মর্যদাপুরোষত্তম ভগবান শ্রীরামচন্দ্র

_______________________

ত্রেতাযুগে দেখি তোমায় ধনুকবাণধারী/পিতৃসত্য পালিবারে হইলায় বনাচারী। বনবাসে সঙ্গে নিলে সীতা আর লক্ষণ /সীতাকে হরণ করে লংকার রাবণ। সীতাকে উদ্বারীলে তুমি রাবণ নিধনে/উদ্বার ও পাইল রাবণ রাম নাম গুণে। প্রভু তুমি অন্তর্যামী অন্তরে কর বাস /তব চরণে নাথ,  

রইল মোর প্রণিপাত।

 ভগবান চারিযুগে তাঁর চারজন বিশেষ ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে এ ধরাধামে আর্বিভূত হন। তার মধ্যে সত্যযুগে  ভক্ত প্রহ্লাদের, ত্রেতা যুগে দেবর্ষি নারদের, দ্বাপরে দেবকী বাসুদেব ভগবানকে সন্তানরুপে পাওয়ার যে ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন তা পূরণে,আর কলিযুগে অদ্বৈত আর্চায ঠাকুরের হুকারে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রুপে এ ধরাধামে অবতীর্ণ হন।


 বিষ্ণুর সপ্তম অবতার ভগবান শ্রী রামচন্দ্র। আজ থেকে প্রায় ১২,৯৬,০০০ বছর পূর্বে রামায়ণ যুগে অর্থাৎ ত্রেতাযুগে অযোধ্যা নগরীতে রঘুবংশীয় রাজা দশরথের ঔরসজাত কৌশল্যার  নন্দনরূপে এই ধরা ধামে আর্বিভূত হন।

পিতৃভক্তি, প্রজাবাৎসল্য, পরোপকারী, লোভহীনতা, সত্যপালন,বিনয়ী  তাঁর এই গুণাবলীসমূহ সবাইকে আকর্ষণ করে। করুণার মূর্ত প্রতীক ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের চরিত্রের কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য যা মানবকূলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আছে।

পিতার আজ্ঞা পালন বিমাতা কৈকেয়ীর ইচ্ছার অনুকরণ মুনিবেশ ধারণ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস তিনি অবনত মস্তকে গ্রহণ করেন।চৌদ্দ বছরের বনবাসকে তাঁর জীবনের পরম সৌভাগ্যের ক্ষণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ এই চৌদ্দ বছর মহান মহান মুনি ঋষিদের দর্শনে  পরম তৃপ্তি লাভ করতে পারা এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কি হতে পারে।  

নিশ্চল প্রেমের পবিত্র নদী ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের 

চরিত্রের আরেকটি উল্ল্যেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল দেশ প্রেম।তিনি যখন বনবাসের উদ্দেশ্যে নিজ রাজ্য সীমানা ত্যাগ করে নিশাত রাজের রাজ্য সিংহবীরপুরে প্রবেশ করবেন ঠিক তখনই  রথ থেকে নেমে শেষ বারের মত জননী জন্মভূমিকে প্রণাম জানিয়ে জন্মভূমির কিছু মাটি সঙ্গে করে নিয়ে যান। যাহা দিয়ে প্রতিদিন কপালে  তীলক এঁকে জন্মভূমিকে স্মরণে রাখবেন বলে । এরকম অনেক দৃষ্টান্ত আছে যা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। 

একবার ভগবান শ্রী রামচন্দ্র বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পাশে বসা সীতা মাতা স্বামীর সেবা করছিলেন।হঠাৎ শ্রীরাম চন্দ্রের চরণে একটি কাঁটা বিদ্ব দেখতে পেয়ে সীতা মাতা সেটি বের করে আনেন। তখনই প্রভুর নিদ্রা ভেঙ্গে যায়।শ্রীরামচন্দ্র সীতা মাতাকে বললেন দেখ সীতা যে আমার চরণে আশ্রয় নেয় আমি তাকে পরিত্যাগ করি না। সেটা কাঁটা হলেও না।  

