!

Post a Comment

0 Comments