শ্রীল প্রভুপাদ ও হরে কৃষ্ণ আন্দোলন (ইসকন) সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্রের ভবিষ্যত বাণী (পর্ব ০২)



আজকে আমরা আলোচনা করব লোচন দাস রচিত চৈতন্য মঙ্গল থেকে

চৈতন্য মঙ্গল(শ্রীল লোচন দাস ঠাকুর বিরচিত), সূত্র খন্ড থেকে উদ্ধৃত

এবে সর্ব্বজন সেই হৃদয় আসুরি।
খড়গ অস্ত্রে ছেদ্য নহে রণে কিবা করি।।
নাম গুণ সংকীর্তন বৈষ্ণবের শক্তি।
প্রকাশ করিব আজ নিজ প্রেম ভক্তি।।
এই মতে কলি পাপ করিব সংহার।
সবে চল আগে পাছে না কর বিচার।।
এবে নাম সংকীর্তন খড়্গ তীক্ষ্ম লঞা।
অন্তর অসুর জীবের ফেলিব কাটিয়া।।
যদি পাপী ছাড়ি ধর্ম্ম দূর দেশে যায়।
মোর সেনাপতি ভক্ত যাইবে তথায়।।

ভাষ্যঃ সত্যযুগে অসুরেরা ছিল অসুরদের লোকে, দেবতারা ছিল দেবতাদের লোকে। ত্রেতাযুগে অসুরেরা ও দেবতারা একই মহাদেশে চলে এসেছিল। অসুরেরা ছিল লঙ্কায় আর দেবতারা ছিলেন অযোধ্যায়। দ্বাপর যুগে অসুর ও দেবতারা একই পরিবারে ডুকে গেছে। কৌরবেরা অসুর আর পান্ডবেরা দেবতা। আর কলিযুগে একই মানুষের ভিতরে অসুর ও দেবতারা বাস করছে। সেজন্য এখানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলছেন যে, আগেকার যুগে যেহেতু অসুরেরা বাইরে ছিল, তিনি বিভিন্ন অবতার গ্রহণ করে (নৃসিংহ, রাম, কৃষ্ণ) তাদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাদের হত্যা করেছিলেন। কিন্তু কলিযুগে যেহেতু একই মানুষের মধ্যে অসুর বাস করছে, তাই সেই অসুরকে হত্যা করলে মানুষটিকেই হত্যা করতে হবে। সেজন্য এই যুগে তিনি কারো সাথে যুদ্ধ করবেন না। হরি নাম সংকীর্তন হচ্ছে বৈষ্ণবের শক্তি। তিনি সেই হরিনাম সংকীর্তনের মাধ্যমে তার প্রেমভক্তি প্রচার করবেন।

এভাবে তিনি কলির পাপ সংহার করবেন। হরি নাম সংকীর্তনের তীক্ষ্ণ খড়্গ দিয়ে, তিনি কলিযুগের জীবদের অন্তরে যে অসুর রয়েছে তাদের বধ করবেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ঘোষণা করছেন যে, যেসব পাপী মানুষেরা ধর্ম ছেড়ে বিদেশে পলায়ণ করবে, ভবিষ্যতে তাঁর সেনাপতি ভক্ত আবির্ভূত হয়ে বিদেশে গিয়ে সেইসব পাপীদেরকে উদ্ধার করবেন।

এই ভবিষ্যত বাণী থেকে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি যে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশিত সেই সেনাপতি ভক্ত হচ্ছেন, ইসকনের প্রতিষ্টাতা আচার্য এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ যিনি ৫৪ বছর আগে বিদেশে গিয়ে মহাপ্রভুর এই বাণীকে সার্থক করেছিলেন। ইতিপূর্বে স্বামী বিবেকানন্দ, ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী, শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের সন্ন্যাসী শিষ্য শ্রীল বন মহারাজ সহ আরো অনেকেই পাশ্চাত্যে গিয়েছিলেন কিন্তু তারা কেউই সফল হতে পারেন নি। কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদ মাত্র ১১ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১০৮ মন্দির, বহু বৈদিক গুরুকূল, ফার্ম কমিউনিটি, রেষ্টুরেন্ট প্রতিষ্টাসহ লক্ষ লক্ষ বিদেশীদেরকে তাঁর অনুসারী শিষ্য করেছিলেন যা অভূতপূর্ব। তাঁর রচিত ৮০ টি বৈদিক শাস্ত্রানুগ গ্রন্থ বর্তমানে ১০০টিও বেশি ভাষায় অনুবাদিত হয়ে সারাবিশ্বে বিতরণ হচ্ছে।

শ্রীল প্রভুপাদ কি জয়!
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত ইসকন কি জয়!

Post a Comment

0 Comments