ভগবানের অবতার...!!!


ভগবান সম্পর্কে আরও বিশেষ ধারনা অর্জন করার জন্য এখন আমরা ভগবানের বিভিন্ন অবতারের কথা আলোচনা করব। আমাদের আচার্যরা এই অবতার সমূহকে ছয় ভাগে বিভক্ত করেছেন। 


যথা—পুরুষাবতার, গুণাবতার, মন্বন্তরাবতার, যুগাবতার, লীলাবতার ও শক্ত্যাবেশ অবতার।


পুরুষাবতারঃ- পুরুষাবতার হচ্ছেন- মহাবিষ্ণু, গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু ও ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু, তিন পুরুষ। 


ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু প্রতিটি পরমাণু ও প্রতিটি জীবের মধ্যে পরমাত্মা রূপে অবস্থান করছেন। গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু এই ব্রহ্মাণ্ডের পরমাত্মা স্বরূপ। মহাবিষ্ণু অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ড সমন্বিত এই জড়জগতের পরমাত্মা স্বরূপ। মহাবিষ্ণু মহা সঙ্কৰ্ষণ থেকে আবির্ভূত হন। 


যার লোমকূপ থেকে অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ড প্রকাশিত হয়। প্রতিটি ব্রহ্মাণ্ডে মহাবিষ্ণু গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু রূপে গর্ভ সাগরে শয়ন করেন। মহাবিষ্ণু রূপে তিনি কারণ জলে শয়ন করেন। মহাবিষ্ণু রূপে তিনি কারণ জলে শয়ন করেন বলে তাঁর নাম হচ্ছে কারণোদকশায়ী বিষ্ণু৷ 


গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভি থেকে কমল বা পদ্ম সৃষ্ট হয়। কমলের উপরিভাগে জগতের স্রষ্টা অযোনি সম্ভৃত ব্রহ্মা আবির্ভূত হয়ে থাকেন। সেই গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু প্রতিটি অনু-পরমানুতে ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু রূপে প্রবেশ করেন এবং একই সঙ্গে ক্ষীর সাগরে শয়ন করেন বলে তাঁকে

ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু বলে সবাই জেনে থাকেন।


গুণাবতারঃ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে গুণাবতার বলা হয়। ব্রহ্মা রজোগুণের মাধ্যমে সৃষ্টি করেন, বিষ্ণু সত্ত্বগুণের মাধ্যমে পালন করেন এবং শিব তমোগুণের মাধ্যমে সংহার করেন। 


ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ভগবানের গুণাবতার হলেও ব্রহ্মা কিন্তু বিষ্ণু তত্ত্ব নন। তিনি হচ্ছেন জীব তত্ত্ব। কোন এক জীব তার সুকৃতির ফলে, স্বভাবের ফলে ও পুণ্যকর্ম অনুষ্ঠানের ফলে ব্রহ্মার পদ লাভ করার যোগ্যত অর্জন করে থাকেন। কিন্তু বিষ্ণু হচ্ছেন ভগবান, তিনি মায়াধীশ, তিনি পালনকর্তা। 


শিব জীব তত্ত্ব নন বা বিষ্ণু তত্ত্ব নন। শিব এক বিশেষ তত্ত্ব। তিনি ভগবান বিষ্ণুর একটি প্রকাশ, যার দ্বারা তিনি এ সংসারে প্রলয় কার্য সাধন করে থাকেন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর-এ তিন জনকে গুণাবতার বলা হয়। শিব ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্তও।


লীলাবতার:- আমরা দেখতে পাই, ভগবান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে এ ধরাধামে অবতীর্ণ হয়ে লীলা বিলাস করে থাকেন৷ এ ধরাধামে তাঁর আগমনের বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে তাঁর লীলার মাধ্যমে ভক্তদেরকে আনন্দ প্রদান করা। 


লীলা প্রদর্শন করার মাধ্যমে এ জড় জগতের বদ্ধ জীবকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করান। ভগবান রাম, নরসিংহ, বামন বিভিন্ন রূপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হন। এদেরকে বলা হয় লীলা অবতার। ভগবান তাঁর লীলা বিস্তার করে জীবকে উদ্ধার করে থাকেন।


যুগাবতারঃ- সেভাবে আছে যুগাবতার। এই যুগাবতার প্রতি যুগে অবতীর্ণ হন। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি-ভিন্ন ভিন্ন যুগে, ভিন্ন ভিন্ন নামে, ভিন্ন ভিন্ন শরীর ও বর্ণ নিয়ে ভগবান অবতীর্ণ হন। অবতীর্ণ হয়ে তিনি যুগধর্ম স্থাপন করেন ও অসুরদেরকে সংহার করে ভক্তদেরকে পোষণ করে থাকেন।


মন্বন্তর অবতার :- সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এরূপ চতুর্যুগের সমন্বয় বা সমষ্টিকে এক দিব্য যুগ বলা হয়। এরকম ৭১ টি দিব্য যুগ বা চতুর্যুগে এক মন্বন্তর। প্রতি মন্বন্তরে ভগবান যে রূপে অবতীর্ণ হন তাকে বলা হয় মন্বন্তর অবতার।


চৌদ্দজন মনুর শাসনকালে প্রায় একহাজার চতুর্যুগ অতিবাহিত হয়, তাকে ব্রহ্মার একদিন বলা হয়। ব্রহ্মার একদিনকে এক কল্পও বলা হয়। এক কল্পের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাত্র একবার অবতীর্ণ হয়ে থাকেন। 


কেউ কেউ কৃষ্ণকে কল্পাবতার বলে থাকেন। যদিও তিনি অবতার নন, তিনি হচ্ছেন অবতারী। সমস্ত অবতারের উৎস হচ্ছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে ব্রহ্মা সৃষ্টি করেন, বিষ্ণু পালন করেন ও শিব সংহার করে থাকেন।


শক্ত্যাবেশ অবতার :- সাধারণতঃ শক্ত্যাবেশ অবতার বিষ্ণুতত্ত্ব নন, শক্ত্যাবেশ অবতার জীবতত্ত্ব। যখন কোন জীবের মধ্যে ভগবানের বিশেষ শক্তি প্রকাশ পায় তাকে শক্ত্যাবেশ অবতার বলা হয়। সাত প্রকার শক্ত্যাবেশ অবতারের কথা শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে— 


(১) স্বসেবন- শক্ত্যাবেশ, (২) ভূধারণ-শক্ত্যাবেশ, (৩) সৃষ্টি শক্ত্যাবেশ, (৪) জ্ঞান শক্ত্যাবেশ, (৫) ভক্তি শক্ত্যাবেশ, (৬) পালন শক্ত্যাবেশ, (৭) ভূভার হরণ শক্ত্যাবেশ অবতার ইত্যাদি। শক্ত্যাবেশ অবতারকে তুলসী দিয়ে পূজা করা হয় না।


                                           ....হরেকৃষ্ণ....

Post a Comment

0 Comments