বাঁকে বিহারীর সাথে মধুর বিবাদ!!
...............................................



 একদা বৃন্দাবনে এক সাধু অযোধ্যার গলিতে "জয় রাধে জয় কৃষ্ণ -জয় রাধে জয় কৃষ্ণ" বলতে বলতে হাঁটতে ছিলেন। ঠিক ওই সময়, অযোধ্যার এক সাধু ওই পথেই আসছিলেন, তো "জয় রাধে জয় কৃষ্ণ" ধ্বনি কানে আসতেই তিনি বৃন্দাবনের সাধুকে বললেন, "আরে সাধু, বলতে হলে " জয় সীতারাম" বলো। কি একটা ট্যারা ঠাকুরের নাম জপ করে চলেছ।
বৃন্দাবনের সাধু গর্জে উঠে বললেন, " মুখ সামলে কথা বল সাধু। আমার মুখ দিয়ে অমৃতনাম ঝরলে বিষও ঝরতে পারে কিন্তু। তোমার এত বড় সাহস, তুমি আমার ভগবানকে ট্যারা বলছ?"
অযোধ্যার সাধু কোমরে দুহাত দিয়ে বললেন, "ভুল কি বললাম আমি? তোমার কৃষ্ণতো ট্যারা-ই। ও নিজেতো ট্যারাই, ওর কাজও ট্যারা। তাইতো  ওর নাম বাঁকে বিহারী, বাঁকা ঘনশ্যাম।"

বৃন্দাবনের সাধু বললেন, "আচ্ছা চলো মেনে নিলাম সব বাঁকা। কিন্তু সে নিজে বাঁকা, তাঁর কাজও বাঁকা এটা কেন বললে তুমি?"
 অযোধ্যার সাধু বললেন, "আচ্ছা! তো এখন এটাও বলে দিতে হবে? তো শোন - যমুনা নদীতে গোপীদের বস্ত্র চুরি, রাসলীলা রচানো, মাখন চুরি, এসব কোন সাধু ঠাকুরের কাজ বলতো? আর আজ পর্যন্ত কেও কি তাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দেখেছে? দাঁড়ায় তো তাও তিন বাঁকা হয়ে -ত্রিভঙ্গ ঠামে।"
 বৃন্দাবনের সাধুরতো লজ্জায় মুখ একেবারে রাঙা হয়ে উঠল। আর কোন কথা না বাড়িয়ে সোজা চলে গেলেন বিহারী জীর মন্দিরে। কাঁধ থেকে ঝুলি আর হাত থেকে করতাল ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, "এত বছর ধরে খুব বোকা বানালি আমাকে তুই বাঁকে বিহারী। রামজীর মত সোজা হয়ে তো থাকতে পারিসনা তুই, কেবল ট্যারা হয়ে থাকিস। এই নে তোর ঝুলি আর কড়তাল, সামলা। আমি আর থাকব না এখানে। চললাম আমি রামজীর স্মরণে।" বলেই তিনি পথে নেমে পড়লেন।
 এখন বিহারীজী মুচকি মুচকি হেসে সাধুর পিছন পিছন চললেন। তারপর সাধুর হাত ধরে বললেন, "আরে বাবা! তোকে কেও ভুল কিছু বলে তোর মন বিগড়ে দিয়েছে।"
কিন্তু সাধু মানলেন না।

তখন বিহারীজী বললেন, "আচ্ছা যাবিতো যা, তোর ইচ্ছা। কিন্তু এটাতো বলে যা, যে শ্রীরাম সিধা আর আমি ট্যারা হলাম কি করে? বলেই তিনি কুয়োর দিকে হাঁটতে লাগলেন।
  সাধুও তখন তাঁর পিছে পিছে যেতে যেতে বললেন, "তুই, তোর সব কয়টা কাজ বাঁকা পথে করেছিস। শ্রীরামের মত সোজা পথে কোন কাজ করিসনি। সোজা হয়ে দাঁড়াসনা পর্যন্ত। তোর কাজের জন্য তোকে তোর নামের আগে বাঁকা শব্দ বসানো হল।
 "অযোধ্যার সাধু যা যা বললেন, সব গড় গড় করে বলে যেতে লাগলেন।
বিহারীজী মুচকি মুচকি হেসে কুয়োর বালতিটাকে সাধুর অগোচরে কুয়োর মধ্যে ফেলে দিলেন। তারপর বললেন, "আচ্ছা ঠিক আছে, যাবিতো চলে যা যেখানে খুশি। কিন্তু যাওয়ার আগে একটা কাজতো করে দিয়ে যা! একটা ছড়ি নিয়ে তো আয়, বালতিটা কুয়ো থেকে তুলি।"

সাধু ছড়ি নিয়ে এলে শ্রীকৃষ্ণ বালতিটা তোলার চেষ্টা করতে লাগলেন। শ্রীকৃষ্ণের চেষ্টা দেখে সাধুতো আরও বিরক্ত। বললেন, " আরে বুদ্ধু, এইটুকু বুদ্ধিও কি তোর মাথায় নেই যে সোজা ছড়ি দিয়ে বালতিটাকে কোনদিনও তুই তুলতে পারবিনা? ওইটার আগাটা একটু বাঁকা তো কর আগে, তারপর দ্যাখ্, কত সহজে উঠে আসে।

"বিহারীজী মুচকি হেসে বললেন, "যখন সোজা পথে এই ছোট্ট কুয়া থেকে একটা ছোট্ট বালতি তোলা সম্ভব নয়, তখন কি করে সোজা পথে এত বড় ভবসাগর থেকে তোকে আর তোর মত ভক্তদের পার করিয়ে নেব ভাবছিস? আর এখনকার মানুষতো পাপের সাগরে এমনভাবে ডুবে গেছে যে তাদের টেনে তুলতে কোন সোজা ঠাকুর নয়, কেবল আমার মত ট্যারা ঠাকুর অর্থাৎ বাঁকা শ্যামেরই পক্ষে সম্ভব। এবার তুই চাইলে যেতে পারিস।"

একথা শুনেতো সাধুর  দুচোখে অশ্রু ঝরতে লাগল।
------------------------------

Post a Comment

0 Comments