বিভীষণ যখন শ্রীরাম চন্দ্রের চরণে ভক্তিভাবে  আত্মসমর্পণ করেন তখন ভগবান শ্রী রামচন্দ্র বিভীষণকে বলেন, বিভীষণ  তুমি যে আমার চরণে আশ্রয়ে নিলে  তার জন্য আমি তোমাকে লঙ্কার রাজসিংহাসনে বসাব।সেই সময় সুগীব প্রশ্ন করেন হে প্রভু যদি লঙ্কার বর্তমান  রাজা রাবণ এসে আপনার শ্রীচরণে আত্মসমর্পণ করে তখন আপনি কি করবেন?  প্রশ্ন শুনে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র হেসে হেসে বললেন, "আমি রাবণকে আলিঙ্গন করে  অযোধ্যার রাজসিংহাসনে বসাব। "সত্যিকার অর্থে যে ভগবানের চরণে আত্মসমর্পণ করে সে মহাপাপী হলে ও ভগবান তাকে তৎক্ষণাৎ ক্ষমা করে দেন।এমন দৃষ্টান্ত ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের চরিত্রে পরিলক্ষিত হয়।


চৌদ্দ বছরের বনবাসান্তে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র যখন অযোধ্যায় ফিরে এলেন তখন তিন মাতা মিলে বিভিন্ন পদের খারার রান্না করে একসাথে খেতে বসতেন। কিন্তু ভগবান খেতে বসলেই দু'চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরত। খুব কান্না করতেন। সবাই এর কারণ  জিজ্ঞাস করলে বলতেন খেতে বসলেই তাঁর জটায়ুর কথা মনে পড়ে যায়। যে পক্ষি কূলে জন্মগ্রহণ  করে ও  সীতাকে উদ্বারে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের দেহ ত্যাগ করে। তাই তিনি জটায়ুর কাছে  ঋণী ।কত মহানুভব ভগবান শ্রীরামচন্দ্র। কোন ভক্ত তাঁর সেবা করলে তার প্রতি বিশেষভাবে ঋণী হয়ে যান ভগবান। 


 শ্রীমদ্ভাগবতের  নবম স্কন্ধের দশম ও একাদশ অধ্যায় ছাড়া ও ভাগবতের ১/৩/২২ শ্লোকে ও ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের আর্বিভাব সম্পর্কে বিস্তারিত  বর্ণিত আছে।এই অবতারে ভগবান রামচন্দ্র রাবণকে নিধন করেন। শ্রীরামচন্দ্র রাবণের মূলত  বিশেষ তিনটি জিনিস অহংকার, ভ্রম,অজ্ঞানতাকে বধ করে তাকে জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি দান  করেন। শিবের বরপ্রাপ্ত হয়ে রারণ এতটাই অহংকারী  হয়ে গিয়েছিল যে, সে মনে করত সে সকল কার্যের কর্তা। ভগবান তার দাম্ভিকতা চূর্ণবিচূর্ণ করেন।  ভগবান যুগে যুগে আসেন তাঁর ভক্তের কল্যার্থে,  মঙ্গলার্থে। শ্রীরামচন্দ্র ও তাই করেছিলেন। ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এক রাবণকে বধ করে বিশ্বের সব নিরাপরাধ মানুষকে রক্ষা করেন। 


শ্রীরামচন্দ্র বিষ্ণুর অবতার হওয়া সত্বেও তিনি তাঁর ভগবত্তা আড়াল করে মনুষ্যরুপে জন্মগ্রহণ করে মানুষদেরকে মানবীয় গুণাবলীর শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তাই সমাজ, রাষ্ট্রীয় তথা  গৃহস্থ জীবন সুচারুরুপে পরিচালিত করতে ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের এসব গুণাবলীর অনুকরণ একান্ত আবশ্যক।আজ রাম নবমীতে ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের শ্রী চরণে  সবার এই প্রার্থনা হোক যেন তাঁর এই গুণাবলীগুলো মানব হৃদয়ে জাগ্রত করে একটি সুখি সমৃদ্বশালী সমাজ গড়ে তুলার আর্শিবাদ প্রদান করেন । রঘুপতি রাঘব রাজা রাম পতিত পাবণ সীতা রাম কি জয়।

Post a Comment

0 Comments